skip to Main Content

ফুড বেনিফিটস I গমতৃণ

পাঁচ হাজার বছর আগে মানুষ এর গুণ বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু আজ অনেকের কাছেই অজানা! ভিটামিনে ভরপুর। নানান রোগের পথ্য। রূপচর্চায়ও কাজে লাগে। লিখেছেন শিবলী আহমেদ

মানুষের অসুখের শেষ নেই। নিয়মমাফিক ওষুধের কাছে জিম্মি স্বাস্থ্য। একটু বেছে বেশি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার খেলে অনেক অসুখের প্রতিকার ছাড়াও মেলে প্রতিরোধ। যেমন গমের কচি চারা। ইংরেজিতে হুইটগ্রাস। বিস্ময়কর প্রাকৃতিক খাবার এটি। জীবনের বেশির ভাগ নাছোড় অসুখের সঙ্গে লড়ে যাওয়ার শক্তি জোগাবে এ তৃণ।
ফসলি মাঠ ছেড়ে গমের কচি চারা সরাসরি উঠে এসেছে মানুষের খাদ্যতালিকায়। পাশ্চাত্য এ মহৌষধের হদিস পায় ১৯৩০ সালে। তবে এটি খাওয়ার ইতিহাস পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো। তৎকালীন মিসর ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতায় অভিজাতেরা এ ঘাস খেতেন।
গমের কচি চারা খাওয়ার নিয়মও খুব সহজ। চারা গজানোর পর সেটা দুভাগ হওয়ার শুরুতেই কেটে আনতে হয়। তারপর জুস বানিয়ে পান করা যায়। সুস্থ থাকতে দৈনিক এক থেকে দুই চামচ রসই যথেষ্ট। খেতে হবে খালি পেটে।
বিদেশে এর ট্যাবলেট কিনতে পাওয়া যায়। মেলে জুসও। এমনকি পাউডার হুইটগ্রাসও সহজলভ্য। আমাদের দেশে খুঁজলে কিছু জায়গায় এর জুস কিংবা পাউডার পাওয়া যাবে।
এই প্রাকৃতিক ঘাসে ভিটামিন এ, বি কমপ্লেক্স, সি, ই এবং কে বিদ্যমান। আছে প্রোটিন এবং ১৭ রকমের অ্যামাইনো অ্যাসিড। পটাশিয়াম, ডায়েটারি ফাইবার, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, নায়াসিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, আয়রন, জিংক, কপার, ম্যাঙ্গানিজ এবং সেলেনিয়ামও প্রতুল গমের চারায়। এর রসের ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশই বিশুদ্ধ ক্লোরোফিল। এসব উপাদান শরীরের নানান অসুখ সারাইয়ের কাজ করে।
দাঁত ও মাড়ির ক্ষয় রোধ এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়া সমস্যা দূর করে গমের চারা। কচি চারা ভালো করে ধুয়ে পনেরো মিনিট চিবিয়ে রস বের করে নিতে হবে। তারপর আক্রান্ত স্থানে লাগালে দাঁত ও মাড়ি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।
হজমের সমস্যায় আজকাল প্রায় সবাই আক্রান্ত। পেটের এ গোলমাল দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম, বমি বমি ভাব, অম্বল, বুক ও গলা জ্বালা, অন্ত্র এবং পাকস্থলীতে ঘা, অন্ত্র থেকে রক্তক্ষরণ ছাড়াও পেটে কৃমির উৎপাত হয়ে থাকে। পরিপাকের এ সমস্যা দূর করতে গমের চারার রস পান করলে কিংবা থেঁতলে গিলে খেলে রেহাই পাওয়া যাবে। অবশ্য অন্ত্র এবং পাকস্থলীতে যদি ঘা হয়ে যায়, তাহলে এর রসের সঙ্গে বাঁধাকপি পাতার রস মিশিয়ে খেলে পরিত্রাণ মেলে। পাশাপাশি হজমশক্তিও বৃদ্ধি পায়।
ঠান্ডা লাগা এবং বুকে সর্দি বসে যাওয়া থেকেও সুরক্ষা দেয় গমের চারা। এর রস পান করলে চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই সাধারণ সর্দি ভালো হয়ে যায়। আর নিয়মিত পান করলে ঠান্ডার সমস্যা প্রতিকারের পাশাপাশি প্রতিরোধও হয়। হাঁপানির কবল থেকেও মুক্তি দিতে পারে কচি চারার রস। নিয়মিত সদ্য গজানো পাতার রস পান করে হাঁপানি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার নজির আছে।
