ফুড বেনিফিট I পেঁপে
পুষ্টিগুণে ভরপুর। বিভিন্ন রোগের দাওয়াই। সস্তা, কিন্তু সুস্বাদু
কাঁচা ও পাকা- উভয় অবস্থাতেই পেঁপে খাওয়া যায়। এতে স্বাদে তারতম্য ঘটলেও পুষ্টিমানে খুব একটা হেরফের হয় না। এর আদিনিবাস নিয়ে মতভেদ আছে। অধিকাংশের মতে, ফলটির উৎপত্তি মেক্সিকো ও কোস্টারিকায়। আয়ুর্বেদশাস্ত্রে এটি অমৃততুম্বী নামে পরিচিত। ইউনানিতে পাপিয়া। উপকারী রাসায়নিকে ভরপুর হওয়ায় সব চিকিৎসাশাস্ত্রেই এই ফলের ব্যবহার আছে। ১০০ গ্রাম পাকা পেঁপেতে থাকে আমিষ ০.৬ গ্রাম, ফাইবার ০.৮ গ্রাম, স্নেহ ০.১ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৫ গ্রাম, শর্করা ৭.২ গ্রাম, ভিটামিন সি ৫৭ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৫ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৬.০ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৬৯ মিলিগ্রাম এবং খাদ্যশক্তি ৩২ কিলোক্যালরি। এসব উপাদান শরীরের নানা ধরনের রোগ সারায়। যেমন বয়স্কদের দৃষ্টি ক্ষয়ের সমস্যা থেকে নিরাপদ রাখতে পারে পেঁপে। এতে থাকা ভিটামিন এ, সি, ই চোখের জন্য ভালো। পেঁপের রয়েছে হজমসহায়ক গুণ।
পাকা অবস্থায় ফলটি খেলে বদহজম সারে। কোষ্ঠ পরিষ্কার রাখে। আমাশয়ের অব্যর্থ পথ্য এই ফল। কোলেস্টেরল কমাতেও খাওয়া যেতে পারে এটি। আঁশযুক্ত হওয়ায় এসব সমস্যায় পেঁপে বেশ উপকারী। এতে থাকা ভিটামিস সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধমনিতে কোলেস্টেরল জমতে দেয় না। ফলে চর্বি জমতে না দেওয়ার কারণে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কমে। এর প্রোটিওলাইটিক এনজাইম প্রোটিন হজম ত্বরান্বিত করে। ফলে ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক। ফলটির ফ্ল্যাভোনোক্সিড উপাদান ক্যানসার কোষ বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। এ ছাড়া পেঁপে কোলন ও প্রোস্টেট ক্যানসাররোধী। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। এই করোনাভাইরাসজনিত দুর্যোগকালে নিয়মিত পেঁপে খাওয়া যেতে পারে। ডায়াবেটিসের রোগীরাও চিকিৎসকের পরামর্শে ফলটি খেতে পারেন। ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি খেলে হাড় মজবুত হয়। অস্থিসন্ধিজনিত জটিলতা সারে। এর ভিটামিস সি স্ট্রেস কমায়। কাজের শেষে এই ফলের জুস পান করলে মগজ চাঙা হয়ে উঠতে পারে। স্বাস্থ্য ভঙ্গুরতা বা শরীর শুকিয়ে যাওয়ার জটিলতা উপশমের জন্য টানা এক মাস পেঁপে খেয়ে দেখা যেতে পারে। অনিয়মিত ঋতুস্রাব থেকেও মুক্তি দেয় ফলটি। এ ছাড়া নিয়মিত খেলে শ্বাসের সমস্যা কমবে। স্থূলতা কমাতেও পাকা পেঁপের জুড়ি নেই। এটি জ্বর কমাতে সক্ষম। বমি ভাব ও মাথা যন্ত্রণায় আরাম মেলে। শরীর ব্যথা কমাতেও খাওয়া যেতে পারে পাকা পেঁপে। রুচি ও ক্ষুধা বাড়ায়।
কাঁচা পেঁপের কার্যকারিতা বেশি। নিয়মিত এ ফলের তরকারি খেলে উদরের যেকোনো বালাই থেকে রেহাই পাওয়া যায়। বাতাসার সঙ্গে এই ফলের আঠা মিশিয়ে খেলে রক্ত আমাশয় সারে। দুপুর ও রাতে খাওয়ার পর কয়েক টুকরা কাঁচা পেঁপে ভালোভাবে চিবিয়ে খেয়ে এক গ্লাস পানি পান করলে গ্যাস-অম্বল সমস্যা থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়। কাঁচা পেঁপের আঠা আরও কিছু রোগবালাইয়ের পথ্য। এটি অর্শ রোগ সারায়। এ ফলের আঠা চিনির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কৃমিনাশ হয়। মধুযোগে খেলে দ্রুত ফল মিলবে। জিভ ও মুখের ঘায়েও ওষুধ হিসেবে কাজ করে। দাদে লাগালে সারে। একজিমা ভালো করতে চাইলে সংক্রমিত স্থানে এক দিন পরপর কাঁচা পেঁপের আঠা লাগাতে বলেন অভিজ্ঞরা। যকৃতের সমস্যাও সারাই করতে পারে কাঁচা পেঁপের আঠা। এক কাপ পানিতে তা ৩০ ফোঁটা মিশিয়ে দিনে তিনবার সেবন করতে হয়। এতে স্ফীত যকৃৎ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এভাবে টানা এক মাস খাওয়া গেলে যকৃতের যেকোনো সমস্যা সেরে যায়। শরীরের রক্ত সরবরাহ ঠিকঠাক রাখতে খাওয়া যেতে পারে কাঁচা পেঁপে। দেহে জমে থাকা সোডিয়াম দূর করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে ফলটি। সে ক্ষেত্রে মাসব্যাপী খেতে হয়। এতে হৃদ্পি-ও সুস্থ থাকে। কাঁচা পেঁপে রুচি বাড়ায়। সদ্য প্রসূতি মায়েরা স্তনে দুধ বৃদ্ধির জন্য ফলটি খেয়ে থাকেন। মেদ কমাতে কাঁচা পেঁপে খাওয়া যায়।
রূপচর্চায়ও কাজে আসে ফলটি। চুল পড়া রোধ করতে চাইলে টক দইয়ের সঙ্গে পেঁপে মিশিয়ে গোড়ায় লাগানো যেতে পারে। উকুন মারতে পানির সঙ্গে কাঁচা ফলের আঠা গুলে মাথায় মেখে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলতে হয়। এত চুলও ঝলমলে হবে। তবে এ কাজ সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন করা কর্তব্য। ত্বকচর্চায়ও কাজে লাগে। প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় চেহারার লাবণ্য ধরে রাখতে এবং উজ্জ্বলতা বাড়াতে ফলটি পারঙ্গম। সে ক্ষেত্রে পেঁপের সঙ্গে মধু ও টক দই মিশিয়ে ত্বকে মাখতে হবে। এই ফেসপ্যাক ব্রণ, মেছতা ও ফুসকুরির দাগও খুব সহজে দূর করে। পেঁপের পাতাও উপকারী। পানিতে ফুটিয়ে সেই পাতা দিয়ে সেঁক নিলে ফাইলেরিয়া রোগের উপসর্গ অনেকাংশে কমে যায়।
তবে বেশি খেলে গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকে। এই ফলের বীজ মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর। এতে এনজাইম কারপাইন থাকে, যা মগজে অসারতা সৃষ্টি করে। ফলে কার্ডিয়াক ডিপ্রেশন বা প্যারালাইসিস হতে পারে। কাঁচা পেঁপের রস কিছু ক্ষেত্রে বিষাক্ত। তা খেলে অ্যাবডোমিনালে ব্যথা হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়। এই ফলের নির্যাস শরীরে চুলকানি তৈরি করতে পারে।
ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট