কুন্তলকাহন I রৌদ্রদগ্ধ স্ক্যাল্পের জন্য
মাথার ত্বক রোদে পুড়ে নানান অস্বস্তির জন্ম দিচ্ছে? প্রতিকারের আছে ১০টি উপায়। লিখেছেন সিফাত বিনতে ওয়াহিদ
মাথার ত্বকে জ্বালাপোড়া হচ্ছে? গরমের সময় তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এ সময় ঘরের বাইরে গেলে ত্বকের ওপর এর প্রভাব পড়ে। ভাদ্র মাসের তীব্র রোদে মাথার ত্বক পুড়ে যাওয়া স্বাভাবিক বিষয়। স্বাস্থ্যকর মাথার ত্বক ছাড়া চুল সুন্দর রাখা সম্ভব হয় না। এ জন্য মাথার ত্বকের যত্ন নিতে হবে পরিপূর্ণভাবে।
শরীরের যেকোনো অংশের উন্মুক্ত ত্বক সূর্যের অতিবেগুনি (ইউভি) রশ্মির যদি খুব বেশি পরিমাণে সংস্পর্শে আসে, তবে তা জ্বালাপোড়া শুরু হয়। অধিকাংশ মানুষই মাথার ত্বকের এ রকম সংবেদনশীলতার সমস্যায় ভোগেন।
রোদে পোড়া মাথার ত্বকের লক্ষণগুলো মূলত দেহের অন্য যেকোনো উন্মুক্ত ত্বকের পোড়া অংশের মতোই। সাধারণত মাথার ত্বক পুড়ে গেলে লালতা; যেকোনো স্পর্শে গরম অনুভূতি হওয়া, ব্যথা অনুভব হওয়া, ফোসকা পড়াসহ বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যায় ভুগলে মাথাব্যথা; জ্বর, বমি বমি ভাব, অবসাদসহ নানা শারীরিক সমস্যাও দেখা দেয়। এসব লক্ষণ ত্বক পোড়ার ঘণ্টাখানেক পর থেকে ২৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে যেকোনো সময় দেখা দিতে পারে।
মাথার পোড়া ত্বকের সমস্যা নিয়ে অনেকেই বিষণ্নতায় ভোগেন। সমাধান না জানার কারণে দীর্ঘ ভোগান্তিতেও পড়তে হয় কাউকে কাউকে। কিছু কৌশল অবলম্বন করলে ঘরে বসেই এসব সমস্যা থেকে উত্তরণ পাওয়া সম্ভব। কমপক্ষে এক সপ্তাহ বা সানবার্ন নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত এই সাধারণ পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে—
ঠান্ডা পানির শাওয়ার
মাথার ত্বক বা শরীরের যেকোনো জায়গায় রোদে পুড়লে প্রথম কাজটি হলো জ্বালাপোড়া কমানোর বন্দোবস্ত করা। ক্ষতিগ্রস্ত অংশে ঠান্ডা পানি দিতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে বরফ এড়িয়ে যাওয়া ভালো। বরফ ব্যবহারের পর সাময়িক যন্ত্রণা কমলেও দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির শঙ্কা থাকে। শাওয়ারের নিচে ঠান্ডা পানি ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, যতক্ষণ না জ্বালাপোড়া কমে।
ওভার-দ্য-কাউন্টার ব্যথার ওষুধ নেওয়া
ওভার-দ্য-কাউন্টার ওষুধগুলো রোদে পোড়ার ব্যথা এবং জ্বালাপোড়া উভয়েরই চিকিৎসায় সাহায্য করে। এনএসএআইডিএস (আইবুপ্রোফেন) বা টাইলেনল (অ্যাসিটামিনোফেন) রোদে পোড়ার সঙ্গে সম্পর্কিত ব্যথা কমাতে সহায়ক। অনেক স্কিন বিশেষজ্ঞই রোদে পোড়া প্রদাহকে কমানোর জন্য কাউন্টার-প্রদাহবিরোধী ওষুধের সুপারিশ করেন। বেশির ভাগ মানুষের বাড়িতেই এই ওষুধগুলো থাকে। তবে এসব ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো এবং কোনোক্রমেই নির্ধারিত ডোজের বাইরে ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না।
কোল্ড কম্প্রেস ব্যবহার করা
দিনে দুবার কোল্ড কম্প্রেস ব্যবহারে ব্যথা উপশম করা সম্ভব। তবে এ ক্ষেত্রে সরাসরি ত্বকে বরফ প্রয়োগ করলে ভালোর চেয়ে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। বরফের পানি দিয়ে একটা কোল্ড ব্যাগে ভরে ত্বকে লাগালে উপকার মিলবে। আপনি চাইলে একটি স্প্রে বোতলে বরফ পানির সঙ্গে সয়া দুধও যুক্ত করা যাবে, অথবা শীতল কম্প্রেসে সয়া দুধ মেশানো যায়। এটা তৈরির জন্য বরফ বা ঠান্ডা পানির সঙ্গে একটি বড় বাটিতে অ্যালো বা সয়া যোগ করতে হবে। এরপর ঠান্ডা পানিতে ভেজানোর জন্য বাটিতে বেশ কয়েকটি নরম কাপড় রাখতে হবে। এই কাপড়গুলো ২০ মিনিটের জন্য পোড়া ত্বকে প্রয়োগ করতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী পুনরাবৃত্তি হবে।
অ্যালোভেরা জেল দিয়ে চিকিৎসা করা
