skip to Main Content

বিশেষ ফিচার I সৌন্দর্যের পূর্বাভাস ২০২১

মূলত করোনাসৃষ্ট বাস্তবতার প্রভাব পড়ছে মেকআপের জগতে। সামাজিক দূরত্বজনিত অবসন্নতা কাটিয়ে ওঠার প্রণোদনাই মুখ্য হয়ে থাকছে এবারের বিউটি ট্রেন্ডে। লিখেছেন তাসমিন আহমেদ

এ বছরে সৌন্দর্যমোদীরা নতুন বিউটি ট্রেন্ডের জন্য অপেক্ষমাণ। আসন্ন মৌসুমে যেসব হেয়ার ও মেকআপ ট্রেন্ড রাজত্ব করবে, ইতিমধ্যে তার একটি তালিকা ফোরকাস্ট করা হয়েছে। গত বছর কেটেছে বাড়ির ভেতরে, বিচ্ছিন্নতা ও অবসাদে। তবে বিউটি রুটিন অনুসরণে কমতি ছিল না। স্যালনগুলো সেবাদানে বিরত থাকলেও অনেকে নিজেরাই নিখুঁতভাবে চুল কাটার চেষ্টা করেছেন। ফিরে এসেছেন মেকআপ বক্সে এবং নানান ধরনের ফেসমাস্কে। অনেকেই দক্ষ হয়ে উঠেছেন হেয়ারবান ও লিপ কালার কম্বোতে।
বিগত বছরের দুঃসহ স্মৃতি ভুলে এখন আগামী দিনগুলোর জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নেওয়ার পালা। সৌন্দর্যপ্রেমীরাও দেখার অপেক্ষায় আছেন- বিউটি ওয়েভে কোন মেকআপ ট্রেন্ড আর হেয়ারস্টাইলগুলো স্থান করে নেয়।
রেট্রো গ্ল্যামার ও মিনিমাল আইব্রাও থেকে শুরু করে সিজিআই মেকআপ আর বাটারফ্লাই ক্লিপ পর্যন্ত সবই ইনোভেটিভ, ইন্সপায়ারিং এবং আনইনহিভিটেড বিউটি ট্রেন্ড ফোরকাস্ট করা হয়েছে নতুন বছরে একটি ভিন্ন লুক ও আনন্দময় সৌন্দর্য উপভোগের জন্য।
তবে ২০২০ সালের বিউটি ট্রেন্ডগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখবে। কেননা লকডাউনের সময় অনেকে বাড়িতেই কুল লুক তৈরির এক্সপেরিমেন্ট করতে শুরু করেছিলেন। এ ছাড়া নিয়মিত ফেসমাস্ক ব্যবহারের কারণে নিজেদের সৌন্দর্য সম্পর্কে সবাই আরও যত্নশীল হয়েছে এবং ত্বকের ভারসাম্য বজায় রাখতে ভালো মানের ক্রিম, অয়েল ও অন্যান্য ফেস প্রডাক্ট ব্যবহার করছে।
এ বছর বিউটি ট্রেন্ড হবে অবশ্যই আই মেকআপ, আইলাইনার আর ক্রেজি আইশ্যাডোগুলোকে ঘিরে। মাস্ক পরে থাকতে হবে, এতে দৃশ্যমান থাকবে চোখ। এমন অবস্থায় স্মোল্ডারিং আই লুক রাজত্ব করবে বছরজুড়ে। ক্ল্যাসিক, ওয়েট-লাইনড লাইনার লুক অনন্য করে তুলবে যে কাউকে। সুযোগ রয়েছে প্লেফুল হয়ে ওঠার, ব্রাইট-কালারড মাসকারা ও টেকনিকালার ল্যাশ সঙ্গে নিয়ে। এবারকার ট্রেন্ডে থাকছে নীলের উজ্জ্বল উপস্থিতি। কোবাল্ট ব্লু আর ডিপ-সি গ্রিন চোখে এনে দেবে গভীরতা। এ ছাড়া এখন চোখের পাতায় সাহসী সব রঙ ছড়িয়ে দেওয়াও যায়। রঙধনুর সব কটি রঙ প্রয়োগের সময় এসেছে। চোখের পুরো পাতায় যারা দিতে চান না, তাদের জন্য বিউটি ব্র্যান্ডগুলো নিয়ে এসেছে কালারফুল সব লাইনারের কালেকশন।
ঠোঁটজোড়া আড়ালে রাখার মানে এই নয় যে, মেগাওয়াট লিপ মোমেন্টের প্রয়োজন পড়বে না। নির্দ্বিধায় লং-লাস্টিং ও বোল্ড কালার এখনই সংগ্রহ করতে হবে। ফেদারি ব্রাওজ ও সফট চকলেট ব্রাউন লিপ নিয়ে ২০২০ সালের ট্রেন্ড পুরোদমে ফিরে এসেছে নতুন বছরে।
মেকআপ বোদ্ধারা মনে করছেন, এবার মেটালিক লুকের প্রতি বিউটি লাভাররা আকৃষ্ট হবেন বেশি। থাকবে না কনটুরিং ও হেভি ফাউন্ডেশন। বছরজুড়ে থাকবে লাইট ওয়েটের ফাউন্ডেশন ও ন্যাচারাল স্কিন। সহজ ও কার্যকর রুটিন ব্যবহার করে কীভাবে ন্যাচারাল স্কিন টেক্সচার আরও উজ্জ্বল এবং মসৃণ রাখা যাবে, সৌন্দর্যপ্রেমীরা সেদিকেই বেশি মনোযোগী হবেন। এখন ১২টি স্টেপের বিউটি রুটিনকে বিদায় জানানোর সময়। মূল কথা হলো হালকা ও সতেজ থাকার চেষ্টা।
প্যানডেমিকের কারণে শেষ পর্যন্ত কোন ট্রেন্ডগুলো সামনে আসতে যাচ্ছে, তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও রেট্রো গ্ল্যামার যে এবারকার ট্রেন্ডেও জায়গা করে নেবে, তা প্রায় সুনিশ্চিত। সব বিউটি রেফারেন্সই ব্যবহার করা যেতে পারে যদি খানিকটা টুইস্ট বা মডার্নাইজড করে নেওয়া যায়। এটি হতে পারে এখনকার লুক তৈরিতে ভারসাম্য ও সামঞ্জস্য খুঁজে নেওয়ার দিক থেকে। গেল বছরে ‘ন্যাচারাল এভরিডে মেকআপ’, ‘হাউ টু গেট ন্যাচারালি গ্লোয়িং স্কিন’ এবং ‘ফেস ইয়োগা এক্সারসাইজ’ এই বিষয়ক সার্চ ইন্টারনেটে চার গুণ বেড়েছে। এ ছাড়া ‘হোম মেড স্কিন কেয়ার’ ও ‘অ্যালোভেরা ফেসমাস্ক’- এই দুটির অনুসন্ধানও বেড়েছে কয়েক গুণ। সে হিসেবে এটি অন্তত নিশ্চিত যে নতুন এই বছরে ন্যাচারাল লুকেরই জয়জয়কার হবে।
নটলেস বক্স ব্রেইড কিংবা উল ব্রেইড স্টাইলের মতো বিভিন্ন ধরনের বেণি বাঁধার এক্সপেরিমেন্ট থাকবে বছরজুড়ে। বিশেষ করে সেসব স্টাইল, যেগুলো লো মেইনটেন্যান্স ও প্রোটেক্টিভ হবে এবং কিছুটা গ্ল্যামার যোগ করবে।
ডিফ্যান্ট আইব্রাও কাঙ্ক্ষিত স্টাইল হিসেবে যুক্ত হতে যাচ্ছে। আসতে যাচ্ছে বোল্ডার ব্রাও। স্টেটমেন্ট-মেকিং স্টাইল নিয়ে চলবে নানান নিরীক্ষা। আবার ‘গথ ব্রাও’ বছরের একটা বড় অংশ দখল করবে বলে মনে করছেন অনেকে।
কয়েক বছর ধরে সৌন্দর্যশিল্পে কে-বিউটি ছাড়া আর কিছু শোনা যায়নি বললেই চলে। এটি টেন স্টেপস বিউটি কেয়ার রুটিন। কে-বিউটি শিট মাস্ক বুম, কে-বিউটি টেক ইনোভেশন- এমন নানা টার্মের সঙ্গে সৌন্দর্যপ্রেমীরা পরিচিত। এই মুভমেন্ট এমন এক সিরিয়াল প্রডাক্ট ব্যবহারকারী প্রজন্মের জন্ম দিয়েছে, যারা প্রতিদিন একাধিক পণ্য ব্যবহারে আসক্ত। এনভায়রনমেন্টাল গ্রুপের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিদিন গড়ে নয়টি পণ্য ব্যবহার করা হয়, যাতে ভিন্ন ভিন্ন প্রায় এক শ ছাব্বিশটি উপকরণ রয়েছে।
তবে বিগ আইডিয়াসের বর্ণনা অনুযায়ী নতুন বছরে আরও বেশি দরকারি ট্রেন্ডের ইতি ঘটবে। তার বদলে ভোক্তারা ‘বাই লেস বাই বেটার’ এই মনোভাব গ্রহণ করবে এবং শুধু কার্যকর পণ্যে নিজেদের প্রয়োজন সীমাবদ্ধ রাখবে। এই বাঁকবদলের দুটি কারণ- প্যাকেজিং ওয়াস্ট এবং ওভার কনজাম্পশন সম্পর্কে প্রচলিত সচেতনতা।
বিষণ্নতা ও উদ্বেগের এই সময়ে বেশ কালারফুল আবার ন্যাচারাল লুকের সমন্বয়ে একটি উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত বিউটি ট্রেন্ড উপস্থিত হতে যাচ্ছে সৌন্দর্যবিশ্বে।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top