সেলুলয়েড I ফলেন লিভস
মূল শিরোনাম: Kuolleet lehdet
চিত্রনাট্য ও পরিচালনা: আকি কাউরিসমাকি
চিত্রগ্রহণ: তিমো সালমিনেন
সম্পাদনা: সামু হেইককিলা
অভিনয়: আলমা পয়স্তি, ইয়ুস্সি ভাতানেন
সময়ব্যাপ্তি: ৮১ মিনিট
ভাষা: ফিনিশ
দেশ: ফিনল্যান্ড, জার্মানি
মুক্তি: ২০২৩
ফিনিশ মাস্টার ফিল্মমেকার আকি কাউরিসমাকির সিনেমা মানেই পাদপ্রদীপের আড়ালে পড়ে যাওয়া প্রান্তিক মানুষের জীবনের আনন্দ-বেদনার চিরন্তন কাব্য। আশির দশকে ক্যারিয়ার শুরু করা এই চলচ্চিত্রকার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে যখন নিজেকে সিনেমার ময়দান থেকে গুটিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, শৈল্পিক চলচ্চিত্রের জগতে স্বভাবতই নেমে এসেছিল মন খারাপের মেঘ। আবার সেই তিনিই, খানিক বিরতি শেষে, জানান দিয়েছিলেন অবসর ভাঙার; তাতে তার চলচ্চিত্রগুলোতে থাকা সূক্ষ্ম হাস্যরস দেখে একজন সাধারণ দর্শকের ঠোঁটের কোণে যেমন ফুটে ওঠে মুচকি হাসি, তেমন আভা আবারও ছড়িয়েছিল আনন্দমুখরতায়। তার সেই প্রত্যাবর্তনের সৃষ্টিফল ‘ফলেন লিভস’।
ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কির এক মধ্যবয়সী একলা নারীর গল্প এটি। সুপারমার্কেটে অড জব করে সে। একাকিত্ব কাটাতে, কর্মদিবস শেষে, সহকর্মীর সঙ্গে ঢুঁ মারে পানশালায়। সেখানে এক লোকের সঙ্গে পরিচয় ঘটে তার। লোকটিও শ্রমজীবী এবং একলা মানুষ। আর ঘটনাচক্রে তারা দুজনই কর্মচ্যুত হয়। আবার খুঁজে ফেরে নতুন কাজ। পেয়েও যায়। বস্তুত খুঁজে ফেরে নিজের মানুষ! এভাবে নানা ঘটনা পরিক্রমায় পরস্পরের মধ্যে খুঁজে পায় ভালোবাসার তাড়না।
তাদের সম্পর্ক আকাঙ্ক্ষা থেকে বাস্তবে রূপ নেওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায় লোকটির মাথা গরম স্বভাব আর পানাহার আসক্তি। সঙ্গে খামখেয়ালিপনাও। ইতিমধ্যে আশা ছেড়ে দেয় মেয়েটি। একদিন রাস্তা থেকে তুলে নেয় এক পথকুকুর। একাকিত্ব কাটাতে। সেই কুকুর নিয়ে পার্কে হাঁটতে গিয়ে একদিন জানতে পারে, মনে দোলা দেওয়া সেই খেয়ালি লোকটি মারাত্মক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে এখন; রীতিমতো কোমায়।
হাসপাতালে ছুটে যায় নারীটি। সঙ্গ দেয় সেই লোককে। গল্প করে তার সঙ্গে। তাকে বই পড়ে শোনায়। আত্মার শুশ্রূষা পেয়ে লোকটির শরীরও সেরে ওঠে ধীরে ধীরে। তারপর একদিন সেই লোক হাসপাতাল ছাড়ে; নারীটি ও তার কুকুরের সঙ্গ নিয়ে হেঁটে যেতে থাকে শহরের রাস্তায়। অবশেষে তাদের সম্পর্ক রূপ নিচ্ছে বাস্তবে—এমন ইঙ্গিত রেখে শেষ হয় ‘ফলেন লিভস’।
মুক্তির আগে থেকেই এই সিনেমা নিয়ে কৌতূহলের শেষ ছিল না। বিশেষত আর্ট হাউস ফিল্ম সার্কেলগুলোতে। এর মূলে স্বয়ং ফিল্মমেকার কাউরিসমাকি, যেমনটা বলেছি আগেই। সিনেমাটি দুনিয়ার সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের গেল আসরে আসরসেরা পুরস্কার পাম দি’অরে নমিনেশন লাভ করে। জিতে নেয় জুরি প্রাইজ। এবারের অস্কারেও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র বিভাগে পায় নমিনেশন। তাতে শর্ট লিস্টে সেরা ১৫টি চলচ্চিত্রের এটি একটি।
পুরস্কারের হিসাব যা-ই বলুক, বরাবরের মতোই আকি কাউরিসমাকির সিনেমামাত্রই যে প্রান্তিক জীবনকে আতশি কাচের নিচে রেখে, জীবনের মর্মভেদী রূপ-রস দিয়ে যাচাই করার ব্যাপার, তার সাক্ষ্য আরও দারুণভাবে রেখেছে এই সিনেমাও।
আরিফুল ইসলাম
কুইজ
১। ‘ফলেন লিভস’ কোন ভাষার চলচ্চিত্র?
[ক] ফিনিশ
[খ] ফ্রেঞ্চ
[গ] জার্মান
[ঘ] ইংরেজি
২। আকি কাউরিসমাকি ক্যারিয়ার শুরু করেন কোন সময়কালে?
[ক] পঞ্চাশের দশক
[খ] আশির দশক
[গ] নব্বইয়ের দশক
[ঘ] ত্রিশের দশক
৩। চলচ্চিত্রটি কান ফেস্টিভ্যালে কোন পুরস্কার লাভ করে?
[ক] পাম দি’অর
[খ] বেস্ট ফরেন ফিল্ম
[গ] বেস্ট ফিকশন
[ঘ] জুরি প্রাইজ
গত সংখ্যার বিজয়ী
১. রাকিবুল হাসান, ঢাকা।
২. মো. আরিফুল হক, বরিশাল।
৩. লাকি আকতার, ধানমন্ডি, ঢাকা।