ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন I ল্যাকমে ফ্যাশন উইক: ঐতিহ্য × কতুর
নয়াদিল্লিতে বসেছিল জমকালো আসর। ৮ থেকে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত চলেছে এই মহাযজ্ঞ। স্থান ছিল ভাসান্ত কুঞ্জের দ্য গ্র্যান্ড। ল্যাকমে ফ্যাশন উইক ২০২৫-এ আলোকপাত করেছেন সারাহ্ দীনা
ফ্যাশনপ্রেমীরা প্রতিবছর এই ফ্যাশন উৎসবের জন্য আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকেন। সফলতার সঙ্গে এবার ২৫ বছর পূর্ণ করেছে ল্যাকমে ফ্যাশন উইক। এবারের আয়োজন ছিল ভারতের ঐতিহ্যের সঙ্গে কতুরের কারিশমার এক অভূতপূর্ব মিলন। দেশটির প্রধান ফ্যাশন প্রদর্শনী হিসেবে খ্যাত এই ইভেন্টে দেখা গেছে ঐশ্বর্য ও চিন্তাশীলতার মিশ্রণ, যেখানে সমৃদ্ধ বস্ত্র ঐতিহ্যকে আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। শতাধিক ডিজাইনার তাদের নতুন সংগ্রহ প্রদর্শন করেছেন। ক্যাটওয়াকে আলো ছড়িয়েছেন প্রতিষ্ঠিত ও উদীয়মান প্রতিভারা। শো স্টপার হিসেবে মুগ্ধ করেছেন বলিউড তারকারা।
কারুশিল্পের গুণকীর্তন
এ বছরের অন্যতম আকর্ষণ ছিল ভারতের ঐশ্বর্যপূর্ণ বস্ত্র ও বয়নশিল্প থেকে পাওয়া অনুপ্রেরণা। সংযুক্তা দত্ত, তারুন তাহিলিয়ানি, মাহিমা মাহাজানের মতো ডিজাইনাররা দক্ষতার সঙ্গে ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় বুননকে আধুনিক কাট ও সিলুয়েটের সঙ্গে একত্র করেছেন। হাতে বোনা সিল্ক থেকে শুরু করে কাঞ্জিভরমের কাঠামোগত নকশা—সবই ছিল নজরকাড়া। শতাধিক ডিজাইনারের মধ্যে কয়েকজন ছিলেন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, যাদের দিকে তাকিয়ে থাকেন ফ্যাশনবোদ্ধারা।
অনামিকা খান্নার সিলভার কলার
অনামিকা খান্নার লেবেল একে/ওকে ‘সিলভার কলার’ শিরোনামে লঞ্চ করেছে নতুন সংগ্রহ। শক্তিশালী ফ্যাশনকে দেওয়া হয়েছে এক কাব্যিক মোড়, যেখানে রুপালি অলংকরণের অভিনব ব্যবহার নজর কেড়েছে। শো স্টপার অনন্যা পাণ্ডের উপস্থিতি এই প্রদর্শনীকে আরও গ্ল্যামারাস করে তুলেছে। এটি ছিল উদ্বোধনী শো, যা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সৃজনশীলতায় ভরপুর।
তারুন তাহিলিয়ানির বিজুয়েল্ড
সোয়ারভস্কি ক্রিস্টালের ব্যবহারে মোহময় এক সংগ্রহ উপস্থাপন করেছেন ডিজাইনার তারুন তাহিলিয়ানি, যেন বিলাসিতার এক সত্যিকারের উদ্যাপন। বলিউড অভিনেত্রী অনিত পাড্ডা শো স্টপার হিসেবে র্যাম্পে হেঁটেছেন। সোনালি পোশাকে ক্রিস্টালের উপস্থিতি তাকে মর্ত্যরে পরীর রূপে সাজিয়ে তুলেছিল।
শান্তনু ও নিখিলের ভেলোরা
ডিজাইনার জুটি শান্তনু ও নিখিলের এবারের সংগ্রহ ভেলোরাতে ছিল বোল্ড ডিজাইন ও মেটালের সৃজনশীল ব্যবহারে আলাদা। পুরো কালেকশনজুড়ে ছিল নারীর শক্তি, পরিশীলন ও আধুনিকতার উদ্যাপন। অভিনেত্রী ম্রুনাল ঠাকুর র্যাম্পে হেঁটে রাজকীয় নারীত্বের সত্তাকে জীবন্ত করে তুলেছেন।
মাহিমা মাহাজানের ফানাহ
সুফি দর্শনের অনুপ্রেরণায় মাহিমা মাহাজান উপস্থাপন করেছেন ফানাহ। কোরসেট লেহেঙ্গায় সূক্ষ্ম সুতার কাজ এবং হালকা রঙের মিশ্রণ এতে এনে দিয়েছে এক স্বর্গীয় আবেদন। বলিউড অভিনেত্রী ভানি কাপুর রানওয়েতে এসে ছড়িয়েছেন স্নিগ্ধ সৌন্দর্য।
রাহুল মিশ্রর এএফডব্লিউ
ছোট অথচ গভীর ভাবনার এক আয়োজন নিয়ে হাজির ছিলেন ডিজাইনার রাহুল মিশ্র। প্রথাগত কারুশিল্প ও স্লো ফ্যাশনের মেলবন্ধন ঘটেছে তার এই সংগ্রহে। ব্যবহৃত ফ্যাব্রিকে দেখা গেছে সুচারু হাতের কাজ এবং টেকসই উপকরণের প্রয়োগ। ক্রাফটসম্যানশিপের সৌন্দর্য যথাযথভাবে ফুটে উঠেছে। অভিনেত্রী জাহ্নবী কাপুর শো স্টপার হিসেবে ছিলেন ঝলমলে উপস্থিতিতে।
পংকজ ও নিধির আরাকুইস
রাজতন্ত্র ও যুদ্ধের নান্দনিক সংযোগ উঠে এসেছে পংকজ ও নিধির কাজের মাধ্যমে। যুদ্ধজয়ীদের সাহসিকতা ও বিজয়ের উল্লাস প্রতিফলিত হয়েছে তাদের সংগ্রহে। বোল্ড, স্কাল্পচারাল সিলুয়েট এবং মেটালিক অলংকরণ দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। অভিনেত্রী ম্রুনাল ঠাকুরের উপস্থিতি এখানেও ছিল উজ্জ্বল।
সুনীত ভারমার লুমিনা
সুনীত ভারমা কাজ করেছেন আধুনিক কনের জন্য। বিলাসবহুল ফ্যাব্রিকে ঐতিহ্য ও নান্দনিকতার মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন তিনি। নকশায় যেন অতীতের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তী শো স্টপার হিসেবে গ্ল্যামার যোগ করেছেন।
রবি বাজাজের লুমিনা
বর্তমান সময়ের বরদের ফ্যাশন নিয়ে কাজ করেছেন রবি বাজাজ। মেনসওয়্যার সিরিজটির নামও লুমিনা। ফ্যাশন-ফরোয়ার্ড পুরুষদের জন্য ডিজাইন করা পোশাকগুলোতে ছিল ক্ল্যাসিক ও ট্রেন্ডের সুষম মিশ্রণ। অভিনেতা বিজয় ভারমা পুরুষালি লুকে হাজির ছিলেন শো স্টপার হিসেবে।
আর্থের নূর
আর্থের ব্রাইডাল কালেকশনে রেশমের আভিজাত্য নজর কেড়েছে। লাক্সারিয়াস ফ্যাব্রিকের সঙ্গে সূক্ষ্ম নকশার গয়নার মেলবন্ধন পুরো রানওয়েকে করে তুলেছিল মোহনীয়। অভিনেত্রী টাবু পরেছিলেন এই ব্র্যান্ডের পোশাক।
তারকাদের উপস্থিতি সব সময় ল্যাকমে ফ্যাশন উইককে আরও ঝলমলে করে তোলে। এ বছরও ব্যতিক্রম ছিল না। শো স্টপার হিসেবে আরও দেখা গেছে অভিনেত্রী নীলম ও অদিতি রাও হায়দারিকে। তাদের পরিশীলন ও আধুনিক শৈলী আয়োজনকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা।
কালার প্যালেট
ল্যাকমে ফ্যাশন উইকের এবারের আসরে ডিজাইনাররা ব্যবহার করেছেন বৈচিত্র্যময় রঙের প্যালেট। এমেরাল্ড গ্রিন, রুবি রেড ও সোনালি রং এনেছে রাজকীয় ঐশ্বর্য; আবার ব্লাশ পিংক, লাইলাক, সেজ গ্রিনের মতো প্যাস্টেল টোনে এসেছে কোমল স্বপ্নময় আবহ। নিরপেক্ষ রং যেমন আইভরি, অ্যাম্বার ও ব্ল্যাক-অ্যান্ড-হোয়াইটও ছিল জনপ্রিয়। তবে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে সিলভার।
ভাসান্ত কুঞ্জের দ্য গ্র্যান্ড ফ্যাশনের পাঁচ দিনের উদ্যাপনের জন্য ছিল আদর্শ স্থান। মার্জিত সজ্জা, রাজস্থানি লোকসংগীতের লাইভ পরিবেশনা এবং মনোমুগ্ধকর ডিজাইন মিলিয়ে তৈরি হয়েছিল এক স্মরণীয় পরিবেশ, যা ফ্যাশনবোদ্ধাদের মন ছুঁয়ে গেছে।
ল্যাকমে ফ্যাশন উইক ২০২৫ আবারও প্রমাণ করেছে, এটিই ভারতের ফ্যাশন উদ্ভাবনের প্রধান প্ল্যাটফর্ম। জুয়েল-টোনড গাউন থেকে হাতে বোনা পোশাক, ব্রাইডাল কতুর—প্রতিটি সংগ্রহ সৃজনশীলতা, সংস্কৃতি ও শৈল্পিকতার এক মহোৎসব।
ছবি: ইন্টারনেট