এ ঘাসে ম্যাগনেসিয়ামের উপস্থিতি অধিক। এই উপাদান প্রজনন বা সেক্স হরমোনের কার্যকারিতা স্বাভাবিক রাখে। এ উপাদান কোষ্ঠকাঠিন্য সারাইয়েও পারঙ্গম। এতে লিভার পরিশুদ্ধকারী উপাদানও আছে। তবে গমের কচি চারার সবচেয়ে উপকারী উপাদান হচ্ছে ক্লোরোফিল। এর আধিক্যের কারণে গমের কচি চারার অন্য নাম হয়েছে রক্ত উৎপাদক। রক্তহীনতা ও রক্তচাপ বৃদ্ধি সমস্যায় অনেকেই আক্রান্ত। কচি গমের রস রক্তহীনতা থেকে শতভাগ মুক্তি দিতে সক্ষম। উল্লেখযোগ্য, রক্তজনিত জটিল রোগ থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য নতুন আশার আলো সঞ্চার করেছে গমের কচি চারা। এর ক্লোরোফিল মানুষের টিস্যুতে সরাসরি দ্রবীভূত হয়। ফলে টিস্যু সতেজ হয়ে ওঠে। এ ছাড়া ক্লোরোফিল মানুষের দেহকোষের সুপার অক্সাইড র‌্যাডিকেল ধ্বংস করে। ফলে ত্বকে বার্ধক্যজনিত ছাপ পড়ে না। কচি গমপাতা কপার সমৃদ্ধ প্রোটিনের আধার। বয়সজনিত কারণে মানুষের শরীরে যে পরিবর্তন আসে, তা রুখে দিতে সক্ষম বিশেষ এ প্রোটিন। ত্বকের নানা প্রকার সংক্রমণ, আলসার, ত্বকের পুনর্গঠন ইত্যাদি চিকিৎসায় ক্লোরোফিল ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল। ফলে তা শরীরের ভেতর ও বাইরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করে। শরীরে জমে থাকা ওষুধের ক্ষতিকারক অবশিষ্টাংশও দূর করে ক্লোরোফিল। এ ছাড়া সাইনোসাইটিস চিকিৎসায় এটি বিশেষভাবে কার্যকর।
মানুষের অন্তঃকর্ণ ও বহিঃকর্ণের চিকিৎসাও সম্ভব গমের কচি চারার মাধ্যমে। অনেক সময় ঠান্ডা লেগে কানে ব্যথা হয়। ভেতরে ঘা বা ফোড়া হয়। ফোড়া ফেটে পুঁজ বের হয়, কান থেকে রক্ত পড়ে। এসব সমস্যায় রোগীকে এ ঘাসের রস খাওয়ার পাশাপাশি আক্রান্ত স্থানে লাগাতে হবে। চর্মরোগও প্রতিকার করে গমের চারার রস। সাধারণত শরীরের রক্ত দূষিত হলে নানা ধরনের চর্মরোগ দেখা দেয়। যেমন একজিমা, দূষিত ফুসকুড়ি ইত্যাদি। গমের চারার রস পান করলে রক্ত পরিষ্কার থাকে। পাশাপাশি কিডনিও পরিষ্কার রাখে এটি। এ ছাড়া হৃৎপিন্ড ও ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে এর রস। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি উৎকৃষ্ট পথ্য হতে পারে। হাড়ের যত্নেও কাজে আসে এ ঘাসের রস। মুখের পাইওরিয়ার সমস্যা দূর করতে এর মিশ্রণ লাগাতে হয় ক্ষতস্থানে। আর্থ্রাইটিসের চিকিৎসাতেও কার্যকর গমঘাস। এর দ্রবণে তুলা ভিজিয়ে আক্রান্ত অংশে প্রয়োগ করলে সপ্তাহান্তেই উপকার পাওয়া যাবে।
গমঘাসের জুস পান করলে শরীরে শক্তি বাড়ে। একই অনুপাতে কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। এতে থাকা অক্সিজেন মন খারাপ ভাব দূর করে মেজাজ ফুরফুরে রাখে। থাইরয়েডের সমস্যাও সমাধান হয় এ ঘাসের রস পানে।
রূপচর্চায়ও কম যায় না গমের কচি চারা। চুলের যৌবন ধরে রাখতে এর রস উপাদেয়। নিয়মিত পান করলে চুল ঘন কালো হওয়ার পাশাপাশি সিল্কিও হবে। গমের চারা বাটা মেহেদির মতো মাথার ত্বকে মাখলে খুশকি দূর হয়। গুণে ভরপুর কচি গম চারার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বিষক্রিয়ানাশক হিসেবেও এর কদর আছে।
 ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top