শরীরের যেকোনো অংশের পোড়া থেকে আরাম পেতে অ্যালোভেরা জেল খুব উপকারী। অ্যালোভেরা জেল ময়শ্চারাইজিং এবং প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। হাইড্রেশন এবং প্রদাহবিরোধী বৈশিষ্ট্যগুলোর সংমিশ্রণ উপস্থিত থাকায় অ্যালোভেরা জেল রোদে পোড়ার সমস্যা থেকে উত্তরণের নিখুঁত একটি উপকরণ। প্রতিদিন কয়েকবার পোড়া অংশে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। মাথার ত্বক পোড়ার পর প্রথম কয়েক দিন এই চিকিৎসাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
হাইড্রোকোর্টিসন ক্রিম লাগানো
মাথার ত্বক পোড়ার প্রতিকার হিসেবে দিনে একবার ওভার-দ্য-কাউন্টার হাইড্রোকোর্টিসন ক্রিম প্রয়োগ করার পরামর্শ দেন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞরা। হাইড্রোকোর্টিসন সাধারণত ফোলা, চুলকানি এবং জ্বালা নিরাময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া সাত দিনের বেশি হাইড্রোকোর্টিসন ব্যবহার করা উচিত নয়। যদি ত্বক পোড়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে আপনি পুড়ে যাওয়া অংশের কোনো উন্নতি দেখতে না পান, তবে অবশ্যই একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে দ্রুতই যোগাযোগ করা উচিত হবে।
অক্লুসিভ টপিক্যালস দিয়ে কভার করা
হাইড্রোকোর্টিসন ক্রিম লাগানোর পর, হাইড্রেশনের জন্য ত্বকে একটি প্রলেপ রাখা গুরুত্বপূর্ণ। ত্বককে মোলায়েম রাখতে অ্যাকুয়াফোর হিলিং মলম বা সেরাভে হিলিং মলম ব্যবহার করা যেতে পারে। এরা ত্বকের আর্দ্রতা বন্ধ করতে সাহায্য করে। সিরামাইডযুক্ত লোশন ব্যবহার জরুরি এবং যদি সম্ভব হয়, তবে তা মাথার ত্বকে প্রয়োগ করতে হবে। অ্যাকুয়াফোরের মতো আরও টপিক্যাল (এখন একটি স্প্রেতে পাওয়া যায়, যা সহজেই মাথার ত্বকে প্রয়োগ করা যায়) এবং ভ্যাসলিনও ত্বককে সুস্থ করায় সাহায্য করতে পারে। এগুলো ত্বকের পোড়াসংক্রান্ত সমস্যা নিরাময় করে।
হিট স্টাইলিং এড়িয়ে চলা
হট রোলার, কার্লিং আয়রন, স্ট্রেইটেনার এবং ব্লোড্রায়ারের মতো হিট-স্টাইলিং সরঞ্জামগুলো মাথার ত্বক নিরাময়ের সময় এড়ানো প্রয়োজন। এ সময় গরম পানিতে গোসল করাও এড়ানো উচিত। জটিল স্টাইলিং এড়ানোর চেষ্টা থাকা দরকার; কারণ, চুল আঁচড়ানোর সময় বা ব্রাশ করার সময় দুর্ঘটনাক্রমে পোড়া ত্বকে লেগে জ্বালা করতে পারে।
কোমল ক্লিনজার ব্যবহার করা
ত্বক নিরাময়ের সময় মৃদু ক্লিনজার এবং স্কিনকেয়ার পণ্যগুলো বেশি ব্যবহার জরুরি। ব্রণের জন্য প্রয়োজন রেটিনয়েড, অ্যাসিড এবং যেকোনো ওষুধযুক্ত টপিক্যাল এড়িয়ে চলা। এ সময় সুগন্ধযুক্ত বা ভেষজ ওষুধযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার না করাই ভালো। এসব ব্যবহারে আরও জ্বালাপোড়া হতে পারে।
সূর্য থেকে দূরে থাকা
সরাসরি সূর্যের রোদ এড়িয়ে কিছুটা ছায়ায় থাকার চেষ্টা করতে হবে। রোদ থেকে মাথার ত্বক বাঁচাতে টুপি বা ক্যাপ ব্যবহার জরুরি। এ সময় নিয়মিত রোদের সংস্পর্শে গেলে নিরাময়ের সময় দীর্ঘায়িত হবে। এ ছাড়া সানবার্নের লক্ষণগুলোও আরও বাড়বে। ত্বকের পোড়া রোধে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে পোড়া অংশকে আবারও পোড়া থেকে দূরে রাখা। এ ক্ষেত্রে হেলিওকেয়ার সাপ্লিমেন্ট এবং সূর্য-সুরক্ষা টুপি মাথার ত্বকের যেসব জায়গায় সানস্ক্রিন প্রয়োগ করা কঠিন, সেসব স্থানকে রোদে পোড়া থেকে সাহায্য করতে পারে।
পানির পরিমাণ বাড়ানো
ত্বক ভেতর থেকে সেরে ওঠে, তাই রোদে পোড়া মাথার ত্বককে পুনরায় হাইড্রেট করা আপনার শরীরকে হাইড্রেট করার মাধ্যমে শুরু হয়। পুড়ে যাওয়ার সময় পুরো শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে, তাই প্রতিদিন অতিরিক্ত পানি এবং ইলেকট্রোলাইট পান করতে হবে। যারা রোদে পোড়া রোগে ভুগছেন, তাদের প্রতিদিনের পানির পরিমাণ বাড়ানো উচিত।
মডেল: নাজিয়া
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান