ফিচার I পথের ক্লান্তি ভুলে
‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা’— মুড অন? সঙ্গী হোক প্রতিদিনকার ব্যবহার্য ত্বকচর্চার পণ্যগুলো। তবে ত্বক মেনে, প্রয়োজন বুঝে
কক্সবাজার না কুয়াকাটা? নাকি চেনা ছক, চেনা গন্ডি, চারপাশের একঘেয়ে চেনা জগৎ ছেড়ে বিদেশ-বিভুঁইয়ে? বেড়াতে যাবার পরিকল্পনা যেখানেই থাকুক না কেন, প্যাকিং অত্যাবশ্যক। পোশাক আর প্রয়োজনীয় অ্যাকসেসরিজের ভিড়ে ব্যাগপ্যাকের এক কোণে পুরে নেওয়া চাই ত্বকচর্চার প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোও। ব্রণ, অনুজ্জ্বলতা আর দাগছোপ এড়িয়ে সব সময় পিকচার পারফেক্ট থাকার জন্য। তাই বলে ব্যাগ ভর্তি করে নেবার দরকার নেই। শর্ট লিস্ট করে নেওয়া যেতে পারে। ত্বকের ধরন বুঝে। ক্লিনজিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিং আর মাস্কিংয়ের মতো চারটি মৌলিক সৌন্দর্যচর্চা সেরে নেওয়ার জন্য। ট্রাভেল সাইজ বোতল আর কৌটায় পুরে।
শুষ্কতায় সহায়ক
চামড়া ওঠা, বিবর্ণতা, লালচে আর খসখসে ভাব— এগুলোই এ ধরনের ত্বকের সাধারণ সমস্যা। তাই ট্রাভেল কিট প্রস্তুত করার সময় প্রথমেই তাতে রাখতে হবে একটি জেন্টল ক্লিনজার অথবা এক্সফোলিয়েটর; যা কোমলভাবে ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে ধুলা-ময়লা, দূষণ দূর করে, ব্ল্যাকহেডস আর হোয়াইটহেডস থেকেও বাঁচাবে। এক্সফোলিয়েটরের জেন্টল এক্সফোলিয়েশন অ্যাকশন ত্বককে রক্ষা করবে বিবর্ণতা থেকে। স্কিন টেক্সচারকে আরও টেকসই করে বজায় রাখবে কোমলতা। শুষ্ক ত্বকের যত্নে ওটমিল, দইয়ের মতো প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি স্ক্রাব বেছে নেওয়া গেলে সবচেয়ে ভালো। টোনারের একটা বোতলও রাখা চাই ট্রাভেল কিটে। যেখান থেকে মিলবে জরুরি আর্দ্রতার জোগান। অ্যালকোহল ফ্রি পিউরিফায়িং টোনার এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো অপশন। যা লোমকূপগুলো বন্ধ করে দেবে না; বরং পরিশোধন করবে ভেতর থেকে। সুদিং এজেন্ট থাকলে তো আরও ভালো। অতিরিক্ত সেবাম নিঃসরণের হার নিয়ন্ত্রণে রাখবে এটি। রাখবে সতেজ। ট্রাভেল কিটে অবশ্যই রাখা চাই একটি ডে ক্রিম। শুষ্ক ত্বক সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে এমন উপাদান আর ভিটামিন মিশ্রিত থাকে যেন ক্রিমটিতে। আর শিট মাস্ক তো মাস্ট হ্যাভ আইটেম। হায়ালুরনিক এসিডে সমৃদ্ধগুলো শুষ্কতা সারাইয়ের সেরা অপশন; যা ত্বকে পুষ্টি জোগাবে, স্বস্তিতে রাখবে।
তৈলাক্ততা অথবা ব্রণ রোধে
ঘুরতে গিয়ে ত্বকের তেলের খনি কিছুক্ষণ পরপর সক্রিয় হয়ে উঠছে? বা উঁকি দিতে শুরু করেছে নতুন ব্রণ? পুরো ব্যাপারটাই খুব বিরক্তিকর। এ ধরনের ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো সমাধান থ্রি ইন ওয়ান ফোমিং ক্লিনজার। কারণ, সমস্যা তো একটা নয়। এ ক্ষেত্রে এই একটি পণ্য দিয়েই নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে তেলে ভাব, ব্রণের আশঙ্কা। ত্বক থাকবে ম্যাট এবং মসৃণ। নিম অথবা অ্যালোভেরা যুক্ত ক্লিনজার এ ক্ষেত্রে জুতসই অপশন তৈলাক্ত ব্রণযুক্ত ত্বকের জন্য। ট্রাভেল কিটে রাখা চাই উপযোগী টোনারও। এ ধরনের ত্বকে ম্যাটিফায়িং, অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদানই বেশি জুতসই। যাতে থাকবে ল্যাভেন্ডার, টি ট্রি, অরেঞ্জ ফ্লাওয়ার আর উইচ হ্যাজেলের মতো উপাদানগুলো। সবই লোমকূপ বিশোধিত করে। ত্বক টান টান রাখতেও সহায়ক। ফলে ব্রণের সংক্রমণ রোধ করা যায় অনেকাংশে। কিটে রাখতে হবে ময়শ্চারাইজারও। অনেকেরই ধারণা, তৈলাক্ত ত্বক তো এমনিতেই আর্দ্রতায় পরিপূর্ণ, তার জন্য আবার বাড়তি ময়শ্চারাইজেশন বৃথাই যাবে। কিন্তু এ ধরনের ত্বকেরও প্রয়োজন আছে আর্দ্রতার। অয়েল ফ্রি ময়শ্চারাইজার সবচেয়ে জুতসই। জেল বেসড হলে আরও ভালো। সহজেই শুষে নেবে ত্বক। চিপচিপে অনুভূত হবে না, ত্বকেও একদম ভারী ভাব তৈরি করবে না। তৈলাক্ত ত্বকের উপযোগী সব অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ ময়শ্চারাইজার সুরক্ষিত রাখার সঙ্গে ত্বক স্বাস্থ্যোজ্জ্বল রাখতেও কার্যকর।
মিশ্রতাকে মানাতে
গাল শুষ্ক অথবা স্বাভাবিক, অন্যদিকে টি জোন আবার তেলতেলে, বুঝতে হবে ত্বক মিশ্র। আজকালকার দিনে এমন ত্বকই সাধারণ। যার প্রয়োজন পড়ে বিশেষ দেখভালের। আর্দ্রতার ভারসাম্য ঠিকঠাক রাখার জন্য। এ ধরনের ত্বকে এমন ক্লিনজার চাই, যা কোমল কিন্তু কার্যকর। ডিপ ক্লিন ফোমিং ফর্মুলারগুলো এ ক্ষেত্রে বেশি ত্বকবান্ধব। যা লোমকূপ পরিষ্কার রাখবে, তৈলাক্ত অংশগুলো বেশি শুষ্ক না করে ম্যাটিফায়িং এফেক্ট দেবে। টোনারও রাখতে হবে ট্রাভেল কিটে। তবে তা যেন হয় অ্যালকোহল ফ্রি। এতে মিশ্র ত্বকের শুষ্ক অংশগুলো স্বস্তিতে থাকতে পারে। আর তেলে অংশের তৈলাক্ত ভাব কেটে যায়। মিশ্র ত্বকে সুরক্ষা খুব জরুরি। অয়েল ফ্রি সানব্লক পুরে নেওয়া যেতে পারে ব্যাগে। রোদ থেকে সার্বক্ষণিক সুরক্ষায়। আর চটজলদি ত্বকের তৈলাক্ত অংশের চকচকে ভাব ঢাকতে সঙ্গে থাকতে পারে পোর ক্লিনজিং ওয়াইপ। অ্যাভোকাডো অথবা জোজোবার নির্যাসে তৈরি। যেগুলো লোমকূপের গভীর থেকে দূষণ দূর করতে সক্ষম।
স্বাভাবিকতায় সুন্দর
এ ধরনের ত্বক এমনিতেই সর্বেসর্বা। শুধু পারিপার্শ্বিক প্রতিকূলতা আর দূষণ থেকে সুরক্ষা দিলেই চলবে। সারা দিনের ধুলা-ময়লা দূর করার জন্য কোমল ক্লিনজারই যথেষ্ট। যা ত্বক পরিষ্কারের পাশাপাশি করে তুলবে কোমল। দেখাবে শিশিরসিক্ত। ময়শ্চারবুস্ট আর সুরক্ষার কাজ নাহয় একসঙ্গেই হলো। ময়শ্চারাইজিং সানস্ক্রিনের বদৌলতে। হালকা ওয়াটারি এসেন্সে তৈরি হলে ভালো হয়, যা নিমেষেই শুষে নেবে ত্বক। নিদেনপক্ষে এসপিএফ ৩০ যুক্ত হওয়া চাই এগুলো। যা দীর্ঘ সময় ধরে ত্বককে সুরক্ষা দেবে সূর্য থেকে। ময়শ্চারাইজার হিসেবে হাইড্রেটিং ফেশিয়াল ওয়াটার থাকতে পারে ট্রাভেল কিটে। আর্দ্রতা জোগাবে, সজীবতা ধরে রাখবে দীর্ঘ সময়। প্ল্যান্ট বেসড ফেস মাস্কের কথা কিন্তু ভোলা যাবে না। এগুলো লোমকূপের গভীরে ঢুকে ত্বক পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি এক্সফোলিয়েট করবে। রাখবে পরিপুষ্ট। সব সময় পিকচার পারফেক্ট দেখাবে।
জাহেরা শিরীন
মডেল: নিকি
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন