রূপসারাই I হুডেড আই
সনাতন থেকে সমকালীন— তন্দ্রাপ্লুত চোখেও সম্ভব সব ধরনের সাজ। দরকার সঠিক কৌশল
শরীরের অন্যান্য অংশের মতোই ব্যক্তিভেদে ভিন্নতা থাকে চোখের আকার-প্রকারে। আমন্ড থেকে ডাউনটার্নড— নামের সঙ্গে পাল্টায় চোখের চরিত্রও। তাই প্রসিদ্ধ সাজ কারিগরদের মত, ধরন বুঝে কাস্টমাইজ করে নেওয়া চাই প্রসাধনীর প্রয়োগ আর পদ্ধতি। নিজের সেরাটা দেখানোর জন্য।
চোখের বিভিন্ন ধরনের মধ্যে হুডেড আই একটি। নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে এর। ফলে একনজরেই আলাদা করে নেওয়া যায়। এ ধরনের চোখে ব্রাও বোন থেকে ল্যাশ লাইনের মাঝের অংশে চামড়ার আধিক্য লক্ষণীয়। যা ভাঁজ হয়ে থাকে। আর তাতেই ঢাকা পড়ে যায় আইলিডের অধিকাংশ। ক্রিজটাও আলাদা করে বোঝা যায় না। তাই ছোট লিডের হুডেড আইতে শ্যাডোর রঙ কিংবা লাইনারের টান— কিছুই ভালোভাবে ফুটে ওঠে না। ফলাফল সাজের আকর্ষণ তৈরির কাজ বেশ কঠিন হয়ে পড়ে। তবে অসম্ভব নয়। জানতে হবে খুঁটিনাটি নিয়ম। সেই মন্ত্র মেনে চললে হুডেড চোখও দেখাবে মায়াময়।
প্রথমেই বুঝে নিতে হবে চোখজোড়া হুডেড কি না। সে ক্ষেত্রে সহজ উপায়, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মনোযোগ দিয়ে দেখা। যদি ব্রাও বোনের নিচ থেকে অতিরিক্ত চামড়ার ভাঁজে ক্রিজ আড়াল হয়ে যায় আর আইলিডটাও দৃশ্যমান না হয়, বুঝতে হবে চোখজোড়া হুডেড। অনেকে জন্মগতভাবে এটি পেয়ে থাকে। তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে ত্বক ইলাস্টিসিটি হারালেও এমন হয়ে যেতে পারে চোখ।
এবার হুডেড আই মেকআপের বেসিক রুলগুলো জেনে নেওয়ার পালা।
প্রথমেই প্রাইমার
অন্য যেকোনো ধরনের চোখের চেয়ে হুডেড আইতে প্রাইমার বেশি প্রয়োজন। কারণ, চামড়ার ভাঁজে পড়ে মেকআপ সবচেয়ে বেশি ছড়ায়। আইলিড ছাড়িয়ে আপারলিড অব্দি। তাই প্রাইমার ইজ আ মাস্ট। এতে করে মেকআপ স্থানচ্যুত হবে না। টিকেও থাকবে দীর্ঘ সময়। প্রাইমারের বদলে ফাউন্ডেশন অথবা কনসিলারও ব্যবহৃত হতে পারে পারফেক্ট আইমেকআপ বেজ তৈরিতে।
ম্যাট থেকে মেটালিক
হুডেড চোখের লিডে বেজ হিসেবে ম্যাটই মানানসই। এমনকি ক্রিজ তৈরির কাজটাও এ ফর্মুলার আইশ্যাডোতেই বেশী সহজ। আর লোয়ার লিডে এসবের ছোঁয়ায় বাড়তি গভীরতা যোগ হয় সাজে। সঙ্গে মেটালিকের সমন্বয় করলে আরও গর্জাস দেখায়। সে ক্ষেত্রে মেটালিক আর শিমারি কিছু শেডও থাকা চাই সংগ্রহে। তবে আইবল বরাবর চোখের ওপরের আর নিচের পাতায় মাখতে হবে মেটালিক শ্যাডো। থাকতে হবে হাইলাইটারও। চোখের কোণ আর আইব্রাও বোন হাইলাইট করার জন্য। লাইনার আর মাসকারাও হওয়া চাই ম্যাট ফর্মুলার। হতে হবে স্মাজ প্রুফ এবং শতভাগ পানিরোধী।
খোলা রাখা চাই
হুডেড চোখে মেকআপ করার সময় চোখ অবশ্যই খোলা রাখতে হবে। এতে করে ক্রিজ কোথায় করতে হবে, আইলাইন কত দূর এবং কোন কোণে টানতে হবে কিংবা আইশ্যাডো কতটুকু দৃশ্যমান হবে, এসব বুঝে ফেলা যায়। সে অনুযায়ী মেকআপ সেরে নিতে সহজ হয়। দেখায় পিকচার পারফেক্ট।
ক্রিয়েট ক্রিজ
খোলা অবস্থায় এ ধরনের চোখে ক্রিজ দেখা যায় না। তাই ফেক ক্রিজ তৈরি করে নিতে হবে প্রথমেই। সহজ উপায়, চোখের আসল ভাঁজ থেকে সামান্য ওপরে আইশ্যাডো বুলিয়ে নেয়। স্কিনটোনের চেয়ে সামান্য গাঢ় হওয়া চাই এর শেড। ফ্লাফি এবং ছোট আইশ্যাডো ব্রাশের সাহায্যে ওয়াইডস্ক্রিন ওয়াইপার মোশনে মেখে নিতে হবে। চোখের আসল ভাঁজের আদলে। ব্লেন্ড করতে হবে ভালো করে।
আইশ্যাডো অ্যাপ্লিকেশন
ফেক ক্রিজের নিচ থেকে পুরো লিডে আইশ্যাডোর রঙ মাখানো চাই। আইবল বরাবর মেটালিক শ্যাডোর প্রলেপ এ ক্ষেত্রে দারুণ দেখাবে। তবে তা যেন ক্রিজ ছাড়িয়ে আউটার লিডে না ছড়িয়ে যায়। আর বাইরের কোণে মাখতে হবে সবচেয়ে গাঢ় শেড। সবশেষে পুরোটা পরিষ্কার ব্রাশ দিয়ে আলতো করে ব্লেন্ড করে নিলেই চলবে। চোখের ভেতরের কোণে দিতে হবে হাইলাইটার। অবশ্যই। এই একটা ধাপেই চোখ আরও প্রাণবন্ত দেখাবে।
প্রপার লাইনিং
ধাপটা একটু কঠিন, তবে সঠিকভাবে করা গেলে সাজে চমক আনতে যথেষ্ট। হুডেড চোখে লাইনারের টান হওয়া চাই চিকন এবং সূক্ষ্ম। চোখের স্বাভাবিক ল্যাশ লাইন বরাবর টানতে হবে। সমান্তরালভাবে। এ সময় চোখের বাইরের কোণটা টেনে ধরে রাখা গেলে কাজটা সহজ হয়। বাইরের কোণে লাইন টানতে খানিকটা টেকনিক দরকার। চোখ বড় বড় করে খোলা রেখে বটম থেকে আপার ল্যাশ লাইন অব্দি রেখা টানতে হবে। এতে লিফট আপ লুক আসবে চোখে। চাইলে এই লাইন আরও বাড়ানো যেতে পারে।
ল্যাশ লাভ
হুডেড আইতে মাসকারা মাস্ট। কয়েক কোটের ব্যবহারে চোখ প্রাণবন্ত দেখাবে। আইল্যাশও পরা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে চোখের মাঝের অংশে লম্বা ল্যাশ আর বাইরের কোণের দিকে ছোট ল্যাশ লাগিয়ে হাফ মুন অথবা অর্ধাচন্দ্রাকার করে নেওয়া চাই।
জাহেরা শিরীন
মডেল: মানসী
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: ক্যানভাস