ফিচার I Heat এ বিপরীত
ত্বকবান্ধব উপাদান। কিন্তু বিশেষ বিরোধ রয়েছে সূর্যের সঙ্গে। তাই এসপিএফ বাদে বেরোলেই বিপদ
কম বা বেশি- রোদে যতটুকু সময় কাটানো হোক না কেন, সুরক্ষা প্রয়োজন সবার আগে। আর এ ক্ষেত্রে সেরা সমাধান সানস্ক্রিন ক্রিম। শুধু রোদে পুড়ে যাওয়া থেকে নয়, একই সঙ্গে দাগছোপ, বলিরেখা এমনকি ক্যানসার থেকে সুরক্ষায় সহায়ক এটি। ত্বকবান্ধব তো বটেই, ব্যবহৃত অন্যান্য উপাদানের সঙ্গেও রয়েছে এর সখ্য। গবেষণায় জানা গেছে, ত্বকচর্চার এমন অনেক উপাদান আছে, যেগুলোর বিরূপ বিক্রিয়া ঘটে সূর্যের সংস্পর্শে। সেগুলোর কার্যকারিতা বজায় রাখতে এসপিএফ বিকল্পহীন। জানা থাকা চাই এসব উপাদানের খুঁটিনাটিও।
রেটিনয়েড
হালের ত্বকচর্চায় দারুণ জনপ্রিয় এই উপাদান। ওটিসি আর প্রেসক্রাইবড রেটিনল অ্যাসিড- দুটোই। এটি মূলত ত্বকের কোষ উৎপাদনের হারকে ত্বরান্বিত করে। বাড়ায় কোলাজেন ও ইলাস্টিন উৎপাদনের মাত্রা। এ ছাড়া রেটিনল ত্বকের লোমকূপ শোধনে সাহায্য করে। সারায় হাইপারপিগমেন্টেশন আর বলিরেখা। ত্বকের টোন ও টেক্সচারের উন্নতিতেও দারুণ কার্যকর রেটিনল। ব্রণ ও অ্যাকনের হাত থেকে বাঁচায় এটি। তবে জ্বালা একটাই- জাদুকরি এই উপাদান সূর্যালোকের সংস্পর্শে ক্ষতিকর বিক্রিয়া ঘটায়। কারণ, সূর্যের আলো রেটিনলকে ভেঙে ফেলে। ফলাফল- কার্যকারিতা হারায় এটি। আর দিনের বেলা এর ব্যবহার ত্বককে স্পর্শকাতর করে তোলে। তাই রাতই রেটিনল প্রয়োগের সেরা সময়। নিয়মিত ব্যবহারের মধ্যে থাকলে এসপিএফ মাখতে হবে অবশ্যই।
ভিটামিন সি
ফ্রি র্যাডিকেল থেকে ত্বককে বাঁচাতে এর বিকল্প নেই। সঙ্গে বয়সের রাশ টেনে ধরে। দারুণ সব অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ এই উপাদান ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। কমায় দাগছোপ। তবে সমস্যা এর উদ্বায়ী স্বভাব। ফলাফল, ত্বকে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙতে শুরু করে ভিটামিন সি। উবে যায় নিমেষেই। আর এই অবস্থায় সমাধান একটাই- এসপিএফ। ঘরে-বাইরে, রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে কিংবা মেঘলা মন্থর সকালে ভিটামিন সি মাখলে ত্বকে সানস্ক্রিনের সুরক্ষা থাকবে অনেকক্ষণ।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড
এটি একধরনের বেটা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড, যা মূলত অ্যাকনেপ্রবণ ত্বকে ব্যবহারের উপযোগী। স্যালিসাইলিক অ্যাসিড ত্বকের একদম উপরিস্তর এক্সফোলিয়েট করে লোমকূপ রাখে পরিশোধিত। তবে এর এক্সফোলিয়েটিং প্রোপার্টি ত্বককে স্পর্শকাতর করে তোলে। তাই দিনের বদলে রাতে ব্যবহারের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। যদি এটি সকালে ব্যবহার করতেই হয়, সে ক্ষেত্রে নিদেনপক্ষে এসপিএফ ৩০ ব্যবহার করতে হবে সুরক্ষার জন্য। ক্লিনজার, স্পট ট্রিটমেন্ট অথবা ক্রিম- সব ফর্মুলায় ব্যবহার উপযোগী এই অ্যাসিড মেখে সুরক্ষা ছাড়া রোদে গেলেই টের পাওয়া যাবে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া। ত্বকের জ্বলুনি বাড়বে, বাড়বে হাইপারপিগমেন্টেশন। অকালেই বুড়িয়ে যেতে শুরু করবে ত্বক। তাই সতর্কতা জরুরি।
বেনজয়েল পার অক্সাইড
ব্রণপ্রবণ ত্বকে স্যালিসাইলিক অ্যাসিডের পরেই এর জনপ্রিয়তা। অ্যাকনে যাদের অনেক দিনের সমস্যা, সঙ্গে হোয়াইট হেড আর ব্ল্যাকহেডও রয়েছে, তাদের জন্য বেনজয়েল পার অক্সাইডের বিকল্প হয় না। কিন্তু এটা ত্বককে ফটোসেনসিটিভ করে তোলে। তাই ভালো হয়, যদি রাতে ব্যবহার করা যায়। আর তা নিয়মিত হলে দিনের বেলাতেও মাখতে হবে সানস্ক্রিন। ত্বককে সুরক্ষিত করতে হবে সূর্যালোক থেকে।
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড
এক্সফোলিয়েটর হিসেবে দারুণ জনপ্রিয় এই আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড। যার মূল কাজ ত্বকের দাগছোপ দূর করে ত্বকে গ্লাইকোলিক গ্লো তৈরি অর্থাৎ উজ্জ্বলতা বাড়ানো। বিভিন্ন ধরনের হাইএন্ড ফেশিয়াল ছাড়াও প্রফেশনাল পিলে ব্যবহৃত হয় এই অ্যাসিড। তবে ব্যবহারে সাবধানতা জরুরি। কারণ, এটি সূর্যের সংস্পর্শে এসে ত্বকে ক্ষতিকর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তাই সমুদ্রতীরে কিংবা যেকোনো রৌদ্রোজ্জ্বল জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার আগে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড আছে এমন ট্রিটমেন্টগুলো করাতে বারণ করেন বিশেষজ্ঞরা। দিনেও এর ব্যবহার এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আর যদি নিয়মিত ত্বকচর্চার তালিকায় এই অ্যাসিডের নাম থাকে, সে ক্ষেত্রে সানস্ক্রিন ক্রিমের ব্যবহার মাস্ট। অন্তত দুই ঘণ্টা অন্তর প্রয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে সূর্য থেকে সুরক্ষা।
লেজার ট্রিটমেন্ট
এটি ত্বকচর্চার উপাদান নয়, কৌশল। বেশ আগে থেকেই জনপ্রিয়। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত ত্বকের সবচেয়ে উপরের স্তর অপসারিত হয়। ফলে বেরিয়ে আসে একদম নতুন ত্বককোষ, যা খুবই স্পর্শকাতর। আর ত্বকের এই অংশ সূর্যালোকের সংস্পর্শে এলে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জ্বালাপোড়া তো বাড়েই, স্থায়ী দাগছোপও তৈরি হয় এর ফলে। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বাইরে ঘুরতে যাওয়ার আগেকার দিনগুলোতে কোনোভাবেই লেজার ট্রিটমেন্ট করানো যাবে না। কারণ, এ সময় ত্বক সূর্যের সংস্পর্শে আসার সুযোগ বাড়ে বহুগুণ। তাই বাড়ে ক্ষতির আশঙ্কাও। লেজার ট্রিটমেন্টের পর সব সময় সুরক্ষিত রাখতে হবে ত্বক। নিয়মিত এসপিএফ মাখতে হবে সূর্য থেকে বাঁচার জন্য।
জাহেরা শিরীন
মডেল: জুঁই
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন