ফিচার I বাই বাই টাই
একসময় টাই ছাড়া করপোরেট অফিসের ফরমাল লুক কল্পনাই করা যেত না। দিন বদলেছে। অফিস পাড়ায় টাই পরার চল প্রায় উঠেই যাচ্ছে। এবং বলা হচ্ছে, এমন সময় আসছে, যখন কেউ আর অফিসে টাই পরে আসবে না।
ব্রিটিশ হোটেল কোম্পানি ট্রাভেল লজ পরিচালিত জরিপে ২০০০ ব্রিটিশ চাকরিজীবীর রোজকার পোশাকের ওপর পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, বেশির ভাগই ফরমাল ছেড়ে ক্যাজুয়াল পোশাকে ঝুঁকছে। ১০ জনের মধ্যে ৭ জন অফিসে ক্যাজুয়াল পোশাক পরে আসছে। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৪৩ শতাংশ মনে করছেন, ভবিষ্যতে অফিসে স্যুট ও টাইয়ের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। এখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টাই শুধু বিশেষ অনুষ্ঠান বা উপলক্ষের জন্য তুলে রাখা হয়।
আইরিশ ইনডিপেনডেন্টের একটি রিপোর্ট থেকে জানা গেছে? ৭৪ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করে, টাই আর কেউ কোনো দিন পরবেই না। গবেষকেরা আরও বলছেন, ‘ড্রেস ডাউন ডে’ বা ‘ক্যাজুয়াল ফ্রাইডে’ এর জন্য অনেকটাই দায়ী।
অফিসে ক্যাজুয়াল পোশাক যত পরা হচ্ছে, ততই টাই পরার হার কমে আসছে। যুক্তরাজ্যের হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক কারেন পাইন বলেছেন, গত তিন দশকে কর্মক্ষেত্রে বিরাট পরিবর্তন ঘটেছে, ফলে অনেক ট্র্যাডিশন এবং প্রটোকল হারিয়ে গেছে। এখন অনেক অফিসের প্রধানকে কেবল বস হিসেবে নয়, একজন মেন্টর হিসেবে দেখা হয়। সহকর্মীদেরও নাম ধরে ডাকা হচ্ছে। কাজের পরিবেশ সহজ হচ্ছে। ফুল বা বিজনেস ফরমাল ড্রেসের ট্র্যাডিশন হারিয়ে যাচ্ছে। আর সেই সঙ্গে টাই হারাচ্ছে জনপ্রিয়তা।
এর কিছু কারণ ফ্যাশন গবেষকেরা বের করেছেন। এগুলোর একটি হচ্ছে ‘আইডলাইজেশন’। এ জন্য অনেকটাই দায়ী ‘হাই প্রোফাইল-ডাউন ড্রেসার’ মার্ক জাকারবার্গ, স্টিভ জবস, লেরি পেজ, সারজেই ব্রিন এমনকি বারাক ওবামাও। শুরুটা স্টিভ জবস আর ডিন কামেন দিয়ে হলেও মূলত মার্ক জাকারবার্গের উত্থানের পর থেকে তরুণদের মধ্যে অফিসে ক্যাজুয়াল আউটফিটের জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। আমেরিকায় ক্যাজুয়াল ইউনিফর্ম আউটফিট স্টাইলের ঢেউ সিলিকন ভ্যালি থেকে ধীরে ধীরে ওয়াল স্ট্রিটে আছড়ে পড়ছে। সেই সঙ্গে কমে আসছে টাই পরার চল। অফিসে অনেক ব্যবসায়ী এবং এক্সিকিউটিভ ফরমাল স্যুট পরছে, কিন্তু টাই বাদ দিয়ে। অনেকে এটাকে একটি নতুন ফ্যাশন ধারা হিসেবে নিচ্ছে। এ ছাড়া টাই ‘হোয়াইট কলার’দের কলার থেকে দ্রুত হারিয়ে যাওয়ার আরেকটি প্রভাবক হচ্ছে ‘ঝামেলা এড়িয়ে সময় বাঁচানো’র প্রবণতা। এটি পরতে গিয়ে নটের প্যাঁচে জেরবার হয়নি, এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম। এ ছাড়া কাজটা অনেক সময়সাপেক্ষ। তাই সকালবেলায় ঘুম থেকে উঠে অফিসের জন্য রেডি হওয়ার সময় বেশির ভাগ চাকরিজীবী সচেতনতার সঙ্গে টাই এড়িয়ে যাচ্ছে।
১৯৯৮ সালে আমেরিকায় ৯০০ মিলিয়ন পাউন্ড মূল্যের টাই বিক্রি হয়েছে এবং ২০০৮ সালে নেমেছে মাত্র ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ডে। বোঝা যাচ্ছে, টাইয়ের জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া শুরু হয়েছে আরও আগে থেকে। তবে টাই পরা না-পরা নিয়ে রয়েছে কিছু মিশ্র প্রতিক্রিয়া। অনেকে এখনো মনে করে, টাই পরা মানে পেশাস্থলে সিরিয়াসনেস প্রকাশ করা। সে ক্ষেত্রে দুটি দল তৈরি হয়েছে। এক দল মনে করছে, টাই না পরলেও চলে; অন্য দলের ধারণা, অফিসে ফরমাল লুকে টাই পরা উচিত। বেশির ভাগ মিলেনিয়ালই টাই না পরার দলে। আবার এমন অনেক তরুণ আছে, যারা ভালোবেসেই পরে থাকে, তবে এটি সংখ্যায় নগণ্য। কিন্তু এখনো অনেক অফিসে তাদের ড্রেস কোড ম্যানুয়ালে টাই পরা বাধ্যতামূলক করে রেখেছে। এ ছাড়া বিজনেস পার্টি ও বিভিন্ন ইভেন্টের ইনভাইটেশন কার্ডে টাই পরতে বলা হয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে বিশেষ অবস্থায় অফিসের টাই এড়ানো না গেলেও অনেকে পার্টিতে এটি এড়িয়ে যাওয়া হয়। এর পেছনে সাহস জুগিয়েছে ডেভিড বেকহাম, জর্জ ক্লুনি, প্রিন্স হ্যারি, প্রিন্স উইলিয়ামদের মতো হাই প্রোফাইল সেলিব্রিটি ফ্যাশন আইকনরা। বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা, স্টার স্পোর্টস, ইএসপিএন ইত্যাদি চ্যানেলগুলোর প্রেজেন্টাররা টাই ছাড়া স্যুট, প্যান্ট, শার্ট পরে অনুষ্ঠান করছেন। এ সবকিছুই বর্তমানে এর জনপ্রিয়তা কমার নিয়ামক।
টাই পরা আর না-পরা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। কিন্তু বর্তমান করপোরেট ফ্যাশনের যে বাস্তবতা, তাতে আগামী ২০ বছরের মধ্যে অফিসে কেউ আর টাই পরে আসবেই না। তবে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তা সময়ই বলে দেবে।
ফাহমিদা শিকদার
মডেল: ইতমাম
ওয়্যারড্রোব: সেইলর
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন