skip to Main Content

লোগো লিগ্যাসি I লোগো লজিক: প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ

আন্তর্জাতিক ফ্যাশন বিশ্বে বিশেষ অবস্থান তৈরি করা ব্র্যান্ডগুলোর লোগোর বিস্তারিত লেখা হয়েছে এক এক করে। এবার ইতি টানার পালা। শেষ পাতে দেশীয় ব্র্যান্ডের লোগোর তত্ত্বতালাশ সারাহ্ দীনার বয়ানে

বাংলাদেশের ফ্যাশন বাজারের কলেবর বিশাল। বর্তমানে দেশে ৮ হাজারের বেশি ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও উদ্যোগ সক্রিয় রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এগুলোর মধ্যে বৃহৎ ও মধ্যম মানের স্টোরভিত্তিক ব্র্যান্ড, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নির্ভর অনলাইন ব্র্যান্ড—সবই রয়েছে। তার মাঝে ক্রেতাদের সমর্থন, আস্থাকে সম্মান দিয়ে মানসম্পন্ন পণ্য দীর্ঘদিন ধরে তৈরি করে চলেছে বেশ কিছু ব্র্যান্ড। সেসবের প্রতি ক্রেতাদের আস্থা তৈরি হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর লোগো হয়ে উঠেছে গুরুত্বপূর্ণ।
আড়ং
বাংলা শব্দ। যার প্রকৃত অর্থ বড় হাট অথবা মেলা। লোগোতে দেখা যায় একটি ময়ূর। ব্যাকগ্রাউন্ডে কালো। আর ময়ূরটি কমলা। ময়ূরের প্রাণবন্ততায় ঐতিহ্যের ঐশ্বর্য প্রকাশিত। কমলা রঙের ব্যবহার উষ্ণতা এবং শক্তি প্রকাশ করে। অন্যদিকে কালোতে পেশাদারত্ব স্পষ্ট। আড়ংয়ের জন্মলগ্ন ১৯৭৮ থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে এই লোগো। রং কিংবা লোগোতে কখনো পরিবর্তন আসেনি।
বিবিআনা
বিবিআনা শব্দটির বাংলা অর্থ বিলাসে আসক্ত নারী। আর ডিজাইনার লিপি খন্দকারের ব্রেন চাইল্ড বিবিআনা মূলত ফেমিনিন ব্র্যান্ড। এই ব্র্যান্ডের লোগো লাল-সাদা। দুই রঙের সঙ্গে বাঙালির সম্পর্ক চিরদিনের। পয়লা বৈশাখ, হালখাতা, দুর্গাপূজা—সবকিছুই এই দুটি রঙের সঙ্গে খুব বেশি মিশে আছে। দুই রঙেই লোগো বানিয়েছে বিবিআনা। আবার ব্র্যান্ডের নামটি জুড়ে যেমন নারীত্বের গন্ধ, ঠিক তেমনটাই আছে ফন্ট নির্বাচনে। ক্যালিগ্রাফিতে ফেমিনিন এসেন্স।
কে ক্র্যাফট
নামটি এসেছে কো-ফাউন্ডার খালিদ মাহমুদ খানের কাছ থেকে। নাম খুঁজে বের করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন ফাউন্ডার শাহনাজ খান। খালিদের পছন্দ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের লোকাল রেডিও কে রক স্টেশন। আবার নিজের পারিবারিক পরিচয় খানের প্রথম অক্ষরও ইংরেজি অক্ষর ‘K’। ইংরেজিতেই লেখা হয় KAY KRAFT। প্রথম থেকে ব্র্যান্ড কালার হিসেবে নীলের একটি বিশেষ শেড ব্যবহার করা হয়েছে। রং নির্বাচনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত ভালো লাগা প্রাথমিক কারণ হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছিল।
রঙ বাংলাদেশ
ক্যালিগ্রাফি ও টাইপোগ্রাফির সমন্বয়ে তৈরি রং বাংলাদেশের লোগো। নকশা করেছেন শিল্পী রকিবুল আহসান লিমন। ফ্যাশন হাউস রঙ-এর যাত্রা শেষে একাই রঙ বাংলাদেশ গড়ে তোলেন উদ্যোক্তা সৌমিক দাস। তাই লোগোতে বাংলা ও ইংরেজি নামের সঙ্গে তার একক উপস্থিতির প্রতীক রূপে একটি বর্ণিল রঙিন হাত আছে। সংক্ষিপ্ত ফর্মে বাংলা হাতে লিখনের একটি উদাহরণ এই লোগো।
অঞ্জন’স
বোল্ড টাইপোগ্রাফিতে তৈরি অঞ্জনের লোগো। ইংরেজি আর বাংলা—দুই ভাষাই ব্যবহৃত হয়েছে। ইংরেজিতে লেখা থাকার কারণে সহজে বুঝতে পারেন অন্য ভাষার মানুষেরা। জিওমেট্রিক্যাল নকশায় সাহসী, উচ্চ-দৃশ্যমান, স্পষ্ট ও স্মরণীয় টাইপোগ্রাফিতে সাজানো হয়েছে বাংলার অংশটি আর ইংলিশে ব্রাশ-লাইক স্টাইল টাইপোগ্রাফিতে। রঙে লাল আর কালোর উপস্থিতি। কালার প্যালেটের শক্তিশালী দুই রঙের ব্যবহার হয়েছে এখানে। একটি লাল, অন্যটি কালো। লোগোতে বাংলা স্বরবর্ণ ‘অ’-এর সঙ্গে ফোক মোটিফের ব্রাশ স্টোক ব্যবহারে দেশের ঐতিহ্যকে ধারণ করার প্রয়াস। অঞ্জন’স লোগোটি নিজেই একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড আইডেনটিটি।
দেশাল
লোগোতে ‘দ’ এবং ‘ল’ লেখায় দেখা যায় শিল্পীর মুনশিয়ানা। সুতা আর কাপড়কে পেঁচিয়ে রাখার মতো করে নকশা করা হয়েছে দেশাল শব্দের দ-এর এ-কার আর লকে। গাঢ় লাল ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদায় তৈরি হয়েছে এই লোগো। এই দুই রং বাঙালি ঐতিহ্যকে যেমন ধারণ করে, তেমনি লালের সাহস, শক্তির সঙ্গে সাদার স্নিগ্ধতার সন্ধি প্রকাশিত হয়।
সারা
স্নোটেক্স গ্রুপের রিটেইল ব্র্যান্ড। নামটি মূলত তাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দুই সন্তানের নামের প্রথম অংশের সন্ধি। সারাফ ও রাফসান নামের প্রথম দুই অক্ষর মিলিয়ে নামকরণ ও লোগো—দুই-ই সম্পন্ন করা হয়েছে। লোগোটিতে এস এবং আর বসিয়ে জিওমেট্রিক্যাল শেপ দেওয়া হয়েছে। রং হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে নীলের উজ্জ্বল শেড। আর চারপাশে বর্ডারে স্নিগ্ধ সাদা।
সাদাকালো
কালার প্যালেটের শক্তিশালী দুই রং সাদা আর কালো নিয়েই সব কাজ করে দেশীয় এই ব্র্যান্ড। লোগোও তৈরি হয়েছে একই মন্ত্রে। সাজানো-গোছানো লোগো। যেখানে ক্যালিগ্রাফি স্টাইলে হাতে লেখার মতো করে উপস্থাপিত হয়েছে ব্র্যান্ড নেম। ভাষা বাংলা। সাদার সরলতা ও কালোর গভীরতার মিশ্রণে নিখুঁত সৌন্দর্য সৃষ্টি করে উপস্থাপিত হয়েছে।
জুরহেম
জুরহেম, একদম আনকোরা এক নাম। এই সার্থক অনন্যতার পেছনে আছেন ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর মেহরুজ মুনির নিজেই। ‘MEHRUZ’কে উল্টো করে লিখলে হয় ‘ZURHEM’। পুরোটা জুড়েই নিজস্বতা। মাত্র আট বছরে বয়সে প্রথমবারের মতো এই নাম নিয়ে ভেবেছিলেন তিনি। পরে বয়স যখন ২৫, তখন সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেন ফ্যাশন উদ্যোক্তা হিসেবে। এরপরে একজন স্প্যানিশ ডিজাইনারের সঙ্গে বসে নকশা করেন ব্র্যান্ড লোগোটির। সাদার ওপরে ছাই রং দিয়ে লেখা হয়েছিল লেবেলের নামটি। মিনিমালিজমের মাধুর্য ছিল। পরে জুরহেম যখন ম্যাক্সিমালিজমকে নিয়ে কাজ শুরু করে, তখন মেহরুজ রঙের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়। ব্যাকগ্রাউন্ডে রাখা হয় কালো আর নামে সোনালি। যেন কালো আকাশে তারার উদ্ভাসনে জ্বলজ্বলে মেহরুজের জুরহেম।
বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির বেশির ভাগ লোগো টাইপোগ্রাফি দিয়ে করা। অক্ষর ব্যবহারে দক্ষতা প্রকাশিত হয়েছে। ফন্ট নির্ভরশীল লোগোতে ফন্টগুলো শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়; পরিচয়ও বটে। সঠিকটি ব্র্যান্ডের ব্যক্তিত্ব, মূল্যবোধ এবং বার্তা মুহূর্তেই প্রকাশ করতে পারে। লোগোর ফন্ট বিভিন্ন আকার ও মাধ্যমে ব্যবহারের উপযোগী হতে হবে। তাই ব্র্যান্ডের নাম স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, সেগুলোই বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। তাতে ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়। বাংলাদেশের ফ্যাশন বাজার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে বলে ধারণা।

ছবি: সংগ্রহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top