নখদর্পণ I ঝিকমিকে ঝক্কি
কৌশলে তা-ও এড়ানো সম্ভব। নেইল এক্সপার্টদের পরামর্শ মেনে
সাধারণ শেড নয়, এই সিজনে সেরা স্টাইল স্টেটমেন্ট শিমারি, গ্লিটারি নেইলপলিশ। দিনভর ফ্যাশনদুরস্ত থেকে রাতেও ঝলমলিয়ে ওঠার দারুণ সাজসামগ্রী এটি। কিন্তু সমস্যা একটাই! দেখতে চমৎকার হলেও গ্লিটারি নেইলপলিশ তোলার কাজটা বেশ দুরূহ। হেটারোজিনিয়াস টেক্সচারের ফলে এই ধরনের নেইলপলিশ সহজে নখ থেকে তোলা যায় না। অসাবধানতায় বা জোর করে ঘষে তুলতে গেলে বরং নখের ক্ষতি হতে পারে। নন-পোরাস ম্যাটেরিয়াল যেমন গ্লাস, মাইলার আর অ্যালুমিনিয়ামে তৈরি গ্লিটার নেইলপলিশ নখে শুকানোর পর শক্তভাবে আটকে যায়। তখন রিমুভারের অ্যাসিটোন এতে সহজে ঢুকতে পারে। ফলাফল নেইলপলিশ রিমুভিং কঠিন হয়ে যায়। তবে এ থেকেও নিস্তার পাওয়া সম্ভব। স্পার্কলি এসব নেইলপলিশ নখে মাখার আগে কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করা গেলে পরে ঝামেলা কমানো যায় অনেকখানি।
রেগুলার নেইলপলিশ দেওয়ার আগে বাফ করে নখে ম্যাট ফিনিশ নিয়ে এলে তা সহজেই বসে যায়। কারণ, বাফ করার ফলে নখ খসখসে পোরাস হয়ে ওঠে। ফলে নেইলপলিশ দীর্ঘ সময় ধরে নখে আটকে থাকে। কিন্তু গ্লিটারি নেইলপলিশের ব্যাপারটা ভিন্ন। এটি গ্লুর মতো ফর্মুলায় তৈরি হওয়ায় এমনিতেই নখে শক্তভাবে বসে। গ্লিটারি পার্টিকেলগুলোও শক্তভাবে আটকে থাকে। তাই ম্যাট ফিনিশ না দিয়ে যদি হাই শাইন বাফ তৈরি করে নেওয়া যায় নখে, সে ক্ষেত্রে গ্লিটারি নেইলপলিশগুলো আঁটসাঁটভাবে সেট হতে পারে না। ফলাফল—রিমুভিংয়ের কাজটাও সহজ হয়ে যায় অনেকখানি।
নেইলপলিশ দেওয়ার আগে অ্যাসিটোন বেসড কিউটিকল প্যাড দিয়ে অনেকে নখটা মুছে নিয়ে থাকেন। কিন্তু গ্লিটারি নেইলপলিশ ব্যবহারের আগে এটা একদমই করার দরকার নেই; বরং পেপার টাওয়েল দিয়ে মুছে নিলেই চলবে। নখের প্রাকৃতিক এই তৈলাক্ত ভাবই নেইলপলিশের গ্লিটারকে শক্তভাবে নখের ওপর সেট হতে বাধা দেবে। সেই সঙ্গে নখও থাকবে সুরক্ষিত।
নেইলপলিশের বেজ কোটের বদলে বাসায় বসে তৈরি একটা মিশ্রণ যদি ব্যবহার করা যায়, তাহলে রিমুভিংয়ের কাজটা অনেক সহজ হবে। বাসায় থাকা আইকা গ্লু নিয়ে তাতে সামান্য পরিমাণ পানি মিশিয়ে নিতে হবে। ব্রাশের সাহায্যে নখে মাখিয়ে নিতে হবে নেইলপলিশ বেজ হিসেবে। ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে এর ওপর গ্লিটারি নেইলপলিশ ব্যবহার করতে হবে। এতে রিমুভিংয়ের কাজটা হয়ে যাবে সহজ। ঘন ঘন নেইলপলিশ বদলানোর অভ্যাস যাদের, তাদের জন্য এ প্রক্রিয়া সবচেয়ে কার্যকর। কারণ, নিয়মিত গোসল আর হাত ধোয়ার ফলে গ্লু দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না নখে। দ্রুতই উঠে আসবে।
অনেক নেইল এক্সপার্টের পরামর্শ নখে ডাবল বেজ কোট ব্যবহারের। এতে নখ আর গ্লিটার নেইলপলিশের মাঝে একটি আস্তর তৈরি হয়। ফলে নেইলপলিশ ওঠানোর ফলে নখের ক্ষতি হয় কম।
নেইলপলিশ তোলার সময়েও কিছু কৌশল অবলম্বন করা গেলে নখ থেকে সহজেই তা উঠে আসবে। এ ক্ষেত্রে দুভাবে গ্লিটারি নেইলপলিশ রিমুভিং করা সম্ভব—
প্রথমে বাফ করে নিতে হবে নেইলপলিশ মাখা নখ। এতে সামান্য ক্ষতি হতে পারে নখের, তবে পলিশের প্রথম লেয়ার উঠে আসবে। তারপর নখের সাইজের ছোট ছোট কটন বল অথবা ফেল্টের টুকরা কেটে নিতে হবে। তাতে নেইলপলিশ রিমুভার দিয়ে সরাসরি বসিয়ে দিতে হবে নখের ওপর। এরপর ফয়েল পেপারে মুড়িয়ে নিতে হবে নখগুলো। তারপর রোদে মেলে ধরতে অথবা মুঠোবদ্ধ করে ফেলতে হবে। এতে তাপ উৎপন্ন হবে; ত্বরান্বিত হবে প্রক্রিয়া। তিন থেকে পাঁচ মিনিট পর ফয়েল আর কটন বল ঘষে সরিয়ে নিলেই দেখা যাবে, নেইলপলিশও উঠে আসছে সহজে। তারপর মেখে নিতে হবে কিউটিকল ক্রিম অথবা অয়েল।
এ পদ্ধতিতে গ্লিটারি নেইলের ওপরই ফ্রেশ নন-গ্লিটারি নেইলপলিশের এক কোট দিয়ে দিতে হবে প্রথমে। সেই কোট শুকানোর আগেই নেইলপলিশ রিমুভার দিয়ে মুছে নিতে হবে নখ। চটজলদি গ্লিটারি নেইলপলিশ ওঠানোর এটা সবচেয়ে জুতসই অপশন। তারপরও কিছু গ্লিটারি পার্টিকেল থেকে যেতে পারে নখে। বাফার দিয়ে ঘষে সেগুলো তুলে নিতে হবে। তবে অনেক বেশি বাফ করার প্রয়োজন নেই। তারপর আরেকবার নেইলপলিশ রিমুভার দিয়ে মুছে নিতে হবে নখ। এরপর হাত ধুয়ে কিউটিকল অয়েল বা ক্রিম মেখে নিতে হবে। গ্লিটারি নেইলপলিশ ব্যবহারের সময় একেবারে এক কোট দিয়ে নখ না রাঙানোই ভালো। এতে নখে নেইলপলিশের একটা পুরু আস্তর পড়ে, যা তুলতে ঝামেলা হয় বেশি। তার চেয়ে বরং পাতলা এক কোট গ্লিটারি নেইলপলিশ দিয়ে ১০ মিনিট অপেক্ষার পর আরেক কোট পলিশ দিয়ে নিতে হবে। এতে পরবর্তী সময়ে রিমুভিং হবে সহজ।
বিউটি ডেস্ক
মডেল: শ্রাবণী
মেকওভার: পারসোনা
ছবি: তানভীর খান