skip to Main Content

ফুড বেনিফিটস I কাঁচা মরিচ

ঝাল হলেও স্বাস্থ্যকর। পুষ্টিগুণে আপেলের সমান। নানান রোগের পথ্য হিসেবে কাজ করে। গন্ধেও চমৎকার

সারা বিশ্বে মরিচ ছড়িয়ে পড়ে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা থেকে। ভারতবর্ষে তা আসে পর্তুগিজদের মাধ্যমে। এর আগে এই অঞ্চলে ছিল গোলমরিচের ব্যবহার। ক্যাপসাইনিন নামের একধরনের রাসায়নিকের উপস্থিতির কারণে কাঁচা মরিচের স্বাদ ঝাল। এই উপাদান যখন মানুষের জিহ্বার রিসেপ্টরের সংস্পর্শে আসে, তখনই ঝাল অনুভূত হয়। প্রতি ১০০ গ্রাম কাঁচা মরিচে আছে ভিটামিন এ ১১৭৯ আইইউ, কোলিন ১১.১ মিলিগ্রাম, ফোলেট ২৩ এমসিজি, নায়াসিন ০.৯৫০ মিলিগ্রাম, পেন্টোথেনিক অ্যাসিড ০.০৬১ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০.০৯০ মিলিগ্রাম, থায়ামিন ০.০৯০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৫৯ এমসিজি, ক্যারোটিন, আলফা ২৩ এমসিজি, ক্যারোটিন বিটা ৬৭১ এমসিজি, ক্রিপ্টোক্সানথিন বিটা ৫০ এমসিজি, লুটেইন ও জেক্সানথিন ৭২৫ এমসিজি, ভিটামিন বি ৬০.২৭৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ২৪২.৫ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই ০.৬৯ মিলিগ্রাম, টোকোফেরল আলফা ০.৬৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে ১৪.৩ এমসিজি, কার্বোহাইড্রেট ৯.৪৬ গ্রাম, ফাইবার ১.৫ গ্রাম এবং সুগার ৫.১০ গ্রাম। এসব উপাদান শরীরের নানাবিধ বালাই সারাইয়ের কাজ করে। যাদের পেটে গন্ডগোল আছে, তাদের জন্য কাঁচা মরিচ পথ্যতুল্য। তবে খেতে হয় পরিমিত। বেশি তেল-মসলাযুক্ত রান্নায় মরিচের পরিমাণ কমিয়ে দেওয়া ভালো। সামান্য ঝাল হজমে সহায়তা করে।
হাড় ও দাঁত মজবুত করে কাঁচা মরিচ। এতে ভিটামিন এ থাকায় এই উপকার মেলে। মরিচ মিউকাস মেমব্রেনকে ভালো রাখে। ফলে ছোটবেলা থেকেই শিশুদের একটু একটু করে ঝাল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে ভবিষ্যতে সুফল পাওয়া যায়। ঋতুভিত্তিক রোগবালাই নাশে উপকারী কাঁচা মরিচ। বিশেষত এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জ্বর, সর্দি ও কাশি নিরাময়ে কাজ করে। করোনা সংক্রমণকালে খাবারে পরিমাণমতো কাঁচা মরিচ যোগ করলে সুরক্ষিত থাকা যেতে পারে। পদটি শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। বিশেষ করে এর বীজ। ফলে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য এটি একরকম দাওয়াই। কেউ কেউ রক্তচাপ বাড়লে কাঁচা মরিচ চিবিয়ে খান। এ ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া ভালো। ক্যানসার সারাইয়ের গুণও আছে কাঁচা মরিচে। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকর টক্সিক দূর করে। ফলে ক্যানসার কোষ তৈরির আশঙ্কা প্রায় থাকে না বললেই চলে। নিয়মিত দুটি করে কাঁচা মরিচ খেলে হৃদ্্রোগের আশঙ্কা শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। খাদ্যটি মানুষের শরীরের ট্রাইগ্লিসারাইড নিয়ন্ত্রণে রাখে। রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ফলে অ্যাথেরোস্কে¬রোসিস ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে। এটি মাথাব্যথা উপশমেও কার্যকর। কাঁচা মরিচের ক্যাপসিসিন শরীরে প্রবেশ করে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সাইনাস ইনফেকশনের প্রকোপ কমায়।