ফরহিম I দূর হোক দাগছোপ
দেহত্বকের বিভিন্ন স্থানে ডার্ক স্পট এবং কালো ছোপ ছোপ দাগ- ছেলেদেরও এমন সমস্যা দেখা যায়। বাইরে বেশি ঘোরাফেরা কিংবা অতিরিক্ত ঘামের ফলে এটি হয়ে থাকে। হাইপারপিগমেন্টেশন ছেলেদের শরীরের এই কালো দাগের বড় একটা কারণ। অর্থাৎ ত্বকে অতিরিক্ত মেলানিন তৈরি হলে এমন দাগ দেখা দিতে পারে। বেশি মাত্রায় ওষুধ খাওয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও এমন সমস্যা হয়। এই দাগগুলো দৃষ্টিকটু। চাইলে এগুলো পুরোপুরি মুছে না ফেলতে পারলেও কমিয়ে আনা সম্ভব।
ছেলেদের গায়ে এই স্পটগুলো হালকা থেকে গাঢ় বাদামি কিংবা কালচে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ওভাল শেপের হয়ে থাকে। এ ধরনের দাগ শরীরের যেকোনো জায়গায়ই ফুটে উঠতে পারে। তবে যেসব জায়গা সূর্যরশ্মির সরাসরি সংস্পর্শে আসে, কিংবা বেশি ঘামে, সেসব জায়গায় এসব দাগ দেখা দেয়। মুখমন্ডল, ঘাড়, পিঠ কিংবা বাহুতে এ সমস্যা খুব সাধারণ ব্যাপার। স্পটগুলোর আকার ছোট হলেও কয়েকটা মিলে একটা বড় দাগ তৈরি হতে পারে।
মাত্রাতিরিক্ত ইউভি রে শুষে নেওয়ার পাশাপাশি কিছু স্কিন কন্ডিশনের জন্যও এসব দাগ দেখা যেতে পারে। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এগুলো ক্লোয়াস্মা, মেলানোসিস ইত্যাদি নামে পরিচিত। সাধারণত হরমোনাল পরিবর্তনের কারণে কিংবা ওষুধের প্রতিক্রিয়া থেকে এমন হয়। এসব ওষুধের মধ্যে পড়ে অ্যাস্ট্রোজেন্স, টেট্রাসাইক্লিন, ফেনিটয়েন কিংবা অনিয়মিত হার্টরেট রোধে ব্যবহৃত ওষুধ। এসব দাগে ব্যথা থাকে না কিংবা স্বাস্থ্য ঝুঁকিও থাকে না। কিছু নিয়ম মেনে চললেই এগুলো কমিয়ে আনা সম্ভব।
ট্রপিক্যাল ট্রিটমেন্ট
স্কিন কেয়ার বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে প্রেসক্রাইবড ব্লিচিং ক্রিমগুলো কয়েক মাস ব্যবহারে ডার্ক স্পট হালকা হয়। এগুলোয় হাইড্রোকুইনোন থাকে, যা ত্বকে অতিরিক্ত মেলানিন নিঃসরণ রোধ করে। তবে ক্রিম কেনার আগে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যাতে হাইড্রোকুইনোনের পরিমাণ ৩ থেকে ৪ শতাংশের বেশি না হয়। এ ছাড়া আরও কিছু ক্রিম ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে সহনীয় মাত্রায় রেটিনয়েডস, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড কিংবা কোজিক অ্যাসিড থাকে। তবে সেনসিটিভ স্কিনের ক্ষেত্রে ট্রপিক্যাল ট্রিটমেন্টের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এসব ক্রিমে বিভিন্ন মাত্রায় ক্যামিকেল উপাদান থাকায় ত্বকে র্যাশ, সুয়েলিং কিংবা চুলকানি হতে পারে।
কসমেটিক ট্রিটমেন্ট
কসমেটিক বা মেডিকেল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমেও ডার্ক স্পট কমিয়ে আনা যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ট্রপিক্যাল ট্রিটমেন্টের পরিপূরক হিসেবে তা করা হয়ে থাকে। তাই সেনসিটিভ ত্বকের অধিকারীদের একটু ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। এই চিকিৎসায় প্রথমত ব্যবহার করা যেতে পারে লেজার ট্রিটমেন্ট। এতে লেজার লাইট ব্যবহারের মাধ্যমে স্তরে স্তরে স্কিন সরিয়ে ডার্কস্পটগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয়। তবে এতে ইনফেকশন কিংবা স্কিন টেক্সচারে পরিবর্তনের ঝুঁকি থাকে। দ্বিতীয়ত, কেমিক্যাল পিল ব্যবহার করা যেতে পারে। এগুলোতে রয়েছে স্যালিসাইলিক অ্যাসিড এবং গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, যা চামড়ার উপরের স্তর তুলে নিচের স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চামড়া বের করে আনে। এ ক্ষেত্রে রয়েছে স্কিন ইরিটেশনের ঝুঁকি।
প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই শ্রেয়। দাগ সরাতে অনেক টাকা খরচ না করতে চাইলে শুরু থেকেই থাকতে হবে বাড়তি যত্নশীল। পুরোনো আর সময়ের সঙ্গে হালকা হয়ে যাওয়া দাগগুলো ফেরত আসা থেকে বাঁচতে কিছু সহজ নিয়ম মেনে চললেই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব।
২ ঘণ্টা পরপর সানস্ক্রিন মাখুন। বাইরে বের হলে তো অবশ্যই, এমনকি যেকোনো আউটডোর অ্যাকটিভিটি যেমন সাঁতার কিংবা খেলাধুলা, সবক্ষেত্রেই সানস্ক্রিন রি অ্যাপ্লাইয়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
অতিরিক্ত ঘাম হলে মুখ, ঘাড় কিংবা গলার যেসব অংশ খোলা থাকে, তা ধুয়ে আবার সানস্ক্রিন লাগিয়ে নিন।
বাইরে লম্বা সময় কাটালে চেষ্টা করুন যতটুকু সম্ভব ও সঙ্গত, শরীর ঢেকে রাখতে। ব্রড ব্রিমড হ্যাট, ফুলহাতা শার্ট ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।
খুব প্রয়োজন না হলে চেষ্টা করুন বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত ইনডোরে থাকার। কারণ, এই সময়ে সূর্যের ইউভি রশ্মি ছড়ানোর মাত্রা সবচেয়ে বেশি।
যথেষ্ট যত্নশীল হওয়ার পরেও বছরে অন্তত একবার একজন স্কিন এক্সপার্ট কিংবা ডার্মাটোলজিস্টের কাছে চেকআপ করিয়ে নিন। কারণ, অনেক সময় কিছু দাগ ক্যানসারের লক্ষণ হতে পারে, যা বোঝা যায় না।
শিরীন অন্যা
মডেল: তন্ময়
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস