বহুরূপী I চালহাল
চালের কত রূপ! মোটা-চিকন, লাল-সাদা, সেদ্ধ-আতপ ও সুগন্ধি-সাধারণ। সরু চালই ভোক্তার পছন্দের শীর্ষে। স্বাস্থ্যসচেতনেরা অবশ্য লাল চালে খুশি। বহুরূপী এসব চালের একেকটির দোষ-গুণ একেক রকম। বিশ্বে প্রায় ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৯০ রকমের ধান রয়েছে বলে জানা যায়। এগুলোর প্রতিটি গুণ ও পুষ্টিমানে আলাদা। সব কটির ফিরিস্তি দেওয়া সময়সাপেক্ষ। এ দেশের ক্রেতারা সাধারণত মিনিকেট, নাজিরশাইল, বাসমতী, পাইজাম, আমন, কাউন চাল ইত্যাদি কিনে থাকেন।
মোটা চাল ঘষে তৈরি করা চালের নাম মিনিকেট। এতে পোকামাকড় ধরে না। ধরবেই বা কেন! ঘষার ফলে এই চাল থেকে ওপরের স্তর ক্ষয়ে যায়। সেই সঙ্গে চলে যায় প্রয়োজনীয় পুষ্টিমানও। ঘষার কারণে প্রায় ৮০ শতাংশ ভিটামিন অপসারিত হয় মিনিকেট থেকে। লাভের লাভ শুধু একটাই—ক্ষতিকর ফ্যাটিক অ্যাসিডও চলে যায়। মূলত দর্শনদারি ও চিকন গড়নের কারণেই মিনিকেটের কদর বেশি। নাজিরশাইলও মিনিকেটের দোষে দুষ্ট এবং গুণে পুষ্ট। ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ ঘষে তৈরি করা হয় এ চাল।
স্বাদ ও গন্ধে বাসমতী চাল অনন্য। এটি স্বাস্থ্যবান্ধব। কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেলে ভরপুর। সঙ্গে বিশেষ গুণ হলো, এ চাল হরমোন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ফলে ভোক্তার মেজাজ থাকে নিয়ন্ত্রণে। তাই বদমেজাজিদের জন্য এ চাল বেশ উপাদেয়! এতে থাকে থায়ামিন ও নায়াসিন। এ দুটি উপাদান হজমশক্তি বাড়ায়। হার্ট ভালো রাখে। কমায় কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি। শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে বলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য চালটি স্বাস্থ্যকর। এর ফাইবার পেটকে দীর্ঘক্ষণ ভরা রাখে। ফলে বারবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। এতে ওজনও বাড়ে না।
পুষ্টিগুণে ভরপুর আরেকটি চালের নাম আমন। সেদ্ধ চালের গাত্রে বাদামি বর্ণ দেখা যায়। এ চালে শর্করার পরিমাণ কম বলে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপাদেয়। তা ছাড়া আমন চাল পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, জিংকসহ নানান খনিজে ভরপুর। এসব উপাদান শরীরের বিভিন্ন রোগ সারায়। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে আমন চাল। ক্যানসার সারাইয়ের দাওয়াই মেলে এতে। আমন প্রক্রিয়া করে তৈরি এক প্রকার চাল হলো পাইজাম। এটিও ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় এবং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো। পাইজাম চাল চর্বি কমায়, হজম ক্ষমতা বাড়ায়। তা ছাড়া হৃদপিণ্ডের জন্যও ভালো।
সমতল ছেড়ে পাহাড়ি অঞ্চলের দিকে এগোলে দেখা যাবে তাদের উৎসব-পার্বণে কাউন চালের উপস্থিতি। নানান খনিজে ভরপুর এ চাল আমনের মতোই কোষ্ঠকাঠিন্য সারায়। নারীরোগ সারাইয়ের পথ্য রয়েছে এই চালে।
ভাত থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টিমান চাইলে খাওয়া যেতে পারে ঢেঁকিছাঁটা চাল। এটি পলিশ করা হয় না। ঢেঁকিতে ছাঁটা বলে এর ওপর কিছুটা তুষ থেকে যেতে পারে। ফলে এ ধরনের চাল থেকে পুষ্টি ক্ষয় হয়ে যায় না। সাধারণ চালের চেয়ে এতে ফাইবার থাকে বেশি। এ চাল শরীরের শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এতে রয়েছে স্নায়বিক রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতাও।
সাদা ও লাল—এ ধরনের চালের মধ্যে তুলনামূলকভাবে লালটিই ভালো। এ চালেও ক্যানসার প্রতিরোধী উপাদান মেলে। তা ছাড়া রক্তে লোহিত কণিকা উৎপন্ন করতে পারে এটি। হাড় ও দাঁত গঠনেও এই চালের ভূমিকা আছে।
কোন চাল খেতে হবে, তা নির্ভর করে ব্যক্তির স্বাস্থ্যের ওপর। যেহেতু ভাত এ অঞ্চলের মানুষের নিত্যদিনের খাদ্য, তাই এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
i ফুড ডেস্ক
ছবি: ইন্টারনেট