skip to Main Content

ফিচার I দূরযাত্রায় আহারঘর

ভোজনরসিক ও ভ্রমণপ্রিয় হিসেবে বাঙালির বেশ সুনাম। লং জার্নির যাত্রাবিরতিতে পেটের ক্ষুধা মেটাতে রয়েছে তাই হাইওয়ে ফুড স্টেশন। দেশের বিভিন্ন হাইওয়েতে থাকা ঐতিহ্যবাহী ও সেরা কিছু ফুড স্টেশনের গল্প শোনাচ্ছেন গোলাম কিবরিয়া

উজান ভাটি রেস্টুরেন্ট
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জে অবস্থিত এ রেস্টুরেন্ট যাত্রাবিরতিতে যেমন যাত্রীবান্ধব, খাবারের মান এবং দামেও দারুণ। এর দোতলাজুড়ে রয়েছে যাত্রীদের বসে খাবারের ব্যবস্থা। বেশ নামডাকওয়ালা এই রেস্টুরেন্টে নান্দনিক পরিবেশ ও সুস্বাদু খাবারের পাশাপাশি দ্বিতীয় তলায় রয়েছে একটি বুটিক হাউস। সেখানে পাওয়া যায় ঐতিহ্যবাহী জামাকাপড়। বলে রাখা ভালো, হাইওয়ের পাশে থাকায় ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকে এটি। উজান ভাটি রেস্টুরেন্ট-সংলগ্ন একটি রিসোর্ট রয়েছে, যেখানে চাইলেই যাত্রাবিরতিতে খানিক সময় কাটানো যায়, যদি তাড়া না থাকে। পরোটা, মুরগির মাংস, ভেজিটেবল, ভাত, মাছ, ভর্তা ছাড়াও এখানকার চা বেশ নামকরা। কফিতে মেলে লাতের স্বাদ।
হোটেল নূরজাহান
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গেছেন, অথচ নূরজাহানে নেমে ব্রেক নেননি এমন যাত্রী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বহুকাল ধরে এই মহাসড়কে হাইওয়ে হোটেল সার্ভিস হিসেবে সেবা দিয়ে আসছে হোটেল নূরজাহান। কুমিল্লা বিশ্বরোডের পদুয়া বাজারে অবস্থিত নূরজাহানকে এই মহাসড়কের অন্যতম ব্যস্ত হোটেলও বলা যায়। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও টেকনাফগামী হাইওয়ে বাসের অনেকগুলোই এই হোটেলে যাত্রাবিরতি দেয়। এখানকার খাবারের ব্যবস্থা বেশ ভালো। স্বল্প সময়ে সাধ্যমতো দামে খাবারের জন্য এটি অন্যতম সেরা অপশন। পরোটা, ডালভাজি, চা ইত্যাদি যেমন হালকা নাশতা হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে, তেমনি মুরগি বা গরুর খিচুড়ি অথবা ভাত, মাছ ইত্যাদি ভারী খাবারও মিলবে এখানে। খাবার কিংবা যাত্রার ক্লান্তি দূর করে নেওয়ার পাশাপাশি হাতে সময় থাকলে তিনতলা এই হোটেলের নিচতলায় অবস্থিত দোকানগুলো থেকে কেনাকাটা করে নেওয়া যেতে পারে নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু। নূরজাহানের চা-পরোটা ব্যাকপ্যাকার ট্রাভেলারদের জন্য হতে পারে স্বল্প সময়ে স্বল্প মূল্যে সেরা খাবার।
হোটেল ওকেএম মিডওয়ে ইন
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার হাইওয়ের সবচেয়ে বড় ব্রেক রেস্টুরেন্ট যদি বলা যায়, সেটি মিডওয়ে ইন। অল্প সময়ে সুনাম করা এই প্রতিষ্ঠান নান্দনিক স্থাপত্যসৌন্দর্য, আলোকসজ্জা, বিশাল স্টপেজ স্পেস এবং মুরগির খিচুড়ির জন্য বিখ্যাত। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে যাওয়ার পথে চকরিয়ার লোহাগাড়ায় এটি অবস্থিত। রেস্টুরেন্টটিতে রয়েছে ফুডকোর্ট, ক্যাটারিং গ্রাউন্ড, ওয়েটিং গ্রাউন্ড, প্রেয়ার হল এবং বিরাট জায়গাজুড়ে খাবার ব্যবস্থাপনা। হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট হিসেবে এখানে খাবারের দাম তুলনামূলক বেশি হলেও গুণে মানে প্রশংসনীয়। এখানকার বিফ খিচুড়ির স্বাদ অতুলনীয়! দ্বিতল রেস্টুরেন্টটি বাহ্যিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি খাবারের মান, স্টাফদের আচরণ, ব্যবস্থাপনায় দারুণ উদাহরণ। ডেস্টিনেশন প্রোগ্রামের জন্য এটি ব্যবস্থাপনা করতে পারবে যেকোনো পারিবারিক কিংবা অফিশিয়াল আয়োজন।
ফুড ভিলেজ প্লাস, সিরাজগঞ্জ
উত্তরবঙ্গে যাওয়ার পথে এ এক চমৎকার রেস্টুরেন্ট। সাধারণত দূরপাল্লার বাসগুলো বগুড়া হয়ে উত্তরাঞ্চলের কোনো জেলায় গেলে বেশির ভাগ বাসই এখানে যাত্রীদের খাবার খাওয়ার জন্য যাত্রাবিরতি দেয়। যাদের রেস্টুরেন্ট ইন্টেরিয়র নিয়ে একটু খুঁতখুঁতে স্বভাব আছে, নিঃসন্দেহে ফুড ভিলেজ প্লাস তাদের জন্য যাত্রাবিরতিতে একটি আদর্শ জায়গা। আকর্ষণীয় ইন্টেরিয়র, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, আলোকসজ্জা ও উন্নত মানের ও স্বাদের খাবারের জন্য এটি বেশ বিখ্যাত। কাস্টমারদের বসার জায়গা যেমন বিশাল, তেমনি বিশ্রাম নেওয়ার জন্যও রয়েছে চমৎকার পরিসর। ঢাকা-বগুড়া হাইওয়েতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় অবস্থিত দ্বিতলবিশিষ্ট এই রেস্টুরেন্টে খাবারের মূল্য তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি হলেও মান ও স্বাদের তুলনায় সেই অতিরিক্ত মূল্য দিতে কারও আপত্তি থাকবে না হয়তো! বিশেষ করে এখানকার কাটারিভোগ চালের ভাত, ডাল, মুরগির ঝোল ও চা বেশ মুখরোচক। দেশি খাবার, চায়নিজ খাবারের পাশাপাশি বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী দই ছাড়াও হরেক রকম মিষ্টি, ক্ষীরসা, রসমালাই, সেমাই তো রয়েছেই! এ ছাড়া এখানে আছে বিশাল পার্কিং গ্রাউন্ড, ডাইনিং ব্যবস্থা, ফুডকোর্ট, বাহারি মিষ্টি ও ফলের দোকান এবং ছোটখাটো প্রয়োজনীয় বিষয়াদির সমাহার। ২৪ ঘণ্টা সার্ভিস দেওয়া এই রেস্টুরেন্টে মজাদার নাশতাসহ দুপুরে কিংবা রাতে যাত্রাবিরতির যাত্রীদের জন্য রয়েছে খাবারের ব্যবস্থা। ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পূর্ব পাশে রয়েছে ফুড ভিলেজের মসজিদ। এ ছাড়া ফুড ভিলেজের প্রাঙ্গণে রয়েছে ফুলের বাগান। যাত্রাবিরতির ৩০ মিনিট অনায়াসে কাটানো যায়। তবে খাবার অর্ডারের আগে অবশ্যই দাম জেনে নেওয়া ভালো।
ছন্দু মিয়ার খাবার ঘর
প্রায় ৪০ বছর আগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজারে এ রেস্তোরাঁ প্রতিষ্ঠা করেন আবদুর রাজ্জাক ছন্দু। কুমিল্লা বিশ্বরোডের মোড় থেকে একটু সামনেই নতুন ফ্লাইওভারের পাশে ছন্দু মিয়ার ছাপরা খাবার ঘর। একসময় জমজমাট এই হোটেলের কোলাহল কিছুটা কমে গেছে ফ্লাইওভারের ক্রসিংয়ের এক পাশে পড়ে যাওয়ায়। তবে স্বাদ সেই আগের মতোই। স্বাদের জন্যই ছন্দু মিয়ার ছাপরা খাবার ঘর এখন রীতিমতো একটি হাইওয়ে হোটেল। খাঁটি সরিষার তেলের ঝাঁজে আলু ও পেঁয়াজ ভর্তার সুনাম রয়েছে এ হোটেলের। গরুর মাংসের স্বাদ জিভে পানি আনার জন্য যথেষ্ট। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের পরিবহনের যাত্রী ও শ্রমিকেরাই মূলত ছন্দু মিয়ার কাস্টমার। এ ছাড়া আশপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে এ হোটেলের খাবারের স্বাদ নিতে ছুটে আসেন ভোজনরসিকেরা।
আল জামিল হোটেল
আড়ংঘাটা বাইপাস সড়কটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, চারপাশে পাখির কলরব। খুলনা শহর থেকে খানিকটা দূরে আড়ংঘাটা বাইপাস হাইওয়ের পাশে আল জামিল হোটেল। এ হোটেলের মাছের বারবিকিউর সুনাম রয়েছে বেশ। দেশি, বিদেশি, ঘের, নদী ও সাগরের বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন আকারের মাছ এখানে বরফে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। সেখান থেকে পছন্দমতো ওজনের মাছ নেওয়া যায়। খাবারের মান ও স্বাদ বেশ ভালো। দোকানের পরিবেশ বেশ পরিপাটি। যদি ভিন্ন ধরনের মাছ খাওয়ার শখ থাকে, তাহলে খুলনা ভ্রমণে অবশ্যই আল জামিলে ঘুরে আসা যেতে পারে।
হাটিকুমরুল মোড়
উত্তরাঞ্চলের মধ্যে হাইওয়ে রেস্তোরাঁর জন্য সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল মোড় এলাকা বিখ্যাত। কারণ, সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর ওপর দিয়ে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা এবং খুলনা বিভাগের কয়েকটি জেলার দূরপাল্লার বাসসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে। উত্তরাঞ্চল কিংবা দক্ষিণের সব গাড়ি যাত্রাবিরতি দেয় সাধারণত হাটিকুমরুল মোড়ের কয়েকটি হোটেল ও রেস্টুরেন্টে। এখানে ‘ভিআইপি’ মানের একাধিক রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে। এসব রেস্টুরেন্টে ভাত, মাছ, মাংস, মিষ্টি থেকে দই শুরু করে সব রকমের খাবার মেলে। সারা রাত সমানতালে চলে এখানকার হোটেলগুলো।
প্রজেক্ট হিলশা
বাঙালির ইলিশ প্রেমের কথা কার না জানা! সেই প্রেমের পালে হাওয়া দিতেই রেস্টুরেন্ট ‘প্রজেক্ট হিলশা’। মাওয়া ঘাটে ইলিশ খাওয়ার দীর্ঘদিনের রীতির সঙ্গে অত্যাধুনিক এ রেস্টুরেন্ট নতুন এক সংযোজনই বলা চলে। উদ্বোধনের কদিনের মাথায় এটি হয়ে উঠেছে ভোজনরসিকদের আড্ডাখানা। দল বেঁধে মানুষ ছুটে আসে প্রজেক্ট হিলশায়। কেউ খাচ্ছেন ইলিশ পাতুরি, কেউ সরষে ইলিশ। বাদ যাচ্ছে না ইলিশ ভাজাও। যুগোপযোগী ইন্টেরিয়রের সঙ্গে বাঙালি ভোজ এই রেস্টুরেন্টকে করে তুলেছে আরও আকর্ষণীয়। এর আরেকটি আকর্ষণ হচ্ছে ওপেন কিচেন। চাইলেই মাছ বাছাই করে কিনে নেওয়া যাবে। রান্নাবান্নাও হবে চোখের সামনে। এই রেস্তোরাঁয় একসঙ্গে বসে খেতে পারেন ৩৫০ জনের বেশি লোক। প্রজেক্ট হিলশায় বাংলা, ইন্ডিয়ান, থাই, কন্টিনেন্টাল খাবার মেলে।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top