ফিচার I হেভি মেটাল টি-শার্ট
রকসংগীতের উপধারা এটি। এর থেকেই জন্ম হেভি মেটাল ফ্যাশনের। মূলত এ ধারার গানের সঙ্গে সম্পৃক্ত যারা এবং তাদের ভক্তরাই হেভি মেটাল স্টাইল অনুসরণ করে। এদের মেটাল হেড বা হেড ব্যাঙ্গারস বলা হয়। সত্তর দশক থেকে এ পর্যন্ত স্টাইলটির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এর বেস, যেমন- কালো পোশাক, লম্বা চুল, লেদার জ্যাকেট একই রয়ে গেছে। পাশাপাশি আছে ডেনিম, লেদার ভেস্ট, টি-শার্ট, ব্যান্ড প্যাচ, স্পাইক রিস্ট ব্যান্ড।
বাংলাদেশে হেভি মেটাল ব্যান্ডের যাত্রা শুরু আশির দশকের শেষ দিকে। সে সময় থেকে এখন পর্যন্ত অনেক ব্যান্ড গড়ে উঠেছে। তাতে মেটাল হেডের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তবে কিছু সাংস্কৃতিক সীমাবদ্ধতার জন্য হেভি মেটাল ফ্যাশন শুধু টি-শার্টে সীমাবদ্ধ রয়েছে। ফ্যাশনের ধারাটি চালু করার পেছনে ‘হেভি মেটাল টি-শার্ট’ ব্র্যান্ডের অবদান অনেকখানি।
এই ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা জাভেদ হক আগাগোড়া মেটাল গানের ভক্ত। তার প্রিয় ব্যান্ড ‘ব্ল্যাক’। ২০০৫ সালে স্কুলে পড়ার সময়ই তিনি নিউমার্কেট, আজিজ সুপারমার্কেটে ব্ল্যাক ব্যান্ডের টি-শার্ট খুঁজতেন। কিন্তু তখন কোথাও এ ধরনের টি-শার্ট পাওয়া যেত না। সেই অপূর্ণ ইচ্ছা মনে থেকেই যায়। ২০১০ সালে বন্ধুদের আড্ডায় অনেকটা পাগলামিবশত হেভি মেটাল গানের ভক্তদের জন্য টি-শার্ট বানানোর আইডিয়াটা মাথায় আসে। সেই ভাবনা থেকে একটি উদ্যোগ নেন। কিন্তু নানা কারণে প্রথম উদ্যোগটি সফল হয়নি। ২০১৩ সালে আবার একই আইডিয়া নিয়ে কাজ শুরু করেন জাভেদ হক। শখের বশে করা হলেও এবার তিনি ব্যবসার ব্র্যান্ডিং, প্রচার, পেশাদারত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। ওই বছরের ১৬ মে ফেসবুকের মাধ্যমে এই ব্র্যান্ডের যাত্রা শুরু হয়। প্রথম দিকে জাভেদ হক নিজেই টি-শার্ট ডেলিভারি করতেন। এভাবে হেভি মেটাল গানের ভক্তদের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে। বাংলাদেশে এ ধরনের টি-শার্ট পাওয়া যেত না বলে মেটাল হেডরা তার এই অভিনব উদ্যোগের বেশ প্রশংসা করেন। তরুণ প্রজন্মের ছেলেরাই এই টি-শার্টের প্রধান গ্রাহক এবং চালিকাশক্তি।
২০১৩ সালে হেভি মেটাল টি-শার্টের যাত্রা শুরুর সময় ফেসবুকে কেনাকাটা এখনকার মতো খুব একটা জনপ্রিয় ছিল না। তবু ব্র্যান্ডটি একটি ফেসবুক পেজ খোলে; ফলে তাদের প্রচারের কাজটি সহজ হচ্ছিল। এখন পর্যন্ত এটি তাদের ব্যবসার প্রধান প্রচারমাধ্যম। ২০১৪ সালে প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ফার্মগেটের মাহবুব প্লাজায় ছোট পরিসরে একটি আউটলেট উদ্বোধন করা হয়। গ্রাহক খরচ কমানো এবং হেভি মেটাল কালচারকে বড় করার জন্যই আউটলেটের চিন্তা মাথায় আসে। এখন পুরো বাংলাদেশে এই ব্র্যান্ডের ১৩টি আউটলেট আছে। তিনটি ঢাকায়। খুলনা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, রাঙামাটি, নোয়াখালীর মতো বিভাগীয় ও জেলা শহরেও আছে। ভবিষ্যতে তাদের আরও আউটলেট করার ইচ্ছা রয়েছে।
২০১৬ পর্যন্ত তাদের নিজস্ব কোনো ফ্যাক্টরি ছিল না। ঢাকার দক্ষিণখানে ২০১৭ সালে প্রিন্টিংয়ের জন্য হেভি মেটাল টি-শার্টের একটি নিজস্ব কারখানা খোলা হয়। এর আগে বাইরে থেকে প্রডাক্ট বানানোর ফলে ভালো মান বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছিল না। মূলত পণ্যের মানের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ আনার জন্যই ফ্যাক্টরি দেওয়া হয়। জাভেদ হক জানান, সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল এটি। কারণ, তাদের ব্যবসাটি তখনো খুব একটা বড় পর্যায়ে যায়নি। তবে এই সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার সুফল হিসেবে পেয়েছেন ব্র্যান্ডটির প্রতি ক্রেতাদের অগাধ আস্থা।
হেভি মেটাল টি-শার্টের একটি নিজস্ব কমিউনিটি আছে। তাদের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজের ফলোয়ার সংখ্যা এক লাখ ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া ব্র্যান্ডটির একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে, যেখানে পঁচিশ হাজারের বেশি মেম্বার রয়েছেন।
টি-শার্টই ব্র্যান্ডটির প্রধান পণ্য। আরও পাওয়া যায় ক্যাপ, রিস্ট ব্যান্ড, হুডি। জাভেদ হক জানালেন, ভবিষ্যতে আরও কিছু প্রডাক্ট আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশের অনেক ব্যান্ডের সঙ্গেই হেভি মেটাল টি-শার্টের পার্টনারশিপ আছে। এ সূত্র ধরেই বেশ নিষ্ঠা ও পেশাদারত্বের সঙ্গে তারা ছোট-বড় অনেক নতুন ব্যান্ডের প্রচারণা এবং মার্চেন্ডাইজিংয়ের কাজ করে যাচ্ছে। এভাবে বেশ কটি নবীন ব্যান্ডের পরিচিতিও বেড়েছে। এ ছাড়া দেশের বাইরে ভারতের কয়েকটি ব্যান্ডের মার্চেন্ডাইজিং পার্টনার হয়েছে হেভি মেটাল টি-শার্ট। আগামীতে সম্পর্ক আরও বেশি জোরদার করতে বেশ কিছু নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে বলে জানান জাভেদ হক।
ফাহমিদা শিকদার
ছবি: ইন্টারনেট