skip to Main Content

সঙ্গানুষঙ্গ I ষণ্মিতি সংযোগ

ছয় বাহুর কুঠুরি। এককথায় জ্যামিতিক মোটিফ বলে শেষ করার উপায় নেই। অলংকারের ভুবনে দাপুটে এখন। মহাবিশ্ব, প্রকৃতি ও জ্যামিতি—তিনের সঙ্গেই গাঢ় সম্পর্ক, তাই কি এত শক্তি সঞ্চয়? হেক্সাগোনাল জুয়েলারি ডিজাইনের জয়জয়কারের খবর

গয়নার সঙ্গে জ্যামিতির সম্পর্ক প্রগাঢ়। সরলরেখা, বৃত্ত, কোণ—সবই ছুঁয়েছে অলংকার। দীর্ঘদিন ধরে। সেসব পেছনে ফেলে এবারে ষড়ভুজ দখল করেছে জায়গা। বেশির ভাগ মানুষের সঙ্গে এই প্রতীকের পরিচয় গণিত বইয়ের পাতায়। তাই জিওমেট্রিক্যাল ডিজাইন হিসেবে প্রাথমিকভাবে পরিচিত। কিন্তু প্রকৃতিতেও পাওয়া যায় ষড়ভুজ। কোথায়? মৌমাছির চাকে, স্নো ফ্লেক্সের রূপে, কচ্ছপের শক্ত খোলসে! মহাবিশ্বেও আছে এই ছয় বাহুর উপস্থিতি। মহাজাগতিক কাঠামোতেও তা জ্বলজ্বলে। এসব কারণে সহজ হিসাবে জ্যামিতিক ডিজাইন বলে ইতি টানা তাই সম্ভব নয়। প্রকৃতি থেকে প্রাপ্ত, জ্যামিতিতে বহুল পরিচিত বলা যেতে পারে বরং!
রত্নে-অলংকারে
ছয়টি বাহুর সম্মিলনে তৈরি হয় একটি ষড়ভুজ। একটির সঙ্গে অপর বাহুর সংযোজনের কারণে যে কোণগুলো উৎপন্ন হয়, সেগুলোর মান হয় সমান। স্কুলের বইতে একসময় মন দিয়ে পড়া এসব বিষয় এবার বইয়ের পাতা থেকে উঠে এসেছে গয়নার জগতে। সমসাময়িক অলংকার বাজারে বেশ দাপট দেখা যাচ্ছে এই মোটিফের। মেটাল, জেম স্টোন, ক্রিস্টাল—সবকিছুতেই! জুয়েলারি ট্রেন্ডের সঙ্গে হেক্সাগোনাল ডিজাইনের লাভ-অ্যাফেয়ার এখন বেশ জমজমাট।
আদি আখ্যান, ঘটমান বর্তমান
জ্যামিতিক মোটিফের ব্যবহার জুয়েলারিতে বেশ পুরোনো। প্রাচীন গ্রিসে গয়নার নকশা ছিল গাণিতিক দক্ষতার নান্দনিক প্রকাশ। আবার রেনেসাঁ যুগের নকশায় দেখা যায় গাণিতিক অনুপ্রেরণায় তৈরি জ্যামিতিক নকশা। শুধু সরল প্রতীকেই শেষ হয়নি, কোণের যথাযথ ব্যবহার পষ্ট সেখানে।
কনটেম্পরারি ইন্ডিয়ান জুয়েলারি হাউস ‘শান্তি’, যারা গয়না নিয়ে কাজ করছে দীর্ঘ দশ প্রজন্ম ধরে। তাদের বর্তমান সময়ের মণিকার কৃষ্ণা চৌধুরীর বক্তব্য পাওয়া যায় দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে। তার বয়ানের তথ্যমতে, হেক্সাগন প্রতীকটি জ্যামিতিতে যেমন দেখা যায়, তেমনি চোখে পড়ে মন্দিরের নকশাতেও। সেখান থেকে ধারণা করা যায়, শুধু খটমট গণিতে নয়, উপাসনার একাগ্রতায়ও মিশে আছে ষড়ভুজ। অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশের আদি যুগেও ষড়ভুজ ছিল।
গয়নার নকশা হিসেবে ষাট ও সত্তর দশকে জ্যামিতিক নকশার চল এসেছিল। লম্বা সময় ধরে বেশ জাঁকিয়ে বসেছিল জ্যামিতি। এরপরে সব সময়েই ছিল উপস্থিত। একদম মিলিয়ে যায়নি কখনোই। এবারের গয়না বেছে নেওয়ার প্রবণতার খোঁজ নিলে জানা যায়, মিনিমাল ডিজাইন ট্রেন্ড জনপ্রিয় হয়েছে আর সেখানে জটিল হেক্সাগন সহজ রূপে ফিরে এসেছে।
ইতালিয়ান লাক্সারি ব্র্যান্ড সোমে তাদের ‘বি মাই লাভ’ কালেকশনে প্রায় এক দশক ধরে ব্যবহার করে আসছে হেক্সাগন ডিজাইন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালে ব্র্যান্ডটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। নিজেরাই হেক্সাগন ইন্সপিরেশনে একটি কাট নিয়ে হাজির হয়। নাম ‘ইমপ্রেস কাট’। এই নতুন আবিষ্কার সোমের হীরাকে করে তোলে আনকোরা।
হেক্সাগন ডিজাইনের দর্শনে লুকিয়ে আছে সমতা আর বহুমুখিতা; যা বর্তমান সময়ের ধ্যান-ধারণার সঙ্গে বেশ মিলে যায়। সমতার মতবাদ, বহুমুখিতার উচ্ছ্বাস বড্ড পরিচিত। আর জানা তো আছেই, গয়নার নকশায় শুধু ট্রেন্ড প্রতিফলিত হবে এমন নয়, পরিধানকারীর জীবনবোধও যেন পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়। শুধু সৌন্দর্য নয়, গয়নার প্রতিটি অংশে মিশে থাকা গল্পও ক্রেতা আকর্ষণকে প্রভাবিত করে।
গয়নার বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামতের মাধ্যমে জানা যায়, ক্রেতা চাহিদায় বেশ ওপরের দিকে আছে এই সিক্স সাইডেড ডিজাইন। রেখার সরল ব্যবহার এবং বোল্ড প্যাটার্ন এগিয়ে যাচ্ছে জুয়েলারির ট্রেন্ড টোনিংয়ে। জুয়েলারি ক্র্যাফটম্যানশিপ একধরনের আর্ট। এ বিষয়ে লন্ডনের ফ্যাশন স্টাইলিস্ট ওনাসব্র-জোন্স একটি যুক্তি দিয়েছেন; যা জানা যায় দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের মাধ্যমে। তিনি বলেন, ‘ষড়ভুজ ব্যবহারে গয়নার নকশা নান্দনিকতার সঙ্গে স্থাপত্যের এক দারুণ মিশেল। যেসব জহুরি ও অলংকার কারিগরেরা সৃজনশীল, তাদের পছন্দনীয় হয়ে উঠেছে এই নকশা।’
ইতালিয়ান লাক্সারি ব্র্যান্ড গুচির ‘সামার ফাইন জুয়েলারি কালেকশন’-এ দেখা গিয়েছিল হেক্সাগন ডিজাইন। লন্ডনের জুয়েলার রিশ একটি প্ল্যাটিনাম আংটি বিক্রি করেছেন, যেটিতে ৩ দশমিক ৮৪ ক্যারেটের ইন্ডিকোলেট টারমালাইন ব্যবহার করা হয়েছে। এই রত্নের উৎকর্ষ বাড়াতে এর প্রতিটি কোনায় স্থাপন করা হয়েছে তিন কোনার একটি ছোট্ট কমলা রং গারনেট।
ফিঙ্গার রিংয়েও হেক্সাগন নকশা বেশ পছন্দনীয় হয়ে উঠেছে। এনগেজমেন্ট রিং, প্রমিস রিং, ওয়েডিং ব্যান্ড—এই তিনেই দেখা যায় ছয় বাহুর নকশা। নিহিত দর্শনে আছে প্রতিশ্রুতি, বিশ্বস্ততা এবং গভীর ভালোবাসা। এই নকশার সঙ্গে সংযোজিত হতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় হীরা আর সাফায়ার অর্থাৎ নীলকান্তমণি। নেকলেস, ইয়ার রিং—এসবেও দেখা যায় এই প্রতীকের ব্যবহার। ব্রেসলেটের ক্রেতা চাহিদাও কম নয়।
মিনিমালিস্ট হেক্সাগন থেকে কমপ্লেক্স হানিকম্ব—ছয় বাহুকে জুড়ে দেওয়া যেতে পারে সব সূত্রেই। বহুমুখিতার প্রকাশ প্রকট। অতীত থেকে বর্তমানে সুশোভিত হয়েছে ষড়ভুজ—নানা ভাবে, নানা সাজে। শুধু একটি অলংকরণের মোটিফ নয়; যেন ষট্‌কোণ ক্যানভাস।

 ফ্যাশন ডেস্ক
মডেল: ষড়ঋতু
মেকওভার: পারসোনা
জুয়েলারি: আউল ফ্যাক্টরি ও ট্রাসেল হাউজ বাংলাদেশ
ওয়্যারড্রব: আমিরা
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top