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় কাঁচা মরিচ। বলা হয়, প্রতিদিন দুটি করে কাঁচা মরিচ খেলে কোনো রোগই শরীরে বাসা বাঁধে না। এতে থাকা ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা উন্নত করে। ফলে কোনো জীবাণুই শরীরের ক্ষতি করতে সক্ষম হয় না। ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইমিউনিটি বাড়ানোর পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়। স্ট্রেস কমাতেও ভূমিকা আছে কাঁচা মরিচের। মন ভালো করতে তা খাওয়া যেতে পারে। এটি খাওয়ামাত্রই শরীরে এন্ডোরফিন হরমোনের ক্ষরণ বাড়ে। এতে স্ট্রেস কমার পাশাপাশি মন ভালো হয়। ডায়াবেটিসেও উপকারী কাঁচা মরিচ। এর বিভিন্ন উপাদান রক্তে শকর্রার উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। ওজন কমাতে চাইলে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখা যেতে পারে কাঁচা মরিচ। এটি নিয়মিত খেলে শরীরের বাড়তি ফ্যাট গলতে শুরু করে। ফলে অল্প দিনেই ওজন কমে। কাঁচা মরিচ খেলে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় থাকে। এর ক্যাপসিসিন উপাদান মস্তিষ্কের হাইপোথেলামাসকে অতি সচল করে তোলে। ফলে শরীরে গরমের খারাপ প্রভাব থাকে না। ব্যথানাশ করতেও কার্যকর কাঁচা মরিচ। এতে এমন কিছু উপাদান আছে, যা শরীরে ক্ষতের যন্ত্রণা কমায়। এ ছাড়া কাঁচা মরিচ চর্মরোগ সারায়। শ্বাসনালি ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। নারীদের আয়রনের ঘাটতি মেটায়। নিশ্বাসের দুর্গন্ধ কমাতেও সহায়তা করে কাঁচা মরিচ। এর প্রদাহনাশী উপাদান অ্যালার্জিও প্রতিরোধ করে। টিউমার দূর করতেও এর ভূমিকা আছে।
কাঁচা মরিচের উপাদানগুলো শরীরের ভেতরে যেমন উপকারী, তেমনি রূপচর্চায়ও। কাজটি করে এতে থাকা ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিন। নিয়মিত কাঁচা মরিচ খেলে মুখে বলিরেখা পড়ে না। চুলের সৌন্দর্য বাড়ায়। বলা হয় প্রতিদিন একটি করে মরিচ বা আপেল খাওয়া একই রকম স্বাস্থ্যোপকারী। রন্ধনশিল্পে লবণের পরই কাঁচা মরিচকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে রান্নার সঙ্গে না দিয়ে এটি কাঁচা খাওয়াই ভালো। কেননা ৩৭০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রায় সেদ্ধ করলে এর পুষ্টিগুণ কমে যায়। ভাজলে মরিচের ভিটামিন সি নষ্ট হয়। তাই উপকারিতা পেতে এটি কাঁচা খাওয়াই উত্তম। শুকনা মরিচের তুলনায় কাঁচা মরিচকে বেশি উপকারী গণ্য করা হয়। এটি যে শুধু মানুষের রোগবালাই দূর করে, তা নয়। মুরগির ওষুধ হিসেবেও এর কদর আছে। যাদের খামার আছে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ মুরগি সুস্থ রাখতে পরিমাণমতো কাঁচা মরিচ খাওয়ায়। লাল কাঁচা মরিচ টিয়াপাখির পছন্দের খাবার। তবে মানুষ কিংবা পাখি, মরিচ খাওয়ার বেলায় পরিমিতি বোধ থাকা প্রয়োজন। কেননা অতিরিক্ত ঝাল খেলে স্মৃতিলোপ ঘটতে পারে। যারা প্রতিদিন ৫০ গ্রাম করে মরিচ খায়, তাদের স্মৃতিশক্তি হারানোর আশঙ্কা প্রায় দ্বিগুণ বলে একটি গবেষণায় উঠে এসেছে।
 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top