লেবেল অ্যালার্ট I সামিয়া খান
শতভাগ দেশি ব্র্যান্ড। অন্তর্জাল ফ্যাশন দুনিয়ায় নবাগতই বলা চলে। যেখানে শুরু থেকে শেষ— সবেতেই বাংলাদেশ। ফ্যাব্রিক, সুতা, রং কিংবা নকশা—সব প্রকোষ্ঠেই মাটির ঘ্রাণ। সামিয়া খান লেবেলটির প্রধান ডিজাইনার ও উদ্যোক্তা। নিজের নামেই নামকরণ। এর পেছনের গল্প খানিকটা ব্যক্তিগত। সামিয়া নামটি তার মায়ের দেওয়া। মাকে হারিয়েছেন এক দশকের বেশি। তবু তাকেই মনে পড়ে কোনো কিছুর শুরুতে। মাকে জড়িয়ে বেঁচে থাকার আনন্দ আরও নিবিড় করে পাওয়ার ইচ্ছা এই নাম বেছে নেওয়ার অন্যতম কারণ। আবার একটি যুক্তিও আছে। নাম নির্ধারণ বিষয়ে প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে চায়ের কাপে ঝড় তুলেছিলেন। সেই ঝড়ে খুঁজে পেয়েছেন উত্তর। হাজারো নাম আর শব্দের মধ্য থেকে খুঁজে পেয়েছেন কাঙ্ক্ষিতটি। সেই গল্প থেকে জানা গেল, সামিয়াকে তার বন্ধু বলেছিলেন, একটি ব্র্যান্ডকে যখন ক্রেতা চিনতে শুরু করেন, সেখানে নাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উদ্যোক্তার নিজের নামে ব্র্যান্ড নেইম হওয়ায় মানুষ বুঝতে পারেন, নামভূমিকায় কে আছেন। ক্রেতার সঙ্গে উদ্যোগের সম্পর্ক সেখানে নিবিড় হয়। স্থাপিত হয় বিশ্বাস।
এটি মূলত একটি অনলাইন উদ্যোগ। ওয়েব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে প্ল্যাটফর্ম হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। সামিয়া খান উদ্যোগটির প্রধান কার্যালয় যশোরে। পণ্য দেখে হাতে ধরে কিনতে চাইলে যেতে হবে সেখানে।
সামিয়া পড়েছেন ফ্যাশন ডিজাইন বিষয়ে। এই জগতের অলিগলি তাই চেনা তার। সেখানের একটি অধ্যায় প্রাকৃতিক রং; যার সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় অরণ্যে। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ফ্যাশন উদ্যোগ অরণ্যের ন্যাচারাল ডাইড প্রোডাক্ট এই রং সম্পর্কে জানতে উৎসাহিত করেছিল তাকে। পরবর্তী সময়ে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে প্রাকৃতিক রঙের পথিকৃৎ রুবী গজনবীর কাজ তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল। এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন থেকে। প্রাকৃতিক রঙের খোঁজে তখন থেকে যাত্রা শুরু। নিরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন কাজ করেছেন তিনি। নিজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে সময় দিয়েছেন এ বিষয়ে জানতে। নিরলস চলছে গবেষণার রস আস্বাদন। সেসব পড়াশোনা আর অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এখন নিজের ব্র্যান্ডের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন এই ফ্যাশন ডিজাইনার। মোট চারটি বিভাগে হচ্ছে কাজ। ফ্যাব্রিক খুঁজে নিচ্ছেন ঢাকা, টাঙ্গাইল ও রাজশাহী থেকে। ডাইয়ের জন্য ভরসার জায়গাও দুটি। ইন্ডিগোর জন্য রংপুরেই তার ভরসা। কিছু কাজ ঢাকাতেও করেন। হাতে সুই-সুতা নিয়ে নকশির কাজে সামিয়ার নকশা হয় অপূর্ব। এই কাজের জন্য তার প্রথম ভরসা যশোরে। সেখানকার নারীদের নিপুণ নান্দনিকতায় সম্পূর্ণ হয় তার প্রতিটি শিল্প। কাজ নিয়ে ব্যস্ততা ভালোবাসলেও শহরের ঠাসবুনোটে বন্দী হতে চাননি। কাজকে ঢাকাকেন্দ্রিক না করে, ঢাকার বাইরে ছুটে গেছেন কাজ প্রাধান্য দিয়ে। যশোরেই এখন তার বসবাস। যশোর রোড আর সেখানকার গাছের মায়া কাটাতে চাননি। সেখানেই থিতু হয়েছেন। ২৫ জন নকশি কাজের শিল্পী আর কর্মীর নিয়ে সামিয়া খানের নতুন পরিবার। কলেবর বাড়ছে নিয়মিত।
ঢাকা ছেড়ে এসে তাদের কাছাকাছি বসবাসের উদ্দেশ্য? তাতে টিমওয়ার্ক ভালো হচ্ছে বলে জানান তিনি। নিয়মিত উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন সকল কর্মীকে। ভবিষ্যতে সামিয়া খানের ইচ্ছা এদেরকে কাজের নিশ্চয়তা প্রদান। যাতে সামনের দিনগুলো নিয়ে তাদের দুশ্চিন্তা করতে না হয়; তারা স্বপ্ন দেখতে পারেন মন খুলে। তাদের দক্ষতা নিয়ে সামিয়ার সামান্য দ্বিধা নেই। তবু তাদেরকে আরও এগিয়ে নিতে প্রশিক্ষণ আয়োজন করতে চান তিনি। সামিয়ার ইচ্ছা নিয়মিত ট্রেনিংয়ের আয়োজনে আরও সমৃদ্ধ হোক এই গুণীরা। প্রকৃতির রঙে যেমন তারা কাপড় রাঙিয়ে যাচ্ছেন, বুনছেন স্বপ্নের জাল; তেমনি তাদের জীবনটাও রাঙাতে চান। দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় বুঝেছেন, এ প্রজন্মে যারা তরুণ, তারা আগ্রহ হারাচ্ছেন এই কাজে। এর পেছনে আছে স্বল্প আয়ের কষ্টকর গল্পগাথা। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ধরণীর প্রতি প্রেম তাকে আজন্ম মুগ্ধ করেছে। তাই দক্ষতা বাড়িয়ে, যথাযথ পারিশ্রমিক দিয়ে জীবনযাত্রা উন্নত করার মাধ্যমে তরুণদের উৎসাহী করতে চান তিনি। যাতে দেশের এই সম্পদ না হারায়। উত্তরাধিকারীদের যত্নে উন্নত হয়ে টিকে থাকে।
সামিয়া খানের প্রোডাক্ট লাইনে আছে শাড়ি, টু-পিস। সামনের শীতে যোগ হবে শাল ও জ্যাকেট। জ্যাকেটের নকশাতে থাকবে নকশি কাজ। ৪ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকায় পাওয়া যাবে এই ডিজাইনার ওয়্যার। বাংলাদেশে বারো মাসে তেরো পার্বণ তো জানা কথাই। তা মাথায় রেখেছেন এই নকশাকারও। তাই নিত্যদিনের পোশাক আর উৎসবের বিলাস—দুই-ই পাওয়া যাবে এক ঠিকানায়। ইন্টারনেট ব্রাউজারের ঠিকানা samiakhan.store।
ফ্যাশন ডেস্ক
ছবি: সামিয়া খান
