skip to Main Content

ফিচার I বাড়তি ইফতারে ডিনার

রোজার মাসে রান্নাবান্নায় চলে ব্যাপক প্রস্তুতি। অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ মাসে খাওয়া-দাওয়ার প্রতি বাড়তি মনোযোগ থাকে সবার। নানা কারণে এক বেলার রান্না করা খাবার অন্য বেলা পর্যন্ত থেকে যায়; বিশেষ করে ইফতারের আগে বানানো মুখরোচক কিছু পদ। সেসব ফেলে না দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে চাইলেই সংরক্ষণ করা সম্ভব। লিখেছেন সিফাত বিনতে ওয়াহিদ

যেকোনো সময়ের বেঁচে যাওয়া খাবারেরই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা জানাটা জরুরি। সবচেয়ে ভালো হয় প্রয়োজন ও পরিমাণ বুঝে খাবার রান্না করা। যদিও অনেক সময় তা সম্ভব হয় না। না হলেও সমস্যা নেই। বেঁচে যাওয়া খাবার পরের বেলায় ব্যবহারের কৌশল জানা থাকলে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না।
ইফতারে অনেকেই ভাজাপোড়া খেয়ে থাকেন। রোজার সময় তো বটেই, অন্য সময়ের জন্যও ভাজাপোড়া বেশি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবু বাঙালির ইফতারে বেগুনি, আলুর চপ, পেঁয়াজু, মুড়িমাখা থাকবে না—এ যেন ভাবা যায় না! যে পরিমাণে এই খাবারগুলো তৈরি করা হয়, দেখা যায় এর অনেকটাই ইফতারের পর বেঁচে যায় এবং একসময় তা ফেলে দিতে হয়। যেহেতু বাসি ইফতারি পরের দিন খাওয়া অস্বাস্থ্যকর, তাই সেদিনের বেঁচে যাওয়া খাবার কীভাবে ওই রাতেই কাজে লাগানো যায়, সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা জরুরি।
আলুর চপ
আলুর চপ খুবই প্রচলিত ও জনপ্রিয় ইফতার আইটেম। বেঁচে যাওয়া আলুর চপ দিয়ে কী করবেন ভাবছেন? রাতের খাবারের সময় আলুর চপের ওপরের বেসনের অংশটুকু ছাড়িয়ে আলু ভর্তা হিসেবে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন অনায়াসেই। সে ক্ষেত্রে বেঁচে যাওয়া সব কটি আলুর চপের বেসনের অংশটুকু ছাড়িয়ে ভেতরের আলুর মিশ্রণটুকু বের করে একসঙ্গে একটু সরিষার তেল, টাটকা ধনেপাতা ও কাঁচা মরিচকুচি দিয়ে মাখিয়ে নিন। কাঁচা মরিচ আগে দেওয়া থাকলে আর দরকার নেই।
বেগুনি
আলুর চপের মতো বেগুনিও ইফতারে বেশ জনপ্রিয়। রোজার সময় এমনিতেই বেগুনের মূল্য আকাশছোঁয়া হয়ে যায়! তাই বেঁচে যাওয়া বেগুনি ফেলে না দিয়ে আলুর চপের মতো সেখান থেকে বেসনের অংশটুকু ছাড়িয়ে নিন। এরপর চাইলে এর সঙ্গে একটু হলুদ, মরিচগুঁড়া মিশিয়ে ডুবো তেলে ভেজে গরম-গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করতে পারেন।
পেঁয়াজু
মচমচে পেঁয়াজু খালি খালি যেমন খেতে মজা, মুড়িভর্তার সঙ্গে মিশিয়েও এর স্বাদের জুড়ি নেই। ইফতারে এই বহুপ্রচলিত পদটি যদি বেঁচে যায়, তবে খুব সহজেই কোনো মাছ-সবজির তরকারির মধ্যে দিয়ে রান্না করে নিতে পারেন, অথবা এমনিতেও আরেকবার তেলে হালকা ভেজে নিয়ে ভাতের সঙ্গে খেতে পারেন।
ছোলা
ছোলা খুবই স্বাস্থ্যকর খাবার। অনেকেই ইফতারের সময় ছোলা সেদ্ধ খান, আবার মসলার মধ্যে কষিয়ে রান্না করে খেতে পছন্দ করেন। যেভাবেই খান না কেন, বেঁচে যাওয়া এই দুই প্রকার ছোলা চাইলে ডিনার আইটেমেও ব্যবহার করতে পারেন। যদি ডিনারে পোলাও রান্না করেন অথবা খিচুড়ি, তবে সেদ্ধ ছোলাগুলো পোলাওতে এবং রান্না করা ছোলাগুলো খিচুড়িতে দিয়ে দিলেই এর স্বাদ দ্বিগুণ বাড়বে, স্বাস্থ্যের জন্যও এটি বেশ উপকার দেবে।
কাবাব
ইফতারে বেঁচে যাওয়া কাবাবগুলোকে হাত দিয়ে ভেঙে, এর সঙ্গে পেঁয়াজকুচি, কাঁচা মরিচকুচি ভালো করে মিশিয়ে চটকে নিন। চাইলে তাতে সামান্য কর্নফ্লাওয়ারও মেশাতে পারেন। এবার মিশ্রণটিকে কাটলেটের মতো আকৃতি দিয়ে পাউরুটির গুঁড়া মাখিয়ে গরম তেলে ভাজুন। লালচে হয়ে এলে নামিয়ে ভাত বা রুটির সঙ্গে পরিবেশন করুন। চাইলে কাবাব ভাত বা রুটির সঙ্গে খেতে পারেন।
তেল
রোজার মাসে ইফতারের ভাজাভুজির পর কড়াইতে একগাদা তেল বেঁচে থাকে। তেলের দাম যে হারে বেড়েছে, তাতে একটুও নষ্ট করার অবকাশ নেই। তার চেয়ে এই তেল কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেই বুদ্ধি বের করা প্রয়োজন। যদিও ভাজা তেল বারবার রান্নায় ব্যবহার করা উচিত নয়। এই তেলের সিংহভাগই ট্রান্স ফ্যাট, যা কোলেস্টেরল বাড়ায়। আবার বেশি তাপমাত্রায় গরম করলে তেলের মধ্যে আর কোনো উপকারিতা থাকে না। ব্যবহারের পর প্রথমেই তেল একেবারে ঠান্ডা করে ছেঁকে নেওয়া ভালো। এতে স্ন্যাকসের গুঁড়া বা কালো কোনো অংশ যেন না থাকে। একটা পরিষ্কার ও শুকনা কনটেইনারে তা ঢেলে স্টোর করুন। তবে মাথায় রাখুন, ৪-৫ দিনের মধ্যে এই তেল ব্যবহার করতে হবে। ফলে ডিনার বানাতে এই তেল ব্যবহার করতে পারেন। একবার ব্যবহার করা তেল কখনোই যেন স্মোকিং টেম্পারেচারে গরম করা না হয়, খেয়াল রাখুন। এটা দিয়ে ডাল, মাছ-মাংস ম্যারিনেটও করতে পারেন। একবার মিষ্টিজাতীয় কিছু ভাজার জন্য তেল ব্যবহার করলে পুনরায় সেটা নোনতা কিংবা অন্য কোনো রান্নায় ব্যবহার করবেন না। তবে তেল ব্যবহারের আগে অবশ্যই দেখে নেবেন, এর থেকে কোনো বাজে গন্ধ আসছে কিংবা রং কালো হয়েছে কি না। এমনটা হলে ব্যবহার করা যাবে না।
রুটি
অনেকের ইফতারে রুটি খাওয়ার অভ্যাস আছে। ইফতারের পর রুটি বেঁচে গেলে তা ফেলে না দিয়ে তৈরি করতে পারেন মজাদার খাবার। তাতে খাবারেরও অপচয় হবে না, নতুন একটি সুস্বাদু খাবারও খাওয়া যাবে। এর জন্য পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, ধনেপাতা, টমেটোকুচি, লবণ ও গোলমরিচগুঁড়া দিয়ে একটা ডিম মিশিয়ে নিন। এরপর তাওয়ায় সামান্য তেল বা মাখন দিয়ে ডিমটি ঢেলে দিন। ডিমের নিচের দিকে একটু শক্ত হলে ওপরে বেঁচে যাওয়া রুটি থেকে একটি রুটি দিয়ে দিন। যেহেতু এটা আগে থেকেই সেঁকে রাখা, তাই অল্প সময়েই হয়ে যাবে। চেপে চেপে রান্না করুন, যেন ডিম ভালোভাবে তৈরি হয়ে যায়। উল্টে দিয়ে কয়েক সেকেন্ড চেপে রান্না করে নামিয়ে নিন। গরম-গরম সস দিয়ে ডিনারে উপভোগ করতে পারেন মজাদার এই আইটেম।
নুডলস
বিশেষ করে বাচ্চাদের কাছে এই আইটেম জনপ্রিয় বলে অনেক বাসাতেই ইফতার আইটেমে নুডলস থাকে। ইফতারের পর নুডলস বেঁচে গেলে তা স্যুপের মধ্যে দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। চাইলে স্প্রিং রোল কিংবা সবজি মিশিয়ে নুডলস পাকোড়াও বানাতে পারেন।
সালাদ
ইফতারে সালাদ আইটেম রাখা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। শসা-টমেটোর গতানুগতিক সালাদ ছাড়াও অনেকেই ক্যাপসিকাম, বাঁধাকপি, লেটুসপাতা, ব্রকলি, ক্যাশোনাট অথবা স্ট্রবেরি মিক্সড করেও সালাদ বানান। ইফতারে বেঁচে যাওয়া এই সালাদ পানি দিয়ে ধুয়ে রেখে দিতে পারেন। ডিনারের আগে তা আরেকবার বিট লবণ বা গোলমরিচ মিশিয়ে খেতে পারেন রুটি, পরোটা, ভাতের সঙ্গে; কিংবা কোনো কিছু ছাড়াই।

ছবি: ইন্টারনেট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.

Back To Top