অর্গানিক I ক্লিন বিউটি
নতুন এক আন্দোলন। সৌন্দর্যপণ্যে ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহারের বিরুদ্ধে। সুস্থতা রক্ষার জন্য
এখনকার জেনারেশনের একটি নতুন আন্দোলন ক্লিন বিউটি। নিজের সৌন্দর্যবর্ধনে প্রতিদিন যা ব্যবহার করছেন, তা সৌন্দর্যবৃদ্ধির পাশাপাশি ক্ষতি করে ফেলছে কি না, সে সম্পর্কে সচেতন করে তোলা এর লক্ষ্য। সাধারণত পণ্যের গায়ে যেসব গুণ লেখা থাকে, সেগুলোর ওপর ভিত্তি করেই সৌন্দর্যপণ্য কেনা হয়। কিন্তু তাতেও থাকতে পারে বিভ্রান্তিকর তথ্য। প্যাকেজিংও বিভ্রান্তিকর হতে পারে। কেননা পণ্যের গায়ে বিভিন্ন উপকরণের যে তালিকা থাকে, তার সঙ্গে ভেতরের মিল না-ও থাকতে পারে। নামকরা কোম্পানির ক্ষেত্রেও এমনটি বিচিত্র নয়।
ন্যাচারাল, পিওর, বোটানিক্যাল ও ইকো- এ ধরনের জনপ্রিয় শব্দগুলো নিয়মানুযায়ী ব্যবহৃত হয় না। ফ্রি অফ বা বেনিফিট ইনক্লুড-এর মতো কথাগুলোও পণ্যে কী ব্যবহার করা হয়েছে, সে ব্যাপারে বিভ্রান্ত করতে পারে। পাতা ও গাছের ছবি ব্যবহার করে প্রতারণামূলক ডিজাইন করার মতো চতুর কৌশলও ফাঁদে ফেলতে পারে। অথচ এসব দেখেই ভোক্তা একটি পণ্যের প্রতি সহজে আকৃষ্ট হয়।
তবে এটি ভাবার কারণ নেই যে সব পণ্যই আপনাকে ধোঁকা দিচ্ছে। বোতল, বাক্স, টিউব বা জারের গায়ে লেখা দেখে আমরা গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য জানতে পারি। প্রতিদিনকার ত্বকের যত্নে ব্যবহৃত পণ্য সম্পর্কে এগুলো জানা প্রয়োজন। খেয়াল করলে দেখা যাবে ইউএসডিএ অর্গানিক, নন-জিএমও এবং ইডব্লিউজির মতো প্রতীক ও স্ট্যাম্পগুলো বিভিন্ন উৎস থেকে যাচাইকৃত বলে নির্দেশ করে। যদিও এসব নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করে না যে পণ্যটি নিরাপদ, কিন্তু গাইডলাইনটি যে গৃহীত, তা নির্দেশ করে।
এখন জানা প্রয়োজন ক্লিন বিউটি আসলে কী? এবং অন্যান্য বিউটি ব্র্যান্ড থেকে এটিকে কি নতুনত্ব দিয়েছে বা আলাদা করেছে? যদিও এর সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। ক্লিন বিউটি মুভমেন্ট প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয় উপাদানকে একত্র করে দেখতে চায়। যার লক্ষ্য উৎসের সুরক্ষা। সব প্রাকৃতিক উপাদান নিরাপদ নয় আবার সব সিনথেটিক উপাদান ক্ষতিকর নয়। বেশির ভাগ বিউটি প্রোডাক্ট প্যারাবেন, সালফেট, সিলিকন, ফাথালেট ও সিনথেটিক সুগন্ধির মতো উপকরণ এড়িয়ে চলে। জরুরি হলো, কোন সৌন্দর্যপণ্যে এগুলো বিদ্যমান রয়েছে, তা যাচাই করে নেওয়া এবং বাজারজাত যাতে বন্ধ করা হয়, সে ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া।
ক্লিন বিউটি মুভমেন্ট জোরালো হওয়ার মূল চালিকাশক্তি হলো ভোক্তার চাহিদা। পাইকারি কিংবা খুচরা বিক্রেতারা এই চাহিদার প্রতি এখন বিশেষভাবে সাড়া দেন। তাই আজ ক্লিন বিউটি একটি ট্রেন্ডে পরিণত হয়েছে। ভোক্তামাত্রই নন-টক্সিক পণ্য ব্যবহারের সুযোগ চায়। আর ক্লিন বিউটি হলো সেই সব পণ্য, যেগুলো বিষাক্ত উপাদান ছাড়া তৈরি। এটি পণ্যে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে প্রাপ্ত উপকরণ যুক্ত করে এবং আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথা মনে রেখে তৈরি হয়। এগুলোর মূল্য নির্ধারণ করা হয় উপাদানের কার্যক্ষমতা ও প্যাকেজিংয়ের ওপর নির্ভর করে। পণ্য নির্বাচনের সময় এ ক্ষেত্রে কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কী কী উপকরণ এড়িয়ে চলতে হবে, সেই নির্দেশনাও এতে থাকে।
প্রশ্ন জাগতে পারে, কেন তালিকাভুক্ত উপকরণগুলো এড়িয়ে চলতে হবে? সৌন্দর্যপণ্যে ব্যবহৃত অতি পরিচিত এসব উপকরণ যে কতটা ক্ষতি বয়ে আনতে পারে, তা কিছুটা জেনে নিলেই কারণটি বোঝা যাবে। যেমন প্যারাবেন। এটি প্রিজারভেটিভ হিসেবে যোগ করা হয়। যাতে মাইক্রোবস, ফাংগাস ও ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির মাধ্যমে পণ্যের মেয়াদ বাড়ানো যায়। তবে এই উপকরণ স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
স্কিন কন্ডিশনারে যোগ করা হয় ফাথালেট। অনেক দেশের পণ্যে এটি নিষিদ্ধ আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে পারসোনাল কেয়ার প্রোডাক্টে এর ব্যবহার সাধারণ বিষয়। এটি কসমেটিকসে ব্যবহার করা হয় যাতে ত্বকের ভেতরে উপকরণ সহজে প্রবেশ করতে পারে। সুগন্ধ বাড়াতে এবং নেইলপলিশের ফ্লেক্সিবিলিটি বজায় রাখতেও এর ভূমিকা আছে। ফাথালেট উচ্চ মানের টক্সিক এবং ত্বক ও নখের মাধ্যমে শরীরে শোষিত হয়। এগুলো নারী-পুরুষ উভয়ের প্রজননব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ফরমালডিহাইডও প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষত নেইলপলিশ ও হেয়ার স্মুথনিং প্রোডাক্টে এটি পাওয়া যায়। উপাদান হিসেবে এটি অনেক সময় পণ্যে অনুপস্থিত দেখালেও ব্রোনোপল ও কোয়ারেনিয়াম-১৫ এই দুয়ের রাসায়নিক সমন্বয়ক হিসেবে এটি উপস্থিত থাকতে পারে, যা একত্রে ফরমালডিহাইড গঠনে কাজ করে। এটি একটি পরিচিত কার্সিনোজেন (ক্যানসারের জন্য দায়ী), স্কিন ইরিট্যান্ট এবং লিভারে টক্সিক বৃদ্ধির জন্য দায়ী পদার্থ। ট্রিকলোসন অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে পণ্যে ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল ব্যাকটেরিয়া আসলে ড্রাগ-প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে সাহায্য করে। টুথপেস্ট, ডিওডোরেন্ট ও শেভিং ক্রিমে এটি দেখা যায়। জল পরিবেশকে বিষাক্ত করে তোলে এবং প্রজনন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এটি সৌন্দর্যপণ্যে বহুল ব্যবহৃত একটি উপকরণ। ছদ্মবেশে যেকোনো স্কিন কেয়ার, মেকআপ বা বাথ প্রোডাক্টে একাধিক বিষাক্ত পদার্থ উপকরণ হিসেবে থাকতে পারে।
তাই বিউটি প্রোডাক্ট ব্যবহার করলেই হবে না, তা নিরাপদ উপকরণে তৈরি কি না, যাচাই করে ক্ষতিকর পণ্য নিষিদ্ধ করার ব্যাপারেও তৎপর থাকতে হবে। ক্লিন বিউটি মুভমেন্ট সে কথাই বলছে।
i তাসমিন আহমেদ
মডেল: আন্নি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন