ফুড বেনিফিটস I পাটশাক
এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কিছু কিছু জায়গায় পাটের চাষ হয়। এই উদ্ভিদ থেকে কাগজ, দড়ি, ব্যাগ ইত্যাদি তৈরি করা যায়। তা ছাড়া এর পাতা অর্থাৎ পাটশাক খাদ্য হিসেবে গ্রহণেরও চল রয়েছে। খাবারে স্বাদের বৈচিত্র্য আনতে পাটশাকের নির্যাস ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন অঞ্চলভেদে শাকটি সালুওট, ইউইডু, লালো নামেও পরিচিত। এই গাছের পাতাগুলোর প্রান্ত দাঁতের মতো খাঁজযুক্ত। কচিপাতা নরম ও কোমল হয়ে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা আঁশযুক্ত হয়। বৈজ্ঞানিকভাবে এটি ককোরাস অলিটারিয়াস নামে পরিচিত। পাটশাক খাবারের পাশাপাশি ওষুধ তৈরির কাঁচামাল হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
সুষম খাবার ও পুষ্টির অভাবে চোখের বেশির ভাগ অসুখ হয়ে থাকে। দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ও চোখের রোগব্যাধি প্রতিরোধের জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ভিটামিন বি ৬, যা পাটশাকের মধ্যে অধিক মাত্রায় বিদ্যমান। নিয়মিত এটি খেলে চোখের রোগ থেকে দূরে থাকা যায়।
পাটশাকে যথেষ্ট ভিটামিন ই, এ, সি রয়েছে। এই তিনটি পুষ্টিসমৃদ্ধ শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা বন্ধ্যাত্বহীনতা ও দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে।
পাটপাতায় রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি, যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি করে এবং ঠান্ডা ও ভাইরাসজনিত রোগব্যাধি থেকে দূরে রাখে। পাতাটি আঁশযুক্ত হওয়ায় খাদ্য পরিপাকে সহায়ক। তাই এটি নিয়মিত খেলে খাবার দ্রুত হজম হয় এবং গ্যাস্ট্রিক ও কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে দূরে থাকা যায়।
পাটশাকের সর্বাধিক ঔষধি গুণ হলো, এটি মানবদেহের প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়তে সক্ষম। কারণ, এতে বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত তা খেলে ক্ষত দ্রুত সেরে যায়।
বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুণ থাকায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়ক। গবেষণায় দেখা গেছে, উচ্চমাত্রার কপার সমৃদ্ধ পাটশাক বাজে কোলেস্টেরল কমিয়ে উপকারীটি বাড়ায়। এতে রয়েছে প্রায় ০.২২২ মিলিগ্রাম কপার, যা কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কমায়।
অনিদ্রায় ভোগা রোগীদের জন্য পাটশাক আশীর্বাদস্বরূপ। এতে রয়েছে অতিমাত্রার ম্যাগনেশিয়াম। এই খনিজ পদার্থ নিদ্রাহীনতার বিরুদ্ধে কাজ করে। শরীরের হরমোন প্রবাহের গতিকে ত্বরান্বিত করে। ফলে স্নায়ু শিথিল করে মনে প্রশান্তি এনে দেয়। ম্যাগনেশিয়াম এমন একটি খনিজ পদার্থ, যা পরিপূর্ণ এবং একটানা ঘুম হতে সহায়তা করে।
ত্বক ও কোষকে সতেজ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান ভিটামিন এ। এটি মানবদেহের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ কোষ এবং উপকোষের বৃদ্ধিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া এটি ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধী। পাটশাকে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন এ। নিয়মিত এটি খেলে ত্বকের খসখসে ভাব, ব্রণ, ফুসকুড়ি, খোসপাঁচড়া থেকে দূরে থাকা যায় এবং ত্বক হয়ে হঠে মসৃণ ও লাবণ্যময়।
দাঁত ও মাড়ির যত্নে পাটশাক কার্যকর। এতে থাকা ক্যালসিয়াম চোয়ালের হাড়কে করে মজবুত ও শক্ত। স্বাস্থ্যকর চোয়াল দাঁতকে শক্তিশালী করে এবং অপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রুখে দেয়। দাঁত ও মাড়ি সুস্থ রাখতে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণের বিকল্প নেই।
পাটশাকে রয়েছে উচ্চমাত্রার আয়রন। এটি নিয়মিত খেলে আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে অস্থিরতা কমায়। দৈনন্দিন খাবারের চেয়ে এই উদ্ভিজ্জ পাতায় ২.৭৩ মিলিগ্রাম বেশি আয়রন রয়েছে।
অনেক দেশে পাটশাক শুধু একটি উপাদেয় খাবার নয়, স্বাস্থ্যকর ও ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ সুপার ফুড হিসেবে বিবেচিত।
রাইসুল রাণা
ছবি: ইন্টারনেট