skip to Main Content

ফিচার I যেন হাওয়াই মিঠাই

কালার প্যালেটের প্যাস্টেল লাইন থেকে উঠে আসা মিহি রংগুলো এবার এসেছে ফ্যাশনে। আনন্দময় কিন্তু কোমলতায় ভরপুর। একসময় এসব রং দেখা যেত হাওয়াই মিঠাইয়ের গায়ে। কখনোবা আইসক্রিম পারলারের ফ্রিজে কিংবা বাবল গামে। স্ট্রবেরি, পেস্তাচিও, বাটার ইয়েলো—সবই আছে এবারের রং বাক্সে

ফ্যাকাশে জীবনে হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো মিষ্টতা যোগ করার সময় এসেছে। সাদামাটা আলমিরাতে রঙের খেলা আনতে চাইলে সময় এখন ক্যান্ডি কালারে রাঙার। বাবলগামের মতো গোলাপি কিংবা পেস্তার সবুজাভ রং, ওয়্যারড্রোবে রাখতে পারেন ল্যাভেন্ডার বা লেমন কালারের পোশাক। চটপটে অথবা শান্ত—ব্যক্তিত্ব যেমনই হোক, ক্যান্ডি কালার হতে যাচ্ছে ফ্যাশনের নতুন ট্রেন্ড। একটু গবেষণা করলে, এর যোগে বানাতে পারবেন নিজের স্টাইল স্টেটমেন্ট।
মিক্স আর ম্যাচ করে বদলে দেওয়া যেতে পারে নিজের আউটলুক। ক্যান্ডি কালার মানেই কিন্তু রঙচঙে কিছু নয়; বরং কালার কম্বিনেশন হওয়া চাই এমন, যেন মনে হয় সূক্ষ্মভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ব্যক্তিত্বে রঙের খেলা। হালকা রঙেই করা যেতে পারে পেয়ারিং। হালকা নীল আর গোলাপির কম্বিনেশন সব সময় ক্ল্যাসিক। সোয়েটার কিংবা প্যান্টে পেয়ার করতে পারেন পছন্দ অনুযায়ী। সাদা প্যান্টের সঙ্গে মানিয়ে যাবে গোলাপি, মিন্ট কালারের টপ। নিজেকে একটু রঙিনভাবে উপস্থাপনে ব্যবহার করতে পারেন মিন্ট, ল্যাভেন্ডার, গোলাপি রঙের মাফলার কিংবা স্কার্ফ। ফ্রেশ লুক দিতে কিন্তু প্যাস্টেল রংগুলোর জুড়ি নেই। প্রতিদিনের ফ্যাশনে সহজে মানিয়ে যায়।
রেড কার্পেট, মিউজিক ভিডিও, মুভি বা সিরিজ—সব জায়গায় ট্রেন্ডে আছে ক্যান্ডি থিম ফ্যাশন। শুরু ২০০০ সালের দিকে হলেও আবারও শো বিজনেসে ফিরে এসেছে এই ফ্যাশন ট্রেন্ড। বছর দুয়েক আগে মুক্তি পাওয়া মুভি ‘বারবি’ সাড়া ফেলেছিল ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে। বারবি মার্চে নিজেদের রাঙিয়েছিল ফ্যাশন ও ফুড ইন্ডাস্ট্রিগুলো। ভক্তদের কাছে কেটি পেরির গ্রহণযোগ্যতার মূলেই ছিল ক্যান্ডি থিম পোশাক। কে-পপ যেন এই জোয়ারে আরেকটু হাওয়া দিয়েছে। প্যাস্টেল রঙে চুল রাঙিয়ে, কখনো জুতায় ক্যান্ডি কালারের ব্যবহার দর্শকের আগ্রহ ধরে রাখতে সফল হয়েছে। গামি বিয়ার অ্যাকসেসরিজ তো উঠতি তরুণীদের দারুণ পছন্দ। ক্যান্ডি পপ অ্যাসথেটিকের একটি উদাহরণ হতে পারে আলিয়া ভাটের লেহেঙ্গা কালেকশন। পপ কিছু নয়; বরং দেশি আউটফিটেই গ্লোবাল ট্রেন্ড ধারণ করেছেন, মুভি থেকে নিজের বিয়ে পর্যন্ত। কিয়ারা আদভানি ও আনুশকা শর্মাকেও দেখা গেছে এই অ্যাসথেটিকসে।
বয়স বাড়লেই যে মানুষের শিশুসুলভ আভা হারিয়ে যায় না, সেই চিন্তাধারা থেকে ক্যান্ডি থিম পোশাকের আবির্ভাব। কেয়ার ফ্রি ভাইব, রংবেরঙের প্যাটার্ন, ভিন্ন ধরনের মোটিফ—সব মিলিয়ে নকশা করা হয় এই পোশাকগুলো। চলতি শতকের একেবারেই সূচনালগ্নে আবির্ভূত সেই ট্রেন্ডের সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে ভাইরাল হওয়ার বাসনা; তাই পোশাকের কাটেও থাকে ভিন্নতা। ক্যান্ডি থিমের পোশাকে শুধু রেড কার্পেট রাজত্ব নয়; সেলিব্রিটিরা মনে করেন, তাদের ব্যক্তিত্ব ও লাইফ চয়েজ ফুটিয়ে তুলতেও প্রয়োজন এমন নতুন নতুন চিন্তাধারার।
নিজের সঙ্গে কোন রং বেশি মানানসই, তা নিয়ে পুরোপুরি গবেষণা আর একটি স্টাইল স্টেটমেন্ট থাকলে পার্টি কিংবা ডেইলি ওয়্যার প্ল্যানে পরিকল্পনা করা যেতে পারে ক্যান্ডি থিমড লুক। সাদা কিংবা হালকা কোনো রঙের ডেনিমের সঙ্গে পরতে পারেন প্যাস্টেল বা গোলাপি রঙের হালকা টি-শার্ট ও সোয়েটার। পায়ে থাকতে পারে এক জোড়া স্নিকার। সঙ্গতে মিন্ট রঙের ক্রসবডি ব্যাগ। ব্যস, নিত্যনৈমিত্তিক স্টাইলে এই হতে পারে গো-টু লুক। সাদা পোশাকের সঙ্গে শুধু ক্যান্ডি থিমড অনুষঙ্গ; যেমন কানের দুল, বেঙ্গল, বেল্ট, জুতা বা ব্যাগ জুড়ে দিয়েও হতে পারে এমন স্টাইল।
করপোরেট জগতে ক্যান্ডি থিমের সাজ মানাবে কি না, তা নিয়ে দ্বিধার মানে নেই। ভালোভাবে স্টাইলিং করা গেলে ক্যান্ডি কালারও দেখতে লাগবে প্রফেশনাল। ব্লেজার, ব্লাউজ, টপ যদি এই রঙের হয়, বটম পার্টে এক রঙে স্কার্ট বা প্যান্টের কম্বিনেশন দেখতে লাগবে দারুণ। তবে মাথায় রাখা চাই, এ ক্ষেত্রে খুব উজ্জ্বল ক্যান্ডি রঙের পোশাক এড়িয়ে চলা উত্তম।
গায়ের রঙের তারতম্য ভেদেও কিন্তু ক্যান্ডি পোশাক নির্বাচনের দিকে মনোযোগ দিতে হয়। যাদের ত্বক হালকা বা একটু বেশি বাদামি, তারা বেছে নিতে পারেন গোল্ডেন অথবা পিচ রঙের পোশাক। যাদের ত্বক ফরসা, তাদের জন্য কোরাল আর গোলাপি রঙের পোশাক হতে পারে দারুণ অপশন। পছন্দভেদে কম্বিনেশন সব সময়ই ইন। সামঞ্জস্যের দিকে নজর দেওয়াটা এ ক্ষেত্রে একটু বেশি জরুরি। একেবারে নিউট্রাল রঙেও নিজের ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলা যেতে পারে। সাদা, ডেনিম, বেইজের মতো নিউট্রাল রংগুলোও ক্যান্ডি ফ্যাশনের অন্তর্ভুক্ত। অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরীর বিয়ের পোশাকের মতো স্নিগ্ধতাও পাওয়া যাবে।
ক্যান্ডি ফ্যাশনে রঙের যথাযথ ব্যবহার করতে না পারলে ফ্যাশনে তৈরি হতে পারে বিভ্রান্তি। দেখতে কিউট মনে হলেও ফ্যাশন-জ্ঞান না থাকলে পরিণতি বাজে হওয়ার শঙ্কা থাকে। যেমন প্যাস্টেল রঙের সঙ্গে নিয়ন কিংবা কমলা রঙের কম্বিনেশন দেখতে লাগবে বিদঘুটে! হালকা ও গাঢ়—উভয় রঙের ব্যবহার হওয়া চাই বুঝে-শুনে। সফট কালারের সংমিশ্রণ লুককে করবে আরও অভিজাত। যেকোনো কোমল রঙের টপের সঙ্গে ডেনিম হতে পারে সহজ সমাধান। এমন কোনো রং বেছে নেওয়া ঠিক নয়, যা বয়স ও ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী বেমানান দেখায়। ক্যান্ডি ফ্যাশন ট্রেন্ডে শুরুটা হতে পারে অ্যাকসেসরিজ পরিবর্তনের মাধ্যমে। কানের দুল বা ব্যাগে আনা যেতে পারে পরিবর্তন; তারপরের অধ্যায়ে পোশাক পরিকল্পনা।
ক্যান্ডি অ্যাসথেটিকে রংটাই বেশি অর্থ বহন করে। পিংক ট্যাক্সের ধাঁধায় না পড়ে, খুঁজে নিতে পারেন টেকসই ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য পোশাক। ফ্যাশন হাউসগুলোও রঙের খেলার পাশাপাশি এমন পোশাক তৈরি করছে, যা সমাজে কোনো একটি মতাদর্শ বহন করে। একটু বাড়তি মনোযোগ দিলেই খুঁজে পাওয়া সম্ভব।

 বিদিশা শরাফ
মডেল: প্রমা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: জিয়া উদ্দীন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top