ফিচার I সুলভ আমিষ
শুধু দামি খাবারেই নয়, সস্তাগুলো থেকেও মেলে। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় খাদ্যের এই উপাদান। একটির সঙ্গে আরেকটি মিশিয়ে হাইপ্রোটিনের পদও তৈরি হতে পারে
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে আমিষ দরকার। মাংসপেশির উন্নতির পাশাপাশি এটি অপুষ্টি থেকেও রেহাই দেয়। তাই মানুষমাত্রই প্রোটিনযুক্ত খাবার খাওয়া জরুরি। যেকোনো রোগবালাই বিনাশে আমিষ খেতে পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। বিশেষ করে শরীরে ভাইরাস-ব্যাকটেরিয়ার প্রকোপ হলে অ্যান্টিবডি তৈরিতে খাদ্যের এই উপাদান দরকার হয়। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে বেশি বেশি আমিষ খাওয়ার প্রয়োজন পড়ে। তা ছাড়া জারক রস, হরমোন, প্লাজমা, হিমোগ্লোবিন, ভিটামিন ও এনজাইমের ক্রিয়ায় অংশ নিয়ে প্রোটিন শরীরকে সুস্থ রাখে। যদিও অনেকেই মনে করেন, প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবারের চড়া দাম। ফলে অর্থনৈতিকভাবে অসচ্ছল ব্যক্তিদের জন্য আমিষ খাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। নিত্য নিত্য মাছ-মাংস খাওয়া অনেক সচ্ছল ব্যক্তির পক্ষেও অসম্ভব হয়ে যায়। তবে আমিষসমৃদ্ধ খাবারমাত্রই যে দামি, এই ধারণা ঠিক নয়। অল্প দামেই মিলতে পারে বেশি প্রোটিনযুক্ত খাবার। সেগুলো সবার জন্যই গ্রহণীয়, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রত্যেক মানুষের দেহে তার ওজনের অনুপাতে আমিষের প্রয়োজন পড়ে। ৫০ কেজি ওজনের একজন ব্যক্তির শরীরে দৈনিক ৫০ গ্রাম প্রোটিন দরকার। আমিষের উৎস দুটি—প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ। প্রথমটিতে আছে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম ইত্যাদি। এগুলোর কয়েকটির দাম চড়া। তবে কমের মধ্যে মাছ মেলে। ডিমের মূল্যও অল্প। দুধ মোটামুটি দামের। উদ্ভিজ্জ প্রোটিনগুলো তুলনামূলকভাবে সস্তা। সেগুলো হচ্ছে ডাল, বাদাম, সয়াবিন, শিমের বীজ ইত্যাদি। জেনে নেওয়া যাক কম দামে মেলে এমন কিছু প্রোটিনের উৎস বিষয়ে। যেসব খাদ্য একটির সঙ্গে আরেকটি সুষমভাবে মেশালেও আমিষের পরিমাণ বাড়ে।
ডিম: সালফারযুক্ত উচ্চ জৈব প্রোটিন। পর্যাপ্ত অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে ডিমে। এটিকে আরও আমিষময় করতে চাইলে তাতে দুধ মিশিয়ে ওমলেট কিংবা পুডিং তৈরি করা যেতে পারে। ডাল যোগে রাঁধলেও প্রোটিন বাড়ে।
মাছ: জাতভেদে দাম কমবেশি হয়। তেলাপিয়া তুলনামূলকভাবে সস্তা। প্রাণিজ আমিষ খেতে চাইলে এই মাছ নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সাশ্রয়ী হবে। তবে মাছের আমিষ ধরে রাখতে চাইলে কম আঁচে রান্না করাই ভালো।
ডাল: প্রোটিনের সহজলভ্য উৎস। দু-তিন প্রকারের ডাল মিশিয়ে রাঁধলে তাতে প্রোটিনের পরিমাণ মাংসকে ছোঁয়। এই পণ্যের দাম মোটামুটি কমই থাকে। মসুর ডালে আমিষ বেশি। হালুয়া ও বড়া করে খেলে কিংবা বেসন হিসেবে ব্যবহার করলেও এর প্রোটিন অক্ষত থাকে।
খিচুড়ি: চাল, ডাল ও তেল মিশিয়ে রান্না করা খিচুড়িও সস্তায় আমিষের ভালো উৎস। তা ছাড়া খাবারটি ছোট-বড় সবার জন্যই উপযোগী। এটি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। চাল, ডাল ও তেলের মিশ্রণ এটিকে উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার বানিয়ে তোলে।
দুধ: দাম কিছুটা বেশি হলেও অল্প দুধে বেশি প্রোটিন মেলে। প্রতিদিন এক কাপ খেলেই চলে। এতে থাকে ক্যাজিন ও ল্যাকেটান অ্যালবুমিন। দুটোই প্রোটিন।
বরবটি, ঢ্যাঁড়স, শজনেপাতা, তেঁতুলপাতা, কাঁচা ছোলা ও মটরশুঁটিও আমিষের ভালো উৎস। যদিও ঋতুর প্রথম দিকে সবজির দাম চড়া থাকে, কিন্তু ভরা সিজনে তা কমে সাধ্যের মধ্যে চলে আসে। ঢ্যাঁড়সের বীজও আমিষের আধার। শজনেপাতা ভর্তা কিংবা রান্না করে খেলে প্রোটিন মেলে। তেঁতুলপাতার ভর্তার ক্ষেত্রে একই কথা।
সয়াবিন: উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের সেরা উৎস। মাত্র এক কাপ সয়াবিনে প্রোটিন থাকে প্রায় ২৯ গ্রাম।
পালংশাক: দামে কম, কিন্তু প্রোটিনের উৎস। ১০০ গ্রাম পালংয়ে ২ গ্রাম প্রোটিন থাকে। অন্যান্য সস্তা প্রোটিনের সঙ্গে এটিকে সহপদ হিসেব যুক্ত করা যেতে পারে।
বাদাম: চিনাবাদামে প্রোটিন বেশি। দামেও সস্তা।
ফল থেকেও মেলে আমিষ। কিছু কিছু ফলের দাম ভরা মৌসুমে কমে যায়। আবার কোনো কোনোটি সব সময়েই সস্তা।
পেয়ারা: সহজলভ্য। কম দামেই মেলে। প্রতি কাপ পেয়ারায় ৪.২ গ্রাম প্রোটিন আছে।
কাঁঠাল: এখন বাজারে মিলছে ফলটি। অনেকেই কাঁঠাল খেতে চান না। তবে এটিও প্রোটিনসমৃদ্ধ। এক কাপে কাঁঠালে প্রোটিন আছে ২.৮ গ্রাম।
কলা: সস্তা ফল। বড়-ছোট সবাইকে খাওয়ানো যায়। একটি মাঝারি আকারের কলায় প্রোটিন থাকে ১.৩ গ্রাম।
কমলা: শুরুর দিকে দাম বেশি থাকলেও শীতে কমলার দাম কমে আসে। মাঝারি সাইজের একটি ফল থেকে ১.২ গ্রাম প্রোটিন মেলে। তবে রস বের করলে প্রোটিনের পরিমাণ কমে যায়।
শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে আমিষের দরদাম নিয়ে চিন্তা না করলেও চলে। উল্লিখিত প্রাণিজ ও উদ্ভিজ্জ আমিষগুলো মোটামুটি সাধ্যের মধ্যেই থাকে। দৈনিক সুষম খাবারের নিশ্চয়তার জন্য খাদ্যতালিকায় প্রোটিন রাখা চাই। অনেকেই বলেন, ওষুধের চেয়ে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে নেওয়াই ভালো। তাতে শরীর নিজেই রোগবালাইয়ের সঙ্গে লড়াই করে। তবে অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণের বেলায় সাবধান। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।
ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট