ফিচার I পোর পারফেক্ট
চুলচেরা বিশ্লেষণের পর চুল নিয়ে মিলেছে অদ্ভুত অজানা এক তথ্য। যা আর্দ্রতার আনাগোনা নিয়ন্ত্রণের কাজে লাগে। চুলের সুস্থতা রক্ষার জন্য
ত্বকের লোমকূপ সম্পর্কে ধারণা নেই, এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু চুলেরও যে লোমকূপ হয়, তা হয়তো অনেকেরই অজানা। হেয়ার পোর বা চুলের লোমকূপের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয় হেয়ার পোরসিটি। সহজ ভাষায়, যা মূলত চুলের আর্দ্রতা শুষে নেওয়ার এবং তা ধরে রাখার সক্ষমতাকে বোঝায়। সাধারণত কোঁকড়া চুলের সঙ্গেই হেয়ার পোরসিটির সম্পৃক্ততা বেশি। তবে যেকোনো ধরনের চুলের ক্ষেত্রে এর মাত্রা জানা থাকা জরুরি। এতে করে চুলের ধরনটা আরও ভালো করে বুঝে নেওয়া যায়। মিটিয়ে নেওয়া যায় প্রয়োজনটা। বিশেষজ্ঞদের মতে, পোরসিটি নির্ধারিত হয় চুলের বাইরের স্তর অর্থাৎ হেয়ার কিউটিকলের কাঠামোর ওপর নির্ভর করে। কম পোরসিটিযুক্ত চুলের কিউটিকলগুলো শক্তপোক্তভাবে আবদ্ধ থাকে। ফলে আর্দ্রতা খুব সহজে প্রবেশ করতে পারে না চুলের ভেতরে। অন্যদিকে বেশি পোরসিটিযুক্ত চুলের কিউটিকলগুলো ফাঁকা ফাঁকা হয়। ফলে, আর্দ্রতার অবাধ আনাগোনা হয় চুলে। পোরসিটির পুরো ব্যাপারটাই জেনেটিক। তবে পরিবেশ, পানি, হিট স্টাইলিং থেকে কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট- সবেতেই প্রভাবিত হয় চুলের পোরসিটি।
হেয়ার পোরসিটি নির্ধারণের তিন ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। প্রথমটি, দ্য ফ্লোট টেস্ট। এক বাটি পানি নিয়ে তাতে কয়েকটা চুল ফেলে দেওয়া হয়। খেয়াল রাখা চাই সেগুলো যেন পরিষ্কার থাকে। মিনিটখানেক অপেক্ষার পর যদি দেখা যায় চুল পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে, বুঝতে হবে এর পোরসিটি কম। আর যদি খানিকটা ডুবে যায় চুল, পোরসিটি মধ্যম মানের। পোরসিটি বেশি হলে পানির তলানিতে গিয়ে ঠেকবে চুল। দ্য স্লিপ অ্যান্ড স্লাইড টেস্ট দিয়েও পোরসিটি নির্ধারণ সম্ভব। এক গোছা চুল নিয়ে তার উপরে আঙুল বুলিয়ে নিতে হবে। যদি উঁচু-নিচু, অমসৃণ ভাব অনুভূত হয়, বুঝতে হবে চুল বেশি পোরসিটিযুক্ত। মসৃণতা অনুভূত হলে পোরসিটি কম। এটা নির্ধারণের আরেকটি জনপ্রিয় পদ্ধতি দ্য স্প্রে বটল টেস্ট। চুলের উপর হেয়ার মিস্ট স্প্রে করে নেওয়া হয় এ ক্ষেত্রে। তাতে যদি বিন্দু বিন্দু মিস্টের কণা জমে থাকে, বোঝা যাবে পোরসিটি কম। সঙ্গে সঙ্গে মিস্ট শুষে নিলে পোরসিটি বেশি। আর খানিকটা সময় নিয়ে মিস্ট শুষে নিলে বুঝতে হবে মধ্যম মানের।
লো, মিডিয়াম আর হাই পোরসিটি ভেদে চুলের পরিচর্যায় থাকে রকমফের। পাল্টে যায় পণ্যের ধরন আর তা ব্যবহারের পদ্ধতি।
লো অর্থাৎ কম পোরসিটিযুক্ত চুলে আর্দ্রতার অভাব দেখা যায়। কারণ, এতে আর্দ্রতার জোগান দেওয়া কঠিন। কিন্তু একবার আর্দ্র করা গেলে দীর্ঘ সময় নিশ্চিন্তে থাকা যায়। এ ছাড়া হেয়ার কেয়ার প্রডাক্টগুলো চুলে প্রবেশ করতে পারে না বলে জমতে শুরু করে। ফলে পণ্যের পুষ্টিগুণ গভীরে পৌঁছাতে অসুবিধা হয়। চুল শুকাতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগে। বাইরে থেকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দেখালেও কম পোরসিটিযুক্ত চুলের ইলাস্টিসিটিতে ঘাটতি থাকে। খুব বেশি ঘনও দেখায় না। তাই এ ধরনের চুলের যত্নে এমন পণ্য ব্যবহার করা চাই, যা আর্দ্রতা আকর্ষণ করবে। দীর্ঘ সময় তা বজায় রাখবে চুলে। জোজোবা, শিয়া বাটার, নারকেল আর নানা ধরনের মিনারেল অয়েলযুক্ত পণ্য এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে উপযুক্ত। ব্যবহার করা যেতে পারে মধু কিংবা গ্লিসারিনযুক্ত প্রোটিন ফ্রি ডেইলি কন্ডিশনার। ক্রিম নয় বরং লিকুইড বেসড প্রডাক্টগুলো ব্যবহার করা চাই লো পোরসিটি চুলে। এগুলো জমে থাকে না। ক্ষতি না করেই চুলের যত্ন নিয়ে নেওয়া যায়।
মধ্যম পোরসিটিযুক্ত চুলে আর্দ্রতা আনাগোনা করতে পারে অবাধে। তাই এর যত্নের প্রয়োজন সবচেয়ে কম। শুধু নিয়ম করে ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট করলেই যথেষ্ট। তবে প্রতিদিনকার পরিচর্যায় প্রোটিনযুক্ত প্রডাক্ট এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। এ ধরনের চুলে স্টাইলিং, কালারিং আর কেমিক্যালের প্রভাব খুব সহজে পড়ে। তাই সাবধান! নিয়মিত এগুলো করলে চুলের পোরসিটি বেড়ে যেতে পারে।
হাই পোরসিটিযুক্ত চুলের জন্যও চাই ডিপ কন্ডিশনিং ট্রিটমেন্ট। কারণ, এতে লোমকূপের পরিমাণ বেশি থাকায় ক্ষতির প্রবণতাও বেশি থাকে। জটা পড়া ভাব সৃষ্টি হয়। শুষ্ক আর এলোমেলো দেখায় চুল। তাই শিয়া বাটার, নারকেল তেল, এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল, পাম অয়েল এ ধরনের চুলের যত্নে বেশি উপকারী। নিয়ম মেনে ব্যবহার করা চাই লিভ ইন কন্ডিশনার আর হেয়ার ময়শ্চারাইজার। যা চুলের আর্দ্রতা ভাব বজায় রাখবে এবং ধরেও রাখবে দীর্ঘ সময়।
জাহেরা শিরীন
মডেল: লামিয়া
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন