skip to Main Content

ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I ফ্যাশন সিজন

ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির টাইম লাইন। ডিজাইনারদের নতুন কালেকশনের মুখ দর্শন। রানওয়ে থেকে স্টোর—সবখানে নতুনের আহ্বান। ক্যালেন্ডার মেনে পরিকল্পনা। সত্তরের দশক থেকে আজ—একই সূত্রে গাঁথা সব। মিলিয়ন ডলার ব্যবসার এই সুকৌশলের বিস্তারিত সারাহ্ দীনার লেখায়

মনে আছে সেই বিখ্যাত লাইন—সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। ব্রিটিশ কবি জফরি চসারের এই লাইন কাঠিন্যে ভরপুর শোনায়। কিন্তু এর প্রমাণ পাওয়া যায় রঙিন ঝাঁ-চকচকে ফ্যাশন দুনিয়াতেও। ফ্যাশন সিজন চলে গেলে তখন সেই কালেকশন হয়ে যায় মূল্যহীন। তাই দিনপঞ্জি গুনে গুনে এখানেও হয় সব হিসাব-নিকাশ। ফ্যাশন ক্যালেন্ডার নির্ধারণ করে দেয়, কখন আসবে কোন সংগ্রহ। কখন দেখা যাবে রানওয়েতে, কখন স্টোরে আর কখন মূল্যছাড়ে!
প্রাথমিকভাবে প্রধান ফ্যাশন সিজন দুটি—স্প্রিং/সামার ও অটাম/উইন্টার। এর সঙ্গে আছে আরও দুটি সেকেন্ডারি সিজন—রিসোর্ট ও প্রি-ফল। এই ফ্যাশন সিজন মূলত ইন্টারন্যাশনাল রেডি টু ওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির জন্য তৈরি করা হয়েছিল। সেই ১৯৭৩ সাল থেকে আজও এই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যা চলছে।
প্রি-ফল শুধু মে আর জুনকে কেন্দ্র করে। ক্যাটওয়াকে যা দেখে দর্শকেরা তাই পরবর্তী সময়ে কেনার জন্য ভিড় জমান স্টোরে। স্প্রিং/সামার আর অটাম/উইন্টার—এই দুটি প্রাইমারি সিজন হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এই সময়ে অনেকে তাদের বিশেষ সংকলন জনসমক্ষে আনার চেষ্টা করে। প্যারিস, মিলান, নিউইয়র্ক ও লন্ডন ফ্যাশন উইক এই দুই প্রধান সিজন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়।
স্প্রিং/সামার
এর সময় জানুয়ারি থেকে জুন। রানওয়ে মাতিয়ে স্টোরের অধ্যায় শুরু হয়। মার্চের মধ্যে পুরোটা পৌঁছে যায় শেলফে। রেগুলার প্রাইসে বিকোয়। তারপরে আসে সামার সেলের পালা। মধ্য জুন থেকে আগস্ট অবধি থাকে এই বিশেষ অফার।
ইন্টারন্যাশনাল বাজারে এই ফ্যাশন সিজনে মূলত গ্রীষ্মের উপযোগী পোশাক নিয়ে আসা হয়। ফ্যাব্রিকের ক্ষেত্রে গুরুত্ব পায় সেসব, যেগুলো হালকা ওজনের। বুননের মধ্য দিয়ে বাতাস চলাচল করতে পারে এমন ধারার। ক্যাজুয়াল কটন ফ্যাব্রিক এবং টিপিক্যাল সামার ম্যাটেরিয়াল বেছে নেওয়া হয়। প্রোডাক্ট লাইনে পাওয়া যায় টপ, স্কার্ট, সামার ড্রেস, শর্টস এবং সুইম ওয়্যারের মতো পণ্যগুলো। বেশ রঙিন হয়ে থাকে এই সংগ্রহ। বাহারি প্রিন্ট থাকে। এই ফ্যাশন সিজনকে এস/এস অথবা এসএস—এভাবেও লেখা হয়।
অটাম/উইন্টার
জুলাই থেকে ডিসেম্বর এই সিজন। সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরো সংগ্রহ পৌঁছে যায় স্টোরে। উইন্টার সেল শুরু হয় ক্রিসমাসে আর শেষ হয় জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারিতে। এই ফ্যাশন সিজনে মূলত শীতের সময়ের পোশাক আনা হয়। লেয়ার পায় প্রাধান্য। ফ্যাব্রিক হয় ভারী। এমন সব কাঁচামাল বেছে নেওয়া হয়, যা পোশাকটি উষ্ণ রাখতে সহায়ক। যেমন উল, লাক্সারিয়াস ক্যাশমেয়ার। প্রোডাক্ট লাইনে দেখা যায় জাম্পার, কার্ডিগান, ব্লেজার, কোট, জ্যাকেট, স্কার্ফ ও বুট জুতা। কালার প্যালেটে গাঢ় রং ব্যবহৃত হয়। দামের পারদ থাকে ওপরের দিকে। অটাম/উইন্টারকে সংক্ষেপে ইংরেজি অক্ষর এ এবং ডব্লিউতেও প্রকাশ করা হয়। যুক্তরাজ্যের ফ্যাশন ধারা প্রাণিত ব্র্যান্ডগুলোয় এই নাম ব্যবহৃত হয়। অটাম/উইন্টারকে ফল/উইন্টারও বলা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সংক্ষেপে সেখানে এফ/ডব্লিউ বা এফডব্লিউ লেখা হয়।
