চলতি বছরের শেষে এসে পুনরায় স্মার্টফোনের বিশ্ববাজারে শীর্ষস্থান ফিরে পেয়েছে স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্যামসাং। বৈশ্বিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসি ও ক্যানালিসের সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়াভিত্তিক এই ব্র্যান্ডটি গত অক্টোবর পর্যন্ত বাজার হিস্যা ২২.৭ শতাংশ, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ২.৯ শতাংশ বেশি। উল্লেখিত মেয়াদকালে বিশ্বব্যাপী স্যামসাংয়ের ৮০.৪ মিলিয়ন স্মার্টফোন বিক্রির রেকর্ডই মূলত প্রতিষ্ঠানটিকে এ সাফল্য এনে দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, স্মার্টফোন বিক্রির ক্ষেত্রে স্যামসাংয়ের অন্যতম প্রধান দুটি বাজার হলো ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র। সাম্প্রতিককালে, বাজারে আসা স্যামসাং ‘এম’ সিরিজ এবং ‘এ’ সিরিজের ডিভাইসগুলো প্রধান প্রধান বাজারসমূহে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে, যার ফলে অল্প সময়ের মধ্যেই স্যামসাং পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ বিক্রয় প্রবৃদ্ধির দেখা পায়। সেই সঙ্গে স্যামসাংয়ের নোট২০ এবং নোট২০ আলট্রা – এ দুটি মডেল ব্যবহারকারীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে, ফলে করোনাভাইরাসের কারণে স্যামসাংকে প্রাথমিকভাবে যে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছিল, তা তারা দ্রুতই কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।
আইডিসি’র ওয়ার্ল্ডওয়াইড মোবাইল ডিভাইস ট্র্যাকারস এর প্রোগ্রাম ভাইস প্রেসিডেন্ট রায়ান রেইথ বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে সংখ্যাগুলো খুব আহামরি মনে না হলেও সাপ্লাই চেইন ও ক্রেতাদের চাহিদার প্রশ্নে পূর্বেকার অবস্থার তুলনায় আমরা অনেকখানিই উন্নতি দেখতে পাচ্ছি। উন্নত বাজারগুলোর অবস্থা বিবেচনা করলে আমরা জোর দিয়ে বলতে পারি যে, দাম বা ব্র্যান্ড যা-ই হোক না কেন, সামনের বছরগুলোতে স্মার্টফোনের বাজারে আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ার হবে ফাইভজি। ফাইভজি’র বিপণন ইতিমধ্যেই তুঙ্গে পৌঁছে গেছে। পণ্যও পাওয়া যাচ্ছে হাতের নাগালেই। বিজ্ঞাপন ও প্রসারে জোর দেওয়া হয়েছে। যার ফলে, পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, ফাইভজি নিয়ে বিপণন ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে এখন শতভাগ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তবে, আমাদের এখনও মনে হয়, এ মুহূর্তে ক্রেতাদের ফাইভজি নিয়ে চাহিদা কম, যা এক্ষেত্রে বিভিন্ন চ্যানেলে ও ওইএম- এতে মূল্যের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।’
‘অফলাইনে বিক্রির ওপর বেশি নির্ভর করায় স্যামস্যাং বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে কিছুটা ধাক্কা খেয়েছিল, কিন্তু তৃতীয় প্রান্তিক নাগাদ সেটি তারা বেশ ভালোভাবেই কাটিয়ে উঠতে পেরেছে,’ বলেন, ক্যানালিস্টের বিশ্লেষক শেংতাও জিন। তিনি আরও বলেন, ‘মূলত তিনটি কারণে স্যামসাং এই প্রবৃদ্ধির দেখা পায়। প্রথমত, বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রেতাদের চাহিদা দ্বিতীয় প্রান্তিক থেকে তৃতীয় প্রান্তিকে বেশি ছিল। দ্বিতীয়ত, বিশ্বব্যাপী যে ‘চীন-বিরোধী’ মানসিকতার সৃষ্টি হয়েছে, তা থেকে এই দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠানটি পুরোপুরি মুক্ত ছিল, যার দরুণ ভারতের বাজারে এটি তার হারানো দ্বিতীয় স্থানটিও ফিরে পায়। আর তৃতীয়ত, স্যামসাং বাজারে লো এবং মিড রেঞ্জ হ্যান্ডসেট মডেল নিয়ে আসার ব্যাপারে জোর দেয়, পাশাপাশি মূল্যছাড় এবং ফ্রি অনলাইন ডেলিভারির মতো সুবিধা দিয়ে আরও অধিক সংখ্যক গ্রাহককে আকৃষ্ট করতে সফল হয়।’
এ বছরের তৃতীয় প্রান্তিক নাগাদ স্মার্টফোনের বিশ্ববাজারে স্যামসাংয়ের পরবর্তী দুটি অবস্থানে রয়েছে চীনা ব্র্যান্ড হুয়াওয়ে এবং শাওমি। আইডিসি’র তথ্যমতে, হুয়াওয়ের বাজার হিস্যা ১৪.৭ শতাংশ এবং শাওমির বাজার হিস্যা ১৩.১ শতাংশ। প্রায় একই উপাত্ত সরবরাহ করেছে ক্যানালিস। বৈশ্বিক বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসি গ্লোবাল মার্কেট ইন্টেলিজেন্স, অ্যাডভাইজরি সার্ভিস এবং তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন ইভেন্টের বিস্তারিত খবর প্রকাশ করে থাকে। ক্যানালিস আইটি, চ্যানেল এবং সার্ভিস প্রোভাইডার প্রফেশনালদের কাছে বাজারের পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য-উপাত্ত দান করে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি খাতের ব্যাপারে দিক-নির্দেশিনাগত সহায়তা দেয়।