skip to Main Content

সেলিব্রিটি স্টাইল I এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়ে!

মাসুমা রহমান নাবিলা ও জোবায়দুল হক রিম। একজন তারকা, অন্যজন ব্যাংকার। দুই দিগন্তের এই দুজন গাঁটছড়া বাঁধছেন খুব দ্রুত। জানালেন, বিয়ের আগে প্রেম ছিল না, প্রেম করছেন বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকে। গল্পটা খুব ইন্টারেস্টিং। দুজন দুজনকে চেনেন উনিশ বছর ধরে। প্রেম না থাকলেও কোথাও একটা অদৃশ্য সুতার টান ছিল। ফলে, সময় তাদের দূরে ঠেলে না দিয়ে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। ক্যানভাসের সঙ্গে তারা শেয়ার করেছেন তাদের সেই গল্প।

নাবিলা শুরু করলেন:

আমরা স্কুল বন্ধু। একসঙ্গে পড়তাম। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল জেদ্দা। আমার বয়স তখন চৌদ্দ আর ওর সম্ভবত আঠারো। রিম আমার থেকে চার বছরের সিনিয়র ছিল আর ব্যাচওয়াইজ তিন বছরের সিনিয়র। আমার ক্লাসফ্রেন্ডরা ওকে খুব পছন্দ করতো, লম্বা আর দেখতে খুব হ্যান্ডসাম ছিল। সে কারণে। ওদের কথা শুনে আমিও একটু একটু ইন্টারেস্ট ফিল করতাম। বাসায় তখন প্রচুর ব্ল্যাঙ্ককল আসতো সে সময়। উইয়ার্ড ভয়েসে কথা বলতো।
তো একদিন আমি ফোন ধরে বললাম, ভাই, আপনার কি কোনো কাজ নাই, ফোন করা ছাড়া?
ওপাশ থেকে বললো, আমাকে তো রিম (আমার হবু বর) ভাইয়া টাকা দিয়েছে আপনাকে কল করার জন্য। শুনে আমি খুব অবাক হয়েছিলাম। পরে জেনেছি ফাজলামি ছিল, বাট সামহাউ তখন আমি ব্যাপারটা বিশ্বাস করেছিলাম। বিরক্তও হয়েছিলাম। ওর সঙ্গে আমার প্রথম সরাসরি কথা হয় জেদ্দার একটা বৈশাখী মেলায়। আমি একটা স্টলে ছিলাম, আমার পাশের মেয়েটি ছিল ওর বন্ধুর বোন। সে রিমের সঙ্গে মজা করছিল এই বলে, ভাই, আমি আপনার গায়ে পানি ঢেলে দেবো।
আমি তো আগে থেকেই বিরক্ত ছিলাম, ওদের কথাবার্তা শুনে আরও বিরক্ত লাগছিল। হঠাৎ করে বললাম, বলার কী আছে? পানি ঢালতে হলে ঢেলে দাও। বলে এক গ্লাস পানি নিয়ে ওর গায়ে ঢেলে দিলাম। ও খুব অবাক হলো এবং রেগে গিয়ে বললো, দেখো, ডোন্ট মেস উইদ মি। আমি চাইলে অনেক কিছু করতে পারি।
আমি বললাম, কী আর করবেন? মানুষকে টাকাপয়সা দিয়ে আমাকে বিরক্ত করবেন?
ও চলে যাচ্ছিল, কিন্তু একথা শুনে থমকে দাঁড়িয়ে পড়লো। ফেরত এসে বললো, তুমি কী বললে? তারপর ঘটনাটা শুনে খুব অবাক হলো আর বললো যে, দেখো, আমি কখনোই এ রকম কিছু করিনি। যা হোক, এটাই ছিল আমাদের প্রথম কনভারসেশন।

তারপর আর কথা হয়নি। প্রায় এক বছর পর ও একদিন আমাকে ফোন দিলো। এমনি এমনি ফোন। সেই শুরু। তারপর তিন-চার মাস আমাদের ফোনেই কথা হতো। আমার ফ্রেন্ডদের মধ্যে অনেকের জেলাসি ছিল, কেন ও আমার সঙ্গে কথা বলে। ব্যাপারটা আমি খুব উপভোগ করতাম। এটুকুই। তারপর একসময় ও ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা দিয়ে দেশে চলে আসে। আমাকেও দেশে চলে আসতে হয়। তখন আমাদের যোগাযোগটা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। প্রায় সাত বছর পর ও আবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তার আগে বলি, যখন ওর সঙ্গে আমার যোগাযোগটা হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে গেল, তখন আমি রিয়েলাইজ করি যে আমি ওকে মিস করছি। বা আমার মধ্যে কোনো একটা ফিলিংস কাজ করছে ওর জন্য। সে সময় খুঁজবার একটু-আধটু চেষ্টা করিনি এমন নয়, কিন্তু সব মিলিয়ে হয়ে ওঠেনি।
এত বছর পর ওর ফোন পেয়ে আমি খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কারণ, আমি জানতাম হি ওয়াজ ইন আ রিলেশনশিপ। প্রথমে ভেবেছিলাম, ও বোধ হয় বিয়ের দাওয়াত দেয়ার জন্য ফোন করেছে। টু বি ভেরি অনেস্ট, আমিও তখন একটা রিলেশনশিপে ছিলাম। এটা ২০০৭ সালের কথা। ফোনে বিশেষ কোনো কথা হয়নি খোঁজখবর নেয়া ছাড়া। তারপর থেকে মাঝে মাঝে জাস্ট টুকটাক ফোনেই কথা হতো বা হয়তো কোনো উপলক্ষ পেলে একটা মেসেজ দিলাম। তা-ও খুব কম। এভাবেই চলছিল। আমাদের যোগাযোগটা বাড়ে ২০০৯ সালে। সেটাও এমন না যে আমরা তখন প্রেম করেছি। তবে, ২০১৪-এর দিকে আমরা একবার ভেবেছিলাম যে ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নিই। কিন্তু তখনো কোনো একটা মান-অভিমানের কারণে সেটা হয়ে ওঠেনি। আমি একটু রাগ করেই চলে আসি এই বলে যে, না, বিয়ে করবো না। মজার ব্যাপার হলো, এই দূরত্বের মাঝেও আমাদের দুজনেরই মনে মনে একটা টান কাজ করতো। যোগাযোগে ছিলাম ঠিকই, তবে কোনো রিলেশনশিপ বিল্ডআপ করেনি। আমার মনে আছে, ও আমাকে একবার বলেছিল, যখন আমি থাকি তখন তুমি থাকো না বা আবার যখন তুমি থাকো, আমি থাকি না। আসলে, আমরা সব সময় চাইতাম একটা এমন ফাঁক খুঁজতে, যেন আমরা দুজনেই একসঙ্গে হতে পারবো। ইচ্ছেটা প্রবল ছিল। প্রেম করতে নয়, আমরা আসলে বিয়েই করতে চেয়েছিলাম। ফাইনালি গত বছর আমরা যখন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই, তারপর থেকে আমরা প্রেম করছি। এত দিন পর।
এই পর্যায়ে রিম বললেন, এবার আমি একটু বলি।

ওকে আমার ছোটবেলা থেকেই ভালো লাগতো। অনেক সুন্দর ছিল, বড় বড় চোখ। আর খুব সুন্দর সুন্দর জুতা পরতো। তখন তো এত মোবাইলের যুগ ছিল না। ১৯৯৯ সালের কথা। আমাদের দেখা হতো স্কুলের টিফিন টাইমে আর জোহরের নামাজের ব্রেকের সময়। একবারের ঘটনা বলি। জনপ্রিয় হিন্দি ছবি ‘তাল’ তখন মুক্তি পেয়েছে। সেখানে একটা সিন ছিল না, নায়ক একটা কোক খেয়ে একটা জায়গায় রেখে দেয়, তারপর নায়িকা এসে বাকি কোকটা খেয়ে নেয়। ছবিটা দেখার পর আমরাও তেমন করা শুরু করি। দেখা যেতো ও যদি স্প্রাইট নেয়, আমিও একটা স্প্রাইট কিনি। একবার আমি কোক খেয়ে বাকিটা ওর জন্য রেখে দিই, কিন্তু ও কিছুই বুঝে নাই। তারপর আমি চোখ দিয়ে ইশারা করলে ও সেটা খেয়ে নেয়। হা হা হা। এভাবেই চলছিল সব।
আমি প্রায়ই ভাবতাম, ঘর-সংসার করলে ওর সঙ্গে করবো। মানে যখনই বিয়েশাদির কথা চিন্তা করতাম, তখন ওর কথাই মাথায় আসতো। আমাকে ও-ই প্রথম বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ব্যাপারটা খুবই মজার। গত বছর ওর সঙ্গে ফোনে কথা হচ্ছিল। হঠাৎ করে আমাকে বললো, আচ্ছা, শোনেন, আপনি আমাকে বিয়ে করবেন?
আমি বললাম, মাঝরাতে তুমি যদি হঠাৎ করে এ রকম বিয়ের প্রস্তাব দাও, তাইলে হ্যাঁ, না- যে কোনোটা বলাই তো বিপজ্জনক।
ও বললো, না, করলে এক সপ্তাহের মধ্যে করবেন। না হলে না বলে দেবেন। কোনো ঝোলানোর আলাপ করতে পারবেন না।
আমি বললাম, আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে না। করবো যখন ভালোভাবেই করি। বিয়ের সিদ্ধান্ত নিতে এক মিনিটও সময় লাগেনি। ওর পার্সোনালিটি আমার খুব ভালো লাগে। খুব সৎ আর যেকোনো ব্যাপারে খুব এক্সপ্রেসিভ। মুখ দেখে সহজে বোঝা যায় সে কী ভাবছে। এই এক্সপ্রেশনটা আমার খুব ভালো লাগে। কাজের ব্যাপারে খুব সিরিয়াস। আমি ওকে খুব সম্মান করি এ জন্য। আর অপছন্দ হচ্ছে অনেক সময় খুব তাড়াতাড়ি কনক্লুশন ড্র করে ফেলে। আমরা দুজনেই সিদ্ধান্ত নেয়ার পর আমাদের পরিবারও খুব খুশিমনে রাজি হয়ে গেছে।
নাবিলা বললেন, আমরা অনেক দিন ধরে একজন আরেকজনকে চিনি, বুঝি। ওর ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই।

যে পার্টনার হিসেবে সে অসাধারণ একজন মানুষ হবে। ওর প্রচুর ধৈর্য, রিলেশনশিপে কখনোই পুরোনো ইস্যু টানে না, আজকের ঝগড়া আজকেই মিটমাট করে ফেলে। এ ব্যাপারটা আমি খুব কম দেখেছি। আমাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোনো ঝগড়া হয়নি। এ বছর ২৬ এপ্রিল আমরা বিয়ে করবো। এখন প্ল্যানিং চলছে। প্রি-ম্যারেজ স্ট্রেসের কারণে আমি ইদানীং খুব দুঃস্বপ্ন দেখছি। বিয়ের পর ওমরাহ করার ইচ্ছা আছে। তারপর হানিমুন। গ্রিসে যাওয়ার ইচ্ছা আছে। পরিচয় থেকে উনিশ বছর পর বিয়ে হতে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, আমাদের মধ্যে কানেকশন বা বন্ড সব সময় ছিল। সময় সবকিছু ভুলিয়ে দিতে পারে। কিন্তু আমাদের বেলায় তা হয়নি। উই আর অলওয়েজ ইন ইচ আদার মাইন্ড।

 

রত্না রহিমা
স্টাইলিং ও কনসেপ্ট: নুজহাত খান
মেকওভার: পারসোনা
ওয়্যারড্রোব: সিকোসো ও ওটু
ছবি: তানভীর খান

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top