skip to Main Content

ফিচার I রোজনাম-চা

আলমারি থেকে কফিন পর্যন্ত কাজে লাগে। এমনকি জৈব সার কিংবা ফ্রেশনার হিসেবেও এর জুরি নেই। লিখেছেন শাহীন চৌধুরী ডলি

পানীয় হিসেবে চা জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান একটি কারণ হলো, এতে আছে ক্যাফেইন নামক একটি উত্তেজক উপাদান। বিশ্বব্যাপী অধিকাংশ মানুষের জীবনধারার অংশ এটি, বেশ আগে থেকেই। তবে কেবল শরীর চাঙা করার জন্য নয়, চায়ের রয়েছে বহুবিধ ব্যবহার।
২০১০ সালে পাকিস্তানের কায়েদে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা ব্যবহৃত চায়ের পাতা থেকে জৈব জ্বালানি তৈরির একটি উপায় বের করেছেন। তারা দাবি করেন, ফেলে দেওয়া চা-পাতা থেকে গ্যাসিফিকেশন পদ্ধতিতে ২৮% হাইড্রো কার্বন গ্যাস উৎপাদন করা সম্ভব। এই গ্যাস কয়লার মতোই সরাসরি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। তবে অন্যান্য গবেষকের মতে, এ উপায়ে জৈব জ্বালানি তৈরির খরচ অনেক বেশি।
ব্যবহৃত চা-পাতা ও মাছের বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদনে সফল হয়েছে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশে প্রতিদিন ব্যাপক পরিমাণে চায়ের বর্জ্য তৈরি হয়, যা সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মাছের বর্জ্য ও গোবর মিশিয়ে ৬৫% নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক।
চা ফুল ব্যবহার করা যায় প্রসাধনী তৈরির কাঁচামাল হিসেবে। ওষুধ তৈরিতেও এটি কাজে লাগে। প্রসাধনী এবং ওষুধ উৎপাদনে অন্য গাছের যৌগের সঙ্গে প্রায়ই চায়ের মধ্যে থাকা যৌগ যুক্ত করা হয়। পুয়ের চা একধরনের গাঁজনোত্তর, যা অনেক ক্ষেত্রে ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
শরীরের কোনো স্থানে যদি পোকামাকড় কামড়ায়, বা চুলকায় এবং ফুলে যায়, তাহলে সবুজ চায়ের পাতা দিয়ে ঢেকে দিলে আরাম বোধ হয়। সুস্বাস্থ্যের জন্য চায়ের ব্যবহার রয়েছে।
মধ্য চীনের ইয়াং লিং সমাধিস্তম্ভে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে যেসব নৈবেদ্য দেওয়া হতো, সেগুলোর মধ্যে পাতা দিয়ে তৈরি শুকনা কেক দেখা যেত। এসব পাতার মধ্যে থাকা ক্যাফেইন ও থিয়ানিন প্রমাণ করে যে, সেগুলো প্রকৃতপক্ষে ছিল চা-পাতা, যা কিনা মৃতদের সঙ্গে দিয়ে দেওয়া হতো তাদের পারলৌকিক জীবনের অনুষঙ্গ হিসেবে। সতেজ রাখার জন্য কফিনের ভেতর লাশের চারপাশে প্রচুর চা-পাতা দেওয়া হতো। এখনো একটু বেশি সময় সংরক্ষণের জন্য লাশের সঙ্গে চা-পাতার ব্যবহার করা হয়।
পরিত্যক্ত চা-পাতা সার হিসেবে কাজে লাগে। যেকোনো গাছের জন্য এটি উৎকৃষ্ট সার। এতে যথেষ্ট নাইট্রোজেন ও সামান্য পটাশিয়াম থাকে। ফলে চা-পাতা গােেছর বৃদ্ধিতে সহায়ক। অনেকেই গোলাপ গাছে সার হিসেবে এটি ব্যবহার করে থাকে। ইনডোর প্ল্যান্টের ক্ষেত্রে চা-পাতা সার হিসেবে অত্যন্ত উপযোগী। এটি থেকে ভালো জৈব সার প্রস্তুত করা সম্ভব। মাটির সঙ্গে মিশে ব্যবহৃত চা-পাতা জৈব সারে পরিণত হয়। গাছের গোড়ায় পানি ধরে রাখে এবং বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
কেবল গাছের পুষ্টি জোগাতেই নয়, প্রাকৃতিকভাবে আগাছা দূর করতে চা-পাতা বেশ কার্যকর। নিয়মিত গাছের গোড়ায় চা-পাতা দিয়ে আগাছা দূর করা যায়। এটি গাছের আবর্জনা, পচন এবং পোকামাকড় দূর করতে সাহায্য করে। মাটির শুষ্কতা রোধ করে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। ফলে গাছে থাকে তরতাজা ভাব।
এয়ার ফ্রেশনার হিসেবে চায়ের পাতা ব্যবহার করা যায়। বাজে গন্ধ দূর করতে অনেকেই কার্পেট বা ফ্রিজে টি ব্যাগ রেখে দেয়, তাতে গন্ধ কিছুটা কমে। চায়ের যে সাধারণ সুগন্ধ রয়েছে, সেই অ্যারোমায় দুর্গন্ধ কেটে যায়। তাই এয়ার ফ্রেশনার হিসেবে চা ব্যবহৃত হতে পারে।
আসবাব পরিষ্কারে চা-পাতার ব্যবহার করা সম্ভব। ব্যবহার করা চা-পাতা টিস্যু দিয়ে মুড়ে আয়নায় ঘষে এরপর ভেজা কাপড় দিয়ে আয়না মুছলে সব দাগ উঠে যায়। কাঠের আসবাব থেকে ফাঙ্গাসের আক্রমণ কমাতে চায়ের লিকারের সঙ্গে ভিনেগার মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে মোছা হয়। মেঝে, চুলা বা সিঙ্ক থেকে চটচটে ভাব কমাতে ভেজা টি ব্যাগ বা চায়ের লিকার ব্যবহার করা যায়।
আলমারিতে অনেক দিন ধরে কাপড় রাখলে পুরোনো কাপড়ে গন্ধের সৃষ্টি হয়। ব্যবহার করা চা-পাতা একটি টিস্যু দিয়ে মুড়িয়ে আলমারিতে রেখে দিলে কাপড় ভালো থাকে এবং পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে রেহাই পাওয়া যায়। জুতার ঘামের দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পেতে দুটি টিস্যু পেপারের মধ্যে চা-পাতা মুড়ে কয়েক ঘণ্টা রেখে দিলে গন্ধ দূর হয়। ত্বক ও চুলের যত্নে চা-পাতার ব্যবহার সম্পর্কে রূপসচেতন সবাই অবগত। চা-পাতা ত্বক ও চুলের যত্নে দারুণ ভূমিকা রাখে।
ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top