skip to Main Content

সঙ্গানুষঙ্গ I সিরামিক জুয়েলারি

অলংকারে সাম্প্রতিক সংযোজন। সুন্দর ও টেকসই। ফ্যাশনেবলও বটে

গয়নার নতুন ট্রেন্ড। সিরামিকে তৈরি। প্রাকৃতিক ও হাইটেক জুয়েলারির অপূর্ব মেলবন্ধন। ম্যাটেরিয়াল ও টেক্সচারের মিশ্রণ এবং সুন্দর ও সহজ উপস্থাপন সিরামিককে জুয়েলারির জনপ্রিয় উপকরণে পরিণত করেছে। মার্জিত ও নিবিড়তা, দামি বা কম দামি পাথর উপস্থাপনের চমৎকার ব্যাকড্রপ তৈরি করে আবার সোনা কিংবা রুপার সঙ্গেও চমৎকার মানিয়ে যায়।
উপকরণ হিসেবে মানুষ সব সময় কাদামাটির প্রতি মুগ্ধ হয়েছে। তা দিয়ে যেকোনো ডিজাইন করে নেওয়া যায়। সিরামিক বা চিনামাটি প্রাচীনতম সিনথেটিক উপকরণ হিসেবে অনেকের কাছে পরিচিত। সবচেয়ে পুরোনো আবিষ্কারটি দশ হাজার বছর আগের। মজার ব্যাপার হলো, মানুষ প্রথম এই কৌশল ব্যবহার করেছিল খাদ্য গ্রহণ ও রান্নার জন্য। তবে আমাদের পূর্বপুরুষেরা দ্রুত মাটির শিল্পকর্ম তৈরির বহুমুখী সম্ভাবনা ও প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছিল।
দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত তৈজসপত্র, টাইলস, শৌখিন পণ্য তৈরির পাশাপাশি চিনামাটির গয়নাও যোগ হয়েছে। একই নাম হওয়া সত্ত্বেও টালি, তৈজসপত্র ও অন্যান্য মৃৎশিল্প থেকে অলংকার একেবারে আলাদা। সিরামিক সামগ্রী তৈরিতে গ্রাইন্ডিং, পলিশিংসহ ত্রিশটি পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এতে গয়না বহু বছর চকচকে ও সূক্ষ্ম থাকে। হালকা ওজন, বাহ্যিক প্রভাবের প্রতিরোধ, কমনীয়তা ও স্থায়িত্বের জন্য জুয়েলার্স এবং ওয়াচমেকাররা উপকরণটি বেশ পছন্দ করেন।
ফর্ম ও কালার নিয়ে কাজ করার সম্পূর্ণ স্বাধীনতা থাকায় গয়না প্রস্তুতকারকদের জন্য এটি বেশ আকর্ষণীয়। সিরামিক জুয়েলারির ডিজাইনের সর্বোচ্চ মান, টেকসই গুণ ও মৌলিকত্ব যে কাউকে সন্তুষ্ট করবে। পেইন্ট ও গ্লেজিং ব্যবহার করে অসংখ্য ইফেক্ট দেওয়া সহজ। তাই এটি নিয়ে ব্যতিক্রমী সব ডিজাইন করার আনন্দ পাওয়া যায়।
সিরামিকের অনেক ফর্ম রয়েছে। সবচেয়ে নিখুঁতটি হলো হাইটেক সিরামিক। স্বর্ণকার ও ডিজাইনারের একটি তরুণ দল অসাধারণ রিং কালেকশনের মূল উপাদান হিসেবে এই মডার্ন ম্যাটেরিয়াল প্রদর্শন করে। এই কাজের সূত্র ধরে সেরিকো সিরামিক কালেকশন ক্রমশ জনপ্রিয় হতে থাকে। তারা আসলে কালেকশনের জন্য এমন একটি জুয়েলারি ম্যাটেরিয়াল খুঁজছিল, যা কালো হবে এবং হীরা ও অন্যান্য রঙিন রত্নের সঙ্গে আকর্ষণীয় বৈপরীত্য তৈরি করতে পারবে। মূল ধারণাটি ছিল আর্ট ডেকোর ওপর ভিত্তি করে গয়না তৈরি। হাইটেক সিরামিক দিয়ে অলংকার বানানোর প্রচেষ্টা থেকে এই ধারণার জন্ম হয়েছিল।
আরেকটি ফর্ম হলো রাকু সিরামিক। মুনস্টারের যোগ্য ডিজাইনার বার্ড মিলান স্ট্যাবার তার অসাধারণ সব গয়না তৈরিতে জাপানি রাকু সিরামিক ব্যবহার করেন। চায়ের কাপ তৈরির জন্য রাকু প্রথম জাপানে বিকশিত হয়েছিল ষোলো শতকের দিকে। স¤্রাট উদ্ভাবককে রাকুর সম্মানসূচক চোজিরো উপাধিতে ভূষিত করেন। এই প্রক্রিয়ায় অবজেক্টগুলো প্রধানত হাতে তৈরি হয়। শুকানোর পর এগুলো ৮৫০ থেকে ৯৫০ ডিগ্রি তাপে পোড়ানোর নিয়ম। এরপর এগুলো নিম্ন গলনাঙ্কে বিশেষ এই রাকু গ্ল্যাজিং দিয়ে ডেকোরেট করা হয়। আসল অ্যাডভেঞ্চারটা হয় রাকু পোড়ানোর সময়। তার আগে টুকরো বা তৈরি করা জিনিসটি ১০০০ ডিগ্রি তাপে উত্তপ্ত করা হয়, যতক্ষণ না গ্ল্যাজিং গলে যায়।
সুবিধা ও বৈশিষ্ট্য: হাইটেক সিরামিক গয়না তৈরির জন্য আদর্শ। এর অনেক সুবিধাও রয়েছে। আর রাকু সিরামিক অলংকারে যোগ করে আভিজাত্য।
হাইপোলার্জেনিক: এই রত্নগুলো ধাতবে সংবেদনশীল লোকেরাও পরতে পারেন। সিরামিক পণ্যে অ্যালার্জিজনিত প্রতিক্রিয়ার শঙ্কা নেই বললেই চলে।
স্থায়িত্ব: প্রথম দেখায় ভঙ্গুর মনে হলেও সিরামিক আসলে একটি টেকসই ও পরিধান-প্রতিরোধী ম্যাটেরিয়াল। কুকিংয়ের সময় একটি সিরামিক সামগ্রী যে বিশেষ আবরণ প্রাপ্ত হয়, তা নীলচে স্ফটিক প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। মোহস হার্ডনেস স্কেলের দশ পয়েন্টের মধ্যে সম্মানজনক নয় পয়েন্ট ফ্যাশন ম্যাটেরিয়ালে বরাদ্দ হয়েছে। এর মানে হলো সিরামিক গয়নাগুলো ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা কম, স্ক্র্যাচ ও ঘষা লাগার ভয় নেই।
স্টাইলিশ ও এলিগ্যান্ট: সোনা বা রুপার চাকচিক্য প্রায়শই সিরামিকের সুরুচি ও সৌন্দর্যকে অনেকটা কমিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। শেডের বিস্তৃত পরিসর নতুন সম্ভাবনা এনে দেয়। তবু ক্ল্যাসিক ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট এখনো অনেকের পছন্দের তালিকায়। সিরামিক পণ্য বেশ সাদামাটা আবার জাঁকালোও হতে পারে, সহজ করে বলতে গেলে দৈনন্দিন বা বাণিজ্যিক চিত্রের পরিপূরক অথবা সন্ধ্যাকালীন পোশাকের সঙ্গে মানানসই অ্যাকসেসরিজ হতে পারে।
যত্ন: সিরামিক দৃঢ় ও টেকসই ম্যাটেরিয়াল। এতে সহজেই ধরে নেওয়া যায়, এই জুয়েলারি চকচকে উজ্জ্বলতা হারাবে না। ঠিকঠাক যত্ন নিলে বহু বছর পরেও এর চাকচিক্য ও সূক্ষ্মতা বজায় থাকবে। ব্যবহারের সময় মেনে চলতে হবে কিছু সাবধানতা-
 সব ধরনের বিউটি ট্রিটমেন্ট নেওয়ার পর সিরামিকের গয়না পরতে হবে। যদিও প্রসাধন সিরামিকের ক্ষতি করে না, তবে উপরিভাগে পাতলা একটি আবরণ তৈরি করে, যা গয়নাগুলো অস্বচ্ছ করে তোলে। তাই অসাবধানে লেগে গেলে গয়না থেকে প্রসাধন পরিষ্কার করে ফেলা দরকার
 ধোয়া বা পরিষ্কারের ক্ষেত্রে ওয়াশিং পাউডার, পেস্ট বা জেল এড়িয়ে যাওয়া উচিত। কেননা এ ধরনের কড়া বা ঝাঁজালো রাসায়নিক সিরামিকের টপকোট ক্ষতিগ্রস্ত বা বিবর্ণ করে ফেলতে পারে
 সিরামিক জুয়েলারি এমন কোনো বক্সে সংরক্ষণ করা উচিত, যাতে একটির সঙ্গে আরেকটি ঘষা না লাগে
এগুলো পরিষ্কার করারও কিছু নিয়ম রয়েছে। এই কাজে ব্যবহার করতে হবে নরম ভেজা কাপড়। একটি মাইক্রোফাইবার ফ্যাব্রিক বা নরম লিন্ট-ফ্রি কাপড় দিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।

 তাসমিন আহমেদ
মডেল: আদিবা
মেকওভার: পারসোনা
জুয়েলারি: পলিমার ক্লে
ছবি: ইভান সরদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top