প্রাথমিক দুই সংগ্রহের মাঝের সময়ের ফ্যাশন সিজন রিসোর্ট ও প্রি-ফল। অনেক সময় সেখানে দেখা যায় প্রি-স্প্রিং অথবা প্রি-ফল কালেকশন। আবার কিছু ব্র্যান্ড প্রি-স্প্রিং কালেকশন নিয়ে কাজ করে না। তারা বাজারে আনে হাই-সামার কালেকশন। লাক্সারি ফ্যাশন ব্র্যান্ড শ্যানেল, ডিওর নিয়মিত রিসোর্ট/ক্রুজ এবং প্রি-ফল কালেকশন নিয়ে কাজ করে। মধ্যবর্তী এ সময়টাতে যে সিজনগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, সেগুলোর মধ্যে আছে রিসোর্ট/ক্রুজ কালেকশন ও প্রি-ফল কালেকশন।
রিসোর্ট/ক্রুজ কালেকশন
রিসোর্ট ও ক্রুজ মূলত একই কালেকশনের সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একসময় বিশেষ সংগ্রহ হিসেবে দেখা হতো বছরের এই সময়ের কাজকে। এখন অফিশিয়াল শিরোনামে বাজারে আনা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য বিশ্বের বিলাসী মানুষদের ছুটি কাটানোকে মাথায় রেখে পোশাক নকশা। যারা এ সময়ে গ্রীষ্মপ্রধান কোনো অঞ্চলে ঘুরতে যান, তারাই এখানে সম্ভাব্য ক্রেতা। ভ্রমণ, আনন্দ, উদ্‌যাপন মূল প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। রিসোর্ট কালেকশন র‌্যাম্পে দেখা যায় মে মাসে। তবে এ জন্য আলাদা করে কোনো ফ্যাশন উইকের আয়োজন করা হয় না। লাক্সারি ব্র্যান্ডগুলো নিজেদের ব্যানারে আয়োজন করে জানান দেয়। ক্যাটওয়াক হতেই হবে এমন কোনো বাঁধাধরা নেই।
প্রি-ফল
সামার থেকে অটামের সময়টাকে কেন্দ্র করে নকশা করা হয় প্রি-ফল কালেকশন। অনেক ব্র্যান্ড এখানে স্প্রিং/সামার ও অটাম/উইন্টারের উপযোগী পণ্যও সংযুক্ত করে। সাধারণত ফেব্রুয়ারিতে পর্দা নামে এই কালেকশনের। এই ইন্টারমিডিয়েট সিজনের জন্যও আলাদা করে কোনো ফ্যাশন উইক আয়োজন করা হয় না। ফ্যাশন শো আয়োজনের ধারাবাহিকতাও সব ব্র্যান্ডের নেই। তবে যে ব্র্যান্ডগুলো সিজন মাথায় রেখে কাজ করে, তারা মে মাসের মধ্যে স্টোরে পৌঁছে দেয় এই সিজনের পোশাক।
এই চার সিজনের উদ্দেশ্য ফ্যাশন-সচেতনদের সামনে নতুন পোশাকের উন্মোচন। ক্রেতা আকর্ষণ এবং ব্র্যান্ড ভ্যালু তৈরিতে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এই সিজন থিওরি। পণ্য উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, বিক্রি—এই চক্রে ফ্যাশন বিশ্ব আবর্তিত হয়। সিজন অনুযায়ী তৈরি পণ্য প্রেস ও ফ্যাশনিস্তাদের মাধ্যমে সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা থাকে শতভাগ। তবে শোনা যায়, বর্তমানকালে অনেক লেবেলই অনুভব করছে, ফাস্ট ফ্যাশনের ক্রেতারা বছরজুড়ে মাত্র চারটি সিজনে তুষ্ট হতে পারছেন না। অনেকে মত দিয়েছেন, ৫২টি সিজনে পুরো বছরকে ভাগ করা হলে নাকি পাওয়া যেতে পারে সমাধান! বর্তমানের ৪টি থেকে একলাফে ৫২টিতে পৌঁছে যায় কি না, তা বুঝতে সময় লাগবে আরও বেশ খানিকটা। ১ দশমিক ৭৫ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের এই বাজারের কলেবরের ব্যাপ্তি তখন কেমন হয়, সেটাই দেখার বিষয়।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top