সেলিব্রিটি স্টাইল I সুইট কাপল রিপন-সুইটি
সম্পর্কে কোনো ট্রিক খাটে না। ভালোবাসার স্বতঃস্ফূর্ততাই তো যথেষ্ট একে টিকিয়ে রাখতে। সঙ্গে মায়ার জালে জড়িয়ে রাখা গেলে আরও শক্তপোক্ত হয় সম্পর্কের ভিত। এমনটাই মনে করেন এ দম্পতি। সুইটি আর রিপন। একজন দেশের মডেলিং ইন্ডাস্ট্রি মাতিয়ে ছোট পর্দাও মুখর করে রেখেছিলেন। অন্যজন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। দাঁতভাঙা নামের সব রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ে ব্যস্ত। ভিন্ন জগতের বাসিন্দা বটে। কিন্তু তাদের এক করেছে ভালোবাসা। প্রেম থেকে পরিণয়ে- একে একে পেরিয়েছে বত্রিশ বছর। ভালোবাসার সেই বন্ধন আজও অটুট
প্রথম দেখা কোথায়, কীভাবে?
রিপন: আমার বন্ধুর দূর সম্পর্কের আত্মীয় ছিল সুইটি। পাড়া ঘুরতে ঘুরতে একদিন সুইটির বাসার সামনেই প্রথম দেখেছিলাম ওকে। হেঁটে বাসায় ফিরছিল। ওর দিকে তাকাতেই চোখ রাঙিয়েছিল। ভয় পেয়ে গেছিলাম!
সুইটি: আসলে ছেলেদের ওরকম প্রেম প্রেম দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা আমার মোটেই পছন্দ ছিল না। তাই রিঅ্যাকশনটা অমন ছিল। পরে অবশ্য প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। হা… হা… হা…
প্রেমের প্রস্তাবটা প্রথম কার কাছ থেকে আসে? সে সময়কার কোনো কথা যা এখনো মনে পড়ে?
রিপন: অবশ্যই আমার থেকে। তবে প্রস্তাব দেওয়ার পরপরই ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে যায়। সুইটি নিজেই তার পরিবারের সবাইকে জানিয়ে দেয়। এমনকি প্রথম প্রেমপত্রটাও সবাইকে পড়ে শুনিয়ে দেয়। ভীষণ লজ্জায় পড়ে গিয়েছিলাম ব্যাপারটা নিয়ে। সে সময়কার এ কথাগুলোই মনে পড়ে।
সুইটি: প্রেম করার সময় রিপন আমাকে প্রচুর চিঠি লিখতো। বিশ-পঁচিশ পাতার প্রেমপত্র। আর সেকি বাজে হাতের লেখা! কিন্তু সেগুলো পাওয়ার, পড়ার অনুভূতিটাই ছিল অন্য রকম। রিপন ছাদে ছুড়ে দিত চিঠিগুলো। কিন্তু একবার আমার হাত অব্দি আর পৌঁছাতে পারেনি। এর আগেই কাক ছোঁ মেরে নিয়ে উড়ে যায়। দিনটা মনে পড়লে এখনো হাসি পায়।
প্রথম ঘুরতে যাওয়া…
রিপন: সংসদ ভবন। আগে তো সবাইকে ঢুকতে দিতো, এখন বন্ধ করে দিয়েছে।
সুইটি: হ্যাঁ। ঈদের সময় আমাদের ছোট ভাইবোনদের নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলাম সেখানে।
হানিমুনের মজার কোনো স্মৃতি?
রিপন: নেপাল গিয়েছিলাম। সপ্তাহব্যাপী সেই ট্যুরে সুইটি নয়, এক জাপানিজ ভদ্রলোকের সঙ্গে আমার বেশি সময় কেটেছিল। গল্প করে।
সুইটি: বোরিং ছিল ট্রিপটা। পরিবার নেই, বন্ধু নেই। প্রথম দিকে সামলে নিয়েছিলাম। কিন্তু পরে নেপালের রাস্তার হাঁটতাম আর হাউমাউ করে কাঁদতাম। রাতে ঘুমাতেও যেতাম কাঁদতে কাঁদতে। পরে তো অসুস্থই হয়ে পড়ি।
প্রেম করার সবচেয়ে বড় সুবিধা আর অসুবিধা…
রিপন: প্রেমের পুরো ব্যাপারটাই আমি দারুণ উপভোগ করি। এটাই সুবিধা। আর অসুবিধা হচ্ছে, অস্ত্র জমা দিতে হয়। অর্থাৎ স্বাধীনতা। হা… হা… হা…
সুইটি: প্রেম আমার কাছে অ্যাডভেঞ্চারের মতো। লুকিয়ে ঘুরতে যাওয়া, চিঠি পড়া। ব্যাপারগুলো খুব মজা লাগতো আমার। আর অসুবিধা ছিল, রিপন প্রায়ই উধাও হয়ে যেতো। মানে ঘুরতে চলে যেতো এদিক-সেদিক। তখন অস্থির লাগতো আমার।
ভালোবাসা, বিশ্বাস না বোঝাপড়া- দাম্পত্যে বেশি জরুরি কোনটা?
