ফিচার I একটা গোপন কথা ছিল বলবার
শুধু কি সুখকর সম্ভোগই এর শেষ কথা? শরীরের পরিপূর্ণ সুস্থতায়ও অঙ্গটির স্বাভাবিকতা চাই। তাই আড়ালে-আবডালে থাকলেও অযত্নে না থাকুক
শুধু হাত-পা নয়, অনেক সময় চোখ, নাক কিংবা ঠোঁটেও নারী-পুরুষের ফারাকটা শনাক্ত করা যায় না। পরিপূর্ণ নারীসত্তার পরিচয় পেতে একটি অঙ্গই যথেষ্ট। ভ্যাজাইনা, যোনি কিংবা স্ত্রীচিহ্ন। তবে অঙ্গ হিসেবে যতটা গুরুত্বপূর্ণ, যত্নে ততটাই এটি অবহেলিত অনেকের কাছে। এ নিয়ে খোলাখুলি কথাবার্তাও কম। কিন্তু দিন পাল্টেছে। গেল কয়েক বছরে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে ভ্যাজাইনাল কেয়ার নিয়ে। তৈরি হয়েছে ভ্যাজাইনাল সাপোজিটরি, ব্লুটুথ মেনস্ট্রুয়াল কাপসহ আধুনিক সব ভ্যাজাইনা ফ্রেন্ডলি আইটেম। এমনকি সৌন্দর্যজগতেও বিস্তর গবেষণা চলছে এর বিউটিফিকেশন নিয়ে। শোনা গেছে ভ্যাজাইনাল লেজার, শিট মাস্কসহ ভ্যাজাইনার জন্য বিশেষ ফেশিয়াল ‘ভ্যাজাশিয়াল’-এর নামও। তবে নতুন এসব ট্রেন্ডের কথা শুনে বিচলিত হবার কিছু নেই। কারণ, এত কঠিন কিন্তু নয় যোনির যত্ন। সহজ উপায়েও সম্ভব এর সৌন্দর্য এবং সুস্থতা ধরে রাখা।
প্রয়োজন পরিচ্ছন্নতা
ভ্যাজাইনা পরিষ্কার রাখার জন্য খুব বেশি আয়োজনের দরকার নেই। এটা শরীরের স্মার্ট একটা অংশ, যার ‘সেলফ ক্লিনিং’ মেকানিজম আছে। ভ্যাজাইনা স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাসিডিক পিএইচ বজায় রাখতে সক্ষম, যা প্রাকৃতিকভাবে এই অংশের ইনফেকশন প্রতিরোধ করে। তাই বিশেষজ্ঞদের মতামত ‘দ্য লেস ইউ মেস দেয়ার, দ্য বেটার’। তাই বোরিক অ্যাসিড সাপোজিটরি কিংবা হারবাল ডিটক্স পার্লের মতো হাইএন্ড ভ্যাজাইনাল প্রডাক্ট হাতের কাছে নেই বলে হাপিত্যেশ করার কিছু নেই। শুধু পানিতেই সুন্দর পরিষ্কার হয়ে যাবে ভ্যাজাইনা। তবে এর বাইরের অংশ অর্থাৎ ভালভা পরিষ্কারের ক্ষেত্রে কোমল সাবান ব্যবহার করা যেতে পারে। কারণ, ভালভার ভাঁজে ব্যাকটেরিয়া আর মৃতকোষ জমে থাকে। যা সরাতে সামান্য সাবান আর হাতই যথেষ্ট। তবে সাবান না হলেও চলবে। খুব বেশি ফেনা তুলে জোরে জোরে ঘষামাজা করা যাবে না স্পর্শকাতর এই অংশ। যারা সাবান ব্যবহারের পক্ষপাতী নন, তারা বেছে নিতে পারেন ইনার ক্লিনিং মুজ বা ক্লিনজার। ভ্যাজাইনার জন্য বিশেষভাবে তৈরি এ পণ্যগুলো প্রস্তুত করা হয় বিভিন্ন উদ্ভিদের নির্যাস, লোটাস ওয়াটারের মতো প্রাকৃতিক সব উপাদানে। পরিষ্কারের পর ভেজা রাখা যাবে না ভ্যাজাইনা, ভালভা এবং তার আশপাশের অংশ। হালকা হাতে পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে মুছে নিলেই চলবে। একইভাবে নজর দিতে হবে বিকিনি এরিয়াতেও।
ট্রিমিং ট্রিক
প্রাকৃতিকভাবেই ভ্যাজাইনার বাইরের অংশ অর্থাৎ ভালভা আচ্ছাদিত থাকে পিউবিক হেয়ারে। বয়স কিংবা ব্যক্তিগত পছন্দের ওপর নির্ভর করে এই অংশের গ্রুমিং। পিউবিক হেয়ার মূলত শরীরের সবচেয়ে স্পর্শকাতর এই অংশকে সুরক্ষিত রাখে ধুলাময়লা ও ব্যাকটেরিয়া থেকে। তাই এর জরুরত এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। চাইলেই রেখে দেওয়া যেতে পারে পিউবিক হেয়ার। ঘাবড়ানোর কিছু নেই। রূপানজেলের মতো বাড়বে না। প্রাকৃতিকভাবেই অল্প করে বাড়ে পিউবিক হেয়ার। ট্রিম করতে চাইলে থাকছে সেই অপশনও। পিউব ক্লিপার, ট্রিমার কিংবা চুল কাটার ছোট কাঁচি দিয়েই তা সম্ভব। অনেক ধরনের শেপেও করে নেওয়া যায় ট্রিমিং। ল্যান্ডিং স্ট্রিপ, মোহক, পোস্টেজ স্ট্যাম্প, বারমুডা ট্রায়াঙ্গল, মারটিনি গ্লাস, হার্ট নানা শেপে ট্রিম করে নেওয়ার চল রয়েছে বিশ্বজুড়ে। যাদের একদম খালি ক্যানভাস পছন্দ, তাদের জন্য অপশন হিসেবে থাকছে শেভিং, ওয়াক্সিং কিংবা থ্রেডিং এবং লেজার হেয়ার রিমুভাল অথবা ইলেকট্রোলাইসিস। শেভিং বাসায় বসেই করে নেওয়া যায়। তবে এর আগে দরকার প্রস্তুতি। কাঁচি দিয়ে প্রথমে ছোট করে কেটে নেওয়া উচিত পিউবিক হেয়ার। এতে শেভ করা সহজ হবে। তারপর ফ্র্যাগরেন্স ফ্রি অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ওয়াশ বা জেল মাখিয়ে নিতে হবে ভালভা এবং বিকিনি লাইনজুড়ে। তবে তা যেন ভ্যাজাইনায় ঢুকে না যায়। পরিষ্কার, ধারালো রেজর ব্যবহার করতে হবে প্রতিবার শেভিংয়ের সময়। যেদিকে হেয়ার গ্রোথ, সেদিকেই দিতে হবে রেজরের টান। আস্তে আস্তে, অল্প অল্প অংশ নিয়ে শেভ করতে হবে। মনে করতে হবে এটা ম্যারাথন, স্প্রিন্ট ভাবলেই বিপদ। আহত হবার আশঙ্কা আছে। ওয়াক্সিংয়ের ক্ষেত্রে অবশ্য অপশন বাছাইয়ের সুযোগ আছে। বিকিনি, ব্রাজিলিয়ান আর ফ্রেঞ্চ স্টাইলটাই বেশি চলে এ ক্ষেত্রে। তবে দক্ষ কাউকে প্রয়োজন। লেজার হেয়ার রিমুভাল আর ইলেকট্রোলাইসিসের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। ভালো লেজার সেন্টারে পারদর্শী হাত প্রয়োজন এ জন্য।
তবে যা-ই করা হোক না কেন, কেমিক্যাল হেয়ার রিমুভিং ক্রিম আর টুইজার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। স্পর্শকাতর এই অংশে ইনগ্রোন হেয়ারের সমস্যা তৈরি করে এগুলো। যা খুবই বিপজ্জনক, ব্যথাদায়ক। সে ক্ষেত্রে ব্যথা কমাতে ওয়ার্ম কমপ্রেস কিংবা বেনজোয়েল পার-অক্সাইড ব্যবহৃত হতে পারে।
বাড়তি পরিচর্যায়
মূলত ভালভা আর বিকিনি লাইনের অংশতেই দরকার বাড়তি পরিচর্যা। কারণ, জায়গাটা দৃশ্যমান। অনেকেরই অভিযোগ, শরীরের এই ত্বক অন্যান্য অংশের তুলনায় কালচে। ব্যাপারটা প্রাকৃতিক। কারণ, ভালোভাবে আর বিকিনি লাইনে মেলানোসাইটসের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। ফলাফল পিগমেন্টেশন, কালচে ভাব। তবে বাড়তি পরিচর্যায় এর সৌন্দর্য বাড়ানো সম্ভব। এক্সফোলিয়েট করে নেওয়া যেতে পারে ত্বকের এই অংশে। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ছাড়াও মাইক্রোবিড, ওয়ালনাট চূর্ণ, অ্যাপ্রিকট কার্নেল চূর্ণ কিংবা লবণযুক্ত এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে ময়লা এবং মৃতকোষ দূর হবে। সতেজ সুন্দর থাকবে ত্বক। তারপর ব্যবহার করা যেতে পারে প্যাক। একদম প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি। এই অংশের উজ্জ্বলতা বাড়াতে দই দারুণ কার্যকর। দই থেকে পানি নিংড়ে নিয়ে তা ম্যাসাজ করে ১৫ থেকে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে। নিয়মিত ব্যবহারে উজ্জ্বলতা বাড়বে। এ ছাড়া কমলার খোসার গুঁড়া নিয়ে তাতে দুধ মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করে তা-ও মেখে নেওয়া যেতে পারে। রাখতে হবে ২০ মিনিট। তারপর স্বাভাবিক পানিতে ধুয়ে নিলেই চলবে। সমপরিমাণ আমন্ডের গুঁড়া আর দুধ দিয়ে তৈরি পেস্টও এই অংশের উজ্জ্বলতা বাড়াতে দারুণ। চন্দনের গুঁড়া ও গোলাপজলের মিশ্রণ, লেবু আর গোলাপজলের মিশ্রণ এই অংশের উজ্জ্বলতা বাড়াতে কার্যকর। টমেটো ফালি করে কেটে নিয়ে তাও ব্যবহার করা যেতে পারে। ডিমের সাদা অংশ ফেটিয়ে ব্যবহৃত হতে পারে ভালভা আর বিকিনি লাইনের পিগমেন্টেশন কমাতে। এ ক্ষেত্রে ভালো কাজ করে অ্যালোভেরা জেল। সামান্য হলুদ মিশিয়ে নিতে হবে এর সঙ্গে। এই মিশ্রণ মেলানিন উৎপাদনের হার কমিয়ে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিসেপটিক প্রোপার্টিযুক্ত নারকেল তেলের নিয়মিত ব্যবহার এই অংশের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। রাখে সুস্থ, সুন্দর।
জাহেরা শিরীন
মডেল: নায়লা নায়েম
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস