সেলুলয়েড I ত্রিভাঙ্গা
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা : রেনুকা শাহানা
প্রযোজনা : অজয় দেবগন ফিল্মস
সংগীত : সঞ্জয় চৌধুরী
সিনেমাটোগ্রাফি : বাবা আজমি
অভিনয় : কাজল, তানভির আজমি, মিথিলা পারকার, মানাভ গোহিল, কনওয়ালজিৎ সিং প্রমুখ।
মুক্তি : ১৫ জানুয়ারি ২০২১
দৈর্ঘ্য : ৯৫ মিনিট
মানবসম্পর্কের গল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে ত্রিভাঙ্গা সিনেমার কাহিনি। ত্রিভাঙ্গা মূলত একটি ওডিসি নৃত্য। অসমিয়াদের এই নাচ থিয়েটারকেন্দ্রিক। তা যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি সংবেদনশীলও। নৃত্যের ছন্দে পরিচালক তিন নারীর জীবনের গল্পকে সংবেদিত করে তুলেছেন। তিন প্রজন্মের তিনজন নারী- নয়নতারা, অনুরাধা এবং মাশার জীবনের আনন্দ-বেদনা, প্রাপ্তি-বঞ্চনা ও আত্মদর্শনের নানান প্রেক্ষাপট এই কাহিনির কেন্দ্রে রয়েছে।
জীবনের শিষ্টাচার, ভালো লাগার কারণগুলো এবং চারপাশের পছন্দনীয় বিষয়ের সঙ্গে মানুষের চিন্তার সহমত ও বৈপরীত্য পরিচালক সংহত চিত্রনাট্যের বুননে দৃশ্যরূপ দিয়েছেন। যেখানে মানবসম্পর্কের বৈচিত্র্য এবং সেসব পুনর্বিবেচনার গল্পই প্রাধান্য পেয়েছে। যে কাহিনিতে রয়েছে, যাদেরকে আমরা পছন্দ করি, ভালোবাসি, তাদের মধ্যকার সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার প্রয়োজনকে উদ্বুদ্ধ করার অনুপ্রেরণা। কেননা, কখনো কখনো নিজের জয়ও অন্যের ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে, তাই কেবল নিজের সংকটকেই বড় করে না দেখে দ্বিতীয়বার তা বিবেচনা করা দরকার- সেলুলয়েডে তাই অনুরণিত।
নয়নতারা একজন প্রখ্যাত লেখিকা। তিনি রক্ষণশীলতা অস্বীকার করে নিজের জীবনের পথ বেছে নিয়েছেন। ফলে তার আচরণের মধ্যে প্রথাগত কিছু নেই। শাশুড়ি ও স্বামী মিলানের প্রতি উপেক্ষা করার অভিযোগ এনে লেখার বিষয়ে তার অবিশ্বাস্য প্রেমকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়। তিনি দুই সন্তান- অনুরাধা ও রবীন্দ্রকে নিয়ে দূরে চলে যেতে চেয়েছেন। প্রথাগত বিয়েতে বিশ্বাস করেন না। নয়নতারার আরেক মেয়ে মাশা, যে জন্মেছে এক রাশিয়ান ব্যক্তির ঔরসে। নয়নতারার সঙ্গে তার বিয়ে হয়নি, তারা একত্রে বসবাস করতেন। রবীন্দ্র অনুরাধাকে শেখায় মাকে ঘৃণা করতে। ফলে নয়নতারা দীর্ঘকাল মানসিক অবসাদে কাটানোর পর স্ট্রোকের শিকার হয়, অবশেষে কোমায় চলে যায়।
ত্রিভাঙ্গা সিনেমা নারীর অন্তর্বেদনা ও টিকে থাকার গল্প। এখানে নারীর সন্তান ধারণের অধিকার, সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা, বিয়ের বিষয়ে নিজস্ব ভাবনা, শিল্পচর্চার মধ্য দিয়ে তার আত্মবিকাশ এবং সর্বোপরি সমাজের বিরুদ্ধমতের সঙ্গে সংগ্রামের নানান অভিজ্ঞতা দর্শকদের চিন্তা আলোড়িত করতে পারবে বলেই মনে হয়।
রেনুকা শাহানার পরিচালনায় ত্রিভাঙ্গা সিনেমায় প্রতিটি চরিত্রের মধ্য দিয়ে নারীর জীবনের বিচিত্র লড়াই উঠে এসেছে। চলচ্চিত্রটি মূলত নারীর পছন্দ, ভালো লাগা এবং তাদের অপূর্ণতার উদ্্যাপন। সিনেমার কাহিনি রচনাও করেছেন রেনুকা শাহানা। চলচ্চিত্রটির উল্লেখযোগ্য শক্তির জায়গা হলো এর অভিনয়শিল্পী। বিশেষত, তানভির আজমি, মানাভ গোহিল এবং কনওয়ালজিৎ সিং। প্রত্যেকেই থিয়েটারের অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ। ফলে এই সিনেমার কাহিনিকে গতিশীলতা দানে যুক্ত হয়েছে অভিনয়শৈলীর নাট্য সম্ভাবনা। তা ছাড়া কুনাল কাপুর, মিথিলা পারকার এবং কাজল- সবার অভিনয় প্রশংসনীয়। বিশেষ করে কাজল, প্রথাগত জনপ্রিয় হিন্দি চলচ্চিত্রের অভিজ্ঞতার বাইরে এসে তিনি নিজের প্রতিভা উজ্জ্বল করে তুলেছেন। যা এতটাই স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাভাবিক যে দর্শক সহজেই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন।
সিনেমাটির কস্টিউম ডিজাইন ও আবহসংগীত সময় এবং স্থানের সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তুলতে জুতসই হয়েছে। তা ছাড়া আলোর ব্যবহার, প্রপস- প্রতিটি উপকরণ যোজনায় নির্মাতা গভীর মনোযোগের পরিচয় রেখেছেন।
প্রিয়ঙ্কর অর্ঘ
কুইজ
১। মাশার বাবা কোন দেশের নাগরিক?
ক. তুরস্ক
খ. জাপান
গ. রাশিয়া
ঘ. জার্মানি
২। ত্রিভাঙ্গা মূলত কী?
ক. ওডিসি নৃত্য
খ. কৃষ্ণের ত্রিশূল
গ. অস্ত্রবিশেষ
ঘ. নদীর নাম
৩। ত্রিভাঙ্গা সিনেমার সংগীত পরিচালক কে?
ক. সঞ্জয় চৌধুরী
খ. অজয় দেবগন
গ. বাবা আজমি
ঘ. পঙ্কজ মল্লিক
গত পর্বের বিজয়ী
১। হাসিব আহমেদ, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম। ২. কনক, মিরপুর, কুষ্টিয়া। ৩. রাসেল রায়হান, উত্তরা, ঢাকা।