skip to Main Content

নখদর্পণ I অ্যাসিটোন এড়িয়ে

নখে রুক্ষতার রুদ্র প্রতাপ রুখে দিতে। কারণ, এর নিয়মিত ব্যবহারে নখ এবং তার চারপাশের ত্বকের শক্তি নিশ্চিত নাশ, অতঃপর ভঙ্গুরতার হাহাকার। সুরাহা খুঁজতে সারাহ্ দীনার চেষ্টা

নেইলপলিশ। নখ রাঙানোর প্রসাধন। আর সেই রং নখ থেকে তুলে নিতে প্রয়োজন নেইলপলিশ রিমুভার। বিকল্প নেই বলেই ধারণা বেশির ভাগের। এই বিশ্বাসকে পুঁজি করে কলেবরে বেড়েছে নেইলপলিশ রিমুভারের বাজার। সারা বিশ্বে বিভিন্ন ব্র্যান্ড তৈরি করছে এই পণ্য। ২০২১ সালের জরিপ অনুযায়ী যার আকার ১ হাজার ২৮৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
একটি সাধারণ নেইলপলিশ রিমুভারে ৬০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত অ্যাসিটোন ব্যবহার করা হয়। ব্র্যান্ড ও ফরমুলেশনের ওপর ভিত্তি করে পরিমাণে পার্থক্য থাকে। তবে তা খুবই সামান্য বলে জানা যায়। আশঙ্কার বিষয়, শতভাগ অ্যাসিটোনে তৈরি নেইল রিমুভারও বাজারজাত করা হয়; যা ব্যবহারের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হচ্ছে, এটি নখ ধীরে ধীরে দুর্বল এবং এর চারপাশের চামড়া শুষ্ক করে। ফলে নেইল সারফেস, কিউটিকল ও আঙুলের ত্বক—তিনটিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
নেইল গেইম আপগ্রেডিং
গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান গ্লিসারিন ও ভিটামিন ই-এর মতো ময়শ্চারাইজিং এজেন্ট যোগ করে অ্যাসিটোনের ক্ষতিকে কিছুটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করেছে। এই পণ্যগুলোকে জেন্টলার নেইলপলিশ রিমুভার হিসেবে লেবেলিং করা হয়। আবার কোনো কোনো পণ্যে অ্যাসিটোনের পরিবর্তে ইথাইল অ্যাসিটেট অথবা আইসোপ্রোফাইল অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয়। তাতেও বিপদ কিছুটা কমে। কিন্তু শতভাগ সমাধান থেকে যায় বহু দূরে।
আশার কথা, অ্যাসিটোন আর আইসোপ্রোফাইলের মতো রাসায়নিকের ব্যবহারের বাইরেও হতে পারে সমাধান। কিচেন ক্যাবিনেটের নিত্যদিনের উপকরণ অথবা ড্রেসিং টেবিলের এভরিডে ইউজ প্রোডাক্টের ব্যবহারে। নতুন কোনো প্রক্রিয়ায় নয়; বরং সহজ, চেনা উপায়েই কার্যসিদ্ধি সম্ভব।
ভিনেগার-কমলার রস
ভিনেগার কিংবা সিরকা—দুই নামেই ডাকা হয় এই রান্নার উপকরণকে। রসনার বাইরেও বহুমুখী ব্যবহার রয়েছে এ তরলের। যেমন ভিনেগার ও কমলার রসের সন্ধিতে তৈরি করা যেতে পারে নেইলপলিশ রিমুভার। কীভাবে কাজ করবে এই চেনাজানা দুই উপকরণ? তাদের অম্লীয় গুণেই সম্পন্ন হবে পুরোটা। সমান পরিমাণের কমলার রস আর ভিনেগার একটি বাটিতে মিশিয়ে নিলেই প্রক্রিয়া শেষ। তারপরে তুলার বলের সাহায্যে প্রলেপ দিতে হবে নখে। বেশি নয়, ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড। নরম হতে শুরু করবে রঙিন প্রলেপ। ধীরে ধীরে এই মিশ্রণ ভেজানো তুলোয় চেপে চেপে পুরো নখ পরিষ্কার করে নিলেই চলবে।
লেবুর গুণে
