তনুরাগ I পামিস স্টোন
ঘরে কিংবা স্যালনে—পায়ের পরিচর্যায় আবশ্যক অনুষঙ্গ। ব্যবহার করা হচ্ছে দেহের আরও কিছু অংশে। বহু বছর ধরে
পামিস স্টোন মূলত একধরনের ভলকানিক রক। অর্থাৎ আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে উত্থিত লাভা শীতল হয়ে পানির সঙ্গে মিশে এটি তৈরি হয়। দেখতে এক টুকরো স্পঞ্জের মতো। গ্যাস বাবল ভেতরে উপস্থিত থাকে বলে ছোট ছোট ছিদ্র তৈরি হয় এতে। এগুলো পানি ধারণ করতে পারে। এর ফলে সহজে ভাঙে না এই স্টোন। পাথর হলেও ভারী নয় একেবারেই। প্রাকৃতিক পামিসের রং আর্দি টোনের হয়ে থাকে। বাদামি, গ্রে অথবা কালো। দীর্ঘ সময় টিকে থাকে। রাসায়নিকের উপস্থিতি না থাকায় ত্বকবান্ধব হিসেবে বিবেচিত বিশ্বজুড়ে।
ন্যাচারালের পাশাপাশি আছে সিনথেটিক পামিস। তৈরি হয় রিসাইকেলড গ্লাসের ব্যবহারে। স্টোনটির যেকোনো এক পাশে দেখা যায় বেশ বড় আকারের ছিদ্র। অন্য দিকটি বিপরীত। ছিদ্রের আকার ছোট। এই দুই ধরনের পামিসের মধ্যে সিনথেটিকের দাম তুলনামূলক কম।
সুফল-সুবিধা
হ্যান্ডি, লাইট ওয়েট টুল এটি। পেডিকিওর ও মেনিকিওরের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ। বিশেষ করে গোড়ালি পরিষ্কার করার জন্য। পায়ের এই অংশের মরা চামড়া দূরে পামিস বেশ কার্যকর। আবার দেহের যে স্থানগুলোর চামড়া তুলনামূলক কিছুটা শক্ত টেক্সচারের হয়ে থাকে, যেমন কনুই, হাঁটু; এ জায়গাগুলোতেও ব্যবহার করা যেতে পারে। পেলবতা বাড়িয়ে, কোমল করে তোলার জন্য।
ত্বকের মসৃণতা নিয়ে সচেতনতা পামিস স্টোনের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ। দূষণ এবং নিত্যদিন প্রসাধনের ব্যবহারে ত্বকে আলাদা আস্তর তৈরি হয়। স্বাভাবিক কোমলতা কমে আসে। এ ছাড়া মৃতকোষ জমেও চেহারা দেখায় অনুজ্জ্বল। পামিস স্টোনের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে যা পরিষ্কার করা সম্ভব হয়; ফিরিয়ে আনা যায় হারানো উজ্জ্বলতা।
পায়ের গোড়ালি থেকে শক্ত সেলুলোজ উঠিয়ে নেওয়ার ফলে ত্বকের ওপরের অংশ ভারমুক্ত হয়। ব্যথাও অনেক ক্ষেত্রে কমে আসে। ত্বকের মসৃণতা বাড়ে। অনেক ক্ষেত্রে অবাঞ্ছিত চুল তুলে আনতেও ভূমিকা রাখে পামিস।
ব্যবহারবিধি
হাঁটু কিংবা কনুই—যেখানেই ব্যবহার করা হোক, সে জায়গা আগে ভিজিয়ে নিতে হবে। গরম কিংবা ঠান্ডা পানি নয়, ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে। পাঁচ থেকে পনেরো মিনিট পানির সরাসরি সংস্পর্শে স্থানগুলো কোমল হয়ে আসবে। পামিস স্টোনটি শুধু পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করে নিলেই চলবে। ভেজা অবস্থায় ব্যবহার করলে ত্বকে বিঁধবে কম।
পামিস স্টোন ব্যবহারের সময় চাপ প্রয়োগ করলে ময়লা উঠে আসে। তবে ধীরে ধীরে। মৃদু চাপ দিয়ে ব্যবহারের চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। প্রয়োজনে চাপের মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ানো যাবে, তবে ওভার প্রেশারে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। পায়ের থেকে হাতের চামড়া পাতলা হওয়ায় প্রেশারও প্রয়োজন পড়ে তুলনামূলক কম। দুই থেকে তিন মিনিট সময় নিয়ে এক্সফোলিয়েশনে ত্বকে আকাঙ্ক্ষিত মসৃণতা পাওয়া যেতে পারে।
