ফিচার I ট্রাভেল ফ্যাশন
পরিকল্পনা ছাড়াই ‘যেমন আছি তেমনভাবে’ হুটহাট ঘুরতে বেরিয়ে পড়ার অভ্যাস অনেকের রয়েছে। অথচ ঠিকঠাক পোশাক ও অনুষঙ্গ সঙ্গী না করলে ভ্রমণের মজা হয়ে যেতে পারে ফিকে। লিখেছেন ফাহমিদা শিকদার
ভ্রমণের জন্য পোশাক বাছাই করা কঠিন কিছু নয়। তবু এই কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খান অনেকেই। জুতসই পোশাক না পরে ভ্রমণে গিয়ে বিপত্তিতে পড়া মানুষের সংখ্যা কম নয়। ভ্রমণপোশাক একই সঙ্গে আরামদায়ক ও স্টাইলিশ হতে পারে। আর বাছাই করতে হবে স্থান, পরিবেশ ও আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে।
এয়ারপোর্ট ফ্যাশন
গন্তব্য কাছে হোক বা দূরে, এয়ারপোর্ট আউটফিট বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরামকে প্রাধান্য দিতে হবে প্রথমেই। তাই বলে স্টাইলের সঙ্গে আপোস করতে হবে? মোটেও তা নয়। মিনিমাল ও আরামদায়ক পোশাক পরেও স্টাইলিশ এয়ারপোর্ট লুক তৈরি সম্ভব। তবে পোশাক নির্বাচনের সময় এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি চেকের কথা মাথায় রাখুন। এমন কোনো কিছু পরা যাবে না, যাতে সিকিউরিটি লাইনে ঝামেলায় পড়তে হয়। এ জন্য ভারী ও ওভারসাইজড জ্যাকেট, লেসআপ, ভারী চাঙ্কি বুট বা কেডস, মেটাল ব্রেসলেট, মেটাল হেয়ার অ্যাকসেসরিজ (এমনকি ববি পিনও) না পরাই ভালো।
এয়ারপোর্ট ফ্যাশনেরও রয়েছে আলাদা ট্রেন্ড। আর এই ট্রেন্ডসেটিংয়ের কাজটি করেন সেলিব্রিটিরা। এয়ারপোর্টের সামনে প্রায়ই তাদের পাপারাজ্জির ক্যামেরাবন্দি হতে দেখা যায়। সেই সব ছবি ছড়িয়ে পড়ে ম্যাগাজিন ও ওয়েব পোর্টালে। সেখান থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে ফ্যাশন-অনুরাগীরা নিজেদের এয়ারপোর্ট লুক তৈরি করেন।
এ বছরের এয়ারপোর্ট আউটফিট ট্রেন্ডে হাইরাইজ ওয়াইড-লেগ জিনস বেশ দেখা যাচ্ছে। এর সঙ্গে জোড় হিসেবে আছে প্লেইন সাদা টি-শার্ট বা ক্রিস্প সাদা বাটন-ডাউন শার্ট। ব্যাগি বা লুজ জিনস, খাকি প্যান্ট ও সোয়েটপ্যান্টও এখন ট্রেন্ডি। পেয়ারিং করা যায় ট্যাংক টপ, ক্রপ টি-শার্টের সঙ্গে। এ ছাড়া ট্রেন্ডে আছে ম্যাচিংসেট (একই রঙের টপ-প্যান্ট, শার্ট-স্কার্ট বা শার্ট-শর্টস)।
কোনো হলিউড সেলিব্রিটির এয়ারপোর্ট লুক লেয়ারিং ছাড়া সম্পূর্ণ হয় না। এ ক্ষেত্রে তাদের কিছু নির্দিষ্ট লেয়ারিং আউটফিট থাকে। যেমন ট্রেঞ্চ কোট (বিশেষ করে ক্যামেল কোট), ডেনিম বা লেদার জ্যাকেট, কার্ডিগান, ব্লেজার ইত্যাদি। তবে লেয়ারিংয়ের ব্যাপারটা পুরো নির্ভর করে আবহাওয়ার ওপর। গরমের সময় ট্যাংক বা ক্রপ টপের ওপর ওভারসাইজড বাটন ডাউন শার্ট, শ্রাগ পরা যেতে পারে। আর ট্রেঞ্চ কোট জ্যাকেট সোয়েটারগুলো শীতের জন্যই ভালো।
জুতার ক্ষেত্রে কোনো ট্রেন্ড অনুসরণ না করে পছন্দমতো আরামদায়ক কিছু বেছে নিন। তবে সেটি যেন সহজে খোলা ও পরা যায়। কারণ, অনেক সময় এয়ারপোর্ট সিকিউরিটি চেকের জন্য জুতা খোলার প্রয়োজন হতে পারে। এ জন্য সবচেয়ে ভালো স্লিপ অন স্নিকার, লো ব্লক পাম্প, বারকেনস্টক স্যান্ডেল, লো বা হাই ক্লগ স্যান্ডেল এমনকি রাবারের পুল স্লাইড। বুট না পরাই উচিত। পরলেও লেসবিহীন সিম্পল অ্যাঙ্কেল বুট।
বিমানে ভ্রমণের সময় অ্যাকসেসরিজের ব্যাপারটি বিশেষভাবে মাথায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে মিনিমাল থাকাই ভালো। হাতে ও চুলে মেটালের কোনো অনুষঙ্গ পরা থেকে বিরত থাকতে হবে। এর বদলে গলায় হালকা নেকলেস ও কানে ছোট বা মাঝারি সাইজের দুল পরা যেতে পারে।
ভ্রমণের সময় জামাকাপড় ভর্তি লাগেজ তো সঙ্গে থাকবেই। এর সঙ্গে থাকে হ্যান্ডব্যাগ। টুকিটাকি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বেশি হলে টোট, শ্যাচেল, ক্লাউড ব্যাগ সঙ্গে নেওয়া যায়। আর টিকিট, পাসপোর্ট, স্মার্টফোন, ওয়ালেট ছাড়া তেমন কিছু কাছে রাখার না থাকলে বেছে নিন পছন্দের ক্রসবডি ব্যাগ বা ফ্যানিপ্যাক।
এয়ারপোর্ট স্টাইলিংয়ে এথনিক আউটফিটও মানায়। হালকা সুতি, ভিসকস, লিনেন ফ্যাব্রিকের সালোয়ার-কামিজ, কুর্তি-পালাজো পরা যায়। শীতের সময় এর ওপরে চাপানো যায় পছন্দের শাল অথবা ভারী কাপড়ের লং শ্রাগ।
ছেলেদের এয়ারপোর্ট লুকে বৈচিত্র্য খুব একটা দেখা যায় না। বেশির ভাগ সময় টেক অফের জন্য তাদের কাছে নরমাল ক্যাজুয়াল গেটআপ বেশি পছন্দের। আউটফিটের ভেতর সোয়েটস্যুট, হুডি, হাফ শার্ট, টি-শার্ট, পোলো, চিনো, জিনস, ব্লেজার, লেদার বা ডেনিম জ্যাকেট, ভার্সিটি জ্যাকেট, স্নিকার, লোফার পরতে বেশি দেখা যায়।
এই স্টাইল গাইড রোড ট্রিপের জন্যও প্রযোজ্য।
হাইকিং স্টাইলিং
অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমীদের প্রিয় গন্তব্য পাহাড়। সেখানে হাইকিংয়ের কথা মাথায় রেখে নিতে হবে পোশাক। পাহাড়ে ওঠার সময় ভারী ব্যাকপ্যাক যেমন নেওয়া যাবে না, তেমন ভারী কিছু পরাও যাবে না। খুব হালকা ও আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে, যাতে হাইকিংয়ে কোনো অসুবিধা না হয়। এ সময় ফাংশনাল আউটফিট পরাই ভালো। যেমন অনেকগুলো পকেটের কার্গো প্যান্ট, ট্রাভেল জ্যাকেট বা ওয়েস্টকোট। এতে চলাফেরার জন্য দরকারি জিনিসপত্র বহন করতে সুবিধা হয়। এই ধরনের ফাংশনাল পোশাক কিন্তু জেন্ডার নিউট্রাল। ছেলেদের জন্য কার্গো প্যান্টের সঙ্গে টি-শার্ট, পোলো-শার্ট ভালো মানাবে। মেয়েরাও পরতে পারেন একই রকম পোশাক। তবে যারা আরেকটু স্টাইলিশ কিছু পরতে চান, তাদের জন্য আছে ক্রপ টি-শার্ট, ট্যাংক টপ, লেগিংস, ইয়োগা প্যান্ট, জগার্স।
শীতের সময় হাইকিংয়ে ভারী জ্যাকেটের বদলে হালকা ধরনের কিছু পরা উচিত। এতে চলাফেরায় সুবিধা হবে; হাঁটাহাঁটিতে শীত অনুভূত হবে কম। সেদিক থেকে ভাবলে উইন্ডব্রেকারই সবচেয়ে জুতসই আউটফিট।
হাইকিংয়ের সময় জুতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বেছে নিন একটি ভালো মানের মজবুত স্নিকার। চলতি পথে পানির ঝিরি ও ঝরনার সামনে পড়ার সম্ভাবনা অনেক। তাই ব্যাগে একটি বাড়তি রাবারের স্লাইড রাখা যেতে পারে।
বিচ-ফিট
ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে বেশির ভাগ মানুষের পছন্দের গন্তব্য সমুদ্র। প্রায় সব মৌসুমেই সৈকতে ভিড় লেগেই থাকে। সেখানে ছুটি কাটাতে গেলে পোশাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে কয়েকটি জিনিসের দিকে রাখতে হবে বিশেষ খেয়াল। বিচে আঁটসাঁট ও গাঢ় বা কালো রঙের ড্রেস পরা থেকে বিরত থাকাই ভালো। কারণ, গ্রীষ্ম হোক বা শীত, সমুদ্রতীরে সূর্যের প্রখরতা থাকে বেশি। সূর্য থেকে তাপ শোষণের ক্ষমতা গাঢ় রঙের পোশাকের অনেক বেশি। উষ্ণ আবহাওয়ায় শান্তিমতো ঘুরতে চাইলে ঢোলা ও আরামদায়ক হালকা রং ও ট্রপিক্যাল বা ফ্লোরাল প্রিন্টের পোশাক পরুন। যেমন শর্ট বা লং কুর্তা, পালাজো, ওয়াইড-লেগ প্যান্ট, মিনি, মিডি বা লং স্কার্ট সঙ্গে বাটারফ্লাই বা বেলুন স্লিভের টপ, হল্টার টপ, ম্যাক্সি ড্রেস, রম্পার সেট, জাম্পস্যুট, ম্যাক্সি বা মিডি ড্রেস, লংলাইন টি-শার্ট। চাইলে পরা যেতে পারে শাড়িও। এসব আউটফিট পরে দিনে যেমন ঘোরা যাবে, তেমন যাওয়া যাবে সন্ধ্যায় বিচ পার্টিতেও। ছেলেদের জন্য সমুদ্রপাড়ে ঘোরার সবচেয়ে মানানসই আউটফিটের মধ্যে রয়েছে শর্টস, টি-শার্ট, পোলো-শার্ট, কালারফুল স্যান্ডো গেঞ্জি বা স্লিভলেস টি-শার্ট। এসবের সঙ্গে লেয়ারিং করতে আছে বাহারি প্রিন্টের হাওয়াই শার্ট।
বিচে পাম্প শু, স্নিকার, লোফার, হাই হিল পরা মোটেও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। এসব পরে বালুর ওপরে ঠিকমতো হাঁটা যায় না। স্টাইলিশ লো স্যান্ডেল, ফ্লিপ-ফ্লপ সমুদ্রতীরের জন্য আদর্শ জুতা। এগুলো যেকোনো পোশাকের সঙ্গে মানিয়ে যায়।
সমুদ্রস্নানের চিন্তা থাকলে জিনস পরা যাবে না। জিনসপ্রেমীরা অবশ্য এর বদলে ডেনিম শর্টস পরতে পারেন।
অ্যাকসেসরিজ মিনিমাল রাখা চাই। বিশেষ করে দামি কোনো গয়না না পরাই ভালো। তাহলে বিচে ঘুরতে বা সমুদ্রে জলকেলি করতে গিয়ে মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলার মতো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো যাবে।
বিচে গেলে সানস্ক্রিন মাস্ট! সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকে সুরক্ষা পেতে শুধু এটিই যথেষ্ট নয়, এ ক্ষেত্রে নিউট্রাল বা সাদা রঙের বড় ফ্লপি ও বোটার হ্যাটের মতো ফ্যাশনেবল অ্যাকসেসরিজ সানস্ক্রিনের সাইডকিক হিসেবে ভালো কাজে দেবে। তবে রোদচশমার কথা ভুলে গেলে চলবে না। ওভারসাইজড সানগ্লাস সব সময়ই ট্রেন্ডি। এ সময়ে বড় আকারের জিওম্যাট্রিক ও সাদা রঙের ফ্রেমের রোদচশমা বেশ চলছে। লেন্সেও বাহারি রং দেখা যাচ্ছে। যেমন হলুদ, বাদামি, নীল।
মডেল: লিসা, জামি ও আদিবা
ওয়্যারড্রোব: টুয়েলভ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান