বহুরূপী I চকোলেট চমক
ছোটবেলায় রূপকথায় চকোলেটে তৈরি ডাইনি বুড়ির বাসার কথা আমরা অনেকেই পড়েছি, যেখানে বাচ্চারা চকোলেট খেতে খেতে বুড়ির খপ্পরে পড়েছিল। ছোটদের দোষ কী? চকোলেট এমন এক বস্তু, যা দেখলে বড়দের জিবেও পাচক রস ভিড় করে! সুস্বাদু এই খাদ্যেরও রয়েছে নানা প্রকার। এর মধ্যে মিল্ক চকোলেটের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। দুধ ও চিনির সমন্বয়ে তৈরি এই চকোলেটে কখনো কখনো ১০ থেকে ৪০ শতাংশ কোকো থাকে। মিল্ক চকোলেট ডার্ক ও বিটার সুইট চকোলেটের তুলনায় স্বাদে বেশ মিষ্টি; তবে রং তুলনামূলক হালকা, আর তাতে চকোলেটের স্বাদ অপেক্ষাকৃত কম।
হোয়াইট চকোলেটে কোকো মাখন ছাড়া চকোলেট লিকার কিংবা অন্য কোনো কোকো উপাদান থাকে না। এতে চকোলেট স্বাদ খুব একটা নেই; তবে ভ্যানিলার মিহি স্বাদ রয়েছে। এই চকোলেটের উপাদান বলতে ন্যূনতম ২০ শতাংশ কোকো মাখন, সর্বোচ্চ ৫৫ শতাংশ চিনি এবং ১৫ শতাংশ দুধের কঠিন পদার্থ থাকে। অন্যদিকে, ডার্ক চকোলেটে থাকে চকোলেট লিকার, চিনি ও কোকো মাখন। এতে ইমালসিফায়ার হিসেবে সাধারণত থাকে লেসিথিন; স্বাদের জন্য যোগ করা হয় ভ্যানিলা মিশ্রণ। এই চকোলেটে দুধের কঠিন পদার্থ থাকে না। ডার্ক চকোলেট বারে কোকোর পরিমাণ থাকে ৩০ থেকে ৮০ শতাংশ। বিটার সুইট চকোলেট ও সেমি সুইট চকোলেটও অনেকটা ডার্ক চকোলেট, যা সাধারণত বেকিংয়ের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। ডার্ক চকোলেট খেলে শরীর থেকে টক্সিক উপাদান বের হয়ে যায়। ফলে দেহে ক্যানসার সেল জন্মানোর ঝুঁকি কমে।
সেমি সুইট চকোলেটে কোকো সলিড থাকে কমপক্ষে ৩৫ শতাংশ। এটি মূলত বিটার সুইট চকোলেট এবং সুইট ডার্ক চকোলেটের মাঝামাঝি সংস্করণ। রেসিপির ওপর নির্ভর করে চকোলেটটি সেমি সুইট, বিটার সুইট কিংবা বেকিং চকোলেট হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) তথ্য অনুসারে, বিটার সুইট চকোলেটে কমপক্ষে ৩৫ শতাংশ কোকো থাকা চাই; তবে বেশির ভাগ বিটার সুইট বারে তা থাকে ৫০ শতাংশ, কোনো কোনোটিতে ৮০ শতাংশও। এ ধরনের চকোলেট সাধারণত অন্যান্য চকোলেটের চেয়ে কড়া ও তিতা স্বাদের হয়ে থাকে।
এদিকে, আনসুইটেন্ড চকোলেট ঠিক তার নামের মতোই। খাঁটি চকোলেট লিকারের সঙ্গে কোকো বিন দিয়ে বানানো। বেকিং চকোলেট নামেও এটি পরিচিত। কেননা, এই চকোলেট সাধারণত সরাসরি খাওয়ার পণ্য নয়। বরং রান্নায় ব্যবহার করা এবং স্বাদ আরও ভালো করতে অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে মেশানো হয়। প্রচলিত বিশ্বাসের বিপরীতে হলেও এ কথা সত্য, খাঁটি চকোলেটের স্বাদ খুব একটা সুবিধার নয়। যাহোক, এটি রেসিপিগুলোতে একটি গভীর ও সমৃদ্ধ চকোলেটের স্বাদ এনে দেয়। অন্যান্য চকোলেট বানাতেও কাজে লাগে।
বলে রাখি, যদিও কোকো পাউডার খুব তেতো, তবু তা সাধারণত রেসিপিতে ব্যবহার করা হয়। চকোলেট গলানো ছাড়াই এটি সহজে ময়দা ও বাটারের সঙ্গে মিশে যায়।
আরেক চকোলেটের নাম সুইট জার্মান। এটি গাঢ় বেকিং চকোলেট, যা স্যামুয়েল জার্মান নামের এক ব্যক্তি প্রথম তৈরি করেছিলেন। তার নামেই নামকরণ। বেকারদের সুবিধার্থে তিনি এতে সরাসরি চিনি মিশিয়েছিলেন। ফলে সুইট জার্মানের স্বাদ সেমি সুইট চকোলেটের চেয়ে মিষ্টি। এ ধরনের চকোলেট সাধারণত জার্মান চকোলেট কেকে ব্যবহৃত হয়। তাতে তিন স্তরের চকোলেট কেকের সঙ্গে মেশানো থাকে চিনি, মাঝখানে বিরাজ করে গুই ফ্রস্টিং এবং সবার ওপরে থাকে নারকেল ও পেকান।
কোভার্চার চকোলেট বেশ ব্যয়বহুল। এতে অন্যান্য চকোলেটের তুলনায় কোকো মাখনের পরিমাণ বেশি। উচ্চ কোকো মাখনের উপাদান একে দ্রুত ও সমানভাবে গলে যেতে সাহায্য করে, যা টেম্পারিং ও ক্যান্ডি তৈরির প্রক্রিয়াকে করে তোলে নিখুঁত। বাজারে সাধারণত মিল্ক, হোয়াইট ও ডার্ক- এই তিন ধরনের কোভার্চার চকোলেটের দেখা মেলে।
আরও আছে রুবি চকোলেট। চকোলেট সাম্রাজ্যের নতুন অতিথি। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে চীনে প্রথমবার তৈরি করা হয় এটি। প্রাকৃতিকভাবে ইকুয়েডর ও ব্রাজিলে পাওয়া রুবি কোকো বিন থেকে বানানো এই চকোলেটের আভা গোলাপি। ভালো স্বাদ পেতে এতে হোয়াইট চকোলেট ও বেরির মিশ্রণ যোগ করেন অনেকেই।
ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: ইন্টারনেট