ফিচার I দ্বিচক্রের রূপসীরা
নারী বাইকারদের ত্বক ও চুল সুস্থ রাখার বিভিন্ন উপায় এবং দাওয়াই। কেননা একদিকে ধুলা ময়লা আর দূষিত বাতাসের উপদ্রব, অন্যদিকে হেলমেটের ভেতরকার বাড়তি উত্তাপ
ঢাকার রাস্তায় নারী স্কুটারচালক বা বাইকারদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। রাইড শেয়ারিং অ্যাপগুলোর বদৌলতে এখন অনেক নারী বাইকে লিফটও নিচ্ছেন নিয়মিত। কারণ, এ শহরে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে যানবাহন আর যানজট; নাগরিক ব্যস্ততা তো রয়েছেই। এসব সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে আজকের নারীর দৈনন্দিন জীবনে চলাফেরায় একটা স্কুটার বা বাইক অনেকটা সময় বাঁচায়, এনে দেয় স্বস্তি।
তবে এর কিছু ঝক্কিও রয়েছে। রাস্তায় বের হলে কিংবা বেশি সময় রাস্তায় থাকলে ধুলাবালি এবং দূষিত হাওয়া ত্বক ও চুলের ক্ষতি করে। স্কুটার বা বাইক চালানোর সময় সেটি হয় দ্বিগুণ। কারণ, দূষিত বাতাস আর ধুলো ময়লা তখন সরাসরি মুখে এসে লাগে। দূষিত এই নগরে স্কুটার চালানো সত্ত্বেও কী করে ত্বক আর চুল নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচানো যায়?
ত্বকের যত্নে
এক্সফোলিয়েন্টের ব্যবহার কমিয়ে আনা দরকার। যদিও ত্বকের যত্নে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড সিরাম বা ফেসিয়াল স্ক্রাবের মতো উপাদানগুলো প্রায়ই ব্যবহার করা হয়। যারা নিয়মিত বাইক চালান, তাদের জন্য এটি তেমন উপকারী নয়। কারণ, এ সময় এটি সূর্যের তাপে ত্বক পোড়ানোতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বাইক চালানোর সময় মুখে বাতাসটা এমনভাবে লাগে, যাতে মনে হতেই পারে ত্বক পুড়ছে না। বিষয়টা একদমই উল্টো। ঠিক সূর্যের নিচে দাঁড়ালে যেমন করে ত্বক পুড়ত, ঠিক তেমনটাই পোড়ে। তাই প্রতি দুই ঘণ্টায় সানস্ক্রিন লাগানো বিশেষভাবে জরুরি। নজর দিতে হবে গলা আর কানের দিকেও। ত্বকে সানস্ক্রিন বা সিরাম—যা-ই ব্যবহার করা হোক না কেন, সেটি মুখের সঙ্গে গলা ও কানে লাগাতে হবে। কারণ, শুধু মুখ নয়, ত্বকের অনেকখানিই সূর্যের তাপে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাইক চালানোর সময়। ঠোঁটে নিয়মিত লিপ বাম লাগানোটাও দরকার।
বাইক চালানোর সময় ডার্ক-টিন্টেড এবং বড় গ্লাসের সানগ্লাস বা গগলস পরার অভ্যাস জরুরি। এতে মুখ ও চোখের বড় একটা অংশ ঢাকা থাকবে এবং রিংকেল পড়া থেকে চোখকে বাঁচানো যাবে। অবশ্যই আরামদায়ক ও হালকা পোশাক পরা উচিত এবং একই সঙ্গে এমন ম্যাটেরিয়ালের কিছু, যা সূর্যের তাপ থেকে ত্বককে রক্ষা করবে পুরো সময়। বাইকে উইন্ডশিল্ড লাগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। রাস্তার ধুলাবালি, ইট-পাথর, পোকামাকড়—এ সবকিছু ত্বকের সংস্পর্শ থেকে রক্ষা করবে এই উইন্ডশিল্ড। বাইকের সামনে এটি লাগিয়ে নিলে অনেকখানিই নিরাপদ এবং সুরক্ষিত থাকা যাবে। বাইক চালিয়ে কোথাও যাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গেই মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে। এ ক্ষেত্রে লো-ফোমিং, সালফেটবিহীন কোনো ক্লিনজিং জেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
যদি দূরে কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে, তাহলে সে জায়গার আবহাওয়ার বিষয়ে আগেই খোঁজখবর নেওয়া জরুরি। সে অনুযায়ী ত্বক ও চুলের যত্নে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে।
চুলের যত্নে
বাইকে হেলমেট ব্যবহার বাধ্যতামূলক। মাথার নিরাপত্তার জন্যও তা জরুরি। বাইকারদের হেলমেটের ভেতরটা উষ্ণ থাকে বলে মাথার ত্বক থেকে ঘাম নিঃসৃত হয়। তা চুলের সঙ্গে মিশে যায়। তেল চিটচিটে ভাব দেখা দেয়। একে তো বাইক নিয়ে চলাফেরা, তার ওপর ঘাম ও ধুলার প্রকোপ। আছে রোদ-বৃষ্টির উপদ্রব। সব মিলিয়ে চুলে দ্রুত ময়লা আটকে যায়। দেখা দেয় খুশকি। এ জন্য অন্যদের চেয়ে বাইকারদের চুলের যত্ন নিতে হবে বিশেষভাবে। এ ক্ষেত্রে চুল সুস্থ ও সুন্দর রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় মাথা পরিচ্ছন্ন রাখা।
বাইক চালানোর সময় কেউ চুল বাঁধেন, কেউ বাঁধেন না। এটা করা যাবে না। লম্বা চুল ক্লিপ কিংবা ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে হেলমেট পরতে হবে। স্কার্ফও ব্যবহার করা যেতে পারে। চুল খোলা রাখলে তাতে ধুলাবালি বেশি জমে। তবে খুব শক্তভাবে চুল বাঁধা যাবে না। তাহলে রক্তসঞ্চালনে অসুবিধা হতে পারে।
বাইক চালানো শেষে সঙ্গে সঙ্গে হেলমেট খুলে ফেলতে হবে। চুল ঘেমে গেলে বাতাসে শুকানো দরকার। তারপর ভালো করে শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। মনে রাখা জরুরি, ঘামে বা পানিতে ভেজা চুলে হেলমেট পরা যাবে না। এতে কেবল চুলের নয়, মাথার ত্বকেরও ক্ষতি হয়। বাইকারদের প্রতিদিনই শ্যাম্পু করা উচিত। অনেকে ভাবেন, এতে চুল রুক্ষ হয়ে পড়ে, যা ঠিক নয়। হেলমেট পরিষ্কার রাখাটাও জরুরি। ব্যবহারের আগে ভেতরে একটা পরিষ্কার সুতি কাপড় রেখে নেওয়া যায়। যখন ব্যবহৃত হবে না, তখন একটি পরিচ্ছন্ন এবং বাতাস চলাচল করে এমন জায়গায় হেলমেটটি সংরক্ষণ করতে হবে। চুলের ব্যান্ড বা স্কার্ফের মত একজনের হেলমেট অন্যের ব্যবহার করা ঠিক নয়। অন্যথায় মাথার ত্বকে সংক্রমণ হতে পারে।
বাইকারদের চুলের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চুলে নিয়মিত পুষ্টির জোগান দিতে হবে। নিয়মিত অয়েল ম্যাসাজ নেওয়া যেতে পারে। নারকেল, আমলা, আমন্ড, অলিভ, ক্যাস্টর—যেকোনো তেল গরম করে ব্যবহার করা যায়।
প্যাক ১: মাসে দু-তিনবার চুলের যত্নে যেকোনো একটি ঘরোয়া প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে। পাকা কলার সঙ্গে টক দই আর লেবুর রস মিশিয়ে ভালো করে চটকে নিতে হবে। প্যাকটি চুলে আধা ঘণ্টা লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলতে হবে।
প্যাক ২: একটি কাচের পাত্রে এক টেবিল চামচ মধু ও চার টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা রেখে দিতে হবে। মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় পাঁচ-দশ মিনিট ম্যাসাজ করে ২০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিতে হবে।
প্যাক ৩: এক টেবিল চামচ টক দইয়ের সঙ্গে দুই টেবিল চামচ অ্যালোভেরার রস মিশিয়ে মাথার তালুতে লাগাতে হবে। ২০ মিনিট পর ধুয়ে নিতে হবে। যারা নিয়মিত হেলমেট পারেন, সপ্তাহে অন্তত এক দিন এই প্যাক তাদের জন্য জরুরি।
সুরবি প্রত্যয়ী
মডেল: তৃণ
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন