ফিচার I মানায় মেয়েদেরও
জেন্ডার নিউট্রাল ট্রেন্ড। শুধু পোশাকে নয়, সাজেও এর জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। বিশেষত মিলেনিয়ালদের মধ্যে
সম্প্রতি সোশ্যাল ওয়েবসাইট পিনটারেস্টের একটি সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে। সৌন্দর্যবিশ্বে ইতিমধ্যেই আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ জরিপ অনুযায়ী, হাজারের মধ্যে ৬২৫ জন মানুষ চুল কাটার জেন্ডার নিউট্রাল অপশনগুলো খুঁজে বেড়িয়েছেন সাইটটিতে। এ থেকেই স্পষ্ট, জেড জেনারেশনের ছেলেদের মধ্যে জনপ্রিয় হেয়ারস্টাইলগুলোর প্রতি সমানভাবে আগ্রহী হয়ে উঠছে মেয়েরাও। অন্যদিকে লম্বা ঢেউ খেলানো চুল, বেণি বা খোঁপা যে খুব বেশি দিন শুধু মেয়েদের দখলে থাকবে না, তার আভাসও মিলছে। রানওয়ে থেকে রেডকার্পেট—বিশ্বের বড় বড় সব ইভেন্ট থেকে মিলছে এসবের অনুপ্রেরণা। তাই এ যুগে এসে ‘চুল দেখে যায় চেনা’র ছকে আটকে থাকা মানেই স্টাইলিংয়ে পিছিয়ে পড়া। সাজেও জনপ্রিয় জেন্ডার নিউট্রাল ফর্মুলা। মেয়েরা যেমন ঝুঁকছেন পুরুষালি বুশি আইব্রাওয়ের দিকে, তেমনি ছেলেরাও দাগ ছোপ আর খুঁত ঢেকে সুন্দর হয়ে উঠছেন মেকআপের প্রলেপে।
আন্ডার দ্য বাজ
লব, পনিটেইল কিংবা ম্যানবান—মানানসইভাবে করে নিলে ছেলেদের কিন্তু মন্দ দেখায় না। মেয়েলি দেখানোর দ্বিধা এখন অনেকটাই দূর হয়ে গিয়েছে মিলেনিয়ালদের বদৌলতে। পিছিয়ে নেই মেয়েরাও। একদম অস্বস্তি ছাড়াই অনেকেই চুল ছেঁটে নিচ্ছেন বাজ আর আন্ডারকাটে। ছেলেদের মতো করেই। তাতে নারীসুলভ কমনীয়তা কমছে না, বরং ব্যক্তিত্বের বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে সুস্পষ্ট। ঝক্কিহীন এবং সামলানো সহজ। দেখায় দারুণ স্টাইলিশ। সাজে স্টেটমেন্ট সৃষ্টির এ হেয়ারস্টাইলগুলো তাই স্বচ্ছন্দেই বেছে নিচ্ছেন এখনকার ফ্যাশনিস্তারা। বাজ কাটের আগে বিশেষজ্ঞ হেয়ারস্টাইলিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া ভালো। বুঝে নিতে হবে মাথার মূল গঠন। সামনে চুল শুরুর রেখা আর পিছে শেষ হওয়ার রেখাটাও এ ক্ষেত্রে অনুমান করে নেওয়া প্রয়োজন। এতে বাজ কাটে চুল কতটুকু ছোট করে কাটলে ভালো দেখাবে, তা নির্ধারণ করা যায়। আর একদম ছোট করে ছেঁটে ফেলায় চেহারায় কোনো রাখঢাক থাকে না। চুলের ফ্রেমিং দিয়ে ফেশিয়াল ফিচার ডিফাইন করার সুযোগও মেলে না। তাই কোমল চেহারায় বোল্ড লুক চলে আসে। আর শক্ত সমর্থ ফিচারের চেহারায় তা আরও সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। সে জন্য মানসিকভাবেও প্রস্তুতি দরকার। ‘শর্ট হেয়ার ডোন্ট কেয়ার’ লুক চাইলে একদম ছোট করে ছেঁটে নেওয়া বাজ কাট হেয়ারস্টাইল জুতসই। সামান্য বড় রাখতে চাইলে আর্মি ছাঁটও মন্দ দেখাবে না। চুল কাটার পর ক্লিপার আর শেভারের সাহায্যে মাথার পছন্দসই স্থানে করে নেওয়া যেতে পারে ডিজাইনও। অনেকে তো কালার করে নিচ্ছেন। অ্যাশ, পিঙ্ক থেকে ব্লন্ড—বাজ হেয়ারস্টাইলে আর বোল্ড লুক তৈরির জন্য। তবে এত ছোট চুল না চাইলে আন্ডারকাটও বেছে নেওয়া যায়। এই হেয়ারস্টাইলে পুরো চুল নয়, বরং কিছু কিছু স্থানে শেভিং করে বাজ কাট তৈরি করা হয়। বাকি চুল রেখে দেওয়া হয় পছন্দসই দৈর্ঘ্য।ে আন্ডারকাট দিয়েও মাথায় সৃষ্টি করা যায় হরেক রকম ডিজাইন। সাধারণত মাথার দুই পাশে, কান ঘেঁষে আর ঘাড়ের দিককার অংশেই আন্ডারকাট বেশি আকর্ষণীয়। তবে লুকে এত নাটকীয় পরিবর্তন না চাইলে পিক্সি এ ক্ষেত্রে নিরাপদ বিকল্প।
বুশি ব্রাও
২০১০ সালের আগে বিউটি ট্রেন্ড তৈরি হতো ফ্যাশন উইকগুলোর রানওয়ে, বিশ্বের বড় বড় ইভেন্টের রেডকার্পেট আর ম্যাগাজিনের পাতা থেকে। ঠিক দশ বছর পর সে চিত্র পাল্টেছে অনেকখানি। পিনটারেস্ট আর ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল ওয়েবসাইটগুলোর দাপুটে দখলে এখন সৌন্দর্যবিশ্ব। আর এ থেকেই প্রতিবছর মিলে যায় সাজের নিত্যনতুন ধারা ও ধারণা। এখন অব্দি যেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত আইব্রাও। সাইটগুলোর সমীক্ষা অনুযায়ী গেল কয়েক বছর বিগ ব্রাও ছিল ট্রেন্ডের শীর্ষে। অপরিপাটি এবং দারুণ ঘন এ রকম ব্রাও লুক সাধারণত ছেলেদেরই দেখা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে এই ধরনের বুশি ম্যান ব্রাওয়ের কদর বেড়েছে মেয়েদের মধ্যেও। চেহারায় শক্তিশালী ভাব তৈরিতে অতুলনীয় এটি। দেখায় আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী, আকর্ষণীয়। যাদের আইব্রাও জন্মগতভাবেই ঘন এবং মোটা, তাদের হ্যাপা কম। বাড়তি কিছু না করলেও চলবে। কিন্তু যাদেরটা পাতলা, তাদের নিয়মিত ক্যাস্টর অয়েল মাখা চাই। এ ছাড়া প্রডাক্টের যথাযথ ব্যবহারে সহজেই তৈরি করে নেওয়া যায় বুশি ব্রাও লুক। একদম ছেলেদের মতো করে।
জাহেরা শিরীন
মডেল: মাহেনাজ
ওয়্যারড্রোব: ব্রোক্
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: সৈয়দ অয়ন