যাপনচিত্র I প্রিয় প্রিয়ন্তী
প্রিয়ন্তী উর্বী। প্রতিশ্রুতিশীল অভিনেত্রী ও মডেল। নাটক, ওয়েব সিরিজ, সিনেমা, বিজ্ঞাপন—সব মাধ্যমেই সাবলীল পদচারণা। চোখধাঁধানো সৌন্দর্য আর ভুবনমোহিনী হাসির অধিকারী এই তারকার একান্ত জীবন কেমন?
‘প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ততা থাকে। এর ফাঁক গলে কখনো বিরতি পেলে সেদিনকে আমার কাছে মনে হয় যে চাঁদরাত,’ মজার ছলে বললেন উর্বী। এমন অবসরের দিনে ঘুম থেকে ওঠেন সকাল নয়টা-দশটার মধ্যে। এরপর সময় দেন শরীরচর্চায়। হালকা ওয়ার্কআউট, ইয়োগা ও কিকবক্সিং। এরপর সারেন নাশতা। মেনুতে দুটি সেদ্ধ ডিম আর ফল, বিশেষ করে পাঁকা পেপে। তারপর সিনেমা কিংবা টিভি সিরিজ দেখা, বই পড়া, মোবাইল ফোনে প্রয়োজনীয় কাজ সাড়া। হাতে জমে থাকা স্ক্রিপ্টে চোখ বোলানোর কাজটাও সেরে ফেলেন দিনের এ সময়ে। দুপুরে গোসল শেষে করেন মধ্যাহ্নভোজ। পাতে ভাত থাকলে সঙ্গে কী আছে, তা নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামান না!
ওয়ার্কআউটের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ এই অভিনেত্রী। বড় হয়েছেন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায়। এখনো সেখানেই বাস। বিকেল ৪টায় বের হয়ে পড়েন জিমের উদ্দেশে। তার জিম গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোডে। প্রতিদিন এই দূরত্ব পাড়ি দেন শারীরিক কসরত করার নিমিত্তে। গত দুই বছর নির্দিষ্ট ডায়েট মেইনটেইন করে হাল ছেড়ে দিয়েছেন! তাই বডি টোনিংয়ের জন্য ওয়ার্কআউটই ভরসা। কার্ডিও এক্সারসাইজ করেন, তবে আগের তুলনায় কম। ক্রস ট্রেইনার, সাইকেলের মতো অন্যান্য কার্ডিও ইক্যুইপমেন্টের চেয়ে ট্রেডমিলে সময় দেন বেশি। করেন ওয়েট লিফটিং। সপ্তাহে নির্দিষ্টভাবে একেক দিন একেক ধরনের ওয়ার্কআউট জায়গা পায় তার দেহচর্চায়। ওয়ার্কআউট শেষ করেন সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে। মিটিং কিংবা বিশেষ কাজ থাকলে পরে তা সারেন। দিনের শেষ খাবার গ্রহণ করেন সন্ধ্যা ৭টায়। বাসা থেকেই খাবার নিয়ে আসেন। বেশির ভাগ সময় আহার সারেন গাড়িতে বসেই। চেষ্টা করেন রাত ১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ার।
উর্বীর বাসা ছিমছাম, পরিপাটি, ভিনটেজ ও ক্ল্যাসিক আসবাবে সুসজ্জিত। দেয়ালে নকশিকাঁথার কারুকাজ, পারিবারিক ছবি এবং বাসার নানা জায়গায় রিকশা পেইন্টিং। পারিবারিকভাবেই পশুর প্রতি মমত্ববোধ তার। পোষা বিড়াল উচ্ছ্বাসের সঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসেন।
অবসরে সিনেমা ও টিভি সিরিজ দেখতে এবং গান শুনতে পছন্দ করেন। পছন্দের চলচ্চিত্রকার ভারতের ইমতিয়াজ আলী। প্রিয় অভিনেতা ও ব্যক্তিত্বের তালিকায় শীর্ষে শাহরুখ খান। হলিউড অভিনেতা টম হ্যাংকসের অভিনয়ে তিনি গুণমুগ্ধ। সেলিব্রিটি ক্রাশ আরিফিন শুভ। প্রিয় সিনেমা কাস্ট অ্যাওয়ে, দ্য গ্রিন মাইল; টিভি সিরিজ ক্রাউন, মানি হাইস্ট। গানের ক্ষেত্রে মনমর্জিকেই প্রাধান্য দেন। পছন্দের মিউজিশিয়ানদের মধ্যে প্রতীক কুহাদ, আতিফ আসলাম, এড শিরান, ডুয়া লিপা অন্যতম। জীবনে একবার হলেও প্রতীক কুহাদের কনসার্ট সামনে থেকে উপভোগ করতে চান এই অভিনেত্রী।
মজার বিষয় হলো, শৈশব থেকেই ঐশ্বরিয়া রাইয়ের অভিনয়ে এত মুগ্ধ ছিলেন তিনি, ক্লাস টুতে পড়ার সময় নোটবুকে নিজের নামের জায়গায় লিখেছিলেন প্রিয়ন্তী ঐশ্বরিয়া রাই উর্বী। তখন থেকেই নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন। কলেজের গণ্ডি পেরোনোর পর, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে মা জুড়ে দিয়েছিলেন এক অদ্ভুত শর্ত। উর্বী বললেন, ‘মা তখন বলেছিলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলে তুমি যা চাইবে, তাই হতে দেওয়া হবে।”’ মায়ের এই শর্ত শুনে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছিলেন তিনি। পড়ালেখায়ও তার মুনশিয়ানা যেন চোখে পড়ার মতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মিলিত মেধাতালিকায় হয়েছিলেন ২১তম। সেখান থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে করেছেন স্নাতক। দুরন্ত স্বভাবের এই অভিনেত্রী স্বভাবগতভাবে আড্ডাবাজ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে, টিএসসিতে আড্ডাবাজি করতেন খুব। বর্তমানে বন্ধুবান্ধবের বেশির ভাগই চাকরিজীবী। কদাচিৎ সময় মিললে মূলত সন্ধ্যার পরেই জমে আড্ডা।
নাচের প্রতি তার ভীষণ ঝোঁক। একসময় ভরতনাট্যম শিখেছেন। তবে এখন বিভিন্ন পপুলার মিউজিকের সঙ্গে নাচতে ভালোবাসেন। শাড়ি, কামিজ কিংবা ওয়েস্টার্ন—যেকোনো পোশাকেই দারুণ মানানসই। তবে শার্ট-প্যান্টে সবচেয়ে বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন। পোশাকের ক্ষেত্রে পছন্দের রং সাদা। ব্যাগ, জুতা ও পারফিউম সংগ্রহে তিনি বেশ আত্মবিলাসী; ব্র্যান্ড ফোকাসডও বটে। ব্যাগে মাইকেল করস; জুতায় অ্যাডিডাস ও ভেরেন্স পারফিউমে শ্যানেল, টমি গার্ল টমি হিলফিগার পছন্দের শীর্ষে।
ইবনে বতুতা যেমন বলেছিলেন, ‘ভ্রমণ প্রথমে তোমাকে নির্বাক করে দেবে, তারপর গল্প বলতে বাধ্য করবে।’ ভ্রমণ সম্পর্কে উর্বীর দর্শনও অনেকটা এমন। ঘুরতে ভালোবাসের খুব। থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারত, নেপাল, ভুটান ও আরব আমিরাত দাবড়ে বেড়িয়েছেন। সবচেয়ে পছন্দের জায়গা থাইল্যান্ডের কোহ সামুই দ্বীপ। এর চমকপ্রদ সৈকত, সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতি, মনোরম পরিবেশ তাকে রোমাঞ্চিত করেছে। জায়গাটিকে মনে হয়েছে ভীষণ হ্যাপেনিং প্লেস। সেখানকার সরল প্রকৃতি, সাদা বালু, নারকেল ও পামগাছের সারি, মনোমুগ্ধকর সূর্যোদয়, স্বচ্ছ পানির নিচে সৌন্দর্যময় জীবন দেখতে পারার অভিজ্ঞতা তাকে করেছে অভিভূত। পাহাড় না সমুদ্র—এমন প্রশ্নের ক্ষেত্রে উর্বীর উত্তর—সমুদ্র। আগামী বছর ইউরোপ ভ্রমণের ইচ্ছা রয়েছে; বাকেটলিস্টে প্যারিসকেই রাখছেন শীর্ষে।
ফ্যাশনের ক্ষেত্রে স্বস্তিকেই প্রাধান্য দেন উর্বী। মিনিমালিস্টিক মেকআপ, ন্যাচারাল কালো দীঘল চুলে, সদা হাস্যোজ্জ্বল এই তরুণী যেন সুচিস্মিতা। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন বই, সিনেমার কল্যাণে প্যারিসকে দেখেছেন সিটি অব কালারস, ফ্যাশন অ্যান্ড লাভ হিসেবে। ট্যাটুর প্রতি আসক্তি থেকে পছন্দের এই শহরকে ধারণ করেছেন পায়ে শিকল আঁকা এক ট্যাটুতে। উর্বীর দাবি, শারীরিকভাবে তার অবস্থান যেখানেই হোক না কেন, মনে মনে প্যারিসকে তিনি সব সময় অনুভব করেন। জীবনদর্শন তার কাছে বেশ সহজ-সরল; এককথায়, ‘ওয়ার্ক হার্ড, পার্টি হার্ডার।’
ফুয়াদ রূহানী খান
ছবি: সাজ্জাদ হোসেন