ফিচার I সাদায় সতর্ক
বাইরে জলকাদা, ভেতরে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। এমন অবস্থায় কেমন রঙের পোশাক প্রযোজ্য?
পোশাক নিয়ে ভাবতেই হয় বৃষ্টিদিনে। শুধু যখন-তখন বৃষ্টির আশঙ্কাই নয়, সঙ্গে রয়েছে আরও কিছু সমস্যা। আছে জলাবদ্ধতা। রাস্তার প্যাচপ্যাচে কাদা। এর সঙ্গে ভ্যাপসা গরম রয়েছে উপরি হয়ে। তাই এ সময়ে চাই সচেতনতা আর সঠিক পরিকল্পনা। তবেই বর্ষা হয়ে উঠবে উপভোগ্য।
কয়েক বছর ধরে প্যাস্টেল রঙ রয়েছে পছন্দের তালিকার ওপরের দিকে। আর সাদার আবেদন চিরন্তন। বর্ষা এলেই ফ্যাশনবিষয়ক আলোচনায় অভিজ্ঞরা বলে দেন হালকা রঙের পোশাক আলমিরাতে তুলে রেখে গাঢ় শেডের পোশাক বেছে নিতে। কিন্তু কতটা মেনে চলা যায় এ পরামর্শ? সব সময় কি আবহাওয়ার দিকে তাকিয়ে হয় পরিকল্পনা? স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের কথাই ধরুন। স্কুলপোশাকে সাদা রঙ থাকলে তা বদলে অন্য পোশাক পরে যাবার কোনো সুযোগ শিক্ষার্থীদের নেই। আর আমাদের দেশের স্কুল-কলেজের পোশাকে বেশির ভাগই রয়েছে সাদা রঙের ব্যবহার।
সাদা কাপড়ে কাদার দাগ এ সময়ে লাগবেই। তা চটজলদি পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়ার চেষ্টা করুন। তারপর ডিটারজেন্ট দিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। এরপরেও দাগ না উঠলে আলুর খোসা দাগে ঘষে নিন। তারপরে পানি ও ডিটারজেন্টে ভিজিয়ে পরিষ্কার পানিতে ধুয়ে নিন। বর্ষার সময়ে সাদা রঙের পোশাকে ঘামের দাগ বসে যায় সহজেই। এই দাগ বসে যায় পোশাকের আর্ম হোল, কলার ও কাফে। পোশাক ধোয়ার সময় এসব স্থানে শ্যাম্পু ছড়িয়ে আলতো ঘষে ধুয়ে নিন। আরও একটি পদ্ধতি রয়েছে। কাপড় ধোয়ার পানিতে কয়েকটি পেইনকিলার ট্যাবলেট ফেলে দিন। পানির সঙ্গে মিশে গেলে সেই পানি দিয়ে ধুয়ে নিন কাপড়টি। ঘামের দাগ উঠে যাবে। এসব উপাদানে সমাধান না হলে ব্যবহার করুন ব্লিচিং পাউডার। সাদা কাপড়ের দাগের জায়গায় ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে নিন।
নির্ধারিত রঙের বাইরে পোশাক পরার সুযোগ রয়েছে যাদের, তারা গাঢ় রঙের পোশাক বেছে নিতে পারেন। গাঢ় নীল, বটল গ্রিন, ম্যাজেন্টা, কমলা, ফুশিয়া পরুন।
এ সময়ে ট্রপিক্যাল প্রিন্ট থাকতে পারে তালিকার প্রথম দিকে। উজ্জ্বল রঙের ফুল আর পাতা এমন আবহাওয়াতে বেশ উচ্ছলতা ছড়াবে। নানা রঙের ফুলের বাহারে মেঘলা দিন কিছুটা হলেও প্রাণবন্ত লাগবে।
বছরের এ সময়ে পোশাক পরিকল্পনা করুন আবহাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে। বেছে নিন সিনথেটিক ফ্যাব্রিক। এ কাপড় পানি শুষে নেয় না। সহজেই শুকিয়ে যায়। সিল্ক ও জর্জেট এ সময়ের সব থেকে উপযোগী ফ্যাব্রিক। ভিজে গেলেও শুকিয়ে যাবে দ্রুত। আবার কাদা কিংবা পানির দাগ বসে যায় না একটুতেই। যদি এমন হয় যে আপনার আরাম শুধু সুতিতেই, তাহলে হালকা বুননের ফ্যাব্রিক বেছে নিন। ঘন বুননের সুতি শুকাতে পর্যাপ্ত রোদের দরকার। আবার বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকার কারণে এ ধরনের কাপড় ঠিকভাবে শুকাতে তাই বেশি সময় প্রয়োজন। পোশাকের প্যাটার্ন এ সময়ে বাহুল্যবর্জিত হলেই ভালো। কামিজ বেছে নিলে দৈর্ঘ্যরে দিকে নজর দিন। গোড়ালি পর্যন্ত লম্বা পোশাক এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। হাঁটুর নিচ অব্দি দৈর্ঘ্যে সচেতন হতে হবে। কামিজের হাতার কাট রাখুন আঁটসাঁট।
বটমে কটন ব্যবহার যতটা সম্ভব কম করুন। কেননা পানি লেগে যাওয়ার আশঙ্কার সঙ্গে সঙ্গে কাদা লেগে সৌন্দর্য নষ্টের ভয় তো রয়েছেই। সাটিন, বাটার সিল্ক, বাটারফ্লাই সিল্ক ধরনের ফ্যাব্রিক বেছে নিতে পারেন বটম তৈরিতে। ডাবল জর্জেটও ব্যবহার করা যাবে। বেশি ঘেরের বটম যেমন পালাজো, হেরেম প্যান্ট, স্কার্ট এ সময়ে এড়ানোই ভালো। ব্যবহার করুন ন্যারো কাটের প্যান্ট অথবা সালোয়ার।
পোশাকের সঙ্গে স্কার্ফ, দোপাট্টা যোগ করতে চাইলে সুতি এড়িয়ে যান যতটা সম্ভব। সিল্ক, জর্জেট, শিফনে থাকুন ফুরফুরে। এ ধরনের ফ্যাব্রিকে ভিজে অস্বস্তির ভয় আপনার থাকবে না। ভিজে গেলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পানি ঝরিয়ে নিয়ে বাতাসে মেলতে পারলে ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠবে।
নতুন পোশাক নিয়ে একটু সতর্ক হতে হবে। পোশাকের অর্নামেন্টেশনে অনেক সময়েই ব্যবহার করা হয় ফ্যাব্রিক ও সুতো। কেনার সময়ে নিশ্চিত হয়ে নিন অলংকরণে ব্যবহৃত কোনো উপাদান থেকে রঙ উঠবে কি না। কেননা, বৃষ্টির পানির ছাটে রঙ উঠলে ব্যবহারের উপযোগিতা হারাতে পারে পোশাকটি।
বর্ষায় আলমারিতে কাপড় রাখার সময় ভাঁজে ভাঁজে ন্যাপথ্যালিন রেখে দিন। এতে কাপড়ে ফাঙ্গাসের আক্রমণ হবে না। পোকার উপদ্রব থেকেও কাপড় থাকবে সুরক্ষিত। বর্ষায় ঘরের ভেতর কাপড় না শুকিয়ে যতটা সম্ভব খোলা বারান্দা কিংবা ছাদে শুকিয়ে নিন। কাপড় বেশি সময় ভেজা থাকলে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ হয়। এ কারণে বাজে গন্ধ হয়ে থাকে কাপড়। এমন হলে ডিটারজেন্ট ও অ্যান্টিসেপটিক লিকুইড দিয়ে আবার সেটি ধুয়ে নিন।
আলমারিতে কাপড় রাখার সময়ে ভাঁজে ভাঁজে খবরের কাগজ রাখলে আর্দ্রতা তৈরি হবে না। গুছিয়ে রাখার সময় চন্দন কাঠ রাখুন। কাপড় থেকে অস্বস্তিকর গন্ধ আসবে না। এ ছাড়া রাখতে পারেন পারফিউমারি পণ্য। যেমন সাবান, পারফিউমের বোতল।
সারাহ্ দীনা
মডেল: নিকি ও আল ফাহাদ বারি
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: ক্লাব হাউস ও ওটু
ছবি: সৈয়দ অয়ন