skip to Main Content

ফিচার I রিল রুল

আউটফিট ফ্লিপ থেকে মুড ট্রানজিশন—ফ্যাশন রিলগুলো হয়ে উঠেছে সৃজনশীলতা প্রদর্শনের ক্ষেত্র। সংক্ষেপ, চটপটে আর দারুণ দৃষ্টিনন্দন। দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণে কাজ করে মাত্র মিনিটেই। তাই জানা প্রয়োজন প্রতিটি ফ্রেম গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার মন্ত্র

ফ্যাশন এনথুজিয়াস্ট, ইনফ্লুয়েন্সার, টিকটকার—যে নামেই ডাকা হোক, সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যান্ডআউট করতে চাইলে পোড়াতে হয় অনেক কাঠখড়। রংবেরঙের জগতে যেখানে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নির্ধারণ করছে কার কনটেন্ট কত দূর পৌঁছাবে, সেখানে নিজের একটি আলাদা সত্তা তৈরি করা সত্যিই ভীষণ জটিল। অ্যালগরিদম গেম যারা ক্র্যাক করছেন, শুধু কনটেন্ট বানিয়েই এগিয়ে যাচ্ছেন অনেক দূর, শুধু যে মনিটাইজিংয়ে ডলারের প্রবেশ, ব্যাপারটা এমন নয়; বরং নিজেদের ব্র্যান্ড পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে অনেকে তৈরি করেছেন কাল্ট ফ্যান ফলোয়ার। কিন্তু কোন সূত্রে?
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া কাঁপানোর মাধ্যম দুটি—ইনস্টাগ্রাম ও টিকটক। আর কনটেন্ট যদি হয়ে থাকে ফ্যাশন রিলেটেড, তাহলে তো কথাই নেই। ইন্টারনেটে উদাহরণ আছে ভূরি ভূরি। শুধু নিজের সঙ্গে মিলিয়ে ইন্সপিরেশন নেওয়ার দেরি।
গোলমেলে ফ্যাশন মার্কেটে নিজের ফ্যাশন গেম ধরতে পারা কঠিন হলেও অসাধ্য নয়। আর একবার আয়ত্ত করতে পারলেই বাজিমাত। বুঝতে হবে কীভাবে কাজ করে সোশ্যাল মিডিয়া। নিজেকে আপডেটেড রাখা চাই প্রতিনিয়ত, তবেই না জমবে ফলোয়ারের হাট!
ফ্যাশন কনটেন্ট ক্রিয়েশনে নতুন হলে শুরুতে বেছে নেওয়া চাই নিজস্ব স্টাইল। ওয়্যারড্রোবে থাকা অনুযায়ী কাপড় আর অনুষঙ্গ। ফলোয়ার তৈরির আগে যাচাই-বাছাই করে নেওয়া যেতে পারে প্রিয়জনদের থেকে। স্টাইল কতটা অনুসরণীয় এবং কতটুকু অন্যের বাহবা পাওয়ার যোগ্য, সরাসরি ক্রিটিক করতে পারেন তারাই। গ্রহণযোগ্যতা যাচাই-বাছাই শেষে এবার পালা অডিয়েন্স অ্যানালাইসিসের।
মার্কেটিং জ্ঞান নেই, নিজের সোশ্যাল মিডিয়াটাও নেই সাজানো-গোছানো, তবে কীভাবে হবেন ক্রিয়েটর? কনটেন্ট ক্রিয়েশনে টার্গেট অডিয়েন্স নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করলে মাটি হয়ে যেতে পারে পুরো প্রস্তুতিটাই। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে যারাই এখন কনটেন্ট বানিয়ে পরিচিতি অর্জন করেছেন, তারা জানেন, তাদের দর্শক কী চান, অথবা কোন ধরনের কনটেন্ট দিলে খুব দ্রুতই তাদের আটকে ফেলা যাবে। তাই জেন-জি ফ্যাশন কনটেন্ট আর অফিসগামী মিলেনিয়ালদের গো টু ড্রেস যেন এক না হয়ে যায়! ফলে করা চাই ট্রেন্ড, ফ্যাশন আর নিজের স্টাইলিং নিয়ে বিশদ গবেষণা।
ঘুরে আসা রেট্রো
টিকটক, ইনস্টাগ্রাম, সোশ্যাল জগৎ জুড়ে চলছে পুরোনো দিনের সেই রেট্রো ভাইব। ৭০-৮০ দশকের গত হওয়া ফ্যাশন আবারও ফিরে আসছে মুঠোফোনের পর্দায়। বেল বটম প্যান্ট, লেদার জ্যাকেট, মুখ ঢাকা রোদচশমা, পুরোনো দিনের ব্যান্ডের টি-শার্ট—সব মিলিয়ে আশির দশকের আঙ্গিকে সাজছেন ইনফ্লুয়েন্সাররা।
সময়টাই পরিবেশবান্ধবতার
ফ্যাশন কনটেন্টের জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে ইকো-ফ্রেন্ডলি স্টাইলিং। কীভাবে পরিবেশবান্ধব চয়েজগুলো জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে কিংবা দিচ্ছে, তা নিয়েই শুরু করতে পারেন ‘হাউ টু’, অথবা তথ্যবহুল কনটেন্ট। ইনস্টাগ্রামে থ্রিফটিং অ্যাকাউন্ট ফলো করেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। একবার পরে আলমিরার কোনায় কাপড় জমিয়ে না রেখে প্রয়োজন অনুসারে সেই কাপড়ই বেচে দেওয়া যায় অর্ধেক দামে। থ্রিফটিংয়ে কেনা কাপড় ভালোভাবে স্টাইলিং করা গেলে মন্দ কি। সাশ্রয়ী ফ্যাশন কনটেন্ট বানিয়ে চমক দেখাতে পারেন সবাইকে।
ম্যাজিক হোক মনোক্রোমে
কাফতান, কুর্তি, কো-অর্ড; দর্শক যদি অনুসারী হয়ে থাকেন পাকিস্তানি কিংবা টার্কিশ নাটকের, তবে বেছে নেওয়া যায় নিউট্রাল, বেইজ বা আর্দি টোনের ফ্যাব্রিক। বানিয়ে ফেলতে হবে পছন্দসই পোশাক; প্রিন্টেড না, বরং এক রঙা ফ্যাব্রিকে। পালা এবার কনটেন্ট বানানোর; ফ্যাব্রিক কেনা থেকে স্টিচিংয়ের জার্নি, বাজেটের হিসাব অথবা সুন্দর লোকেশনে ট্রানজিশন, কনটেন্ট হতে পারে মনের মতো।
মোটিফ, প্যাটার্ন, কাট: টেইলরিংয়ের জাদু
নারী ফ্যাশন ভ্লগারদের জন্য হতে পারে দারুণ অপশন। নারীরা বেশির ভাগ সময় খুঁজে বেড়ান একটু ভিন্ন ধরনের ডিজাইন। রিলের দর্শক যদি হয়ে থাকেন ফ্যাশন-সচেতন নারী, তবে সুন্দর সুন্দর পোশাকের টেইলরিং দেখিয়েই মন জয় করা সম্ভব সবার। লেস-ফিতা, বোতাম, ব্লক সাশ্রয়ী দামে খুঁজে মেলা ভার। এ ক্ষেত্রে তৈরি হতে পারে ‘কোথায় পাবেন’ টাইপের ভিডিও।
সংস্কৃতি আর ফ্যাশনের ফিউশন
দেশীয় ঐতিহ্য তুলে ধরে ফ্যাশনে রাখা যায় ফিউশনের ছোঁয়া। আরবান মেকআপে দেশীয় সংস্কৃতি, কিংবা দেশীয় সংস্কৃতির সঙ্গে লোকেশনের ফিউশনে বানানো যায় চমৎকার ফ্যাশন কনটেন্ট। ফিউশন হতে পারে মায়ের শাড়ির সঙ্গে বর্তমানের গ্ল্যাম মেকওভার, কিংবা শাড়ির সঙ্গে ওয়েস্টার্ন লেয়ারিং। সময়টা দেওয়া চাই গবেষণায়, অডিয়েন্সের চাহিদা মাথায় রেখে।
অনুষঙ্গের মিলনমেলা
দেশের বাইরে ফ্যাশন ভ্লগাররা শুধু কাপড় নয়, মনোযোগ দেন তাদের অ্যাকসেসরিজের দিকেও। আংটি, দুল, হার, নাকফুল, ঘড়ি, জুতা, ব্যাগ—সবই তো ফ্যাশনের অন্তর্গত। কোন কাপড়ের সঙ্গে কোন ধরনের অ্যাকসেসরিজ মানাবে—ফ্যাশন কনটেন্ট তৈরি হতে পারে তা নিয়েও। ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক—রেফারেন্স মিলবে সবখানেই।
খেলা যেতে পারে কনটেন্টের ধরন নিয়েও। স্টাইলিং বনাম ওয়্যারিং ভিডিওগুলো বর্তমানে খুব ট্রেন্ডি। যাদের পোশাক নিয়ে ব্যবসা, নিজেরাই হয়ে যেতে পারেন ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সার। ডেইলি রুটিন দেখাতে গিয়ে কিছু সেকেন্ড শো-অফ করাই যায় আউটফিটের। সঙ্গে সঠিক হ্যাশট্যাগ আর ক্যাপশন জুড়ে দিলে মিলতে পারে বিশাল অডিয়েন্স।
আরও আছে গেট রেডি উইদ মি। মজার কোনো বিষয়ে কথা বলা কিংবা গল্প বলতে বলতে বাইরে যাওয়ার আগে করে ফেলতে পারেন ছোট্ট একটি লাইভ সেশন। রিল হতে পারে রেকর্ডেড ভিডিও থেকেও। ছুটির দিনে স্টাইলিং হবে কেমন করে, কনটেন্ট হোক তা নিয়েও। প্রয়োজন শুধু ভালো ক্যামেরাসহ ফোন, রিংলাইট, ভালো লাইটিং, হালকা মার্কেটিং জ্ঞান, বিস্তর গবেষণা আর সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের সম্যক জ্ঞান। ব্যস, শুরু হোক কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে জার্নি।
বর্তমান সময়ে বহুল প্রচলিত কনটেন্টের মধ্যে প্রচলিত আছে শর্ট ভিডিও কনটেন্ট, ক্যারাউজেল পোস্ট, অ্যালবাম পোস্ট, লাইভ কনটেন্ট, ডে ইন ইউর লাইফ কনটেন্ট এবং ইনস্টাগ্রাম গাইড। সোশ্যাল মিডিয়া অ্যালগরিদম কাজ করে ব্যক্তি পছন্দ অনুযায়ী। তাই খুঁজে পেতে সমস্যা হলে সার্চ করতে হবে হ্যাশট্যাগ দিয়ে; কিছুক্ষণের মধ্যে ফিডে ফুটে উঠবে পছন্দসই সব কনটেন্ট। ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ার বাড়াতে চাইলে কমিউনিটির সঙ্গে সম্পর্ক হওয়া চাই একদম আত্মিক আর অথেনটিক। শুধু রিচ বাড়াবে এমন নয়; গড়ে উঠবে একদম কাস্টমাইজড একটি কমিউনিটি।

 বিদিশা শরাফ
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top