skip to Main Content

ফিচার I পরা যায় পরেও

কনের জমকালো পোশাক শুধু কি ওই বিশেষ দিনের জন্য। এর পুনর্ব্যবহারও তো হতে পারে নানানরূপে। লিখেছেন ফাহমিদা শিকদার

বিয়ের ড্রেস সিলেকশনে সব কনেই যথেষ্ট সময় নিয়ে থাকে। নিজের জন্য পারফেক্ট কাট আর ডিজাইনের লেহেঙ্গা বা শাড়ি খুঁজতে মার্কেট আর দোকানপাট চষে বেড়ায় তারা। ভারী লেহেঙ্গায় খরচ বেশ। কিন্তু বিয়ের পর আলমারিতেই পড়ে থাকে দামি এই পোশাক, আর পরা হয়ে ওঠে না। ‘একবার মাত্র পরার এই লেহেঙ্গার পেছনে এত খরচ কেন’ বা ‘বিয়ের পর এত দামি পোশাক তুমি কোথায় পরবে’— এমন প্রশ্নের সম্মুখীনও হতে হয় অনেক। ভারী বা চটকদার হয় বলে ইদানীং বেশির ভাগ নারীই নিজের বিয়ের লেহেঙ্গা বা শাড়ি আর পরতে চান না। আবার কাউকে দেখা যায় কোনো বন্ধু বা আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে ওই একই পোশাক পরে হাজির হতে। কিন্তু অন্য কারও স্পেশাল দিনে নিজেকে বউয়ের মতো সাজিয়ে তার লাইমলাইট চুরি করা যেমন শোভনীয় নয়, তেমনি দৃষ্টিকটুও বটে। অন্যদিকে সময়টা সাসটেইনেবল ফ্যাশনের। তাই এখন নিজের ওয়্যারড্রোবে ভারী দামি পোশাক রেখে দেওয়া খুব একটা পরিবেশবান্ধব কাজ নয়। পরিস্থিতির একমাত্র সমাধান— রিইউজ। সেটা হতে পারে রিসাইকেল বা আপসাইকেল— সবভাবেই।
লেহেঙ্গা
এই পোশাকের তিনটি অংশ থাকে। ঘাঘরা, চোলি ও দোপাট্টা। এগুলোর পুনর্ব্যবহার নানাভাবে সম্ভব। প্রথমে চোলির প্রসঙ্গ। লেহেঙ্গায় থাকা এই ব্রাইডাল টপ ভারী বা হালকা দুই ডিজাইনেরই হতে পারে। এগুলো শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ হিসেবে পরা যায়। ভারী চোলির সঙ্গে পরা যেতে পারে একদম প্লেইন এক রঙা বা অল্প ডিজাইনের শিফন, জর্জেট বা সুতি শাড়ি। হালকা টপে মানিয়ে যায়, বেনারসি, সিল্কের মতো কোনো গর্জাস শাড়ি। ফাঙ্কি স্টাইলিং যাদের পছন্দ তারা জিনস, ধুতি বা সারার প্যান্টের সঙ্গে ব্রাইডাল চোলি পারে। এর ওপরে শ্রাগ বা লং জ্যাকেট চাপিয়ে নেওয়া যায়। ইন্দো-ওয়েস্টার্ন লুকের জন্য কোমরে বেল্ট পরা যায়। মাল্টিকালারড স্কার্টের সঙ্গে হালকা রঙের ভারী চোলি বা গাঢ় রঙের হালকা ভারী চোলি পেয়ারিং হতে পারে।
লেহেঙ্গার ঘাঘরা দিয়ে স্টাইলিংয়ের বিচিত্র সুযোগ রয়েছে। ক্যাজুয়াল ও ট্রেন্ডি লুকের জন্য এর সঙ্গে পরা যায় সাদা বা কালো শার্ট। প্যাটার্ন, রং ও ফ্যাব্রিকের সঙ্গে এটি মানিয়ে যেতে পারে। কোনো পার্টি বা উৎসবে ভারী ঘাঘরার সঙ্গে পরা যায় বিভিন্ন ডিজাইনের টপ। যেমন ক্রপ টপ, ক্যামি টপ, টিউব টপ, পেপলাম টপ, বারডট টপ, টিউলিপ টপ, র‌্যাপ টপ ইত্যাদি। তবে খেয়াল রাখতে হবে কালার কম্বিনেশন ও ডিজাইনের দিকে। শুধু ঘাঘরার রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বা কন্ট্রাস্টে টপ বাছাই না করে, এর থেকে একদম ভিন্ন কালার প্যালেটের রংও বেছে নেওয়া যায়।
কয়েক বছর ধরে এথনিক ওয়্যার ট্রেন্ডে এখন কুর্তা-লেহেঙ্গা খুব চলছে। সব্যসাচী মুখার্জি, আনিতা ডংরে, মনীশ মালহোত্রা, অনুশ্রী রেড্ডির মতো ভারতীয় এ-লিস্ট ডিজাইনারদের কালেকশনে এমন পোশাক অনেক পাওয়া যাবে। তাই ঘাঘরার জন্য একটি বা দুটি কিংবা যত খুশি কুর্তা বানিয়ে কেনা যায়। লেহেঙ্গার স্কার্টটি যেহেতু ভারী কাজের হয়, সেহেতু কুর্তা বা কামিজটি হালকা ও প্যাস্টেল রঙের হলে ভালো। সেটি হেড-টু-টো মনোক্রোমাটিক কালার প্যালেট হতে পারে। এতে না মানালে ঘাঘরার বিপরীত রঙের শেড বাছতে হবে। ফ্যাব্রিক হিসেবে সিল্ক, চিকনকারি, জর্জেট, কটন কাপড়ে দেওয়া চাই। শীতের উৎসবের কথা মাথায় রেখে কুর্তা বানাতে ভেলভেট ফ্যাব্রিকও ব্যবহার করা যেতে পারে। লং এ-লাইন, লং সাইড কাট, আনারকলি বা ক্রপড টিউনিক— যেকোনো ঘরানার কুর্তা ঘাঘরার সঙ্গে মানিয়ে যাবে। আবার ছোট্ট ক্রপ টপের ওপর লং জ্যাকেট টাইপ শিয়ার কামিজও পরা যায়।
চাইলে ঘাঘরার সঙ্গে শাড়িও বেমানান হবে না! অনেকেই লেহেঙ্গা-স্টাইল শাড়ির কথা জানেন। একসময়ে বিয়ের ফ্যাশন ট্রেন্ডে এর জনপ্রিয়তা ছিল। ঘাঘরার সঙ্গে শাড়ি একটু অন্যভাবে ড্রেপিংয়ের মাধ্যমে লেহেঙ্গা-স্টাইল শাড়ি বানানো যায়। এ জন্য প্রথমে শাড়ির আঁচলকে নিভি স্টাইলে ড্রেপ করে কাঁধে রাখতে হবে। এরপর শাড়িকে কুঁচি করে কোমরের পেছনে গুঁজে দিতে হবে। শেষ প্রান্ত নিয়ে হালকা কুঁচি করে কোমরের সামনে গুঁজে দিতে হবে। ব্যস! সহজে লেহেঙ্গা-স্টাইল শাড়ি রেডি। এর সঙ্গে কোমরে বিছা বা বেল্ট পরলে বেশি ভালো দেখাবে।
শাড়ি
শাড়ি সবচেয়ে বিচিত্রভাবে আপসাইকেল করা যায়। বিয়ের ভারী শাড়ি যদি একেবারেই পরা না হয়, তাহলে কেটে সালোয়ার-কামিজ, আনারকলি, লেহেঙ্গার ঘাঘরা, সারারা, ঘারারা, দোপাট্টা বানিয়ে ফেলা যায়। এমনকি এতে তৈরি হতে পারে ইন্দো-ওয়েস্টার্ন আউটফিটও। যেমন বেনারসি বা কাতান শাড়ি দিয়ে ব্রোকেড পেনসিল প্যান্ট বা ফ্লেয়ার প্যান্ট বানিয়ে তা কোনো ক্যাজুয়াল সাদা শার্ট, ক্রপ টপ বা পেপলাম টপের সঙ্গে পরা যেতে পারে। এগুলো চাইলে শাড়ির ফ্যাব্রিকটি দিয়েও বানানো যায়। এটি দিয়ে গাউনও তৈরি হতে পারে। আবার ব্লাউজ বা অন্য কোনো লেহেঙ্গার চোলির নিচে শাড়ির কাপড় লাগিয়ে আনারকলি বানিয়ে নেওয়া যায়। অ্যাকসেসরিজও তৈরি করা সম্ভব। যেমন বটুয়া ব্যাগ, ক্লাচ ব্যাগ ইত্যাদি। স্যান্ডেল বা নাগরার ওপরে শাড়ির ফ্যাব্রিক দিয়ে ডিজাইন করা যায়। কাটতে না চাইলে পুরো শাড়িটা লেহেঙ্গা-স্টাইলে পরা যেতে পারে। এর রঙের সঙ্গে মিলিয়ে বা কন্ট্রাস্ট করে কোনো লং বা ম্যাক্সি স্কার্ট বেছে নিতে হবে। এ ছাড়া বানিয়ে নেওয়া যায় ক্যান স্টাইল স্কার্ট। আর নতুনত্ব আনতে একেক সময় একেক রকম স্টেটমেন্ট স্লিভের টপ বা চোলি দিয়ে পেয়ারিং করা যেতে পারে।
দোপাট্টা
বিয়েতে লেহেঙ্গা ও গাউনের সঙ্গে ভারী বা হালকা— দোপাট্টা থাকবেই। একটি দোপাট্টা অনেক রকমের ড্রেসের সঙ্গে পরতে পারেন। নেটে দোপাট্টা কোনো জামার স্লিভ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। দোপাট্টা বড় আর ভারী হলে সেটি দিয়ে শর্ট বা লং কুর্তা বানানো যায়। শ্রাগ তৈরিও সম্ভব। এই বস্ত্রখন্ডকে বিভিন্ন ধরনের শেপে রূপান্তর করা যায়। এটি শাড়ি, লেহেঙ্গা, কামিজ— সবকিছুর সঙ্গে মানানসই। দোপাট্টা দিয়ে তৈরি হতে পারে স্টাইলিশ পঞ্চো।
মডেল: তাসনিম
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: আনজারা
জুয়েলারি: স্পার্কেল
ছবি: ইভান সরদার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top