রোজকার পাতের লেবুতেও পাওয়া যেতে পারে সমাধান। এক টুকরো লেবু দিয়ে ঘষে নেওয়া যেতে পারে নখ। মিনিটখানেক সময় নিলেই চলবে। এরপরে পেপার টাওয়েল ব্যবহারে ধীরে ধীরে মুছে নিতে হবে নেইলপলিশ। চাইলে লেবুর রসে এক টুকরো তুলো ভিজিয়েও ব্যবহার করা যেতে পারে।
সয়া-বেসড রিমুভার
নন-অ্যাসিটোন সল্যুশন পাওয়া যেতে পারে আরও একভাবে। কটন প্যাডে করে নখে সয়ার প্রলেপ দিয়ে। সময় প্রয়োজন হতে পারে খানিকটা বেশি। ৩০ থেকে ৪৫ সেকেন্ড অবধি একেকটি নখের পেছনে সময় ব্যয় করলেই উঠে আসবে নেইলপলিশ। প্রয়োজন হলে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে হাতের কাছে থাকা পুরোনো টুথব্রাশের। যত্নের সঙ্গে ঘষে তুলে নেওয়ার জন্য।
অ্যালকোহল আর অ্যালকোহল-বেসড প্রোডাক্ট
রাবিং অ্যালকোহল হতে পারে ভালো বিকল্প। এটি ছাড়া বাড়িতে থাকা অন্য প্রসাধন অথবা গৃহস্থালি কোনো পণ্যে অ্যালকোহলের উপস্থিতি থাকলে সেটিও ব্যবহার করা যেতে পারে।
সুগন্ধি
অ্যালকোহলের উপস্থিতি আছে এমন পারফিউম হতে পারে বিকল্প। কটন প্যাডে পারফিউম স্প্রে করে তা দিয়ে নখ মুছে নিলেই চলবে। এরপর তোয়ালে দিয়ে নখ মুছে নিতে হবে ভালো করে। অল্প কয়েক মিনিটেই সিদ্ধি হবে যজ্ঞ।
হেয়ার স্প্রে
এটি বিস্ময় নয়, বাস্তব। অ্যারোসল বেসড হেয়ার স্প্রে ব্যবহারে পাওয়া যেতে পারে সমাধান। এ রকম একটি বোতলে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ অ্যালকোহলের উপস্থিতি থাকে; যা নেইলপলিশ তুলে নেওয়ায় উপযুক্ত। কটন প্যাডে জুতমতো স্প্রে করে নিয়ে তাড়াতাড়ি চেপে ধরতে হবে নেইল সারফেসে। ২০ সেকেন্ড অন্তত। তারপরে ধীরে ধীরে মুছে নিতে হবে যত্নের সঙ্গে।
হ্যান্ড স্যানিটাইজার
করোনাকাল থেকে সবার সখ্য বেড়েছে স্যানিটাইজারের সঙ্গে। জীবাণু দমনের প্রিয় হাতিয়ার হিসেবে বিবেচিত এই কেয়ার প্রোডাক্ট নেইলপলিশ তুলে ফেলার কাজেও আসতে পারে। রেগুলার হ্যান্ড স্যানিটাইজারে ৬০ শতাংশ অবধি অ্যালকোহল থাকে। আর এই উপাদানের বৈজ্ঞানিক পরিচয়—এটি একটি দ্রাবক। নেইলপলিশের কেমিক্যাল বন্ড ব্রেক ডাউন করার ক্ষমতাসম্পন্ন। মাত্র দশ সেকেন্ড তুলোর বলে করে নখের ওপরের অংশে ধরে রাখলেই মিলবে সমাধান।
টুথপেস্ট
সকালের সবচেয়ে জরুরি এই পণ্যেও হতে পারে নেইলপলিশ পরিষ্কার। কারণ, এতে উপস্থিত থাকে ইথাইল অ্যাসিটেট; যা অনেক নেইলপলিশ রিমুভারেও থাকে। অল্প পরিমাণে পেস্ট নখে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রেখে পুরোনো ব্রাশের সাহায্যে স্ক্রাব করলে উঠে আসবে নেইলপলিশ। সবশেষে হালকা গরম পানিতে ধুয়ে নিতে হবে মনে করে।
হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড
এমন রাসায়নিক উপাদানেও পাওয়া যেতে পারে সমাধান। ত্বকের জন্যও নিরাপদ। এক ভাগ পানির সঙ্গে দুই ভাগ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড মিলিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে নেইলপলিশ রিমুভারের বিকল্প। এরপরে ৩০ সেকেন্ড নখ ভিজিয়ে রাখার পরে নেইল ফাইলার ব্যবহারে তুলে নিতে হবে ধীরে ধীরে।

ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top