রিপন: ভালোবাসাটাই ভিত্তি। এটা না থাকলে বিশ্বাসও তৈরি হয় না। বোঝাপড়াতেও ঘাটতি থেকে যায়।
সুইটি: আমার মতে বিশ্বাসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
ঝগড়াটা কে বেশি করে? আর রাগ ভাঙানোর দায়িত্ব কার?
রিপন: আমি ভাই গাছের মতো মানুষ। আমি ঝগড়া করি না। হা… হা… হা…। আর আমাদের কাছে একটা অটো রাগ ভাঙানোর মেশিন আছে। তাই কাউকেই কষ্ট করতে হয় না।
সুইটি: রিপনের অনেক রাগ। বহিঃপ্রকাশটা যদিও কম। কিন্তু হুটহাট রেগে যায় ও। আমি অবশ্য সুন্দর সামলে নিই। এত দিনের অভিজ্ঞতা বলে কথা। হা… হা… হা…। আর আসলেই আমাদের অটো রাগ ভাঙানোর মেশিনটা কিন্তু দারুণ কাজের।
সারপ্রাইজ করা হয়?
রিপন: দিতে আর পারি কই। আগে থেকে সব বুঝে ফেলে। তবে একবার সুইমিংপুল থেকে সাপ তুলে বোতলে পুরে নিয়ে গিয়েছিলাম সুইটির জন্য। হা… হা… হা…
সুইটি: জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী এগুলোতে আলাদা করে সারপ্রাইজ করা হয় না রিপনকে। রান্না করে খাইয়ে সারপ্রাইজ করতে ভালো লাগে আমার। ও এতেই ভীষণ খুশি হয়। আর প্রায়ই আমার জন্য ফুল নিয়ে আসে ও। খুব ভালো লাগে।
সম্পর্কের ভাঙন আজকালকার সহজ সত্য। সে ক্ষেত্রে বিয়ে টিকিয়ে রাখার ম্যাজিক ট্রিকটা কী?
রিপন: কোনো ম্যাজিক ট্রিক নেই। আমি সুইটিকে ভালোবাসি বলেই তার ব্যাপারে আমি দায়িত্বশীল, মনোযোগী। ভালোবাসা বা বিয়ে তো জোর করে টিকিয়ে রাখতে হয় না। পুরো ব্যাপারটা এত কঠিন নয় কিন্তু। সহজ এবং সুন্দর।
সুইটি: শুধু ভালোবাসার মানুষটাকে নয়, তার চারপাশের মানুষসহ পুরো সংসারকে যদি ভালোবাসার সঙ্গে সঙ্গে মায়া দিয়ে আগলে রাখা যায়, বিয়ে সুন্দরভাবে টিকে যায় বলে মনে করি আমি।
প্রিয় পোশাক? একে অন্যকে কোন পোশাকে দেখতে ভালো লাগে?
রিপন: জিনস, টি-শার্টেই আমি বেশি স্বচ্ছন্দ। আর সুইটিকে আমার সব পোশাকেই ভালো লাগে। কোনো কিছুতে ওকে না মানালে আমি সরাসরি বলে দিই।
সুইটি: শাড়ি আমার সবচেয়ে প্রিয়। তাঁত ভীষণ ভালো লাগে। কিন্তু কাঞ্জিভরমের প্রতি আমার আলাদা দুর্বলতা আছে। আর রিপনকে পাঞ্জাবিতে দেখতেই আমার বেশি ভালো লাগে। যদিও পরতে চায় না।
প্রিয় রঙ?
রিপন: আকাশি।
সুইটি: কালো, সাদা, লাল আর হালকা গোলাপি।
প্রথম ক্রাশ?
রিপন: অবশ্যই সুইটি। তবে ক্লাস থ্রি কিংবা ফোরে অভিনেত্রী ববিতাকে খুব ভালো লাগতো।
সুইটি: সময় কিংবা সুযোগ কোনোটাই মেলেনি। রিপনই আমার প্রথম এবং একমাত্র।
ব্র্যান্ডপ্রীতি আছে? প্রিয় ব্র্যান্ড কোনটা?
রিপন: বারবেরি, জারা, আরমানির পোশাক আর অ্যাকসেসরিজ আমার পছন্দ। তবে আমাকে মানিয়ে গেলেই হলো। ব্র্যান্ডেডই হতে হবে এমনটা নয়।
সুইটি: না। নির্দিষ্ট কোনো ব্র্যান্ডপ্রীতি নেই। আমাকে মানিয়ে গেলে আমি ব্র্যান্ডেড, নন-ব্র্যান্ডেড সবই পরি।
অপ্রকাশ্য প্রতিভা
রিপন: হারমোনিকা ভালো বাজাই আমি।
সুইটি: অনেকেই হয়তো বিশ্বাস করতে পারবেন না, আমার রান্নার হাত কিন্তু খুব ভালো। শুঁটকি, মগজ আর হাঁসের মাংসে আমার স্পেশালিটি।
প্রিয় ভ্রমণের জায়গা?
রিপন: ঘুরতে ভীষণ পছন্দ করি আমি। আগে নিয়মিত ট্র্যাকিংয়ে যাওয়া হতো। দেশের মধ্যে বান্দরবান আমার পছন্দের তালিকার শীর্ষে। আর দেশের বাইরে গেলে ইউরোপ। সেখানে অনেক বন্ধু আমার। তাই আগে থেকে পরিকল্পনা করে নিয়ে ক্যাম্পিং করতে চলে যাই।
সুইটি: বেড়াতে যাওয়ার কথা শুনলেই আমার ভালো লাগে। আমার বন্ধুরা আর রিপন থাকলেই চলে। আমাদের দেশটাই তো অনেক সুন্দর। একেক জায়গার ল্যান্ডস্কেপ একেকভাবে আকর্ষণ করে। বান্দরবান, টাঙ্গুয়ার হাওর এগুলো আছে আমার পছন্দের তালিকায়। আর দেশের বাইরে ইন্ডিয়ার কালচার, জীবনযাত্রা ওদের মানুষের মধ্যে আমি নিজস্বতা খুঁজে পাই।
ব্যাগে কী থাকে সব সময়?
রিপন: টাকা, গাড়ির চাবি, মাউথ অরগ্যান।
সুইটি: ওষুধ। আমার পরিচিত মানুষেরা আমাকে ভ্রাম্যমাণ ফার্মেসি বলে। হা… হা…
গিল্টি প্লেজার?
রিপন: সিগারেট। মাঝেমধ্যেই ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু বেশি দিন সে চেষ্টা টিকে থাকে না। তখন দারুণ গিল্টি লাগে।
সুইটি: টক, ঝাল যেকোনো খাবার ভীষণ প্রিয় আমার। কিন্তু এগুলো বেশি খেলে শরীর খারাপ করে। না খেয়েও থাকতে পারি না।
শখ?
রিপন: সুইমিং, সাইক্লিং আর ব্যাডমিন্টন খেলা। জায়গার অভাবে বড় করে বাগান করা হয় না। তবে বারান্দায় ছোট বাগান আছে আমার।
সুইটি: রান্না করা।
প্রিয় অভিনেতা-অভিনেত্রী?
রিপন: সাদা-কালো যুগের সবাইকে আমার ভালো লাগে। তালিকাটাও অনেক বড়- হুমায়ুন ফরীদি, রাইসুল ইসলাম আসাদ, খালেদ খান, চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম। অভিনেত্রীদের মধ্যে ফেরদৌসী মজুমদার, রিনি রেজা, জয়া আহসানকে আমার ভালো লাগে। দেশের বাইরে অড্রে হেপবার্ন আর টম ক্রুজ।
সুইটি: ফেরদৌসী মজুমদার, জয়া আহসান, ত্রপা মজুমদার আর অপি করিম। নতুনদের মধ্যে মেহজাবীনের অভিনয় সাবলীল। আর চঞ্চল চৌধুরী, শহীদুজ্জামান সেলিম, মোশাররফ করিমের অভিনয় ভালো লাগে। এখনকার বলতে গেলে আরফান নিশো খুব ভালো কাজ করছে। দেশের বাইরে জুলিয়া রবার্টস, অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, সোফিয়া লরেন আমার ফেবারিট।
আপনি কি আবেগপ্রবণ?
রিপন: চরম। কিন্তু তা লুকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে কিংবা প্রকাশেও তেমনি স্ট্রং।
সুইটি: আবেগে আমি দশে দশ। আমার কষ্ট পাওয়ার প্রবণতাটা খুব বেশি।
আইডল?
রিপন: অনেকে ব্যাকডেটেড ভাবতে পারে, কিন্তু হজরত মুহাম্মদ (স.) আমার আইডল।
সুইটি: মাদার তেরেসা। নিজের জন্য নয়, অন্যের জন্য বেঁচে থাকার যে প্রবল ক্ষমতা তার মধ্যে ছিল, তা আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
বাসায় সবচেয়ে পছন্দের জিনিস?
রিপন: আমার কাউচ।
সুইটি: আমার পুরো বাসাটাই আমার স্বর্গ।
পছন্দের শব্দ…
রিপন: শোকরান। হা.. হা…
সুইটি: ধন্যবাদ, ভালোবাসা। আর এই রিপন! অনেক সময় তো অন্য মানুষকেও বলে ফেলি। হা… হা… হা…
আজ থেকে দশ বছর পর নিজেকে কীভাবে দেখতে চান?
রিপন: আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখলে এখন যেমনটা আছি, তার চেয়ে আরও ভালো থাকতে চাই। গরিবদের পাশে দাঁড়াতে চাই।
সুইটি: বাংলাদেশের মাদার তেরেসা হতে চাই।
জাহেরা শিরীন
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন