skip to Main Content

ই-শপ I খুঁত

‘সবকিছু নিখুঁত চাইলেও আমাদের চারপাশে তাকালেই আমরা বুঝি, প্রকৃতিতে আসলে খুঁতহীন বলে কিছুই নেই’ এই ধারণা থেকেই জন্ম ই-শপ খুঁত-এর। অনেক দিনের ভাবনাকে পুঁজি করে ২০১৭ সালের বৈশাখে দুই বন্ধু উর্মিলা শুকলা আর ফারহানা হামিদ মিলে শুরু করেন খুঁতের যাত্রা। তাঁদের মতে, মানুষ, সম্পর্ক কিংবা প্রকৃতি- সবকিছুতেই কিছু না কিছু খুঁত থাকে। আর এই খুঁতটুকু একটু ভিন্নভাবে দেখলেই তা হয়ে যায় ওই মানুষের, সম্পর্কের কিংবা প্রকৃতির নিজস্ব সৌন্দর্য বা স্বাতন্ত্র্য। খুঁত-এর সৃষ্টি একেবারেই ব্যবসায়িক মনোভাব থেকে নয়, বরং শুরুতে শুধু নিজেদের কাজ আর্কাইভ করে রাখা কিংবা বন্ধুদের দেখানোর জন্যই তারা এই অনলাইন পেজ খোলেন।
তাঁতে বোনা আর হাতের কাজ করা শাড়ির সুন্দর সমারোহ ‘খুঁত। তাঁতে বোনা শাড়িগুলো মেশিনে তৈরি করা শাড়ির মতো নিখুঁত হয় না কখনোই, আর এটাই এই শাড়ির সৌন্দর্য। আবার হাতে বোনা শাড়িগুলোর ফোঁড়ের একটার সঙ্গে আরেকটার মিল থাকে না, সব কটি একই রকম কিংবা সমান হয় না। কিন্তু এগুলোতে একটা নিজস্বতা আর আপনত্ব থাকে, যা মেশিনের শাড়িতে অনুভূত হয় না। কারণ, এর প্রতিটা কাজই মমতা নিয়ে করা।
খুঁতের কাজ এখন পর্যন্ত মূলত তাঁতের শাড়ি নিয়ে হলেও রঙবেরঙের প্যাচওয়ার্কের কাজ করা খুঁতের আরেকটি বৈশিষ্ট্য। প্যাচওয়ার্কের শীতের পোশাক থেকে শুরু করে শার্ট, প্যান্ট, স্কার্ট, শ্রাগ তৈরি করে থাকে খুঁত। খুঁত যে শুধু পরিধেয় পোশাক নিয়েই কাজ করে, তা নয়, প্যাচওয়ার্কের ঘর সাজানোর কুশন কভার, কাঁথা, চাবির রিং- আরও কত কী! ব্যবহার করা হয় না বা পুরোনো এমন টুকরো কাপড় রিসাইকেলিংয়ের মাধ্যমে করা হয় এই নানা রঙের প্যাচওয়ার্ক। ‘আসলে কাজটা প্রকৃতির প্রতি একধরনের দায়বদ্ধতা থেকে করা’এই রিসাইকেল নিয়ে এমনই বিশ্বাস খুঁতের।
খুব জলদি খুঁত কাজ করতে চায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের তাঁত নিয়ে। যেমন মণিপুরি শাড়ি কিংবা ঢাকার জামদানি। রাজশাহী সিল্ক নিয়েও কাজ করার ইচ্ছা আছে। এই বৈশাখেই তাদের ইচ্ছা মণিপুরি শাড়ি নিয়ে কাজগুলো শেষ করার। খুঁতের পরিসর খুব ছোট হওয়ায় এখনই কোনো আউটলেট নেওয়ার চিন্তাভাবনা তাদের নেই। তবে খুব কম সময়েই খুঁত মানুষের কাছ থেকে বেশ ভালো সাড়া পেয়েছে। ফেসবুক পেজে ফলোয়ার আছে পনেরো শর বেশি। তবে আউটলেট না দিলেও একটা ছোটখাটো সেল পয়েন্ট নিতে পারে। খুঁত-এর মতে, ‘যে মানুষগুলো এত আন্তরিকভাবে আমাদের সঙ্গে কথা বলেন, শাড়ি কেনেন তাদের সামনাসামনি দেখতে ইচ্ছা হয়, আড্ডা দিতে ইচ্ছা হয়, তাই কোথাও ছোট করে একটা সেল কর্নার নেওয়ার ইচ্ছা আছে। যেন তারাও দেখেন, ছুঁয়ে কিনতে পারেন তাদের প্রিয় শাড়িগুলো। আর আমরাও আমাদের প্রিয় মানুষগুলোকে হাসিমুখে জানাতে পারি যে তারা আমাদের কত প্রিয়’। খুঁত-এর ফেসবুক পেজ লিঙ্ক: https://www.facebook.com/khut.art/
খুঁত-এর যাত্রা শুরু হয় একটা হাতে বানানো মাটির পুতুলের চোকার দিয়ে, যার দাম ছিল ২৪০ টাকা। ভালোবেসে চোকারটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘সোহাগী’। এখানকার সব কটি প্রডাক্টেরই সুন্দর সুন্দর নাম। সেই সোহাগী থেকে শুরু করে পরবর্তী সময়ে ১০ হাজার টাকা দামের শাড়িও খুব আপন করে নিতে দেখেছেন তারা ক্রেতাদের। তাই বলা যায়, খুঁত-এর প্রাইস রেঞ্জ ২৪০ থেকে ১০ হাজার টাকা। তাঁতের শাড়ির উপর ব্লক করা কিংবা প্রিন্ট করা শাড়িগুলো পাবেন ১০০০, ১৪৪০, ১৬৮০, ২২০০ কিংবা ২৯৪০ এমন বিভিন্ন দামে। বিভিন্ন ধরনের স্কার্ট আর শ্রাগ পাবেন ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। প্যাচওয়ার্কের টপ, প্যান্ট আর শাল পাবেন ১০০০ থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে। হুডির দাম ২৫৩০ টাকা। ছোটদের টপ, হুডি, প্যান্ট আর স্কার্টও তৈরি করে খুঁত। এগুলোর দাম পড়বে ৩০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। ছেলেদের সুতির পাঞ্জাবি থেকে প্যাচওয়ার্কের কোটি, জ্যাকেট ইত্যাদি পাওয়া যায় ১২০০ থেকে ২৮০০ টাকার মধ্যে।

i শিরীন অন্যা
মডেল: শিশির
ছবি: মেজবাহ ও ফ্লোরা ফেরদৌস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top