বিউটি সার্ভিস I পার্ল ফেশিয়াল
চীনা চিকিৎসায় মুক্তার ব্যবহার প্রথম ঘটেছিল। হাজার বছর আগে। ডিটক্সিফায়িং প্রোপার্টি থাকায় এর খুব কদর ছিল সে সময়ের রূপসচেতন নারীদের মধ্যে। এ ছাড়া ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যা সারিয়ে তুলতে সক্ষম এ রত্ন প্রশান্তিদায়কও ছিল বটে। আয়ুর্বেদে বেশ জনপ্রিয় ছিল মুক্তা। দেহের যেকোনো দূষিত পদার্থের প্রতিরোধক হিসেবে বহুল ব্যবহৃত। তাই আয়ুর্বেদিক রূপচর্চাতেও এর কদর বাড়ে। অতীতের পথ ধরে আধুনিক রূপচর্চাতেও এখন মুক্তার ব্যবহার অহরহ। আর হবে নাই-বা কেন, মুক্তার গুণ তো অগুনতি। এতে রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়ামসহ প্রায় ত্রিশ ধরনের মিনারেল, যেগুলো ত্বকের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক। এতে আরও মিলবে উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম; যা ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করার গতি ত্বরান্বিত করে। জোগায় জরুরি আর্দ্রতা। নতুন ত্বককোষ উৎপাদনের চাকা সচল রাখে। আয়ত্তে রাখে সিবাম নিঃসরণের মাত্রা। সুপারঅক্সাইড ডিসমিউটেজ আর গ্লুটাথিওনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভরপুর জোগান দিতে সক্ষম মুক্তা, যা ত্বকের তারুণ্য ধরে রাখে দীর্ঘ সময়। তাই তো এ থেকে তৈরি হচ্ছে হরেক রকম ক্রিম, সিরামসহ ত্বকচর্চার অত্যাধুনিক সব সামগ্রী। বিউটি সার্ভিসেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এর ব্যবহার। সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে উদ্ভাবিত হচ্ছে নিত্যনতুন সব সেবা। সেসবের একটি পার্ল ফেশিয়াল। ত্বককে দাগছোপমুক্ত, নিখুঁত করে তুলতে এটি জুড়িহীন। চটজলদি উজ্জ্বল, সতেজতা যোগ করতেও চমৎকার। যাদের ত্বকে বিবর্ণতার ছাপ, তাদের জন্য এ ফেশিয়াল সেরা সমাধান। ক্লান্তি দূর করে, যোগ করে প্রাণময়তা। অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় অ্যাকনে আর ব্রণ সারাতেও দারুণ উপযোগী এ ফেশিয়াল। সঙ্গে বাঁচায় ফ্রি র্যাডিকেলের হাত থেকে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বককোষের সারাই হয় দ্রুত। রোদে পোড়া দাগ থেকে থাকে সুরক্ষিত। ফেশিয়ালটি শুরু হয় ম্যাসাজ দিয়ে। মুখ, মাথাসহ শরীরের উপরের অংশে রিলাক্সিং এ ম্যাসাজের মূল কাজ ক্লান্তি দূর করা। এতে ফেশিয়ালের জন্য প্রস্তুতও হয় ত্বক। শুরুতেই পরিষ্কার করে নেওয়া হয় পুরো মুখ আর গলা। ক্লিনজার দিয়ে মিনিট পাঁচেক ম্যাসাজের মাধ্যমে। এরপরের ধাপ এক্সফোলিয়েশন। কফি ফ্লেবারড স্ক্রাব ব্যবহার করা হয় এ ক্ষেত্রে। এটি রক্তসঞ্চালন বাড়ায়, মৃতকোষ দূর করে, সারায় দাগছোপ। কফিতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের টক্সিন দূর করতে সক্ষম। ক্লিনজিং আর স্ক্রাবিংয়ের পরপরই ব্ল্যাক হেডস রিমুভিংয়ের মাধ্যমে পরবর্তী ধাপগুলোর জন্য প্রস্তুত হয় ত্বক। পরিষ্কার তো হবেই। সেই সুযোগ, যাতে পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবহৃত অন্যান্য স্কিনকেয়ার প্রডাক্ট সহজেই প্রবেশ করে ত্বকের গভীরে। তারপর মুখে মাখানো হয় ফেশিয়ালটির জন্য বিশেষভাবে তৈরি ম্যাসাজ ক্রিম। তারপর চলে ম্যাসাজ। তবে হাতে নয়, এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় অত্যাধুনিক গ্যালভানিক মেশিন, যা ত্বকের ডার্মিস লেভেলে ম্যাসাজ ক্রিমের উপকারী উপাদানগুলো পৌঁছে দিতে সক্ষম। সঙ্গে ত্বককোষগুলোও উদ্দীপ্ত হয় এই মেশিনের বদৌলতে। বাড়ে রক্তসঞ্চালন। ফলে ত্বকে সৃষ্টি হয় তারুণ্যোজ্জ্বল আভা। এ ছাড়া লোমকূপগুলো সঠিকভাবে পরিশোধিত হয়, চেহারায় টান টান ভাব আসে। দূর হয় টক্সিন। তারপর দেওয়া হয় মাস্ক। পার্ল ফেশিয়ালে দুই ধরনের মাস্ক ব্যবহার করা হয়। প্রথমে পার্ল মাস্ক, যা ত্বকে মাখিয়ে রাখা হয় পনেরো মিনিটের জন্য। তারপর মাখানো হয় গ্রিন মাস্ক। তা-ও পনেরো মিনিটের জন্য। সবশেষে টোনার মাখিয়ে শেষ করা হয় ফেশিয়াল। ২৩০০ টাকা খরচ হতে পারে এটি করতে। বোনাস হিসেবে ক্লায়েন্টদের জন্য থাকছে হাত-পা আর ব্যাক স্ক্রাবিংয়ের সুযোগ। সব ধরনের ত্বকের উপযোগী এ ফেশিয়ালে সময় লাগবে ঘণ্টা দেড়েক।
জাহেরা শিরীন
মডেল: নাজ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন