skip to Main Content

কুন্তলকাহন I বিপরীতে হিত

চুল ধোয়ার অভিনব পদ্ধতি। পরিষ্কারের পাশাপাশি উজ্জ্বলতা আর ঘনত্ব বাড়ানোর জন্য

শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার, তারপর কন্ডিশনারে প্রয়োজনীয় পুষ্টির জোগান। রিন্স অ্যান্ড রিপিট—এই রুটিনেই এত দিন সেরে নেওয়া হতো একদম বেসিক হেয়ার কেয়ার। সব ধরনের চুলের জন্যই। কিন্তু যাদের চুল পাতলা, তেলতেলে—দিন পেরোতেই ফের নির্জীব, সে ক্ষেত্রে উপায়? শ্যাম্পু করার প্রক্রিয়ার সামান্য হেরফের। ব্যস! সামান্য এই পরিবর্তনে পাল্টে যাবে চুলের চেহারা, বিশেষজ্ঞদের তেমনই মত। দীর্ঘ সময় ধরে সতেজ ও ঝরঝরে দেখাবে। লো-ভলিউম, ক্ষতিগ্রস্ত, নিস্তেজ বা তেলতেলে চুলের জন্যই। রিভার্স ওয়াশ। নামে যেমন, কাজটাও একদম সে রকমই। চুল ধোয়ার পুরো প্রক্রিয়াকে উল্টে দেওয়া হয় রিভার্স ওয়াশিংয়ের ক্ষেত্রে।
অর্থাৎ প্রথমে ডিপ কন্ডিশনিং হেয়ার কন্ডিশনার মেখে নেওয়া হয় চুলে। তারপর ধুয়ে নেওয়া হয় পছন্দসই শ্যাম্পু দিয়ে। হেয়ার এক্সপার্টদের মতে প্রথমে শ্যাম্পু করলে ধুলা, ময়লা আর ঘামের সঙ্গে সঙ্গে চুলের প্রাকৃতিক তেলও ধুয়ে যায়। তাই শ্যাম্পুতে ধোয়ার পর কন্ডিশনার দিলেও ফল—শুষ্ক, নিস্তেজ, নেতিয়ে পড়া চুল। এ ক্ষেত্রে রিভার্স ওয়াশিং উপকারী। কারণ, চুলে এ ক্ষেত্রে কন্ডিশনার আগে মাখা হয়; যা প্রাইমারের মতো কাজ করে চুলের ডগাকে শ্যাম্পুর ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। চুলের প্রাকৃতিক তেলকেও সুরক্ষিত রাখে। কারণ, কন্ডিশনার মাখার পর চুল তা শুষে নেয়, যা চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। এরপর শ্যাম্পু করলে চুল হয়ে ওঠে পরিষ্কার, ঝরঝরে। এ ছাড়া শ্যাম্পুর আগে কন্ডিশনার ব্যবহার করলে চুল পুষ্টি দ্রুত শুষে নিতে পারে। কারণ, পানির পিএইচ চুলের কেরাটিন প্রোটিনের পোরোসিটি খুলে দেয়। এরপর শ্যাম্পু ব্যবহার না করে যখন কন্ডিশনার দেওয়া হয়, পুরো পুষ্টিটাই ঢুকে যায় চুলের গভীর অব্দি। তারপর শ্যাম্পু করে নিলে পরিষ্কার হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে দেখায় স্বাস্থ্যোজ্জ্বল এবং ঘন। রিভার্স ওয়াশিং নিস্তেজ নেতিয়ে পড়া চুলের টেক্সচারকে উন্নত করে তোলে। ফলে বাউন্সি আর ভলিউমনাস দেখায়। তেলতেলে, চটচটে ভাব কমিয়ে আনে চুলের। মাথার ত্বককে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে, পোরগুলো বন্ধ করে দেয় না। ফলে চুল পড়াও কমতে থাকে।
রিভার্স ওয়াশিং কেমন চুলের জন্য জুতসই? যেহেতু এ প্রক্রিয়ায় চুলের ঘনত্ব বাড়ে, সে ক্ষেত্রে পাতলা চুল যাদের, তাদের জন্য বেশি উপকারী। ম্যাড়ম্যাড়ে, নিষ্প্রাণ চুলের জন্যও চমৎকার অপশন। আর যাদের চুল দ্রুত তেলতেলে হয়ে যায়, তারাও রিভার্স ওয়াশিং ট্রাই করে ভালো ফল পেয়েছেন বলে জানা যায়। কন্ডিশনার হচ্ছে লাইপোফিলিক, যা মাথার ত্বক আর চুলে আলাদা একটি আস্তর তৈরি করে। শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনারের ব্যবহার তাই চুলকে আরও ভারী করে ফেলে। ফলে পাতলা চুলে নেতানো ভাব তৈরি হয়। রিভার্স ওয়াশিং দিয়ে সেই আশঙ্কাই মিটিয়ে ফেলা হয়। স্বাভাবিক চুলের জন্যও উপযোগী এই প্রক্রিয়া। কারণ, রিভার্স ওয়াশিং গভীরে আর্দ্রতা জোগায়। যাদের চুল পাতলা হয়ে যাচ্ছে, তাদের জন্যও রিভার্স ওয়াশিং দারুণ। কারণ, এতে করে চুলে বাড়তি হেভিনেস এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।
তবে সব ধরনের চুলের জন্য রিভার্স ওয়াশিং সমান কার্যকর না-ও হতে পারে। অনেক মোটা অথবা টাইটলি কয়েলড চুলের জন্য রিভার্স ওয়াশিং তেমন কার্যকর নয়। কারণ, শ্যাম্পুর পিএইচ লেভেল অনেক বেশি থাকে, যা চুলের আর্দ্রতার ভারসাম্যে হেরফের করে দিতে পারে। এ ধরনের চুলের ময়শ্চার ব্যালান্স ঠিক রাখার জন্য শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহারই বেশি সুবিধাজনক। এ ছাড়া কন্ডিশনার চুলের খোলা কিউটিকলগুলো বন্ধ করতে সাহায্য করে। সে ক্ষেত্রে রিভার্স ওয়াশিংয়ের ফলে কিউটিকল খোলা রয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। তাই চুলের ধরন বুঝে, রিভার্স ওয়াশিং খাপ খাচ্ছে কি না, তা যাচাই করে তবেই ট্রাই করা উচিত। না হলে শ্যাম্পু করে কন্ডিশনার ব্যবহারই ভালো।
রিভার্স ওয়াশ খুব সহজ। প্রথমে চুল ভালোভাবে ভিজিয়ে নিতে হবে। সম্পূর্ণ ভেজা চুলে কন্ডিশনার মাখানো সহজ। চুল যদি শুকনা হয়, সে ক্ষেত্রে কন্ডিশনার ভালোভাবে ছড়ায় না। স্ক্যাল্প থেকে চুলের ডগা অব্দি কন্ডিশনার মাখানোর পরামর্শ দেন অনেক হেয়ার এক্সপার্ট। অনেক বিশেষজ্ঞ আবার বলেন স্ক্যাল্প এবং চুলের গোড়ায় কন্ডিশনার না মাখাতে। তবে চুলের ধরন এবং পছন্দ অনুসারে যে প্রক্রিয়া যেমন চুলে খাপ খায়, সে অনুযায়ী ব্যবহার করাই ভালো। তারপর মিনিট পাঁচেক ম্যাসাজ করে নিতে হবে চুল। আঁচড়ে নিলেও চলবে। এ ক্ষেত্রে ডগার দিকের দুই-তৃতীয়াশ অংশে বেশি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। কারণ, চুলের এই অংশ প্রাকৃতিকভাবে আর্দ্রতা পায় সবচেয়ে কম। তারপর আরও পাঁচ থেকে বিশ মিনিট অব্দি অপেক্ষা করে চুল আবার ভিজিয়ে নিতে হবে। এরপর কন্ডিশনার মাখা চুলেই শ্যাম্পু করে নেওয়ার পরামর্শ দেন অনেক হেয়ার এক্সপার্ট। এতে করে অতিরিক্ত রুক্ষতা থেকে রক্ষা পায় চুল। অনেক বিশেষজ্ঞ আবার ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে কন্ডিশনার ধুয়ে তারপর সামান্য শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে বলেন।
প্রথমে সপ্তাহে এক দিন রিভার্স ওয়াশিং ট্রাই করে দেখা যেতে পারে। তারপর ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে। এক দিনেই নয়, নিয়মিত রিভার্স ওয়াশিংয়ে ফল মিলবে নিশ্চিত।

 জাহেরা শিরীন
মডেল: লিসা
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top