কলাস আর কর্ণ অর্থাৎ ত্বকে সৃষ্ট শক্ত এবং পুরু স্তরে পামিস ব্যবহারের আগে এদের গুরুত্বের কথা মাথায় রাখা জরুরি। কারণ, তুলনামূলক শক্ত এই অংশগুলো ত্বক সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে। তাই সাবধানতা জরুরি। ধীরে ধীরে। সহনশীলতার সঙ্গে। যাতে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
পামিস স্টোন ব্যবহারের পর মৃতকোষগুলো ত্বকের উপরিস্তরে জমা হয়। তাই সঙ্গে সঙ্গে শাওয়ার নিয়ে নিলে ত্বকের সজীবতা বেশ উপভোগ করা যাবে।
এক্সফোলিয়েশনের পরে
মৃতকোষ আর ময়লা পরিষ্কার—ব্যস, কাজ শেষ—এমনটা ভাবা ঠিক নয়। এক্সফোলিয়েশন শেষে হাত-পা টাওয়েল ড্রাই করে এরপর কোনো ভারী ক্রিম ব্যবহার করা জরুরি। এতে ম্যানুয়াল এই এক্সফোলিয়েশনের সময় মাইক্রোব্রেশনের ফলে যদি কোনো মাইক্রো ক্র্যাক তৈরি হয়, তা সেরে যায়। এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে সেরামাইড, পেপটাইড, শিয়া বাটার, অ্যালোভেরা, হায়ালুরনিক অ্যাসিড, বোটানিক্যাল অয়েল, ম্যাংগো সিড বাটার, অ্যাভোকাডো বাটার অথবা নারকেল তেল।
কত দিন পরপর
এর কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। অনেকে এক দিন পরপর ব্যবহার করেন। আবার অনেকে সপ্তাহে এক দিন পামিস রাবিংয়ে সন্তুষ্ট। যদিও তা নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ইচ্ছার ওপর।
মানা, না মানা
হাঁটু, কনুই বা পায়ের পাতার শক্ত ত্বকস্তর ছাড়া অন্য জায়গায় ব্যবহার না করাই ভালো
পামিস স্টোন দিয়ে এক্সফোলিয়েশন শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে সেরাম ব্যবহার না করাই ভালো
ড্রাই স্কিনে পামিস স্টোন ব্যবহারে ক্ষত তৈরি হতে পারে; তাই সতর্কতা জরুরি
একজনের পামিস স্টোন অন্য কেউ ব্যবহার করলে ত্বকের সমস্যা একজন থেকে অন্যজনে সংক্রমিত হতে পারে
এক্সফোলিয়েশনের পরে ময়শ্চারাইজারের ব্যবহারে ত্বক সজীবতা ফিরে পাবে
পায়ের ত্বকে কোনো ধরনের ব্যথা থাকলে সেই অবস্থায় পামিস স্টোন ব্যবহার না করাই ভালো
পামিস ব্যবহারে যদি পায়ের চামড়া লাল হয়ে আসে, তাহলে তা এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
পামিস পরিষ্কারে
ব্যবহারের পর অনেক সময় ত্বকের মৃতকোষ পামিস স্টোনের ছিদ্রগুলোর মধ্যে আটকে থাকে। এমন বিল্ডআপ স্কিন সেল ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি করে স্টোনে, যা পরবর্তী ব্যবহারের সময় ত্বকের স্পর্শে এসে ইরিটেশন তৈরি করতে পারে। এ ধরনের সমস্যা এড়াতে ব্যবহারের পরে পামিস স্টোনটি গরম পানির পাত্রে ভিজিয়ে, জীবাণুনাশক সাবানের সাহায্যে ধুয়ে নিতে হবে। আরও ভালোভাবে পরিষ্কার করতে ব্রিস্টল ব্রাশ দিয়ে ভালোভাবে ঘষে মেজে নেওয়া যেতে পারে। ব্লিচ আর ভিনেগারের মিশ্রণ ব্যবহারেও ব্যাকটেরিয়া থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। রোজ না হলেও সপ্তাহে অন্তত একবার এ পদ্ধতিতে পরিষ্কার করে নিলে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যাবে পামিস।
সারাহ্ দীনা
ছবি: সংগ্রহ