skip to Main Content

টেকসহি I সিকুইনের অনুজ্জ্বল সত্য

ফেস্টিভ ভাইব পাল্টে দেওয়ার নতুন প্রথা। পরিবেশপ্রেমীদের প্রায়োরিটি লিস্টের শীর্ষে এ নিয়েই চলছে চর্চা

উৎসবের পোশাক, অথচ তাতে সিকুইন নেই—ভাবাই যায় না যেন। পার্টি ড্রেস চকমক করবে ঝলমলে সিকুইনের ব্যবহারে, সেটাই তো স্বাভাবিক। একসময় অন্তত তা-ই মনে করা হতো। এখনো যে তা একেবারে ট্রেন্ডের বাইরে, এমন নয়। তবে বর্তমান বিশ্ব ফ্যাশনের চেয়ে পরিবেশ বিষয়ে ব্যাপকভাবে সচেতন। সে কারণে ফ্যাশন গবেষকেরা সিকুইনের ব্যবহার নিয়ে আজকাল নানা জল্পনাকল্পনা চালাচ্ছেন। যারা জানেন না, তারা নিশ্চয়ই ভাবছেন, সিকুইন আবার পরিবেশের কী ক্ষতি করল? দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, সবার পছন্দের এই ফ্যাশন আইটেম আসলেই পরিবেশের জন্য মঙ্গলজনক নয়; বরং উল্টো। সিকুইনের প্রধান সমস্যা, এগুলো প্লাস্টিকে তৈরি। উৎপাদনের সময় প্রায় ৩৩ শতাংশ প্লাস্টিক উপাদান নষ্ট হয়। কারণ, একবার চকচকে বৃত্ত বেরিয়ে গেলে বাকি অংশগুলো ফেলে দেওয়া হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে বেশির ভাগ সিকুইনে তৈরি পণ্য গড়ে মাত্র পাঁচবার পরে ফেলে দেওয়া হয়। তা ছাড়া পোশাক থেকে সিকুইন পড়ে যাওয়ার শঙ্কাও বেশি থাকে। যেগুলো নষ্ট হয় না কোনোভাবেই। ফলে শত শত বছর ধরে পৃথিবীজুড়ে এই আবর্জনা থেকে যায়। তা ছাড়া যদি একটি সিকুইন পোশাক পানিতে কাচা হয়, তাহলে তা পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিক ছেড়ে দেয়; যা অত্যন্ত ক্ষতিকর। এখানেই শেষ নয়, এর ক্ষতিকর প্রভাব আরও আছে; যা রীতিমতো কয়েক স্তরে বিভক্ত।
পোশাকশ্রমিক
অধিকাংশ ট্রেন্ডের মতো, সিকুইন ট্রেন্ডটিও হাই ফ্যাশন প্রোডাকশন হাউসগুলো শুরু করেছিল। ফ্যাশন সপ্তাহের সময়, ক্যাটালগ বা প্রচারণায়, অথবা রেড কার্পেটে তাদের সিকুইন-সূচিকর্ম করা ডিজাইনগুলো একসময় চোখ ঝলসে দিয়েছিল সমঝদারদের। কিন্তু এর পেছনের গল্প অত ঝলমলে নয়। জানা গেছে, লাল কার্পেটের লুক তৈরি করা শ্রমিকদের কখনোই ন্যায্য পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সংযুক্তি প্রক্রিয়ার কারণে সিকুইনগুলো পৃথকভাবে হাতে সেলাই করতে হয়। সে তুলনায় আউটসোর্স করা পোশাকশ্রমিকদের অতিরিক্ত কাজ করতে হয় এবং বেতনও কম দেওয়া হয়।
বর্জ্য
সিকুইন উপাদানের ৩৩ শতাংশ উৎপাদন পাঞ্চিং প্রক্রিয়ায় নষ্ট হয়ে যায়, এমনকি ব্যবহারের আগেই। তা ছাড়া সিকুইনগুলো প্লাস্টিক-পিভিসি; যা কার্সিনোজেন, হরমোন বিঘ্নকারীসহ বিষাক্ত রাসায়নিক ধারণ করে। এর অর্থ হলো, এর জৈব ক্ষয় হয় না; অন্তত আমাদের জীবদ্দশায়। সাধারণত হাজার হাজার বছর ধরে এগুলো ল্যান্ডফিলে থাকে অথবা সমুদ্রে ছেড়ে দেওয়া হয়, যা সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতি করে।
পানিদূষণ
অক্সফামের গবেষণা অনুসারে, ২০১৯ সালে ব্রিটিশ নারীরা ৩৩ মিলিয়ন সিকুইনযুক্ত পোশাক এবং আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কিনেছিলেন। ফলে দেশজুড়ে মোট ৪১৫ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয়েছিল। গড়ে এই জিনিসপত্রের ১ দশমিক ৭ মিলিয়নই উৎসবের মরশুমের পরপরই নষ্ট হয়ে যায়, যদিও এর ব্যবহার খুব কম হয়। ফ্যাশন রাউন্ড টেবিলের মতে, বর্তমান গতিপথে, ২০৫০ সালের মধ্যে, মহাসাগরে মাছের চেয়ে (ওজন অনুসারে) প্লাস্টিক বেশি থাকবে। কারণ, আমাদের বার্ষিক প্লাস্টিক উৎপাদন ৫০০ শতাংশ বাড়বে। মিঠাপানির স্রোতের দূষণ সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। সে ক্ষেত্রে অনেক জীবই ফেলে দেওয়া কণাগুলো (সিকুইন) গ্রাস করে। পরিবর্তে, যারা মাছ খান, তাদের দেহেও সেগুলো প্রবেশ করে। অনুমান করা হচ্ছে, যেকোনো উৎসবের মরশুমে ৭০ মিলিয়ন সিকুইনযুক্ত পোশাকের যাত্রা ল্যান্ডফিলে গিয়ে শেষ হয়। সেগুলো জৈবিকভাবে নষ্টও হয় না।
বোঝাই যাচ্ছে, এটি কতটা মারাত্মক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, করণীয় কী? বিশ্লেষকদের মতে, সবচেয়ে সহজ ও কার্যকরী কাজ হলো সিকুইনযুক্ত যেকোনো জিনিস কেনা বন্ধ করা। চাহিদা কম থাকা সব সময় উৎপাদনের হার কমার সমান হবে। তবে কারও যদি সিকুইনযুক্ত পোশাকেই সব ঝোঁক থাকে, তাহলে পোশাক বা আনুষঙ্গিক ভাড়া নেওয়া যেতে পারে। এমন চর্চায় অভ্যস্ত হতে পারলে এর উৎপাদন অনেকটা কমে যাবে। বিকল্প আরও আছে। মুষ্টিমেয় কয়েকটি ব্র্যান্ড ‘টেকসই’ সিকুইন উপকরণ তৈরির চেষ্টা করছে। সাসটেইনেবল সিকুইন স্টোর নামে। সেখান থেকেও কিনে নেওয়া যেতে পারে।
তবে পার্টিতে বা উৎসবে সিকুইন পরতেই হবে এমন কোনো কথা আছে? উৎসবের সময় ঝলমলে হয়ে ওঠার আরও অসংখ্য আনন্দময় উপায় আছে। তাই সিকুইনবিহীন পার্টির মরশুম সম্পর্কে দু-একটি ধারণাও থাকা চাই।
 স্যুট: পার্টির জন্য সব সময় দুর্দান্ত। কালো টাক্সিডো স্টাইলের স্যুট পরা যেতে পারে। ট্রেনার, টি-শার্টসহ আরও ক্যাজুয়াল লিনেন স্যুট পরলেও মন্দ দেখাবে না। একটি ভালো স্যুটের ক্ষমতাকে খাটো করে দেখার উপায় নেই একদমই।
 লেপার্ড প্রিন্ট: একে ফ্যাশনবোদ্ধারা উৎসবের প্রিন্ট বলে থাকেন। পার্টির মরশুমে পরে নেওয়া যায় অনায়াসে। অনেকের মতে, লেপার্ড একটি নিরপেক্ষ পোশাক। আসলেই তাই। সারা বছর পরা যায়। ক্ল্যাসিক জিনস এবং ট্রেঞ্চ কম্বো থেকে শুরু করে ব্রেটন স্ট্রাইপ—সবকিছুর সঙ্গেই মানিয়ে যায়। লেপার্ড-প্রিন্টের টার্টল নেক—যেকোনো পার্টি লুক তৈরিতে অব্যর্থ। তবে সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে রেড রুবির জুয়েলারি।
 সিলভার বুট: সিকুইন-মুক্ত স্টাইলিংয়ে কিছুটা ঝলমলে ভাব যোগ করতে পারে এটি। নরমাল ড্রেসআপের সঙ্গে যদি একটি ভালো সিলভার বুট থাকে, সেই জুতার কল্যাণেই পার্টির উপযুক্ত হয়ে ওঠা যাবে। সঙ্গে রাখা যেতে পারে একটি স্যাটিন রিবন ব্যাগ। এই দুইয়ের কম্বিনেশন একদম ম্যাজিক্যাল।
মখমলের ছোঁয়া
পার্টি পারফেক্ট লুকের জন্য চমৎকার। ডাবল ভেলভেট পরা যেতে পারে। ভেলভেট জ্যাকেটের জন্য ম্যাচিং ট্রাউজার পাওয়া যায় বা তার পরিবর্তে জিনসের সঙ্গেও এটি জুড়ে নেওয়া যায়। ভালো লাগবে।
সবুজ ও লাল
এডওয়ার্ডিয়ান-স্টাইলের শার্ট, ফ্রিলি কলার এবং কাফ পাশাপাশি লাল-সবুজ রঙের মিশ্রণ পুরো আউটফিট আকর্ষণীয় করে তুলবে। কিছুটা ফরমাল লুক চাইলে, স্যুট ছেড়ে আপনার লাল-সবুজ টপকে নিয়ে একটি ম্যাচিং লাল কর্ডের পিনাফোর ড্রেসের সঙ্গে সংযুক্ত করা যেতে পারে। তাতেও দুর্দান্ত লাগবে।

 রত্না রহিমা
মডেল: নাযাহ নাওয়ার
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: ক্যানভাস
ছবি: কৌশিক ইকবাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top