কুন্তলকাহন I চুলের টুল
মাথার বিভেদ মানেই চুলের ভিন্নতা। এর ওপর ভিত্তি করে স্টাইলিং টুলটাও হওয়া চাই আলাদা। তবেই না চুল সাজানো যাবে পরিপূর্ণভাবে। মনের মতো করে
জনপ্রিয় সব হেয়ারস্টাইলিস্টের মতে, দুটো আলাদা মাথায় কখনোই এক ধরনের চুল গজায় না। কারও চুল বিদিশার নিশা, তো কারও পাতলা চুলের ফাঁক গলে দেখা যায় মাথার ত্বক। ঘনত্বের হেরফের তো থাকেই, ওজনের পাল্লাও মেলে না। কারও চুল ভারী তো কারওটা পলকা। সটান সোজা চুলের দেখা যেমন মেলে, কোঁকড়া চুলের গোছাও কাড়ে দৃষ্টি। এমনকি চুলের গড়ন একই রকম দেখালেও এগুলোর মধ্যে রয়েছে পার্থক্য। বৈজ্ঞানিকভাবে তা প্রমাণিত। আর চুলের ভিত্তি কিংবা গঠনে গরমিল হলে একই ধরনের স্টাইলিং টুল সবার ব্যবহার করাটা বোকামি। শুধু কি টুল, চুলের ভিন্নতায় পাল্টানো প্রয়োজন এর হিট সেটিং, ম্যাটেরিয়াল, এমনকি বাতাসের সেটিংটাও।
পাতলা চুলে
যাদের চুল পাতলা, তারা স্টাইলিং টুল বেছে নেওয়ার সময় লক্ষ রাখুন, তাতে যেন টেম্পারেচার পরিবর্তনের অপশনটা থাকে। এটা জরুরি। কারণ, এতে স্টাইলিংয়ের সময় ওভারহিট না করে কমনীয়তার সঙ্গে চুল সাজানো যাবে। পাতলা চুল খুব সহজেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ধরনের টুল ব্যবহারে তা এড়ানো যাবে অনায়াসে। আর বাড়তি সুরক্ষার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে থিকেনিং স্প্রে। এতে থাকা প্রোটেকটিভ প্রোপার্টি ক্ষতি থেকে বাঁচাবে। সঙ্গে চুলে যোগ করবে বাড়তি ভলিউম। স্ট্রেইটনার, কার্লার কিংবা হেয়ার ড্রায়ার- স্টাইলিং টুল যেটাই হোক না কেন, অ্যাডজাস্টেবল হিট সেটিং থাকা চাই-ই। স্ট্রেইটনারের ক্ষেত্রে তা বেশি প্রযোজ্য। ড্রায়ারে যেন লো উইন্ড সেটিংটা অবশ্যই থাকে। ভলিউমনাইজিং ইফেক্ট দেবে চুলে, এমন ড্রায়ার হতে পারে জবরদস্ত অপশন। পাতলা চুলে কার্লিং আয়রন ব্যবহারের সময় হাই হিট না দেওয়াই ভালো। সে সঙ্গে ব্যারেলের সাইজটাও বুঝে নেওয়া দরকার। বেশি মোটা নয় বরং বেছে নিন ১ ইঞ্চি মোটা ব্যারেলের কার্লিং আয়রনগুলো।
মোটা চুল মানাতে
যাদের চুল মোটা, টুল বাছাইয়ের অপশন তাদের বেশি। কারণ, অনেক হাই হিটেও এ ধরনের চুল অনায়াসে স্টাইল করে নেওয়া যায়। ক্ষতি ছাড়াই। তবে চুল শুকাতে একটু বেশি সময় নেয়। তাই স্টাইলিং টুল বেছে নিতে হবে সেটা বুঝে। স্টাইলিংয়ের শুরুতে থিকেনিং ক্রিম বা ব্লোআউট বাম মেখে নিতে হবে। এতে স্টাইলিংয়ে সুবিধা হবে, চুলও থাকবে পরিপুষ্ট। মোটা চুলে স্ট্রেইটনিং করাটা বেশ ঝক্কির ব্যাপার। বেশ কটি আলাদা ভাগ করে নিয়ে তারপর স্ট্রেইটনার চালাতে হয়। সুন্দর, মসৃণ ও সটান সোজা চুল পাওয়া যায় এতে। কিন্তু চুলে অত ভাগ করা যেমন সময়সাপেক্ষ, তেমনি কষ্টকরও। তাই এমন স্ট্রেইটনার বেছে নিতে হবে, যা দিয়ে মোটা গোছার চুলও অনায়াসে স্ট্রেইট করে নেওয়া যায়। সেই সঙ্গে থাকে হাই সেটিংয়ের সুবন্দোবস্ত। টুইন টার্বো সেটিং থাকলে সুবিধা হবে হেয়ার ড্রায়ারে। চুল দ্রুত শুকাবে। আর সর্বোচ্চ হিট সেটিং দেওয়া কার্লিং আয়রন বেছে নিতে পারলে তা দিয়ে মোটা চুলে সুন্দর কার্ল হবে।
কোঁকড়া কিংবা স্বাভাবিক
দুটো চুলের ধরন একদমই আলাদা। কিন্তু হেয়ার টুল বাছাইয়ের ব্যাপারটা অনেকটা একই রকম। এই দুই ধরনের চুলের জন্যই এমন টুল ব্যবহার করতে হবে, যা চুলের টেক্সচারকে সুরক্ষিত রাখবে। কারণ, একটু হিতে বিপরীত হলেই দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। হাই হিট সেটিংয়ের টুলগুলোই বেশি উপযোগী। কিন্তু সেগুলো যেন আয়োনিক ফিচার যুক্ত হয়। এগুলো চুলকে সুরক্ষিত রাখে, দেয় মসৃণ পলিশড লুক। এ দুই ধরনের চুল ব্লো ড্রাই করার সময় লো উইন্ড সেটিং রাখা প্রয়োজন। নইলে কোঁকড়া চুল আরও এলোমেলো হয়ে যাবে। স্বাভাবিক চুল হারাবে সহজাত সৌন্দর্য। হেয়ারস্টাইলিংয়ের আগে দরকার স্টাইলিং প্রডাক্টের ব্যবহার। কার্ল ক্রিম, হিট প্রোটেকট্যান্টস, জেলি কিংবা লিভ ইন কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে প্রয়োজন বুঝে। কার্লি চুলের জন্য কার্লার কেনার সময় খেয়াল রাখা চাই বিভিন্ন আকারের ব্যারেল যেন থাকে সেটে। এতে কার্লের ধরন অনুযায়ী চুল স্টাইল করে নেওয়া যায়। টার্মালাইন অথবা সিরামিকের কার্লার দেয় মসৃণ, উজ্জ্বল ফিনিশের কার্ল। যা কার্লি কিংবা স্বাভাবিক চুলের জন্য দারুণ অপশন। ডিফিউসার যুক্ত ড্রায়ার এ দুই ধরনের চুলের জন্যই ভালো। স্ট্রেইটনার কেনার সময় এমনটা বেছে নিতে হবে, যা শুষ্ক না করেই চুল সোজা করবে। দেবে উজ্জ্বল মসৃণ চুল। সিলিকন স্পিড স্ট্রাইপ দেওয়া স্ট্রেইটনার এ ক্ষেত্রে দারুণ কার্যকর। ৪০০ ডিগ্রি পর্যন্ত অ্যাডজাস্টেবল টেম্পারেচারে। স্ট্রেইটনার বেছে নেওয়া যেতে পারে। এগুলো কার্লি এবং টেক্সচারড চুলকে সোজা করে দেয় অনায়াসে।
তাই বুঝে, শুনে, পরামর্শ নিয়ে তবেই কিনুন এসব স্টাইলার। হ্যাপি হিট স্টাইলিং!
i জাহেরা শিরীন
মডেল: মাহি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন