ফিচার I হলুদলীন
গায়েহলুদের মঞ্চে মুখত্বকে যেন ঝড় বয়ে যায়। সেই চিহ্ন ফুটে উঠবেই। সামলাতে হবে তা-ও
গায়েহলুদ মানেই দীর্ঘক্ষণ স্টেজে বসে থাকা বর-কনের গালে, মুখে কিংবা কপালে প্রিয় মানুষদের আদর আর আশীর্বাদে হলুদ ছোঁয়ানোর আয়োজন। তবে এটিই ত্বকের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ বয়ে আনতে পারে। এরপরই যখন বিয়ের অনুষ্ঠান, তখন ত্বকের এই দাগ ওঠানো নিয়ে অনেকেই পড়েন ঝামেলায়। এই ঝক্কি এড়াতে আগে থেকেই কিছু সাবধানতা দরকার।
হলুদের সঙ্গে পানি নয়: মুখে লাগানোর আগে পাতলা করার জন্য হলুদে কখনোই পানি মেশানো ঠিক নয়। বরং মধু বা দুধ মেশানো যেতে পারে। সেটি মুখে দাগ হওয়া থেকে বাঁচাবে।
মাখতে হবে তেল হাত-পায়ে: অনুষ্ঠান শুরুর কিছুক্ষণ আগে মুখে, এক পরত নারকেল বা জলপাইয়ের তেল মাখিয়ে নিতে হবে। এতে হলুদ সরাসরি ত্বকে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারবে না।
বাদ যাবে না নখ: অনুষ্ঠানের পর দেখা গেল, নখের আনাচে-কানাচে হলুদ লেগে আছে। বিব্রতকর, তাই না? এই ঝামেলা এড়াতে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই হাত ও নখের চারপাশে ভালো করে ভেসলিন মেখে নিতে হবে।
বিকল্প চন্দন: হলুদবাটার পরিবর্তে চন্দনবাটা ব্যবহৃত হতে পারে। তবে এতে খানিকটা হলুদবাটা মিশিয়ে নেওয়া ভালো। আসবে হলুদের আভা। এতে করে ত্বকে হলুদের দাগ লেগে থাকার আশঙ্কাও অনেকখানি কমে যাবে।
এতে সাবধানতার পরেও যদি হলুদের দাগ মুখে আর নখে লেগেই যায়, তা থেকে রেহাই পেতে উপায় ও উপাদানগুলো তুলে ধরা হলো হবু বর-কনের জন্য-
লেবু ও চিনির স্ক্রাব: অনেকেরই ধারণা, হাতে মেহেদির ওপর লেবুর রস ও চিনির শিরা ছড়িয়ে দিলে মেহেদির রং গাঢ় হয়। তেমনি একই উপাদান দিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে মুখে লাগালে সেটি হলুদের ছোপ ছোপ দাগ হালকা করতে সাহায্য করে। এটি মুখে মাখিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। হাত ও পায়ের হলুদের দাগ দূর করতেও এই স্ক্রাব কাজে দেবে।
তেলের তেলেসমাতি: মুখে হলুদ লেগে থাকলে বা হলুদের দাগ থাকলে সেটি সরাসরি পানি দিয়ে ধোয়া যাবে না। একটি কটন বল কুসুম গরম অলিভ অয়েল অথবা নারকেল তেলে ডুবিয়ে মুখের যেখানে দাগ সেখানে ঘষতে হবে। এরপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেললেই নিখুঁত দেখাবে ত্বক।
দুধে ধোয়া ত্বক: তেলে অনেকের অ্যালার্জি বা র্যাশের সমস্যা হতে পারে, সে ক্ষেত্রে ভালো বিকল্প দুধ। দুধে ভেজা কটন বল মুখে ঘষতে হবে। এরপর ক্লিনজার বা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিলেই চলবে।
অ্যাপল সিডার ভিনিগার: হলুদের দাগ দূর করতে সমপরিমাণ পানি ও অ্যাপল সিডার ভিনিগারের মিশ্রণ কাজ করে জাদুর মতো। তবে এলার্জির আশঙ্কা থাকলে এ দাওয়াই এড়িয়ে চলাই ভালো।
মধু ও লেবুর মাস্ক: মধু ও লেবুর রস দিয়ে তৈরি মাস্ক হতে পারে হলুদের দাগ দূর করার সবচেয়ে কার্যকর উপায়। মধু ত্বকের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখে আর লেবু দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
বেকিং সোডা: এই উপাদানের রয়েছে ব্লিচ করার ক্ষমতা। পানির মধ্যে কিছুটা বেকিং সোডা মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে হলুদের দাগের ওপর মাখাতে হবে। পানি আর ফেসওয়াশ দিয়ে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলতে হবে। নখে লাগা হলুদের দাগ দূর করতেও এই কৌশল কার্যকর। তবে ত্বক সংবেদনশীল বা শুষ্ক হলে বেকিং সোডা ব্যবহার না করাই ভালো।
মেকআপ রিমুভার: কেবল কড়া লিপস্টিক কিংবা কাজল না, ত্বক থেকে হলুদের দাগ মুছতেও ভালো মানের মেকআপ রিমুভার ব্যবহার করা যেতে পারে।
শেভিং ক্রিম বা ফোম: এতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড থাকে, যেটা ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। যেখানে হলুদের দাগ দেখা যাচ্ছে, সেখানে শেভিং ফোম অথবা ক্রিম মাখিয়ে অপেক্ষা করতে হবে কিছুক্ষণ। তারপর কটন বল দিয়ে মুছতে হবে। ২-৩ বার। এরপর সাবান দিয়ে ধুয়ে ময়শ্চারাইজার লাগাতে হবে ত্বকে। কোমল ভাব বজায় রাখতে।
হাইড্রোজেন পার অক্সাইড: এটি বিশেষভাবে নখে লাগা হলুদের দাগের জন্য প্রযোজ্য। এ ক্ষেত্রে ৩% হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ পানিতে মেশাতে হবে। তাতে কটন বল ভিজিয়ে নখ ও আঙুলের চারপাশে লেগে থাকা হলুদের দাগে ঘষতে হবে।
সুরবি প্রত্যয়ী
মডেল: মাহি
ওয়্যারড্রোব: আনজারা
জুয়েলারি: ফ্লাওয়ার ব্লুমস্
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন