ফরহিম I বিয়ার্ড্রাফ
এ এক অস্বস্তিকর সমস্যা। নিয়মিত সঠিক পরিচর্যার অভাবে মুখত্বকও এতে বিপন্ন হতে পারে। কিন্তু এর থেকে পরিত্রাণ কঠিন কিছু নয়
দাড়িতেও খুশকি হতে পারে। আর মাথার ত্বকের সঙ্গে মুখের ত্বকের পার্থক্য থাকায় বিয়ার্ড ড্যানড্রাফ কিংবা বিয়ার্ড্রাফ দূর করার উপায় এক রকম নয়।
যারা দাড়ি রাখতে শুরু করেছেন, তাদের এই সমস্যা বেশি হতে পারে। কারণ, মুখমন্ডলের ওই অংশ হুট করেই পর্যাপ্ত পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। ক্লিনজিং আর ময়শ্চারাইজিংয়ে ব্যবহৃত উপাদান ঠিকঠাক পৌঁছাতে না পারার জন্য। একদিকে দাড়ি ত্বকের কিছু অংশকে রোদের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে বটে, অন্যদিকে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস থেকে বঞ্চিত করে। ফলে ত্বকের ওই অংশ খুব বেশি শুষ্ক হয়ে পড়ে। যার কারণে ছোট ছোট স্কিন ফ্লেকস দেখা দেয়। এমনকি শুষ্কতার কারণে ত্বক অনেক সময় চুলকায় এবং এই বিয়ার্ড্রাফ পোশাকে ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া দাড়ি ও ত্বকের সঠিক যতœ না নিলে কিংবা অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত পণ্য ব্যবহার করলেও সেগুলো বিয়ার্ড্রাফের কারণ হতে পারে।
চুল ও দাড়ির খুশকি দূরের উপায় কখনোই এক রকম নয়। কারণ, অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু মাথার ত্বকের কোনো ক্ষতি না করলেও মুখের ত্বকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। নিয়মিত কিছু পরিচর্যায় এই বিব্রতকর অবস্থা থেকে নিজেকে বাঁচানো সম্ভব।
এক্সফোলিয়েশন
দাড়ির নিচের ত্বকের ক্ষেত্রে ক্লিনজিংয়ের আগে কিংবা গোসলের আগে এক্সফোলিয়েশন সহজ। প্রয়োজন একটা বিয়ার্ড ব্রাশ। এটি দিয়ে ভালো করে দাড়ি আঁচড়ে নিতে হবে। এতে দাড়িতে কোনো জট থাকলে তা ছুটে যায় এবং সব খুশকি বের হয়ে আসে। এরপর গোসল সেরে নিতে হয়।
ক্লিনজিং
এক্সফোলিয়েশনের পর দাড়ির নিচের ত্বক পরিষ্কার করে নিতে হবে যেকোনো ভালো ব্র্যান্ডের ল্যাকটিক এসিডযুক্ত ক্লিনজার দিয়ে। ত্বকের ওপর এটি কর্কশ প্রভাব ফেলবে বলে মনে হলেও এমনটা না। বরং এই উপাদান ত্বকের মরা চামড়া বিলীন করে দিতে সাহায্য করে। আর আগে থেকেই এক্সফোলিয়েট করে নেওয়ার ফলে এই ক্লিনজার খুব সহজেই অবশিষ্ট মৃত কোষের ওপর কাজ করে। তাই গোসলের আগেই দাড়ি এবং তার নিচের ত্বকে বেশি করে ক্লিনজার মাখতে হবে, যাতে গোসলের সঙ্গে সঙ্গে ত্বক হয়ে ওঠে ফ্লেক-ফ্রি আর সজীব। তবে বর্তমানে ভালো মানের অনেক বিয়ার্ড শ্যাম্পুও পাওয়া যায় বাজারে।
ময়শ্চারাইজ
মুখে ময়শ্চারাইজার ব্যবহারের পরেও দাড়ির কারণে মুখের ওই অংশ সঠিক আর্দ্রতা পায় না, সুতরাং প্রয়োজন অতিরিক্ত যত্নের। তাই ব্যবহার করতে হবে বিয়ার্ড অয়েল। এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের সঞ্চার ঘটিয়ে ত্বক হাইড্রেটেড করে তোলে। বিয়ার্ড অয়েল খুশকি কমিয়ে আনার পাশাপাশি দাড়িকে মসৃণও করে তোলে। এটি ব্যবহারের পর দাড়ি একটু আঁচড়ে নিতে হবে, যাতে সবখানে তেল ঠিকঠাক পৌঁছে যায়।
অ্যান্টি বিয়ার্ড্রাফ সলিউশন
একটা লম্বা সময়ের জন্য বিয়ার্ড্রাফ থেকে রেহাই পেতে ঘরেই তৈরি হতে পারে সলিউশন। অন্য যেকোনো উপায়ের তুলনায় এটা সবচেয়ে প্রাকৃতিক পদ্ধতি। এ ছাড়া এটা ত্বকের ইস্ট ব্যাকটেরিয়া দূর করতেও ভূমিকা রাখে। একটা বাটিতে এক কাপ অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার, ২ টেবিল চামচ জোজোবা অয়েল আর ৩টা অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট গুঁড়া করে মিশিয়ে নিতে হবে। কোনো ক্লিনজার কিংবা বিয়ার্ড শ্যাম্পু দিয়ে পরিষ্কার করার পরপরই মিশ্রণটি দাড়ি এবং এর নিচের ত্বকে দুই হাত দিয়ে ভালো করে লাগিয়ে নিতে হবে। ৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান খুশকির উৎস নষ্ট করে দেয়। জোজোবা অয়েলের আয়োডিন ত্বকে পুষ্টি জোগায় এবং অ্যাসপিরিন মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে।
ডু’স অ্যান্ড ডোন্ট’স
প্রতিদিন দাড়িতে ক্লিনজার কিংবা বিয়ার্ড শ্যাম্পু ব্যবহার থেকে বিরত থাকা চাই। কারণ, এতে ত্বকের প্রাকৃতিক সিবাম অয়েল অপসারিত হয়। সপ্তাহে ২-৩ দিন এসবের প্রয়োগ যথেষ্ট।
অবশ্যই মাইল্ড শ্যাম্পু কেনা চাই।
চুলের অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দাড়িতে ব্যবহার করা যাবে না। এতে দাড়ির স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে।
পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে এবং পানি পানের ক্ষেত্রেও একই কথা।
ভিটামিন এ, বায়োটিন এবং ভিটামিন বি যুক্ত খাবার প্রতিদিনের মেনুতে রাখা প্রয়োজন। এগুলোও খুশকি প্রতিরোধে সাহায্য করে।
শিরীন অন্যা
মডেল: বায়েজীদ
মেকওভার: পারসোনা মেনজ
ছবি: সৈয়দ অয়ন